শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৮ ধারা সমূহ সহ বিস্তারিত

 শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৮

[২০১৮ সনের ৫৪ নং আইন শিশু আইন, ২০১৩ এর সংশোধনকল্পে প্রণীত আইন]

যেহেতু নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যসমূহ পূরণকল্পে শিশু আইন, ২০১৩ (২০১৩ সনের ২৪ নং আইন) সংশোধন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়:


সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল:-

১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম

 (১) এই আইন শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৮ নামে অভিহিত হইবে।

২। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ২ এর সংশোধন

শিশু আইন, ২০১৩ (২০১৩ সনের ২৪ নং আইন), অতঃপর উক্ত আইন বলিয়া উল্লিখিত, এর ধারা ২ এর-

(ক) দফা (১৬) এর পর নিম্নরূপ একটি নূতন দফা (১৬ক) সন্নিবেশিত হইবে, যথা:-

"(১৬ক) "ম্যাজিস্ট্রেট" অর্থ ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৬ এর উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট যাহার অপরাধ আমলে গ্রহণ করিবার ক্ষমতা রহিয়াছে;"; এবং

(খ) দফা (১৮) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ দফা (১৮) প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-

"(১৮) "শিশু-আদালত" অর্থ ধারা ১৬ এ উল্লিখিত কোনো আদালত;"।

৩। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ১৫ এর প্রতিস্থাপন

 উক্ত আইনের ধারা ১৫ এর পরিবর্তে নিম্নরূপ ধারা ১৫ প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-

"১৫। পুলিশ রিপোর্ট (investigation report) বা অনুসন্ধান প্রতিবেদন (inquiry report) বা তদন্ত প্রতিবেদন (enquiry report) পৃথকভাবে প্রস্তুত ও আমলে গ্রহণ

(১) ফৌজদারি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো অপরাধ সংঘটনে প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশু জড়িত থাকিলে, পুলিশ রিপোর্ট (জি.আর মামলার ক্ষেত্রে) বা ক্ষেত্র মত, অনুসন্ধান প্রতিবেদন (সি.আর মামলার ক্ষেত্রে) বা তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুর জন্য পৃথকভাবে প্রস্তুত করিয়া দাখিল করিতে হইবে।

(২) ফৌজদারি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশু কর্তৃক একত্রে সংঘটিত কোনো অপরাধ আমলে গ্রহণের ক্ষেত্রে তাহাদের অপরাধ পূথকভাবে আমলে গ্রহণ করিতে হইবে।

আরো পড়ুনঃ যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ এর ধারা সমূহ সহ বিস্তারিত 

৪। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ১৫ক এর সন্নিবেশ

 উক্ত আইনের ধারা ১৫ এর পর নিম্নরূপ নূতন ধারা ১৫ক সন্নিবেশিত হইবে, যথা:-

"১৫ক। মামলা বিচারের জন্য প্রেরণ বা স্থানান্তর। কোনো অপরাধ আমলে গ্রহণ করিবার

পর, মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত করিয়া-

(ক) শিশু কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ বিচারের জন্য মামলাটি প্রয়োজনীয় কাগজাদিসহ শিশু আদালতে প্রেরণ করিতে হইবে;

(খ) প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ বিচারের জন্য মামলাটি প্রয়োজনীয় কাগজাদিসহ এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে প্রেরণ করিতে হইবে; এবং

(গ) দফা (ক) ও (খ) এর অধীন মামলা প্রেরণের বিষয়টি পাবলিক প্রসিকিউটরকে অবহিত করিতে হইবে।"।

৫। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ১৬ এর প্রতিস্থাপন

উক্ত আইনের ধারা ১৬ এর পরিবর্তে নিম্নরূপ ধারা ১৬ প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-

"১৬। শিশু-আদালত। (১) আইনের সহিত সংঘাত জড়িত শিশু কর্তৃক সংঘটিত যে কোনো অপরাধের বিচার করিবার জন্য, প্রত্যেক জেলা সদরে শিশু-আদালত নামে এক বা একাধিক আদালত থাকিবে।

(২) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (২০০০ সনের ৮ নং আইন) এর অধীন গঠিত প্রত্যেক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্বীয় অধিক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত শিশু আদালত হিসাবে গণ্য হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, কোনো জেলায় উক্তরূপ কোনো ট্রাইব্যুনাল না থাকিলে উক্ত জেলার জেলা ও দায়রা জজ স্বীয় অধিক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত শিশু-আদালত হিসাবে গণ্য হইবে। 

(৩) ধারা ১৫ক এর অধীন কোনো মামলা প্রেরিত না হইলে, শিশু-আদালত শিশু কর্তৃক সংঘটিত কোনো অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ করিবে না।"।

৬। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ১৭ এর সংশোধন-

উক্ত আইনের ধারা ১৭ এর-

(ক) উপ-ধারা (১) ও উপ-ধারা (২) বিলুপ্ত হইবে; এবং

(খ) উপ-ধারা (৩) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপ-ধারা (৩) প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-

"(৩) শিশু-আদালত বিধি দ্বারা নির্ধারিত স্থান, দিন এবং পদ্ধতিতে উহার অধিবেশন অনুষ্ঠান করিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত শিশু-আদালতের বিচারক তাহার স্বীয় বিবেচনায় বিচারের দিন, ক্ষণ, স্থান নির্ধারণক্রমে, উহার অধিবেশন আরম্ভ এবং সমাপ্ত করিবেন।"।

৭। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ১৮ এর প্রতিস্থাপন।

 উক্ত আইনের ধারা ১৮ এর পরিবর্তে নিম্নরূপ ধারা ১৮ প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-

"১৮। শিশু-আদালতের ক্ষমতা। দায়রা আদালত যেই সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যাবলি সম্পাদন করিতে পারে শিশু-আদালতও সেই সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যাবলি সম্পাদন করিতে পারিবে।"।

৮। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ২১ এর সংশোধন

 উক্ত আইনের ধারা ২১ এর উপন্ডটীকায় উল্লিখিত "শিশু-আদালত কর্তৃক" শব্দগুলি বিলুপ্ত হইবে।

৯। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ২৫ এর সংশোধন

উক্ত আইনের ধারা ২৫ এব উপ-ধারা (২) এর প্রথমে উল্লিখিত "শালীনতা বা নৈতিকতা" শব্দগুলির পূর্বে "শিশু আদালত" শব্দগুলি সন্নিবেশিত হইবে।

১০। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ২৬ এর সংশোধন

 উক্ত আইনের ধারা ২৬ এর-

(ক) উপান্তটীকায় উল্লিখিত "বিচারকালীন" শব্দটি বিলুপ্ত হইবে;

(খ) উপ-ধারা (১) "বিচারকালীন" শব্দটি বিলুপ্ত হইবে।

১১। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ২৯ এর সংশোধন-

 উক্ত আইনের ধারা ২৯ এর-

উপ-ধারা (৩) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপ-ধারা (৩) প্রতিস্থ পিত হইবে, যথা;-

"(৩) উপ-ধারা (১) এবং (২) এর অধীন জামিন মঞ্জুর করা না হইলে, শিশু আদালত উক্তরূপ নামঞ্জুরের কারণ লিপিবদ্ধ করিবে এবং সংশ্লিষ্ট শিশুকে কোনো প্রত্যায়িত প্রতিষ্ঠানে প্রেরণের জন্য আদেশ প্রদান করিবে।

১২। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ৩১ এর সংশোধন

। উক্ত আইনের ধারা ৩১ এর উপ-ধারা (১) এর "শিশুকে" শব্দের পরিবর্তে "আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুকে" শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে।

১৩। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ৩২ এর সংশোধন

উক্ত আইনের ধারা ৩২ এর উপ-ধারা (৩) এর "ধারা ১৭ এর উপ-ধারা (২) এর বিধান অনুসারে," শব্দগুলি, সংখ্যাগুলি, বন্ধনী ও কমার পরিবর্তে "যতদূর সম্ভব," শব্দগুলি ও কমা প্রতিস্থাপিত হইবে।

১৪। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ৩৮ এর সংশোধন

উক্ত আইনের ধারা ৩৮ এর উপ-ধারা (১) এর প্রথম লাইনে উল্লিখিত "কোন আসামী" শব্দগুলির পরিবর্তে "আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত কোনো শিশু" শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে এবং অতঃপর পঞ্চম লাইনে উল্লিখিত "আসামীর" শব্দের পরিবর্তে "দোষী সাব্যস্তকৃত শিশুর পিতা-মাতা এবং তাহাদের উভয়ের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা, ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্যদের" শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে।

আরো পড়ুনঃ পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩

১৫। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ৪১ এর সংশোধন

 উক্ত আইনের ধারা ৪১ এর-

(ক) উপ-ধারা (১) এর "আদেশের বিরুদ্ধে আদেশ" শব্দগুলির পরিবর্তে "আদেশ বা রায়ের বিরুদ্ধে উক্ত আদেশ বা রায়" শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে; এবং

(খ) উপ-ধারা (২) এর পরিবর্তে  উপ-ধারা (২) প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-

"(২) শিশু-আদালতের কোনো আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে পুনর্বিবেচনা (Revision) করা যাইবে।"

১৬। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ৪২ এর সংশোধন

উক্ত আইনের ধারা ৪২ এর উপ-ধারা (১) এর "এই আইনের অধীন" শব্দগুলির পরিবর্তে "অভিযোগ দায়ের," শব্দগুলি ও কমা প্রতিস্থাপিত হইবে।

১৭। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ৫৪ এর সংশোধন

উক্ত আইনের ধারা ৫৪ এর

(ক) উপ-ধারা (১) এর "বিচার প্রক্রিয়ার সকল পর্যায়ে" শব্দগুলি বিলুপ্ত হইবে; (খ) উপ-ধারা (৩) এর দফা (ক) এর "বিচার প্রক্রিয়ার সহিত সংশ্লিষ্ট" শব্দগুলি বিলুপ্ত

,১৮। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ৫৮ এর সংশোধন

 উক্ত আইনের ধারা ৫৮ এর "বিচার প্রক্রিয়ার যেকোন পর্যায়ে" শব্দগুলি বিলুপ্ত হইবে।

১৯। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ৮১ এর সংশোধন।

উক্ত আইনের ধারা ৮১ এর উপ-ধারা (১) এর "এই আইনের অধীন" শব্দগুলি বিলুপ্ত হইবে।

২০। ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনের ধারা ৯৪ এর বিলুপ্তি

উক্ত আইনের ধারা ৯৪ বিলুপ্ত হইবে।

২১। মামলা স্থানান্তর সংক্রান্ত ক্রান্তিকালীন বিধান-

(১) শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৮ কার্যকর হইবার অব্যবহিত পূর্বে, অতিরিক্ত দায়রা জজ সমন্বয়ে গঠিত শিশু আদালতে-

(ক) দায়েরকৃত মামলাসমূহের মধ্যে আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু সংশ্লিষ্ট যেই সকল মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হয় নাই সেই সকল মামলা শিশু-আদালতে স্থানান্তরিত হইবে;

(খ) বিচারাধীন বা বিচারের জন্য প্রস্তুত কোনো মামলায় যদি-

(অ) আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু অভিযুক্ত থাকে, তাহা হইলে উক্ত মামলা বিচারের জন্য শিশু-আদালতে স্থানান্তরিত হইবে; এবং

(আ) আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর যদি কোনো স্টেটমেন্ট নেওয়ার প্রয়োজন হয় তাহা হইলে শিশু-আদালত পিতা-মাতা বা আইনগত অভিভাবকের উপস্থিতিতে উক্ত শিশুর স্টেটমেন্ট গ্রহণ করিতে পারিবে।

(২) এই ধারার অধীন যে পর্যায়ে কোনো একটি মামলা স্থানান্তরিত হইবে সেই প্রর্যায় হইতে উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালিত হইবে।

(৩) যেই আদালত হইতে মামলা স্থানান্তর করা হইবে সেই আদালত কর্তৃক গৃহীত সাক্ষ্য এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতের সাক্ষ্য বলিয়াঐ বিবেচিত হইবে এবং সুবিচারের জন্য প্রয়োজন না হইলে উক্ত সাক্ষ্য পুনরায় গ্রহণ করার প্রয়োজন হইবে না।

(৪) এই ধারার অধীন মামলা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে মামলাটি যেই আদালতে নিষ্পন্নাধীন সেই আদালত উদ্যোগ গ্রহণ করিয়া স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৮ কার্যকর হইবার ৯০ (নব্বই) কার্য দিবসের মধ্যে সম্পন্ন করিবে, তবে উক্ত সময়ের মধ্যে মামলা স্থানান্তর সম্পন্ন করা সম্ভব না হইলে স্থানান্তরকারী শিশু আদালতের আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট দায়রা জজ আদালত আরও ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) কার্যদিবস সময় বৃদ্ধি করিতে পারিবে।

*আমরা সবাই বাংলাদেশর আইনের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান করব এবং যথাযথ ভাবে দেশের সকল আইন মেনে চলব* ধন্যবাদ *


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url