আদা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা পুষ্টিগুণ ও নিয়ম

পূর্ব দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলিতে আধা পাওয়া যেত যেমন চীন ভারতবর্ষ বাংলাদেশ পাকিস্তান ইত্যাদি। আবার গুনাগুন দেখে পরবর্তীকালে সারা বিশ্বে আদা চাষ শুরু হয় বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলিতে। 

চীন এবং ভারতে আদাবর পৌরাণিক যুগ ধরে ওষুধ রূপে ব্যবহৃত হয়। আদা খাওয়ার উপকারিতা আমাদের বিভিন্ন রোগ এবং সমস্যার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই আদা কে প্রাকৃতিক ভেষজ
ওষুধ বলা হয়। (প্রবাদ আছে আদা খায় গাধা রোগ সাড়ে আধা)। আদা খুব সহজে বাজার বা মার্কেটে পাওয়া যায় এবং এর মূল্য খুবই কম ছিল বর্তমানে আদার অনেক দাম। 



আদা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অবগত হওয়া খুব বেশি প্রয়োজন। সাধারণত আমরা বিভিন্ন তরকারি আদা ব্যবহার করে থাকি কিন্তু আদার সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা উচিত। তাই আজ আমরা আদা খাওয়ার হওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
পোস্ট সূচীপত্রঃ
  • আদা খাওয়ার উপকারিতা 
  • আদা খাওয়ার অপকারিতা 
  •  আসুন আমরা জেনে নেই ১০০ গ্রাম আদার পুষ্টিগত গুনাগুন এবং নিউট্রেশনাল ফ্যাক্ট
  • এছাড়াও আছে প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেল 
  •  আদা খাওয়ার নিয়ম


আদা খাওয়ার উপকারিতাঃ

  • আদার মধ্যে  ফেনোলিক  ফাইটোকেমিক্যাল  উপাদান রয়েছে যার নাম জিনজেরল। আর এই যে জিনজেরল এর কিছু ঔষুধি গুনাগুন আছে। আদার মধ্যে থাকা এই ফাইটোকেমিক্যাল গুলো বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস এর বিরুদ্ধে লড়তে পারে তাই সাধারণ সর্দি কাশি এবং জ্বরে আদা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি।

  • আমাদের মধ্যে অনেকের সকালে বমি ভাব হওয়ার প্রবণতা থাকে। এছাড়াও অনেক গর্ভবতী মায়েদের এবং কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীদের এমনকি যারা ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত বা কেমোথেরাপি চলছে তাদের মধ্যেও বমি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেড়ে যায়। তাই আমরা যদি নিয়মিত এবং পরিমাণ মতো আদা খায় বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের বমি হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। সামান্য পরিমাণ আদা খাওয়া আমাদের জন্য নিরাপদ।

  • সময় মত আগা খাবার গ্রহণ না করলে বা অনিয়ম হলে আমাদের পেটের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা হয়। পরবর্তী সময়ে এই গ্যাসের কারণে আমাদের শরীরের মধ্যে অন্যান্য রোগ দেখা দেয়। আদার মতো কিছু এনজাইম উপাদান রয়েছে যা আমাদের পেটের মধ্যে হওঔয়া গ্যাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এই এনজাইম উপাদান গুলির জন্য আমাদের খাদ্যনালীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং পেটের নানা সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাই। এমনকি নিয়মিত আদা গ্রহণ করলে আমাদের কোষ্বাঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন হওয়ার প্রবণতা কমে যায় তাই আদার রস আমাদের পেটের জন্য অনেক উপকারী।

  • যদি আমাদের শরীরে  ফ্রি রেডিকেলস বাড়তে থাকে এবং সেই ফ্রি রেডিকেলস বিষাক্ত বা টক্সিক পদার্থ আমাদের শরীরে ছড়াতে থাকে তাহলে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। আমরা যদি নিয়মিত দুই গ্রাম কাঁচা  আদা গ্রহণ করতে পারি তাহলে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা কমে যায় তার কারণ  আদাতে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা কম করে।

  • কিছু মানুষের শরীরে আর্থাইটিস এর ব্যথা হয়ে থাকে যেমন হাঁটুতে ব্যথা, কনুই এ ব্যথা, কোমরে ব্যথা ইত্যাদি। আমরা যদি নিয়মিত আদা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা বা পেইন হবার কমে যায় তার কারণ আদার মধ্যে আন্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে যা ব্যথার জন্য ভীষণভাবে কার্যকরী।

  • আদার মতো প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন মিনারেল বা খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ভাইরাল উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে ভিটামিন সি ও অন্যান্য উপাদান গুলি নিয়মিত গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি পায়। আমাদের খুব সহজে এবং ঋতু পরিবর্তনের ফলে সাধারণ সর্দি কাশি জ্বর হওয়ার প্রবণতা খুবই কমে যায়।

  • নিয়মিত কাঁচা আদা খেলে বালে আমাদের শরীরে এলডিএল ব্লাড  কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমতে থাকে। কাঁচা আদার রস আমাদের শরীরের রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে।

  • আমরা যদি নিয়মিত একটুকুও কাঁচাদা চিবিয়ে খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের মুখের মধ্যে কোন সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং আমাদের মুখের মধ্যে দুর্গন্ধ থাকে না। তার কারণ আদাতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা আমাদের মুখের মধ্যেও হওয়া কোনো সংক্রমণ বা ইনফেকশন কে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

  • ২০১২ তে এর পরীক্ষায় দেখা গেছে যে নিয়মিত আদা গ্রহণ করলে আমাদের স্মৃতিশক্তি অনেক উন্নত হয়। অত্যাধিক চিন্তার কারণে আমাদের মাথা যন্ত্রণা বাড়তে পারে এবং এর এলজাইমার সমস্যাও হতে পারে কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত কাঁচা আদা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের এই জাতীয় সমস্যা হবার প্রবণতা কমে যায়।

  • আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন রকমের ফাস্টফুড এবং খুব বেশি পরিমাণ ফ্যাট যুক্ত খাবার খেয়ে থাকি যার ফলে আমাদের শরীরে ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। পরবর্তী সময় আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায় এবং ওবিসিডি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ও বেড়ে যায়। কিন্তু আমরা নিয়মিত কাঁচা আদা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ নিমন্ত্রণ থাকে ফলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি হয় না এবং ও বি সি টি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

আদা খাওয়ার অপকারিতা ঃ

সাধারণত আমরা যদি প্রতিদিন দুই গ্রামের কম আদা গ্রহণ করি তাহলে আদা খাওয়ার কোন অপকারিতার দিক থাকে না। কিন্তু আমরা যদি খুব বেশি পরিমাণ আদা খায় বা গ্রহণ করি তাহলে আদা খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

 যেমনঃ

  • কিছু মানুষের আদা খেলে বা গ্রহণ করলে এলার্জি দেখা দিতে পারে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের ছোট ছোট দাগ বা চিহ্ন দেখা দিতে পারে।

  • খুব বেশি পরিমাণ আদা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের পেটে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় তার কারণ আদাতে প্রচুর পরিমাণ আন্টি মাইক্রোবল উপাদান রয়েছে এবং কাঁচা আদা খুব ঝাল হয় যা খুব বেশি আমাদের পেটের জন্য ভালো না।

  • নিয়মিত আদা খেলে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে কিন্তু খুব বেশি আদা গ্রহন করলে বা খেলে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ কমতে থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুব একটা ভালো নয়।

  • চার বছরের ছোট বাচ্চাদের এবং গর্ভবতী মায়েদের কাঁচা আদা গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই একবার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া দরকার।

আসুন আমরা জেনে নেই ১০০ গ্রাম আদার পুষ্টিগত গুনাগুন এবং নিউট্রেশনাল ফ্যাক্টঃ

  • ক্যালোরি ৮০।
  • প্রোটিন ১.৮২ গ্রাম।
  • কার্বোহাইড্রেট ১৭.৮ গ্রাম (ডায়েটরি ফাইবার ২ গ্রাম)।
  • টোটাল ফ্যাট ০.৭৫ গ্রাম।
  • জল ৭৮.৯ গ্রাম

wwwasdএছাড়াও আছে প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেল যেমনঃ

আদা খাওয়ার নিয়ম ঃ

  • সকালে গ্রিন টির সাথে সামান্য একটু আদা কুচি এবং মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন যা আমাদের সর্দি কাশি এবং জ্বরের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এক পানীয় উপাদান।

  • আমরা দুপুরে এবং রাতে খাবারের পর এক টুকরো কাঁচা আদা সরাসরি গ্রহণ করতে পারি যা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং মুখের মধ্যে কোন সংক্রমণ বা ইনফেকশন হতে দেয় না।

  • আমরা বিভিন্ন খাবার বা তরকারির তে আদা মিশিয়ে রান্না করতে পারি, তার সুগন্ধ এবং পুষ্টিগত গুণাগুণের জন্য।

  • ধন্যবাদ***

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url