ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

 ধনে পাতা খুবই পরিচিত একটি সবজি। ধনে পাতা কে মূলত আমরা সালাদ এবং রান্নার স্বাদ বানানোর কাজে ব্যবহার করে থাকি। তবে শুধু স্বাদ এবং ঘ্রাণ বাড়ানোর কাজে এর গুনা গুন শেষ হয়ে যায় না। এ পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো একটি শাক জাতীয় খাবার। ধনে পাতায় রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ লোহা ও ম্যাগনেসিয়াম এর মত বেশ কয়েকটি উপকারী খনিজ। এছাড়া ভিটামিন এ ফলিক এসিড এবং ভিটামিন কে এর যোগান দেয় এ পাতা । শুধু তাই নয় এই উদ্ভিদ অ্যান্টিসেপটিক অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং যে কোনো চুলকানি ও চামড়ার জ্বলনে গুরুত্বপূর্ণ ঔষুধ। অনেকেই আমরা ধনে পাতার উপকারিতা না জেনে নিয়মিত বিভিন্ন তরকারিতে ব্যবহার করি থাকি আজ জেনে নেই ধনে পাতার উপকারিতা।


আরো পড়ুনঃ পালং শাকের উপকারিতা

শীত পড়তে শুরু করেছে এর মধ্যেই বাজারে উঠে গেছে ধনে পাতা। অনেকেই তরকারির স্বাদ  বাড়াতে ধনেপাতা ব্যবহার করেন আবার ভর্তায় ও জায়গা করে নেয় এই সুগন্ধি ধনেপাতা। কিন্তু জানেন কি খাবার স্বাদ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ধনে পাতার রয়েছে একগুচ্ছ ঔষধি গুন

ধনে পাতার উপকারিতা

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে

ধনে পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ক্যারোটিনয়েড যা ভালো দৃষ্টি শক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি কনজাংটিভাইটিস নিরাময় করতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

ধনে পাতা ভিটামিন সি, ই ও এ থাকায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

ধনে পাতায় উজ্জ্বল সবুজ রং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতির কারণে যা এনজাইম কার্যকলাপকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। সুতরাং এটি ইনসুলিন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে যা রক্তের শর্করার মাত্রা কম করে।

কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে

আজকের জীবনযাত্রার প্রতিটি তৃতীয় ব্যক্তি উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন। ধনে পাতার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরল কমাতে এবং এলডিএল এর ভালো কোলেস্টেরল উন্নত সহায়তা করে।

হাড়কে মজবুত করে

ধনে পাতায় প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে যা হাড়কে মজবুত করে। শুধু তাই নয় ধনে হাড়কে বাতজনিত ব্যাথা থেকেও রক্ষা করে।

ত্বককে স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করে

আয়রন, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন এ এর পাওয়ার হাউজ হওয়ায় এটি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে এমন ফ্রী রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। অতিরিক্ত তেল শোষণ করার ক্ষমতার কারণে ধনের তৈলাক্ত ত্বকের প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। এটি একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল  এ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিফাংগাল এজেন্ট যা ত্বককে ঠান্ডা করতে এবং শীতল করতে সহায়তা করে।

আরো পড়ুনঃ তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টি গুনাগুন

ধনে পাতার উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ

  • ধনেপাতা খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায় ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
  • হজমে উপকারী ধনেপাতা শরীর ঠান্ডা থাকে এবং হজমে সাহায্য করে। তাছাড়া ধনেপাতা পেট ফাঁপা ও পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা দূর করে হজম শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। ধনেপাতা ক্ষুধা বৃদ্ধি করে থাকে এবং বায়ুনাশক।
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য ধনেপাতা বিশেষ উপকারী। এটি ইনসুলিন এর ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তের সুগারের মাত্রা কমায়।
  • ত্বক ও চুলের ক্ষয় রোধ করে ধনেপাতা । ধনে পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ ভিটামিন সি ফসফরাস ও ক্লোরিন। তাই প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে ধনেপাতা দারুন ভূমিকা পালন করে। ত্বক সুস্থ ও সতেজ রাখতে তাই ধনে পাতার উপকারিতা অনেক।
  • দেহের কাঁটা ছেঁড়া অংশগুলো দ্রুত শুকানোর জন্য খুবই উপকারী এই উপাদান। দেহের চুলকানি-পাঁচড়ায় ধনে পাতার রস লাগালে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।
  • ধনে পাতায় ভিটামিন এ থাকে প্রচুর পরিমাণে। আর চোখের পুষ্টি যোগায় এই ভিটামিন- এ। যাদের রাত কানা রোগ আছে তাদের জন্য ধনেপাতা অনেক উপকারী।
  • ধনে পাতার ফ্যাট স্যলুবল ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন 'এ ' ফুসফুস এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
  • ধনেপাতা অত্যন্ত স্বাদময় সবজি। আর এই ধনেপাতা বেটে ভর্তা করে খেলে মুখে রুচি বাড়ায় যে সাহায্য করে।
  • স্মৃতিশক্তি প্রখর এবং মস্তিষ্কের নার্ভ সচল রাখতে সাহায্য করে ধনেপাতা। ধনে পাতার ভিটামিন 'কে' অ্যালঝেইমার  রোগের চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী।
  • এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল অ্যান্টিইনফেকসাস ডিটক্সিফাইং উপাদান ভিটামিন 'সি' এবং আয়রন গুটি বসন্ত প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করে।
  • হাড় মজবুত করতে ধনে পাতার গুণ অপরিসীম ।এটি হাড়কে মজবুত করে সুতরাং ধনেপাতা নিয়মিত পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত।।

আরো পড়ুনঃ পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ 

তাছাড়া এতে রয়েছে আন্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান যা বাতের ব্যথাসহ হাড় এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশমে কাজ করে। মেয়েদের মাসিকের অতিরিক্ত ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ও ধনে পাতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধনে পাতা চিবিয়ে রস বের করে তা দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। ধনেপাতা মুখ গহবরের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ও লড়াই করে থাকে।

ধনে পাতার ব্যবহার

ধনেপাতা নিয়মিত আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা বুদ্ধিমানের কাজ । এগুলি আপনার ভাল, সবজি ছালাদ বা রাইতে যোগ করার চেষ্টা করুন। আপনার ত্বকের জন্য ধনে পাতার পেস্ট তৈরি করে মাখতে পারেন। তাজা ধনিয়া রস আপনার প্রস্তাবিত দৈনিক ভিটামিন এবং খনিজ গুলি পূরণে সাহায্য করার জন্য অনেক উপকারী। দিনে এক গ্লাস রস খাওয়ার চেষ্টা করুন অথবা আপনার বাটার মিল্ক গ্লাসে  ১ বা ২ চা চামচ রস যোগ করার চেষ্টা করুন।

ধনে পাতার ঔষধি গুনাগুন

  • ধনে পাতার মধ্যে রয়েছে বিরল ঔষধি নানা উপাদান যা রক্ত শোধন করে খাদ্যাভাসের দরুন আমাদের শরীরে রোজ তিলে তিলে জমা হতে থাকে বেশ কিছু ভারি ধাতু এবং বিষাক্ত দূষণকারী পদার্থ। এর থেকে শরীরে বহু রোগ ও অসুখ যেমন ক্যান্সার, হৃদরোগ, মস্তিষ্কের বিভাগ মানসিক রোগ কিডনি ও ফুসফুসের অসুখ এবং হাড়ের দুর্বলতা তৈরি হতে পারে। ধনেপাতা রক্ত প্রবাহ থেকে এই সমস্ত ক্ষতিকর উপাদান দূর করে শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
  • ধনে পাতায় রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ ও ম্যাগনেসিয়াম এর মত বেশ কয়েকটি উপকারী খনিজ। এছাড়া ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে এর যোগান দেয় ধনে পাতা। শুধু তাই নয় এই উদ্ভিদ অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টি ফাংগাল এবং যেকোনো চুলকানি ও চামড়ার জ্বলনে ও ব্যর্থ ঔষুধ। দিল্লির এইমস-এর গবেষণাগারে রিউম্যাটট্রক আর্থারাইটিস রোগে আক্রান্ত ইঁদুরের পায়ে ধনে পাতার রস প্রবেশ করালে তার শরীরের জ্বলন ও ফোলা ভাব দূর হতে দেখা গেছে।

ধনে পাতার অপকারিতা

ধনেপাতা উপকারিতা তবে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। অতিরিক্ত ধনেপাতা লিভারের কার্যক্ষমতা কে খারাপ ভাবে প্রবাহিত করে থাকে। এতে থাকা এক ধরনের উদ্ভিদ তেল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গ কে আক্রান্ত করে ফেলে। অতিরিক্ত ধনেপাতা নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই ধনেপাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। স্বাভাবিকভাবে ধনেপাতা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল বিষয়ক সমস্যা দূর করে থাকে। কিন্তু বেশি পরিমাণে ধনেপাতা সেবন পাকস্থলীতে হজম ক্রিয়ার সমস্যা তৈরি করে থাকে। ধনেপাতা অল্প খেলে পেটের সমস্যা দূর হয় কিন্তু কিন্তু এটি বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া ভ্রূণের বা বাচ্চার শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকারক।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধনেপাতা এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। চোখের দৃষ্টি ক্ষতি হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে সূর্যরশ্নির সংবেদনশীলতা বা সানলাইট সেনসিটিভিটি দেখা দিতে পারে এবং অত্যাধিক মাত্রায় খাওয়া হলে সানবার্ন হতে পারে। অবশ্য আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণে ধনেপাতা সেবন করি তা স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি করে না। অতিমাত্রায় রস সেবন করলেই ক্ষতির কারণ হয়।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url