মালটা খাওয়ার উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও ক্ষতিকর দিক

 আমরা দৈনন্দিন কর্ম ব্যস্ত জীবনে ভিটামিনের চাহিদা পূরণে ফলের উপকারিতার জুড়ি নেই। প্রায় সকল ধরনের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে থাকে বাজারে পাওয়া যায় নানা রকমের ফল। তবে ভিটামিন সি মানব শরীরের জন্য একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকরা বলেন একজন পূর্ণ বয়স্ক নারীর প্রতিদিন ৭৫ মিলিগ্রাম ও পূর্ণ বয়স্ক পুরুষের ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করা উচিত। আর ভিটামিন সি এর যোগানে বিশেষ ভূমিকা রাখে আমাদের দেশের জনপ্রিয় ও সহজলভ্য একটি ফল মালটা।


এটি প্রায় সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায় এবং দামে ও বেশি সস্তা। বাংলাদেশে বর্তমানে মাল্টার ও দাম বেড়ে গেছে। জনপ্রিয় এই ফলটির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা হয়তো অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানিনা। শুধুমাত্র ভিটামিন সি না, মাল্টাতে রয়েছে ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং চর্বি মুক্ত ক্যালরি। এগুলো ছাড়াও মালটা তো রয়েছে আরো অনেক পুষ্টিগুণ।

মাল্টার উপকারিতা সমূহ নিন্মে  আলোচনা করা হলো ঃ

পোস্ট সূচিপত্রঃ

ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণে ঃ

ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণের মাল্টার জুড়ি নাই। এক গ্লাস মাল্টার জুসকে ভিটামিন সি এর সবচেয়ে কার্যকর উৎস বলে মনে করা হয়। মাল্টাকে ভিটামিন সি ট্যাবলেট হিসেবে গ্রহণ করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে ১০০ গ্রাম মাল্টায় ভিটামিন সি আছে ৩২ মিলিগ্রাম। প্রতিদিন মানবদেহে ভিটামিন সি এর চাহিদার আধাভাগ যোগান দিতে পারে একটি মাল্টা।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ঃ

প্রতিনিয়ত মালটা খেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত মালটা খায় তাদের দাঁতের রোগ অনেক কম হয়।। জিহ্বায় ঘা ঠোঁটের ঘা, জ্বরের সময় ঠোঁটসহ ত্বক, জিহ্বার অনেক রোগ ভালো করে মালটা। এছাড়াও শীতকালীন ঠোঁট ফাটা, পায়ের তালু ও হাতের তালু ফাঁটা রোগ প্রতিরোধ করে মালটা। সর্দি নাক বন্ধ থাকা, টনসিলের সমস্যা গলা ব্যথা জ্বর জ্বর ভাব হাসি কাশি মাথাব্যথা ঠান্ডা জনিত দুর্বলতা সহ এ জাতীয় সমস্যা গুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উৎস হিসেবে মাল্টা খেতে পারেন। ভিটামিন সি রক্তের শ্বেত- কণিকার সংখ্যা বাড়ায়, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। রক্তশূন্যতায় ভুগছে এমন মানুষের জন্য  মাল্টা বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

আরো পড়ুন ঃলাল চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে ঃ

প্রতিদিন একটি করে মালটা খাওয়ার অভ্যাস আপনার দৃষ্টি শক্তিকে ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ মালটায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি ও পটাশিয়াম। এ ভিটামিন গুলো দৃষ্টি শক্তির জন্য বেশ উপকারী, তাই দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে নিয়মিত খান মালটা।

ত্বকে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ঃ

মালটাতে অন্যান্য ভিটামিন উপস্থিত থাকলেও এটি মূলত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সময়ের সমৃদ্ধ উৎস। এটি ত্বকে সজীবতা বজায় রাখে এবং ত্বকের বলি রেখা প্রতিরোধ করে লাবণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও মালটা দাঁত, চুল, ত্বক ও নখের পুষ্টি যোগায়।

পাকস্থলীর ক্রিয়া সচল রাখতে ঃ

পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে এই মালটা। তাই নিয়মিত মালটা খাওয়ার অভ্যাস করুন তাহলে পাকস্থলী আলসাড় ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সুরক্ষা দেয় । মাল্টা ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি প্রদাহ জনিত রোগ সারিয়ে তুলছে সহায়তা করে। এতে উপস্থিত পটাশিয়াম ইকেটোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখে এবং কার্ডিও ভাস্কুলার সিস্টেম ভালো রাখতে সহায়তা করে।

 ক্যান্সার প্রতিরোধঃ

মালটার ভিটামিন সি উপাদান আমাদের শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের শরীরের কোলন ক্যান্সার ও বেস্ট ক্যান্সারের অন্যতম সেল প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। পেকটিন নামের এক ধরনের ফাইবার উপস্থিত থাকে মাল্টাতে, যা মূলত কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও মাল্টাতে উপস্থিত  লিমিনয়েড মুখ, ত্বক, ফুসফুস ও পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।

আরো পড়ুন ঃলেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জানুন 

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে ঃ

মাল্টায় হেসপেরিডিন থাকার কারণে এটি ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে ওজন কমাতেও সহায়তা করে। মালটা শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যাদের রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি তাদের রক্তের চর্বির পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে। মালটা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, তাই যাদের বহুমূত্র রোগ আছে তারা নির্দ্বিধায় মালটা খেতে পারেন।

মালটা অতি সামান্য পরিমাণ ক্যালরি থাকে, তাই নিজের ইচ্ছামত খেতে পারেন। চিনি সহযোগে বানানো শরবত যেমন আপনাকে পুষ্টি দিচ্ছে তেমনি ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণে রাখছে বিশেষ ভূমিকা। মালটার উপকারিতা ও গুনের শেষ নেই। তাই যদি সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে চান তাহলে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে মালটা খাবেন।ষ

মালটা খাওয়ার নিয়ম ঃ  

মালটা পুষ্টিকর ফল এই ফল শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। মালটা থেকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকায় শরীর সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। মালটা ভিটামিনের অভাব পূরণ করে। তবে মালটা খাওয়ার সঠিক সময় জেনে রাখা উচিত। যে ফলটি খাচ্ছেন সে ফলটির পুরোপুরি উপকার পাওয়ার জন্য অবশ্যই এর সঠিক সময় জেনে রাখা উচিত।

মালটা ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করে থাকে মালটা কিছুটা টক হয়। এই ফলটি খাওয়ার পূর্বে সকালে নাস্তা বা ভরা পেটে খাওয়া উচিত।  সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবারের পর ফলটি খাওয়া উচিত। বিকেল বেলা ও খাওয়া যায় এই ফলটি। খালি পেটে ফলটি খেলে গ্যাস্ট্রিক বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

মালটা খাওয়ার ক্ষতিকর দিক ঃ

মালটাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে যা আমাদের শরীর স্বাস্থ্য রাখতে ভালো রাখে। মালটা হলো কিছুটা টক হয় এর জন্য অবশ্যই ভরা পেটে খাওয়া উচিত। যদি ও মালটা টক ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে এই ফল খাওয়া যায় তবে ফল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

ডায়াবেটিস রোগীরা অন্যান্য ফল খাওয়ার পাশাপাশি ফল খেতে পারবে তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে খেতে হবে। এবং এই ফলটি ভরা পেটে যেমন সকাল দুপুর বিকাল বেলায় খাওয়া উচিত যেহেতু এই ফলটি কিছুটা টকের কারণে রাতের বেলায় না খাওয়াই ভালো। রাত্রি বেলায় এই ফলটি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে এবং বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। তাই বলা যায় এই ফলটির দিনের বেলায় খাওয়া ভালো তবে খাওয়ার পূর্বে সকালে নাস্তা করে নিতে হবে।

ধন্যবাদ***



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url