বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ১৯৭১ সাল
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা এত সহজে অর্জিত হয়নি। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের মধ্য দিয়ে ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। বর্তমান বাংলাদেশ "পূর্ব বাংলা" নামক প্রদেশ হিসেবে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয় ।পাকিস্তান সরকারের নানা বৈষম্যের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ৬ দফা কর্মসূচি, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান অন্যতম। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ জয়লাভ করলেও ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের গড়িমসি শুরু করে। ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। রেসকোর্সের বিশাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম' এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত
তিনি আরো বলেন, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। মূলত বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পরেই দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ কয়েকটি শহরের পাকিস্তান সরকার জনগণের বিরুদ্ধে এক বর্বর সামরিক অভিযান শুরু করে। এই অভিযানের নাম ছিল "অপারেশন সার্চলাইট"।
ঐ কালো রাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা বন্ধুক কামানের গোলায় ঢাকায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল গুলোতে ঢুকে অনেক ছাত্র শিক্ষককে হত্যা করে।
পুরান ঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে তারা হামলা চালায়, অসংখ্য মানুষ হত্যাসহ অত্যাচার ও তাদের ঘরবাড়ি লুটপাট করে ও জ্বালিয়ে দেয়।
ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বন্দি হওয়ার পূর্বে মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে রাজারবাগ পুলিশলাইন্সে কর্মরত বীর বাঙালি পুলিশ সদস্যরা।
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। এটি মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এই সরকারের রাষ্ট্রপতি। তবে তার অবর্তমানে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তাজউদ্দিন আহমেদ। বর্তমান মেহেরপুর জেলায় বৈদ্যনাথতলা গ্রামের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে।
আরো পড়ুনঃ বিশ্বের স্থাপত্য বিস্ময়কর স্থান সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। ২১ নভেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথকমান্ড গঠিত হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের পরে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান বাহিনীর লেঃ জেনারেল নিয়াজী ৯৩ হাজার সৈন্যসহ যৌথ বাহিনীর যৌথবাহিনীর লেঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
শরণার্থীদের আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ, প্রবাসী সরকার গঠনে সহায়তা, আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠন, যৌথকমান্ড গঠনের পর সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল ভারত। সর্বপ্রথম ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাশিয়া আমাদের পক্ষে ছিল। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল পাকিস্তানের পক্ষে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ৭ জন বিশিষ্ট খেতাব পেয়েছেন। তারা হলেন ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ, সিপাহী মোস্তফা কামাল, ফাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান, ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ, সিপাহী হামিদুর রহমান, স্কোয়াডন ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। মহান মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের ভালোবাসার বাংলাদেশ।
জয় বাংলা***
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url