মানব দেহে বিভিন্ন মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ ও চিকিৎসা
আমাদের সারা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো নিয়ে একটি তালিকা বানাতে গেলে মাদকাসক্তি সবার উপরেই থাকবে। বর্তমান বাংলাদেশের যুবসমাজ মাদকের এই ছোবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব এত বেশি যে জাতিসংঘ ১৯৯১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পুরো একটি দশকে মাদকবিরোধী দশক হিসেবে ঘোষণা করে। ২৬শে জুন কে ঘোষণা করে মাদকবিরোধী দিবস হিসেবে। তাহলে খারাপ জেনেও মানুষ কেন মাদক গ্রহণ করে। কেন একবার ছেড়ে দেওয়ার পরও মানুষ আবার মাদকে আসক্ত হয়ে যায়। আপনারা অতি কাছের অথবা প্রিয় কেউ মাদকাসক্ত হলে কিভাবে তাকে মরণ ছোবল থেকে মুক্তি করবেন। আজ মানব দেহের বিভিন্ন মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ইয়াবা সেবন
- স্মরণ শক্তি ও মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়।œ
- আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়।
- যৌন শক্তি নষ্ট হয় ও বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়।
- মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়।
- লিভার ও কিডনি নষ্ট হয়ে যায়।
- রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় ও হার্ট এ্যাটাক হয়।
- কলহ প্রবণতা, আগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক মনোভাব পরিলক্ষিত হয়।
গাঁজা সেবনে
- ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
- দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়।
- মতিভ্রম হয়।
ফেনসিডিল/ হিরোইন সেবনে
- পুরুষত্বহীনতা ও বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়।
- ফুসফুস ও হার্টে প্রদাহ হয়।
মদ্য পানে
- গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়।
- লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সার হয়।
ধূমপানে
- মুখে ঘা ও ক্যান্সার হয়।
- ফুসফুসে ক্যান্সার হয়।
- হার্ট অ্যাটাক ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়।
ইনজেকশন এর মাধ্যমে মাদক গ্রহণ
- মাদক গ্রহণ করলে এইডস হয়।
- হেপাটাইটিস বি হয়।
- হেপাটাইটিস সি হয়
আরো পড়ুনঃ কোমর ব্যথায় ভুগছেন জেনে নিন মুক্তির উপায়
মাদকের চিকিৎসা
বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত বেশ কিছু পদ্ধতি মাদক মুক্ত জীবন যাপনে সাহায্য করতে পারে। তবে অন্যান্য জীবনু গঠিত রোগের মত মাদকের কারণে সৃষ্ট ডিসওর্ডার নিরাময় করা যায় না। একটু অসতর্ক হলেই আবার রোগী মাদকাসক্ত হয়ে যেতে পারে। সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ মেনে না চললে আবার মাদকাসক্ত হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকে। মাদকের চিকিৎসা মূলত দুই ধাপে হয়।
ধাপ-১
প্রথমবার মাদক ছাড়ার পর রোগীর শারীরিক-মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটে। রুবি পড়ায় সময় ডিপ্রেশনে চলে যায়, ঘুমাতে না পারা, উচ্চ রক্তচাপ, দুশ্চিন্তা করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসক প্রথমে এসব উপসর্গের চিকিৎসা করেন। রোগী বারবার মাদক গ্রহণের বাধ্য হলে সাইকোথেরাপি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ধাপ-২
বারবার মাদকের কাছে ফিরে যাওয়া রোগীদের জন্য বিশেষ থেরাপির ব্যবস্থা করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের সাহায্যে নেয়া হয়। আফিম জাতীয় মাদক বা অফিওয়েড থেকে মুক্তির জন্য মেথাডোন , বিউপ্রেনরপাইন, নালট্রেক্সোন, লোফেক্সিডিন, তামাক জাতীয় মাদক বা নিকোটিনের প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য বিউপ্রপিওন ভারেনিক্লিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে মাদকের ব্যবহার এখনই না কমালে ভবিষ্যতে প্রজন্ম ভয়াবহ হুমকির মধ্যে পড়বে। বর্তমান বাংলাদেশে ২৫ লক্ষের বেশি মানুষ নিয়মিত মাদক সেবনের সাথে জড়িত। মাদকের ঝুঁকির মধ্যে আছে এর দ্বিগুনের চেয়েও বেশি মানুষ। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দেওয়া এক তথ্য মতে ২০১৯ সালে প্রতি দিন ১১৪ জন মাদক নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসা নিয়েছিল। মে সংখ্যা ২০১৭ সালে ছিল মাত্র ৬৯ জন।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং মায়ানমার থেকে ইয়াবা চোরাচালান বাড়ার কারণে এবং পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে ফেনসিডিল চোরাচালানের কারণে এর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। দেশের বাজারে ইয়াবার একটি পিল ৩৫০ টাকার বেশি হলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে পাওয়া যায় ৫০ টাকায়। পুরো ২০১৮ সালের মাত্র ৯১ জন মহিলা সরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসা নেন। এই সংখ্যা ২০১৯ এর নভেম্বর পর্যন্ত হয় ৩৬০ জন যা প্রায় চার গুণ।
বাংলাদেশ মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য ৪ঠা মে ২০১৮ সালে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর আগে ফিলিপাইন ও এমন যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল । তবে সুইজারল্যান্ড আর পর্তুগালের মত দেশ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও মাদকের ব্যবহার কমাতে খুব একটা কার্যকরী নয়। তাই পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহ থেকে মাদকের চোরাচালান বন্ধ করতে হবে, তাহলে মাদকের ব্যবহার কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে।
*মাদকাসক্তির পরিণতি অকাল মৃত্যু।
**সকল মাদক গ্রহণেই স্বাস্থ্যের দ্রুত ক্ষতি হয়।
***জীবনকে ভালবাসুন মাদক থেকে দূরে থাকুন
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url