রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি সম্পর্কিত দোয়া অর্থ সহ বিস্তারিত
আজ এই আর্টিকেলটিতে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তির দোয়া বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
১। রোগ থেকে মুক্তির দোয়া
উচ্চারণঃ ওয়া ইয়াশফি ছুদূরা ক্বাওমিম মুমিনীন।
অর্থঃ আল্লাহ তুমি মুমিনদের অন্তরকে রোগমুক্ত করে দাও।
(সুরা তাওবা : ১৪)
উচ্চারণঃ ওয়া শিফাউল লিমা ফিস ছুদূর । ওয়া হুদাওঁ ওয়া রহমাতুল লিলমু'মিনীন।।
অর্থঃ (কোরআন হচ্ছে) মু'মিনদের জন্য অন্তরের রোগসমূহের প্রতিষেধক।
(সূরা ইউনুস : ৫৭)
উচ্চারণঃ ওয়া নুনাযযিলু মিনাল কুরআ-নি মা- হুয়া শিফাউওঁ ওয়া রহমাতুল লিলমু'মিনীন।
অর্থঃ কোরআনে আমি এমন বিষয় নাযিল করেছি যা ঈমানদারদের জন্য রোগমুক্তি ও রহমত।
(সূরা বনী ইসরাইল : ৮২)
উচ্চারণঃ ওয়া ইযা মারিদ্বতু ফাহুয়া ইয়াশফীন।
অর্থঃ যখন আমি অসুস্থ হই তখন আল্লাহ ওই আমাকে আরোগ্য দান করেন।
(সূরা শুয়ারা : ৮০)
এ আয়াতগুলো কোরআনের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত, যার ভেতরে সেফা শব্দটি রয়েছে। এজন্য উপরোক্ত আয়াতগুলোকে আয়াত -এ শেফা বলা হয়। রোগ নিরাময়ের জন্য এই আয়াতগুলো অত্যান্ত ফল প্রসু।
২। কঠিন রোগ থেকে নিরাময়ের দোয়া
উচ্চারণঃ রব্বি আন্নী মাসসানিইয়াদ্ব দ্বুররু ওয়া আনতা আরহামুর র-হিমীন।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েছি, আমায় তুমি নিরাময় কর, কেননা তুমি হচ্ছো দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।
(সুরা আম্বিয়া: ৮৩)
৩। মাথাব্যথা দূর করার দোয়া
উচ্চারণঃ লা ইয়ুছদ্দা' উনা আনহা ওয়া লা ইয়ুনঝিফুন।
অর্থঃ সেই পানীয় (পান করার) কারণে তাদের কোন মাথা ব্যাথা হবে না, তারা (কোন রকম) নেশাও করবে না ।
(সূরা ওয়াকিয়া :১৯)
৪। চোখের জ্যোতি বৃদ্ধির দোয়া
উচ্চারণঃ ফাকাশাফনা আনকা গীত্বাআকা ফআবআছআরউকআল ইয়াওমা হাদীদ।
অর্থঃ এখন আমি তোমার সামনে থেকে পর্দা উন্মোচন করেছি; আজ তোমার দৃষ্টিশক্তি হবে অত্যন্ত প্রখর।
(সূরা কাফ :২২)
৫। রক্ত বন্ধে করনীয়
ওহুদের যুদ্ধে রাসূল (সাঃ) এর চেহারায় জখম হয়েছিল। তাঁর সামনের দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং মাথার লোহার টুপি ভেঙ্গে জখম হয়েছিল। তখন আলী (রাঃ) গামলা দিয়ে পানি নিয়ে এলেন। ফাতেমা (রাঃ) রক্ত ধৌত করছিলেন আর আলী দেখলেন রক্ত বন্ধ হচ্ছে না বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। তখন তিনি যা করলেন তা হলো--
فَأُخِذَ حَصِيرٍ فَاخْرِقَ ، فَحَشِى بِهِ جرحه .
অর্থঃ একটি চাটাই নিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন। চাটায় পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর তা ক্ষতস্থানের উপর লাগিয়ে দিলেন । অতঃপর রক্ত নির্গত হওয়া বন্ধ হয়ে গেল।
(সহীহ বুখারী : ২৪৩)
৬। জ্বর প্রতিষেধক
উচ্চারণঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন---
الْحَمى مِن فَيعِ جَهَرَ فَابِردُوهَا بِالْمَاءِ أَوْ قَالَ بِمَاءِ زَمزَاً .
অর্থঃ জ্বর হলো জাহান্নামের হাওয়ার কাঠিন্য, একে পানি দ্বারা ঠান্ডা করো।
(সহীহ বুখারী : ৩২৬১)
৭। আগুনে পোড়া বা কাটার প্রতিষেধক
মুহাম্মদ ইবনে হাতিব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-একদিন আমি একটি গরম পাতিল ধরলে আমার হাত পুড়ে যায়। তখন আমার মা আমাকে এক লোকের কাছে নিয়ে গেলেন যিনি কবরস্থানে উপবিষ্ট ছিলেন। আমার মা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ; তিনি বললেন, আমি হাজির। তারপর আমার মা আমাকে তাঁর নিকটবর্তী করে দিলেন। ফলে তিনি আমার হাতে ফুঁক দিতে লাগলেন এবং কি যেন বলতে লাগলেন যা আমি বুঝতে পারিনি। পরে আমি আমার মাকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি কি বলছিলেন। মা বললেন তিনি বলেছিলেন-
উচ্চারণঃ আযহিবিল বা'সা রব্বান নাসি ওয়াশফি আনতাস শাফি লা শাফিয়া ইল্লা আনতা।
অর্থঃ হে মানুষের প্রতিপালক! কষ্ট দূর করে দাও। শেফা দান করো। তুমিই শেফা দানকারী। তুমি ব্যতীত কোন শেফা দানকারী নেই।
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা: ২৩৫৭৫)
৮। পেটের ব্যাথা হলে যা করতে হয়
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পালাতে তাড়াহুড়া করলেন, আমি ও তাড়াহুড়া করলাম। আমি সালাত শেষ করেই বসে পড়লাম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার দিকে তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি পেট ব্যাথা? আমি বললাম বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলুল্লাহ ! তিনি বললেন, তুমি দাঁড়াও এবং সালাত পড়ো। কেননা সালাতেই এর চিকিৎসা রয়েছে।
(সুনান ইবনে মাজাহ: ৩৪৫৮)
৯। শ্বেত পাগল হওয়া ও কুষ্ঠ রোগ থেকে বেঁচে থাকার দোয়া
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আ'উযুবিকা মিনাল বারিছি, ওয়াল জুনূন, ওয়াল যুযামী, ওয়া মিন সাইয়্যিইল আশক্বামি।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাচ্ছি তোমার কাছে শ্বেত, পাগল হওয়া, কষ্ঠ রোগ ও সমস্ত খারাপ রোগ থেকে।
(সুনান আবু দাউদ: ১৫৫৪)
১০। মূত্রনালীতে পাথর হলে যে দোয়া পড়তে হয়
উচ্চারণঃ রাব্বানাল্লাহুল্লাযী ফিসসামা-ই তাক্বদ্দাসাসমুকা আমরুকা ফিসসামাই ওয়াল আরদ্বি কামা রহমাতুকা ফিসসামাই ফাজয়া'ল রহমাতিকা ফিল আরদ্বি লানা হূবানা ওয়া খত্বাইয়ানা আনতা বব্বুত্ব ত্বইয়্যিবীনা আনযিল রহমাতান ওয়া শিফা আন মিন শিফাইকা আ'লা হাযাল ওয়াজায়ি।
অর্থঃ আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক। যিনি আসমানে রয়েছেন, তোমার নাম পবিত্র। তোমার হুকুম জমীনে ও আসমানে রয়েছে। যেমন তোমার রহমত রয়েছে আকাশের মধ্যে তেমনি তুমি তোমার রহমতকে জমীনে প্রচারিত করো। আমার গুনাহ ও অপরাধসমূহ মার্জনা করো। তুমি সকল সৎ ব্যক্তিদের প্রতিপালক। তুমি তোমার শেফা ভান্ডার থেকে শেফা এবং রহমতের ভান্ডার থেকে রহমত দান করো এ রোগের উপর।
( সুনান আবু দাউদ: ৩৮৯২)
১১। চক্ষু রোগের দোয়া
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা আযহিবু হাররহ ওয়া বারহা ওয়া ওয়াসবাহা।
অর্থঃ আল্লাহর নামে দোয়া করছি, হে আল্লাহ! চোখের গরম, চোখে ঠান্ডা এবং চোখের স্থায়ী ব্যাথা দূর করে দাও।
(বায়হাকী: ১০৮১৫)
১২। অস্থিরতায় আক্রান্ত হলে যে দোয়া পড়তে হয়
বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোক নবী (সাঃ) এর কাছে এসে তার নিঃসঙ্গতা ও বিষাদের কথা বললেন, তখন নবী (সাঃ) তাকে বললেন, বেশি বেশি নিন্মোক্ত দোয়াটি পড়।
উচ্চারণঃ সুবহানাল মালিকল কুদ্দূসি রব্বিল মালাইকাতি ওয়াররূহি জাল্লালতাস সামাওয়াতি ওয়ালআরদ্বা বিলই'যযাতি ওয়াল জ্বাবারূতি।
অর্থঃ পবিত্র মালিক অত্যন্ত পবিত্র এবং ফেরেশতাগণের ও জিবরাঈল এর প্রভু! তুমি আসমান ও জমীনকে তোমার সম্মান ও ক্ষমতা বলে শক্তিশালী করেছো।
বর্ণনাকারী বলেন, লোকটির বাক্যটি কয়েকবার পড়লে তার নিঃসঙ্গতা ও বিষাদ দূর হয়ে যায়।
(মুসনাদ আররুইয়ানী: ২৯২)
১৩। সুস্থতার জন্য দোয়া
সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে দেখতে এলেন, আমি ছিলাম অসুস্থ। তিনি বললেন, হে সালমান---
উচ্চারণঃ শাফাল্লাহু সাক্বামাকা ওয়া 'আফাফা ফী দীনিকা ওয়া জ্বিসমিকা ইলা মুদ্দাতি আজ্বালিকা।
অর্থঃ আল্লাহ তোমাকে তোমার রোগ থেকে মুক্ত করুন। তোমার গুনাহ মাফ করুন এবং তোমার মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তোমার শারীরিক ও ধর্মীয় ব্যাপারে তোমাকে নিরাপদে রাখুন।
(মুস্তাদরাক হাকিম: ২০১৪)
১৪। হেফাজতের দোয়া
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহিল্লাযী লা- ইয়াদ্বুররুু মায়া' ইসমিহী শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়া লা- ফিসসামায়ী ওয়াহু- ওয়াস সামীউ'ল আলীম।
অর্থঃ আল্লাহর নামে (আরম্ভ করছি), যার নামের সাথে জমিনে বা আসমানে কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না এবং তিনি সর্বশ্রোতা এবং মহাজ্ঞানী। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কেউ সকাল সন্ধ্যায় ৩বার এ দোয়া পাঠ করলে ঐ দিনে ও রাতে কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না।
(আবু দাউদ, তিরমিযী)
১৫। ৯৯ টি রোগের নিরাময় ও দুশ্চিন্তা দূর করার আমল
উচ্চারণঃ লা- হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ।
অর্থঃ এ দু'য়াটির মূল অর্থ হল, মানুষের যোগ্যতা, ক্ষমতা, প্রতিভা, শক্তি -সামর্থ্য সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। একমাত্র তিনিই এসব দেওয়ার মালিক। অন্য কারো পক্ষে এসব কিছু দেওয়া সম্ভব নয়।
এ ছোট দু'য়াটি ১বার উচ্চারণ করতে মাত্র চার -পাঁচ সেকেন্ড সময় এবং ১০০ বার পড়তে কয়েক মিনিট সময় ব্যয় হতে পারে। হাদীস শরীফে এই দু'য়াটিকে আল্লাহর আরশে আজিমের খাজানা বা কিরে ট্রেজারি বলা হয়েছে। কোনো কোনো হাদিসে একে জান্নাতের দরজা বলা হয়েছে।
(বুখারী: ৬৩৮৪, মুসলিম :২৭০৪)
আল্লাহ হাফেজ***
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url