করলা খাওয়ার উপকারিতা পুষ্টিগুণ গর্ভবতীদের জন্য করলা ও অপকারিতা
আজ এই আর্টিকেলটিতে আমরা করলার উপকারিতা অপকারিতা এবং করলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। করলা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। করলা খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং আমাদের শরীরে রোগ সংক্রমণ এর বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য করলা খেতে পারেন । আমাদের শরীরে হওয়া বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে করলা। করলায় রয়েছে রক্ত চিনি কমানোর উপাদান। আবার আমাদের অ্যাজমা এবং ব্রঙ্ক্রাইটিস শ্বাসরোগ ও গলার প্রদাহে উপকার পাওয়া যায় করলার জুস খেলে ।করলার আছে পালং শাকের চেয়ে অনেক ক্যালসিয়াম এবং কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম। করল্লাতে যে ভিটামিন সি আছে তা আমাদের শরীর স্বাস্থ্য দুটাই ভালো রাখে।
বর্তমান সময়ে মানুষের এত বেশি ফাস্টফুড খাওয়া বেড়ে গেছে যে মানুষ খুব কমই সবজি খায় এবং যা তাদের শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়। তবে খুব কম মানুষই জানেন এমন কিছু সবজি আছে যা কয়েকদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়। তেমনি একটি সবজির করলা যা টিসেল, কাকরোল, কাঁকরো, কোকোদা ইত্যাদি নামে পরিচিত। এটি অনেক দেশের চাষ করা হচ্ছে দৃষ্টিতে এটি করলার মতো হলেও করলার চেয়ে ছোট। এটি মিষ্টি করলা নামেও পরিচিত । এটি সাধারণত বর্ষাকালে বাজারে প্রদর্শিত হয়। এই সবজিতে এতটাই শক্তি আছে যে কয়েকদিন খেলে শরীর সুস্থ হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুনঃ আনারসের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
করলা খাওয়ার উপকারিতা
করলা সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর সবজি
আপনি কি জানেন করলা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সবজি এবং এটি ওষুধি আকারে ব্যবহৃত হয়। এটি হালকা বদহজম এবং এতে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান পাওয়া যায় যা মানব দেহে কে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
হার্ট অ্যাটাক রোধ করে
করলা রক্তের চর্বি তথা ট্রাইগ্লিসারাইড বা টিজি কমায় আর বাড়ায় ভালো কলেস্টেরল এইচডিএল। এতে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন প্রতিদিন করলা গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং প্রতিরোধ হয় রক্তনালীতে চর্বি জমার কারণে হার্ঠ অ্যাটাকের প্রবণতা।
করলায় মাংসের চেয়ে প্রোটিন বেশি
এই সবজিতে যেমন সুস্বাদু তেমনি প্রোটিনে পরিপূর্ণ। প্রতিদিন এটি খেলে শরীর শক্তিশালী হয়। বলা হয় যে এটিতে মাংসের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি শক্তি এবং প্রোটিন রয়েছে।
করলা শ্বাস রোগ দূর করে
করলার রসে আছে অনেক গুণ। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের দূষণ দূর করে। হজম প্রক্রিয়ায় গতি বাড়ায়। পানির সঙ্গে মধু ও করলার রস মিশিয়ে খেলে এ্যাজমা ব্রঙ্কাইটিস ও গলার প্রদাহে উপকার পাওয়া যায়।
করলা ওজন কমায়
এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং আয়রন পাওয়া যায় যখন ক্যালরি অল্প পরিমানে থাকে। ওজন কমানোর লোকদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প কারণ ১০০ গ্রাম করলা খাওয়া তাদের ১৬ ক্যালোরি দেয়।
করলা ক্যান্সারে স্বাস্থ্য উপকারিতা
ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ, করলা এটিকের রক্ষা করতে কিছুটা সহায়তা হতে পারে। গবেষণা দেখা গেছে করলার নির্যাসে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে । গবেষণা অনুসারে করলা উদ্ভিদ নির্যাস ব্যবহার করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যান্সার কোষ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
আরেকটি গবেষণায় জানা গেছে যে করলা মূলের নির্যাসে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি থেকে প্রতিরোধ করতে পারে। সচেতন থাকুন যে ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ যার জন্য চিকিৎসা ঘরোয়া প্রতিকারের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ঔষধি গুণ
শরীর কামড়ানো, জল পিপাসা বেড়ে যাওয়া, বমি ভাব হওয়া থেকে মুক্তি পেতে করলার পাতার রস উপকারী। ১ চা চামচ করলা পাতার রস একটু গরম করে অথবা গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে দু থেকে তিনবার করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
করলা অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর। এনসিবিআই (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরর্মেশন) ওয়েবসাইটের গবেষণায় এটি উল্লেখ করা হয়েছে। তার মতে করলাতে ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান রয়েছে যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকলাপ প্রর্দশন করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলি শরীরের ফ্রি রেডিকেল গুলির দ্বারা শ্রেষ্ঠ ক্ষতি প্রতিরোধ করতে এবং ধীর করতে পারে। এই ফ্রি রেডিকেল এবং ফ্রী রেডিক্যাল এর পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে হৃদরোগ ক্যান্সার এবং লিভারের সমস্যা ঝুঁকি বাড়তে পারে।
করলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
করলায় থাকা মোমরডিকা উপাদান এবং ফাইবার উপাদান শরীরের জন্য একটি ঔষুধ । মোমোরডিকা উপাদানটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যান্টিডায়াবেটিস এবং অ্যান্টিস্ট্রেস হিসেবে কাজ করে যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
করলা পাচনতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্য উপকারিতা
এতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার পাওয়া যায়। তাই এটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়। মলত্যাগ সহজ হয় । এই সবজি খেলে পাকস্থলীতে উপস্থিত ক্ষতিকর অ্যাসিড নিরপেক্ষ হয়ে যায়, যার ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর হয়।
করলা বাতের ব্যথা নিরাময় করে
দেহ থেকে বাত ব্যাথা তাড়াতে ৪ চা চামচ করলার বা উচ্ছে পাতার রস একটু গরম করে দেড় চা চামচ বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি মিশিয়ে ভাতের সঙ্গে খেতে হবে। তাহলে বাতব্যাথা সেরে যাবে।
করলা ত্বকের জন্য উপকারি
করলার ব্যবহার স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বকের জন্য উপকারী । একটি গবেষণা পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে করলা পাতার পেস্ট ত্বকের রোগ থেকে মুক্তি দেয়। এর কাঁচা ফল অর্থাৎ কোমল করলা ব্রণ কমাতে পারে। এছাড়াও কানতোলার ভাজা বীজ একজিমা এবং অন্যান্য ত্বক সম্পর্কিত সমস্যা এর জন্য উপকারী ।
করলা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের জন্য স্বাস্থ্য উপকারিতা
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস সমস্যা হতে পারে। এক গবেষণায় প্রকাশিত ইঁদুরের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে করলার অ্যান্টিডায়াবেটিক এবং হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব রয়েছে। করলার এই বৈশিষ্ট্য গুলি রক্তে উপস্থিত চিনির মাত্রা কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এটিকে খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
করলা খাবারের রুচি আনে
খাবারে অরুচি দেখা দিলে অপুষ্টি জনিত সমস্যায় ভোগার প্রবণতা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে ১ চা চামচ করে করলা রস সকালে বিকালে খেলে খাবারের রুচি বাড়বে।
আরো পড়ুনঃ কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
করলার পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ আছে
- ম্যাগনেসিয়াম ১৭ মিলিগ্রাম।
- পটাশিয়াম ২৯৬ মিলিগ্রাম।
- জলীয় অংশ ৯২.২ গ্রাম।
- শর্করা ৪.৩ গ্রাম।
- খাদ্য শক্তি ১৮ কিলোক্যালরি।
- কার্বোহাইড্রেটস ৩.৭০ গ্রাম।
- প্রোটিন ১ গ্রাম।
- ফাইবার ২.৮০ গ্রাম।
- ফলেট ৭২ মাইক্রোগ্রাম।
- নিয়াসিন ০.৪০০ মিলিগ্রাম।
- আমিষ ২.৫ গ্রাম। ফাইবার ২ দশমিক ৮০ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম।
- লোহা ১.৮ মিলিগ্রাম।
- ভিটামিন সি ৬৮ মিলিগ্রাম।
করলা গর্ভবতী অবস্থায় খেলে কি হয়
আমরা এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জেনে নিবো গর্ভবতী অবস্থায় করলা খেলে কি হয়। আপনারা যদি গর্ভবতী কোন নারী হন তাহলে করলা খেতে হবে ভেবে চিন্তে খাবেন কারণ করলা খুব খারাপ একটা সবজি। তাই গর্ভবতী অবস্থায় করলা খাওয়ার সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। কারণ পরবর্তীতে করলা খাওয়ার প্রভাবটি পড়তে পারে গর্ভে থাকা শিশুটির উপর। তাই আমাদের করলা খেতে হবে সাবধানতা ভাবে বিশেষ করে গর্ভবতী অবস্থায়। আপনার ডায়েটে ইতিমধ্যে অবশ্যই কিছু পরিবর্তন হয়ে যাওয়া উচিত।
গর্ব অবস্থায় আপনাদের শরীরে এবং দেহে প্রচুর পরিবর্তন হয় পরিবর্তন গুলি মোকাবেলা করার জন্য আপনাদের নির্দিষ্ট ডায়েটরি এবং লাইফ টাইল পরিবর্তন করতে হবে। গর্ভবতী অবস্থায় করলা খাওয়ায় শিশুর ক্ষতি হতে পারে। গর্ভ অবস্থায় আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়, সেই সময় আমাদের গর্ভে থাকা শিশুর জন্য সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। আমাদের গর্ব অবস্থায় খাদ্য ভাসে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। করলা তেতো হলেও পুষ্টিগুণে ভরা সবজি। তাই গর্ব অবস্থায় আপনাদের ফলিক এসিড খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।
খনিজটি অনাগত শিশুকে বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি থেকে দূরে রাখতে পারে। করলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে গর্ভ অবস্থায় ও শরীরের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আবার গর্ভ অবস্থায় করলা খেলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় যেমন: করলা খেলে অনেকের শরীরে বিষ কিয়া বেড়ে যায়, তখন আমাদের শরীরে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, দৃষ্টিতে সমস্যা হয় গর্ভ অবস্থায় তাই আমাদের করোলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গর্ভবস্থায় অতিরিক্ত করলা খেলে পেট ব্যাথা হতে পারে আশা করি আমরা জানতে পেরেছি গর্ভ অবস্থায় করলা খেলে কি হয়।
আরো পড়ুনঃ টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ঔষধি গুনাগুন ও অপকারিতা
করলা খাওয়ার অপকারিতা
করলার স্বাস্থ্য উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অসুবিধা ও থাকতে পারে এ কারণে করলা শুধুমাত্র পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। আমরা এখানে এটির অতিরিক্ত ব্যবহার করার ক্ষতি সম্পর্কে আলোচনা করছি।
- করলা খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে যাদের শর্করার সমস্যা কম তারা চিকিৎসকের পরামর্শমতো এটি গ্রহণ করুন।
- এর মূলে শুক্রাণু নাশক এবং প্রজননরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
- সংবেদনশীল ব্যক্তিদের করলায় এলার্জি হতে পারে তাই চিকিৎসকের পরামর্শে সেবন করুন।
- শিশুরা করলা বেশি খেলে শিশুদের পেট ব্যথা পেট ফাঁপা এবং বমি হতে পারে তাই করলা শিশুদের জন্য বিষক্রিয়া হতে পারে।
- করলা বেশি খেলে লিভার এনজাইমকে উন্নত করে লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
ধন্যবাদ***
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url