গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা

গরুর মাংস আমাদের মুসলিমদের জন্য একটি প্রিয় এবং সুস্বাদু খাবার। গরুর মাংস দিয়ে তৈরি করা হয় অনেক ধরনের সুস্বাদু খাবার। সেসব খাবার থেকে লোভ সামলানো রাকা মুশকিল। অনেকেই আবার ক্ষতিকর মনে করে গরুর মাংস খেতে ভয় পায়। আসলেই কি গরুর মাংস খাওয়া ক্ষতিকর।  গরুর মাংসে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নয়টি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। সব খাবারে উপকারের পাশাপাশি অপকারিতা ও রয়েছে। আজ আমরা গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।


আরো পড়ুনঃ বোয়াল মাছের ঝোল রান্নার সহজ রেসিপি

 গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ

  • গরুর মাংসে রয়েছে উন্নত প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন যা মাংসপেশী গঠনে সহায়তা করে। শরীরের জন্য যেসব অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড প্রয়োজন সবগুলো এমাইনো এসিড পাওয়া যায় গরুর মাংস থেকে।
  • গরুর মাংস রয়েছে পর্যাপ্ত আয়রন যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং সেই সঙ্গে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।
  • গরুর মাংস বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের খুব ভালো উৎস। ভিটামিন বি২, বি১২, বি৬ রয়েছে গরুর মাংসের যা নার্ভ সিস্টেমকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • গরুর মাংসে আয়রনের পাশাপাশি রয়েছে আরও কিছু প্রয়োজনীয় মিনারেলস। যেমন: জিংক, সেলেনিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। যা শরীরের মিনারেলস এবং ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি শরীরের কোষকে কে ভালো রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • গরুর মাংস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পেশি দাঁত ও হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং ত্বক চুল  নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। শরীরের বৃদ্ধি ও বুদ্ধি বাড়াতে ভূমিকা রাখে এবং ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে।
  • এছাড়াও গরুর মাংস দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অতিরিক্ত আলসেমি বা ক্লান্তি দূর করে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে, রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।

গরুর মাংসের উপকারিতা

গরুর মাংস শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে

গরুর মাংস খেলে তা আমাদের বুদ্ধি বৃত্তিক গঠন, শারীরিক বর্ধন ও রক্ত বর্ধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ৮৫ গ্রাম গরুর মাংসে ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুর দৈনিক চাহিদার ১২৫ শতাংশ ভিটামিন বি১২, ৯০ শতাংশ প্রোটিন, ৩২ শতাংশ আয়রন ২৯ শতাংশ নায়াসিন, ৭৪ শতাংশ জিংক, ৪২ শতাংশ সেলেনিয়াম, ৩২ শতাংশ ভিটামিন বি৬, ২৩ শতাংশ রিবোফ্লেভিন এবং ১৬% ফসফরাস রয়েছে।

গরুর মাংস এখন নিজের অভাব দূর করে

গরুর মাংস শরীরে খনিজের অভাবে সৃষ্ট অসুখ-বিসুখ দূর করতে সাহায্য করে। কারণ গরুর মাংস খনিজ লবণের দুর্দান্ত উৎস। গরুর মাংসে থাকে জিংক ফসফরাস, সেলেনিয়াম এবং প্রচুর লোহ।  গরুর মাংস ভিটামিনের গুরুত্বপূর্ন উৎস। গরুর মাংসের ভিটামিন বি৩, বি৬, বি১২ ইত্যাদি ভিটামিনের অভাব পূরণ করে।

গরুর মাংস প্রোটিনের উৎস

গরুর মাংস প্রোটিনের ভালো উৎস। গরুর মাংস ছাড়াও হাড়, কলিজা, মগজ ইত্যাদি থেকে মিলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। এই প্রোটিন থেকে পাওয়া অ্যামাইনো এসিড হাড় মাংস পেশি ভালো রাখতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে পাওয়া যায় ২২.৬ গ্রাম প্রোটিন।

জিংকের ঘাটতি পূরণ করে

আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য জিংক একটি জরুরী উপাদান। এটি আমাদের শরীরের কোষ ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস খেলে তা দৈনিক জিংকের ৩৯ শতাংশ পূরণ করে থাকে।

আরো পড়ুনঃ রসমালাই বাড়িতে সহজ উপায়ে তৈরির রেসিপি 

গরুর মাংসের অপকারিতা

  • আমরা অনেকেই অতিরিক্ত গরুর মাংস খেয়ে ফেলি। এতে বারে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যর ঝুঁকি। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরবর্তীতে আরো বড় অসুখ দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকা আমাদের উচিত। গরুর মাংসের সঙ্গে নানা ধরনের সবজি মিলিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যায়।
  • অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া মোটেও উপকারী নয়। তাই খেতে যতই ভালো লাগুক গরুর মাংস খেতে হবে পরিমাণ মতো। চিকিৎসকদের মতে সপ্তাহে পাঁচ বেলা গরুর মাংস খেলে বাড়ে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। সেই সঙ্গে প্রক্রিয়াজাত লাল মাংস খেলে তা মৃত্যু ঝুকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
  • আপনারা অনেকেই হয়তো জেনে থাকবেন। গরুর মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। কারণ এতে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ রক্তচাপ সৃষ্টিতে বা বাড়াতে কাজ করে সোডিয়াম। তাই গরুর মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ে সেখান থেকে দেখা দেয় হৃদরোগ স্ট্রোকের মত জটিল সমস্যা।
  • দৈনিক গরুর মাংস খেতে পারবেন ৮৫ গ্রাম। ৮৫ গ্রাম চর্বি ছাড়া গরুর মাংস খেলে তা আপনার দৈনিক ক্যালোরি চাহিদার ১০% পূরণ করবে। রান্না করা তিন টুকরা মাংসে ৮৫ গ্রাম হয়। তাই চেষ্টা করুন দিনে তিন টুকরার বেশি মাংস না খেতে। যদি একবারে আরও বেশি মাংস খেয়ে ফেলার ভয় থাকে তবে সপ্তাহে দুই দিনের বেশি গরুর মাংস না খাওয়াই উচিত।
ধন্যবাদ **

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url