খলিফা হযরত আবু বক্কর (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
আজ এই আর্টিকেলটিতে হযরত আবু বক্কর (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর যে চারজন খলিফা হয়েছিলেন, তাঁদেরকে খোলাফায়ে রাশিদিন বলা হয়। হযরত আবু বক্কর (রাঃ) ছিলেন খোলাফায়ে রাশিদিনের প্রথম খলিফা। তিনি ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের তাইম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কুহাফা উসমান আর মাতার নাম সালমা। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সর্বাধিক প্রিয় সাহাবী ছিলেন হযরত আবু বক্কর (রাঃ) এর সাথে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব ছিল।
আরো পড়ুন ঃ পরকালের আজাব থেকে মুক্তি সম্পর্কিত দোয়া সমূহ অর্থসহ
শিশুকাল থেকে আবু বক্কর (রাঃ) কোমল হৃদয় ও সুন্দর চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। পবিত্র কুরআনের জ্ঞানও ছিল তাঁর অসাধারণ। তিনি বড় কবি, সুবক্তা ও দানশীল ছিলেন।
তার পিতা ছিলেন একজন বড় ব্যবসায়ী। শিক্ষা শেষে তিনি পিতার ব্যবসায়ী দেখাশুনা করতেন। নবিজিকেও তিনি ব্যবসার কাজে সাহায্য করতেন। মুহাম্মদ (সাঃ) নবুয়ত লাভ করার পর গোপনে আল্লাহর বাণী প্রচার করতে শুরু করলেন। এতে অনেক বাধা বিঘ্ন আসতে লাগল। নবীজির দাওয়াত পেয়ে আবু বক্কর (রাঃ) পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা-মাতা ও মহানবী (সঃ) কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। সুখে দুঃখে আবু বক্কর (রাঃ) নবীজির সাথে ছায়ার মতো থাকতেন।
আরো পড়ুন ঃ বিপদ আপদ থেকে রক্ষা সম্পর্কিত দোয়া অর্থসহ বিস্তারিত
আবু বক্কর (রাঃ) ছিলেন সাহসী ও প্রভাবশালী। তাই তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে শুরু করেন। ইসলাম ধর্ম প্রচার করার সময় মক্কার অনেক লোক মহানবী (সাঃ) এর সঙ্গে শত্রুতা শুরু করেছিল। সেই সময় আবু বক্কর (রাঃ) মহানবী (সাঃ) কে সাহস যুগিয়েছিলেন। অনেক অত্যাচার ও সহ্য করেছিলেন। মহানবী (সাঃ) কে কাফেররা হত্যা করতে চাইলে তিনি আল্লাহর আদেশে হযরত আবু বক্কর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে মদিনায় হিজরত করেছিলেন।
আবু বকর (রাঃ) নবীজির কাছে শুনেছিলেন ক্রীতদাসকে মুক্তি দেওয়া সওহয়াবের কাজ। তাই তিনি নিজের অর্থে হযরত বিল্লাল (রাঃ ) এবং আরো অনেক ক্রীতদাস ক্রয় করে তাদেরকে মুক্তি দেন।
আরো পড়ুন ঃকিয়ামতের ১৩১টি আলামত সম্পর্কে বিস্তারিত
তাবুক যুদ্ধের সময় হযরত আবু বক্কর (রাঃ) তাঁর সমস্ত সম্পদ মহানবী (সাঃ) কে দান করেন। নবীজি (সাঃ) অবাক হয়ে আবু বক্কর (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেন, "তুমি ঘরে কি রেখে এসেছ?" তিনি বললেন, "আল্লাহ তার রাসূলকে রেখে এসেছি।"
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর হযরত আবু বক্কর (রাঃ) সমগ্র মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন গরিবের বন্ধু। নিঃস্ব, দুঃখী ও অভাবী মানুষের আপনজন। খলিফা হয়েও তিনি তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাননি। মহান সেবক ছিলেন খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ)। মহানবী (সাঃ) বলেছিলেন, "ইসলাম প্রচারে সামর্থ্য ও ধন সম্পদ দিয়ে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন আবু বক্কর (রাঃ)।"
আরো পড়ুন ঃরোজা সেহরি ইফতার তারাবির নিয়ত দোয়া ও মোনাজাত
আবু বক্কর (রাঃ) ছিলেন দায়িত্বশীল মানুষ। কিভাবে সাধারণ মানুষের ভালো করা যায় এই ভাবনা ছিল তাঁর। তিনি রাজকোষের রক্ষক ছিলেন। অভাবের জন্য উপোস করলেও তিনি রাজকোষের কোন কিছু ভোগ করেন নি।
হযরত আবু বকর (রাঃ) ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার মেয়ে আয়েশা (রাঃ) কে বলেছিলেন, "মা আয়েশা, আমার কাছে রাষ্ট্রের একটি উট ও একজন দাস আছে। আমার মৃত্যুর সাথে সাথে তুমি তা পরবর্তী খলিফা হযরত ওমর রাঃ এর নিকট পৌঁছে দিও। কোন অবস্থাতেই ভুল করবে না।"
সত্যি মহৎ মানুষ ছিলেন হযরত আবু বক্কর (রাঃ)।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url