পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা, অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

 সারা বছর পাওয়া যায় এমন একটি ফল পেয়ারা। দেশীয় এই ফল দামে সস্তা ও সহজ লভ্য। অন্যান্য ফলের তুলনায় পেয়ারার পুষ্টিগণ অনেক বেশি।  পেয়ারায় রয়েছে  প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা আমলকি ছাড়া অন্য যে কোন ফলে পাওয়া যায় না। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ পেয়ারা রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা।


স্বাদে পুষ্টিগুণ আর স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখিলে পেয়ারা খেলে প্রচুর  লাভ। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা রাখা যেতে পারে। এতে আছে আন্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন সি ও লাইকোপেন যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকারী। পেয়ারার বিশেষ পাঁচটি গুণের মধ্যে রয়েছে এটি ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, চোখের জন্য ভালো, পেটের জন্য উপকারী আর ক্যান্সার প্রতিরোধী।

বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি পেয়ারায় ৪টি কমলা লেবুর সমান পুষ্টিগুণ বিশেষ করে ভিটামিন সি রয়েছে। ১টি পেয়ারায় রয়েছে ৪টি আপেল ও ৪টি কমলা লেবুর সমান পুষ্টিগণ। এতে আসে প্রচুর পরিমাণ পানি ফাইবার ভিটামিন এ, বি, কে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ। পেয়ারা ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। এতে ২১১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি মুখ গহবর, দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখে।

সাধারণত ফলে ভিটামিন এ সরাসরি পাওয়া যায় না এটি প্রথমে ক্যারোটিন রূপে থাকে পরবর্তী সময়ে তার ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়। কেরোটিন শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। চোখের রেটিনা ও কোষের সুস্থতা বজায় রাখতে এটি সাহায্য করে। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ

প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় শূন্য দশমিকের ২১ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি ওয়ান ও শূন্য দশমিক শূন্য  ৯ মিলিগ্রাম বি টু পাওয়া যায়।

প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ৭৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১ দশমিক  ৪ গ্রাম প্রোটিন, ১ দশমিক ১ গ্রাম স্নেহ ও ১৫ দশমিক ২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।

পেয়ারা নানা রকম খনিজ উপাদানের ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ৬ গ্রাম মিনারেল,  ০.০৩ মিলিগ্রাম থায়ামিন ,০.০৩ রিবোফ্লেভিন ১ দশমিক ৪ ,মিলিগ্রাম আয়রন, ২৮ মিলিগ্রাম ফসফরাস  ও ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। 

আরো পড়ুন ঃ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

ডায়াবেটিস রোধ

নিয়মিত পেয়ারা খেলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। কারণ পেয়ারা যে আঁশ আছে তা শরীরের চিনি শোষণ কমাতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ

পেয়ারার যে পরিমাণ ভিটামিন  সি থাকে তা শরীরে গেলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।

দৃষ্টিশক্তির জন্য

পেয়ারায় থাকা ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায় রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে।

ডায়রিয়া রোধে

পেয়ারা ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে পারে। তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে অনেকটা। পেয়ারার আছে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা।

ক্যান্সার প্রতিরোধী

ক্যান্সার প্রতিরোধে ও পেয়ারা কাজ করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, লাইকোপেন, ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে পারে। নির্দিষ্ট করে বললে পোস্টেড ক্যান্সার আর স্তন ক্যান্সারের জন্য পেয়ারা উপকারী।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ

গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্তচাপ ও রক্তের লিপিড কমে যায় আসে। পেয়ারাতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। লাইকোপেন সমৃদ্ধ গোলাপী পেয়ারা নিয়মিত খেলে তা কার্ডিও ভাস্কুলার রোগের ঝুঁকিও কমে আনতে সহায়তা করে।

ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করে ঃ

শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা লাগা সর্দি-কাশিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলে পেয়ারা। বিভিন্ন ঠান্ডা জনিত সমস্যা যেমন ব্রঙ্কাইটিস প্রতিরোধ করে পেয়ারা। আয়রন এবং ভিটামিন সি থাকায় পেয়ারা শ্লেষ্মা কমিয়ে দেয়।

স্ট্রেস দূর করে ঃ

স্ট্রেস দূর করতে দারুন কাজ করে পেয়ারা। পেশী আর স্নায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। চাপ কমায় শক্তি বাড়ায়।

আরো পড়ুন ঃ কালোজিরা উপকারিতা, অপকারিতা 

পেটের সমস্যা ঃ

যেকোনো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা পেটের গোলযোগে সবচেয়ে কার্যকরী হলো পেয়ারা। এছাড়া  পেয়ারার রস কোষ্ঠকাঠিন্য আমাশয় পেটের অসুখ সারাতে খুব ভালো কাজ করে ও পেয়ারা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ত্বক ও চুলের পরিচর্যা ঃ

পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের রুক্ষ ভাব দূর করে ও শীতে পা ফাটা রোধ করে তারুণ্য ধরে রাখে দীর্ঘদিন।

পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে ঃ

অনেকেরই পিরিয়ড চলাকালে পেটে তীব্র ব্যথা হয় এবং প্রতিকারে ওষুধ সেবন করতে হয়। যদি কেউ পেয়ারার পাতা চিবিয়ে বা রস খান তাহলে তার পিরিয়ডের ব্যথা দ্রুত সময়ে উপশম হতে পারে।

পেয়ারার ১০ টি পুষ্টি ও গুনাগুণ

  • এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায় যা কমলা লেবুর চেয়েও কয়েক গুণ বেশি।
  • পেয়ারাতে আছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।
  • এতে আছে যথেষ্ট পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস পটাশিয়াম ফলিক অ্যাসিড নিকোটিন অ্যাসিড।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেয়ারা বেশ কাজ করে।
  • এটি রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে এবং পোস্ট কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে হৃদ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পেয়ারা খেতে পারে।
  • অ্যাজমা, স্কার্ভি, স্থূলতা,  ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি অসুখের ক্ষেত্রেও পেয়ারা বেশ উপকারী।
  • জটিল, শর্করা, তত্তসমৃদ্ধ পেয়ারা রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পেয়ারা পাতার জুস গ্যআস্টআইটইসএর এর সমস্যায় উপকারী।
  • পেয়ারা ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং এই ফলের রস সর্দি কাশি কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশাসহ পেটের অসুখ সারাতে পারে।
  • বয়সের সঙ্গে জড়িত নানা রোগ  যেমনঃ স্মৃতিভ্রংশ (আলজেইমার ), চোখের ছানি, আর্থরাটিস বা হাঁটু ব্যথা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ধন্যবাদ সবাইকে***


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url