পুরানো দিনের কবিতা সমূহ
কাজলা দিদি
যতীন্দ্র মোহন বাগচী
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে,
থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই,
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটা কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন
দিদি বলে ডাকি তখন,
ও ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল বিয়ে হবে;
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে
আমিও যদি লুকায় গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে?
আমিও নাই--- দিদিও নাই---- কেমন মজা হবে!
ভূঁই চাঁপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে
বুলবুলিটা লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিওনা মা ছিঁড়তে গিয়ে ফল,
দিদি যখন শুনবে এসে বলবি কিনা বল।
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর তলে পুকুর পাড়ে
ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে,,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না তাইতো জেগে রই
রাত্রি হোল, মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
বাবুরাম সাপুড়ে
সুকুমার রায়
বাবুরাম সাপুড়ে
কোথা যাস বাপুরে?
আয় বাবা দেখে যা,
দুটো সাপ রেখে যা।
যে সাপের চোখ নেই,
শিং নেই, নখ নেই,
ছোটের না কি হাঁটে না
কাউকে যে কাটে না,
করে নাকো ফোসফাঁস
মারে নাকো ঢুঁশঢাঁশ,
নেই কোন উৎপাত
খায় শুধু দুধ ভাত।
সেইসব জ্যান্ত
গোটা দই আনত
তেরে মেরে ডান্ডা
করে দেই ঠান্ডা।
আসমানী
জসীমউদ্দীন
আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়িত তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়ায় দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।
পেটটি ভরে পাই না খেতে বুকে ক-খান হাড়,
সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।
মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ রাশি,
থাপরেতে নিভিয়ে দেছে দারুন অভাব আসি।
পড়নে তার শতকে তালীর শতেক ছেঁরা বাস,
সোনালী তার গা বরনের করছে উপহাস।
ভ্রমর কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক হাসি,
সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি।
বাঁশির মতো সুরটি গলায় ক্ষয় হলো তাই কেঁদে,
হয়নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে।
আসমানিদের বাড়ির ধারে পদ্মা পুকুর ভরে,
ব্যাঙের ছানা শ্যাওলা পানা কিল-বিল-বিল করে।
ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে,
সেই জলেতে রান্না-খাওয়া আসমানীদের চলে।
পেটটি তাহার দুলছে পিলেয়, নিতুই যে জ্বর তার,
বৈদ্য ডেকে ওষুধ করে পয়সা নাহি আর।
সফদার ডাক্তার
হোসনে আর
সফদার ডাক্তার মাথা ভরা টাক তার
খিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ে,
চেয়ারেতে রাত দিন বসে কোনে দুই- তিন
পরে বই আলোটারে নিভিয়ে।
ইয়া বড় গোঁফ তার, নাই যার জুড়িদার
শুলে তার ভুঁড়ি ঠেকে আকাশে
নুন দিয়ে খায় পান সারাক্ষণ গায় গান
বুদ্ধিতে অতি বড় পাকা সে।
রোগী এলে ঘরে তার খুশিতে সে চারবার
কষে দেয় ডন আর কুস্তি,
তারপর রুগীটারে গোটা দই চাটি মারে
যেন তার সাথে কত দোস্তি।
ম্যালেরিয়া হলে কারো নাই আর নিস্তার
ধরে তারে কেঁচো দেয় গিলিয়ে
আমাশয় হলে পরে দুই হাতে কান ধরে
পেটটারে ঠিক করে কিলিয়ে।
কলেরা রোগী এলে দুপুরের রোদে ফেলে,
দেই তার কইয়িন খাইয়ে।
তারপর দুই টিন পচা জলে তারপিন
ঢেলে তারে দেয় শুধু নাইয়ে।
ডাক্তার সফদার নাম ডাক খুব তার
নামে গাঁও থরথরি কম্প,
নাম শুনে রোগী সব করে জোর কলরব
পিটান দিয়ে দেয় লম্ফ।
একদিন সককালে ঘটলো কি জঞ্জাল
ডাক্তার ধরে এসে পুলিশে,
হাত করা দিয়ে হাতে নিয়ে যায় থানাতে
তারিখটা আষাঢ়ের উনিশে।
ধন্যবাদ***
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url