রাজশাহী বাঘা মসজিদের ইতিহাস

 

রাজশাহী জেলা সদর হতে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে বাঘা উপজেলায় এই ঐতিহাসিক মসজিদ টি অবস্থিত। সুলতান নাসির উদ্দিন নুসরাত শাহা ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন।



পোস্ট সূচিপত্রঃ

ইতিহাসঃ

মসজিদটি ১৫২৩ হতে ১৫ ২৪ সালে (৯৩০ হিজরী) হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহের পুত্র সুলতান নুসরাত শাহ নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই মসজিদের সংস্কার করা হয়।  মসজিদের গম্বুজ গুলো ভেঙ্গে গেলে ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদে নতুন করে সাদ দেওয়া হয় ১৮৯৭ সালে।

এ ছাড়াও পাকা মসজিদে পাশে রয়েছে একটি মাজার শরীফ।

স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য ঃ

মসজিদে ২৫৬ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। সমভূমি থেকে ৮ হতে ১০ ফুট উঁচু করে মসজিদের আঙিনা তৈরী করা হয়েছে। উত্তর পাশের ফটকের উপরের স্তম্ভ ও কারুকাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। মসজিদটিতে দশটি গম্বুজ আছে। আর ভিতরে রয়েছে ছয়টি স্তম্ভ। মসজিদটিতে চারটি মেহরাব রয়েছে যা অত্যন্ত কারুকার্য খচিত। দীর্ঘ ৭৫ ফিট প্রস্থ ৪২ ফুট, ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। দেয়াল চওড়া ৮ ফুট গম্বুজের ব্যাস ৪২ ফুট, উচ্চতা ১২ ফুট। চৌচালা গম্বুজের ব্যাস ২০ ফুট উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। মাঝখানে দরজার উপর ফারসি ভাষায় লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে। মসজিদটির গাঁথুনি চুন শুরকি দিয়ে। ভেতরে এবং বাইরের দেয়ালে মেহরাব ও স্তম্ব রয়েছে। বাঘা মসজিদের দৈর্ঘ্য ২২.৯২ মিটার, প্রস্থ ১২.১৮ মিটার এবং উচ্চতা ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি ও এর দেওয়াল ২.২২ মিটার পুরু। এই মসজিদটি চারদিক হতে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং প্রাচীরের দুদিকে দুটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। মসজিদের ভিতরে বাহিরে সর্বোচ্চ  টেরাকোটার নকশা বর্তমানে রয়েছে। মসজিদের পাশে বিশাল দিঘী ও একটি দর্শনীয় স্থান।

আরো পড়ুন ঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনা মসজিদের ইতিহাস

বিস্তারিত বিবরণ ঃ

বাঘা মসজিদটির গাঁথুনি চুন এবং শুঁড়কি দিয়ে। মসজিদের ভিতরে এবং বাহিরের দেওয়ালে সুন্দর মেহরাব ও স্তম্ব রয়েছে। এছাড়া আছে পোড়ামাটির অসংখ্য কারুকাজ যার ভিতরে রয়েছে আম গাছ, শাপলা ফুল, লতাপাতা সহ ফার্সি ভাষায় খোদাই শিল্পে ব্যবহৃত হাজার রকম কারুকাজ। এছাড়া মসজিদ প্রাঙ্গণের উত্তর পাশেই রয়েছে হযরত শাহাদৌলা ও তার পাঁচ সঙ্গীর মাজার। বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসাইন শাহার পুত্র নাসির উদ্দিন নুসরাত শাহ জনকল্যাণার্থে  মসজিদের সামনেই একটি বিশাল দিঘী খনন করেন। শাহী মসজিদ সংলগ্ন এ দিঘী টি ৫২ বিঘা জমির উপর রয়েছে।

এই দিঘির চারি পাশে রয়েছে সারিবদ্ধ নারিকেল গাছ। প্রতিবছর শীতের সময় এই দিঘীতে অসংখ্য অতিথি পাখির কলতানে এলাকার মুখরিত হয়ে ওঠে। বর্তমানে দিঘীটির চারটি বাঁধানো পাড় নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া এ মসজিদ সংলগ্ন জহর খাকি পীরের মাজার রয়েছে। মূল মাজারের উত্তর পাশে রয়েছে তার কবর। এছাড়া মসজিদ সংলগ্ন মাটির নিচে থেকে মহল পুকুর আবিষ্কৃত হয়। ১৯৯৭ সালে মাজারের পশ্চিম পাশে খনন কাজের ফলে ৩০ ফুট বাই ২০ ফুট আয়তনের একটি বাধানো মহল পুকুরের সন্ধান মিলেছে। এই পুকুরটি একটি সুরঙ্গ পথ দিয়ে অন্দরমহলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তিন দিক থেকে বাধানো সিঁড়ির ভিতরে নেমে গেছে। মসজিদের ভিতরে ও বাহিরে রয়েছে প্রচুর পোড়ামাটির ফলক। মসজিদের ভিতরে উত্তর-পশ্চিম কোণে একটু উঁচুতে নির্মিত একটি বিশেষ নামাজের কক্ষ আছে। এ মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় প্রতিবছর ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ৩ দিন পর্যন্ত বাঘার মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলাটি ৫০০ বছরের ঐতিহ্য।

ধন্যবাদ***

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url