বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগণ
বেল চেনে না এমন ব্যক্তি খুব কমই আছে। বেল আমরা সকলেই প্রায় কম বেশি খেতে ভালবাসি। বেলের পাতা ফুল এবং ফল সবই আমাদের জন্য খুবই উপকারী। গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে বেলের শরবত। এছাড়াও বেল আরো কি কিভাবে উপকার করে এসব সম্পর্কে বিস্তারিত আজ জেনে নিবো।
বেলের উপকারিতা সমূহ
ডায়াবেটিস কমাতে বেল সাহায্য করে
পাকা বেল ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে, পাকা বেলের মধ্যে আছে মেথানল নামক একটি উপাদান। যা ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে।
স্কার্ভি কমাতে সাহায্য করে
স্কার্ভি হলো একটি দাঁতের সমস্যা। যেটি ভিটামিন সি এর অভাবে হয়। বেলে এই রোগের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে, আর বেলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি। যা আমাদের দৈনন্দিন ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আরো পড়ুন ঃআঙ্গুরের উপকারিতা পুষ্টিগণ ও লাল আঙ্গুরের উপকারিতা
যক্ষা কমাতে সাহায্য করে
পাকা বেলের মধ্যে আছে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান যেটি যক্ষা কমাতে সাহায্য করে।
বেল ক্যান্সার রোগ থেকে দূরে রাখে
ক্যান্সার থেকে আমরা সবাই দূরে থাকতে চাই। আর এ বেল এই ক্যান্সার থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। বেলের মধ্য আছে আন্টি প্রলেফিরেটিভ এবং অ্যান্টি মোটাজেন এর নামক দুটি উপাদান। এই দুটো উপাদান টিউমার হতে বাধা দেয়। আর বেলের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ক্যান্সার কোষ গঠনে বাধা দেয়।
বেল রক্ত শুদ্ধ করে
আমাদের শরীরের মধ্যে প্রধান উপাদান রক্ত, আর রক্তের মাধ্যমে পুষ্টিগুণ পুরো শরীরে প্রবাহিত হয়। তাই রক্তকে শুদ্ধ থাকা খুবই দরকার । রক্ত শুদ্ধ করতে বেল খুবই ভালো কাজ করে।
বেল এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে
বেল এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে প্রতি ১০০ গ্রাম বেলের মধ্যে ১৪০ ক্যালোরি এনার্জি থাকে। বেল মেটাবলিক স্পিড বাড়াতে সাহায্য করে আর বেলের মধ্যে আছে হাই প্রোটিন যার ফলে বেশি তাড়াতাড়ি সোজাগ হয়।
বেল পেপটিক আলসারের ওষুধ
বেলের সার্সের মধ্যে আছে ফাইবার। যা আলসার উপশমের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সপ্তাহে অন্তত ৩দিন বেলের শরবত খান আলসার কমানোর জন্য।
বেল ডায়েরিয়া কমাতে সাহায্য করে
বেল ডায়েরিয়া কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি অনেকদিন ধরে ডায়রিয়ায় ভুগেন তাহলে বেল খান। কাঁচা বেলকে টুকরো টুকরো করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিন তারপর সেটা গুড়ো করে নিন। আর সেই গুড়ো এক চামচ করে নিয়ে ব্রাউন সুগার আর গরম পানিতে ভালো করে মিশিয়ে নিন । তারপর পান করুন দিনে ২ বার পান করুন।
বেল কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে
বেল পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। নিয়মিত প্রতিদিন ১ মাস যদি আপনি বেলের শরবত খেতে পারেন তাহলে আপনার কোষ্টকাঠিন্যর সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
বেল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে
বেল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কারণ বেল রক্তচাপ কমাতে ও সাহায্য করে। বেলের শরবত খেলেই হবে।
বেল চোখের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে
বেল আমাদের চোখের জন্য বেশ উপকারী । কারণ বেলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ। যা চোখের জন্য বিশেষ উপকারী একটি উপাদান। ভিটামিন এ চোখের পুষ্টি জোগায় ।চোখের দৃষ্টিশক্তির প্রখর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও চোখের বিভিন্ন রোগ যেমন রাতকানা গলুকমা জেরসিস এই সবসমস্যা থেকে চোখের রক্ষা করে।
বেল হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
বেল হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ফলে গ্যাস অম্বলের মত সমস্যা হয় না। কারণ বেলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য আঁশ, ফাইবার। যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন ঃপেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা, অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
কাঁচা বেল খাওয়ার উপকারিতা
- কাঁচা বেল কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে। যদি এই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয় তাহলে কাঁচা বেলকে পুড়িয়ে রস করে খেতে পারেন । এভাবে দুই থেকে তিন মাস একটানা কাঁচা বেল পুড়িয়ে রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধান হতে পারে।
- কাঁচা বেলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে আন্টি প্রলেপফেরেটিভ এবং আন্টি মোটাজেন উপাদান। যা ক্যান্সার নামক মরণ ব্যাধি থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক।
- কাঁচা বেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। যা আমাদের শরীরের ভিটামিন সি এর অভাব পূরণে সাহায্য করে।
- কাঁচা বেলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে মেটাবলিক উপাদান। যা আমাদের শরীরের এনার্জি লেভেলের পরিমাণ বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- কাঁচা বেল আমাদের অগ্নি উদ্দীপক কফ এবং বায়ু নাশক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পাকা বেলের উপকারিতা
- পাকা বেল ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। কারণ পাকা বেলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ মেনথাল নামক উপাদান যা ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে।
- পাকা বেল শিশুদের স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- পাকা বেল আলসারের জন্য উপকারী। কারণ পাকা বেল এর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে শাস এবং ফাইবার, যা আলসারের জন্য বেশ কার্যকরী উপাদান।
- আমাদের শরীরে এনার্জি লেভেল বাড়াতে পাকা বেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- পাকা বেল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কারণ পাকা বেলের মধ্যে আছে মেন্থল নামক একটি উপাদান। যা রক্তে সুগারের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়ে থাকে।
- আরো পড়ুন ঃ আনারসের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
কাঁচা বেল খাওয়ার নিয়ম
- প্রথমে কাঁচা বেল আগে ৪ ভাগ করে কেটে রোধে শুকিয়ে সুট তৈরি করে নিতে হয়। তারপর এই শুট গুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সে পানি পান করতে পারলে আমাদের অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- কাঁচা বেল আগুনের আঁচে পুড়িয়ে নিতে হবে তারপর ভেতরের দানা গুলোকে চামচ দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে হবে। তারপর পরিমাণ মতো পানি আর চিনি বা আখের গুড় দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর এই মিশ্রণটি হয়ে গেলে তারপর খেতে হবে।
পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম
- পাকা বেলকে গাছ থেকে পেরে এনে সরাসরি ফাটিয়ে খাওয়া যায়।
- পাকা বেল কে আমরা চুলায় পুড়িয়ে চিনি বা আখের রস মিশিয়ে খেতে পারি। যারা বেল এভাবে সরাসরি খেতে পারবেন না, তারা এভাবে বেলকে চুলার মধ্যে পুরিয়ে তারপর ভিতরের থকথকে দানাগুলো দিয়ে পানি, চিনি বা আখের গুড় মিশ্রণ করে খেতে পারেন।
বেলের শরবত তৈরি করার নিয়ম
প্রথমে একটি বেলকে আমরা ভালোভাবে ফাটিয়ে চুলার তাপে পুড়িয়ে নিবো। তারপর বেলটাকে ভালোভাবে ধুয়ে নিবো। তারপর বিলের ভিতরে থাকা দানাগুলো চামচ দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে হবে। এরপর পরিমাণ মতো পানি দিয়ে চিনি বা আঁখের গুড় দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এভাবেই তৈরি করা হয় বেলের শরবত।
বেল খাওয়ার অপকারিতা
- অতিরিক্ত মাত্রায় বেল খেলে আমাদের পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় বেল খেলে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
প্রতি ১০০ গ্রাম বেলের মধ্য যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ
- প্রোটিন ১.৮ গ্রাম।
- কার্বোহাইড্রেট ৩১. ৮ গ্রাম।
- ফ্যাট ০.৩ গ্রাম।
- ভিটামিন এ ৫৫ মিলিগ্রাম।
- ভিটামিন সি ৬০ মিলিগ্রাম।
- ক্যালসিয়াম ৮৫ মিলিগ্রাম।
- পটাশিয়াম ৬০০ মিলিগ্রাম।
- খাদ্য শক্তি ১৪০ ক্যালোরি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url