কোরবানি কি কোরবানির পশু জবাইয়ের নিয়ম ও পশু জবাইয়ের দোয়া

কোরবানি হলো ইসলামী ধর্মের একটি প্রধান উৎসব যা ঈদুল আযহা নামে পরিচিত। এই উৎসবে মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে, যেমন নবী ইব্রাহীম (আ) যে তার ছেলে ইসমাইল (আ) কে আল্লাহর ইচ্ছা মোতাবেক কোরবানীর জন্য উপস্থাপন করতে বলেন। ইসমাইল (আ) মনোনিবেশের মধ্য দিয়ে তার পিতা ইব্রাহিম (আঃ) কোরবানী পরিপূর্ণ করতে সম্মত হন। এই ঘটনার স্মরণে মুসলিম সমাজ প্রতি বছরে কোরবানি উৎসব পালন করে।

কোরবানির পশু জবাই এর নিয়ম 

রাসুল (সা) বলেছেন তোমরা যখন পশু জবাই করবে তখন এহসানের সাথে জবাই করো আর তোমাদের ছবিগুলো খুব ভালোভাবে ধারালো করে নাও যাতে তোমরা তোমাদের যবোইকৃত পশুকে আরাম দিতে পারো। 

(সহীহ মুসলিম)

আমাদের দেশে গরু ছাগল মহিষ ভেড়া উট ইত্যাদি দিয়ে কুরবানী করা হয়। কোরবানির পশু কিভাবে জবাই করব এ নিয়ে অনেকগুলো ভুল ভ্রান্তি আমাদের মধ্যে রয়েছে। আজ এই আর্টিকেলটিতে চেষ্টা করব সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। 

১। কোরবানির পশু শোয়ানোর পর যেন কেবলামুখী হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পশ্চিম দিকে যেহেতু আমাদেরকে বিলাসে হিসেবে পশ্চিম দিকে যাতে পশুর মুখ হয় সেদিকে আমরা খেয়াল রাখব। অর্থাৎ পশুকে বা পাঁজরের উপর দক্ষিণ দিকে মাথা দিয়ে কেবলামুখী করে শোয়াতে হবে। এভাবে পশুকে শোয়ানো উত্তম। পশু থেকে এমন ভাবে ধরতে বা বেঁধে নিতে হবে যেন জবায়ের সময় সে পা গুলো বারবার ছুড়তে না পারে।

২। উটের ক্ষেত্রে নাহর করা যায়। বিষয়টি হলো দাঁড়ানো অবস্থায় বুকের দিক থেকে ঘাড় পর্যন্ত চলে যাওয়া প্রধান রক্তবাহী রগ কেটে দেওয়া হয়। নাহর পড়লে রক্তক্ষরণ হতে হতে ঢলে পড়ে এবং মৃত্যু হয়। ও কে ও শোয়া অবস্থায় জবাই করা যায়। 

৩। জবাই করার সময় যাতে প্রচুর কষ্ট না পায় এজন্য যে ছড়িটি ব্যবহার করা হবে তা আগে ভাগেই শান দিয়ে খুব ধাড়ালো করে নিতে হবে। পশুর গলায় ছুরি চালানোর সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর বলতে হয়। শুধু বিসমিল্লাহ বললেও চলবে। যে বা যারা কোরবানির পশু জবাই করবেন বা ধরবেন তারা পবিত্র বা অবস্থায় থাকবেন। কাপড়-চোপড় শালীনভাবে পরিধান করবেন।

৪। পশুকে শোয়াতে কষ্ট হলে বা বেগ পেতে হলে শোনানোর পর রেগে গিয়ে প্রচুর শরীরে কিল, ঘুষি, লাথি মারা বা আঘাত করা যাবে না। যিনি বাজার পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া হচ্ছে তার নিজের হাতে জবাই করা উত্তম। অবশ্য অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কোরবানি করলে যে কোন শরিক ব্যক্তি জবাই করতে পারেন। অভ্যাস না থাকলে অন্য যে কেউ জবাই করলেও হবে। 

৫। ছুড়ি ডান হাতে অথবা উভয় হাতে ধরা ভালো। কোনো কমেই শুধু বাম হাত ব্যবহার করে জবাই করা উচিত নয়। ছুড়ি চালানোর সময় পশুর গলার মুল তিনটি অঙ্গ কেটে দিতে হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে খাদ্যনালী, দ্বিতীয়টি শ্বাসনালী, তৃতীয় হচ্ছে এখনই যাব শ্বাসনালির দুই পাশে দুটি রগ রয়েছে সে দুটি। যদি ঠিকমতো এই অঙ্গ গুলো কেটে দেওয়া যায় তাহলে গরু ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে পড়বে। এভাবে জবাই করা সুন্নত।

৬। আমাদের দেশে অনেকেই গরু জবাই করতে গিয়ে ছুরি চালানোর পর ছুড়ির ধারালো বা সুচালো মাথা দিয়ে খোসাখুঁচি করেন। মেরুদন্ডের সঙ্গে ঘাড় পর্যন্ত যে স্পাইনাল কর্ড রয়েছে। সেটির রগ কাটার জন্য চেষ্টা করেন। এ ধরনের খোঁচাখুঁচি কোনক্রমেই উচিত নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে এভাবে খোঁসাখুঁচির ফলে পশুটি মৃত্যুর আগেই একবার হার্টফেল করে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত।

৭। রাসুল (সা) এর উল্লেখিত হাদিসটির মাধ্যমে আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে পশুকে আরামের সঙ্গে জবাই করতে হবে। যাতে সে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় কসাই অথবা যারা গরুর গোশত বানানোর জন্য আসে তারা পশুর নড়াচড়া করা অবস্থায় পায়ের রগ কাটা শুরু করে দেয়। এটা করলে পশুকে সুন্নত পন্থায় জবাই করা হয় না। অনেক সময় এভাবে জবাই করাকে জবাই করা বলেনা বরং হত্যা করা বলে। আল্লাহ আমাদের জবাই করার নির্দেশ দিয়েছেন হত্যা করতে নয়।

৮। তাই আমরা যারা পশু কুরবানী করি সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে আমাদের কুরবানী সম্পন্নভাবে সঠিক হয়। এবং এর জবাই প্রক্রিয়া রাসুল (সা) এর দেখানো সুন্নত মতে হয়। আল্লাহ পাক আমাদের জেনে বুঝে নিয়মানুযায়ী কুরবানীর পশু জবাই করা তৌফিক দিন আমিন।

কোরবানির পশু জবাইয়ের দোয়া 

কোরবানির পশু জবাই করার জন্য শোয়ানোর পর দোয়া পড়া। দোয়াটি হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। যদিও অনেকেই মতপার্থক্য করেছেন। তবে এ দোয়া গুলো পড়ে কুরবানী করা উত্তম। তবে কেউ শুধু বিসমিল্লাহ বলে নালিগুলো কেটে দিলে কুরবানী শুদ্ধ হয়ে যাবে। দোয়াটি হলো

উচ্চারণ: ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।

২. যদি কেউ এ দোয়াটি না পারেন তবে ছোট্ট এ অংশটুকু পড়বেন-

উচ্চারণ বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।

৩ নিজের পশু নিজে কুরবানি করলে পশু জবেহ করার পর এ দোয়া পড়া

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url