উমরাহ হজ্জ কি ওমরাহ হজ্জের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

হজ্জ ইসলামের পঞ্চম ভিত্তি। হজ্জ ফরয হওয়ার তারিখ সম্পর্কে উলামাদের মতভেদ রয়েছে। মহানবী (সা) জীবনে একবার হজ্জ পালন করেছেন। 

ভূমিকা 

শারিরীক ও আর্থিক সামর্থবান ব্যক্তিদের জন্য কাবা ঘরে গিয়ে হজ্জ করা ফরয। এ হজ্জ ইবরাহীম (আ.) এর সময় থেকেই পালিত হয়ে আসছে। হজ্জে গিয়ে কোন পাপাচারে ও অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না। ইহরাম অবস্থায় কোন প্রাণী এমনকি মশা-মাছি মারাও নিষিদ্ধ। হজ্জ শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করতে হয়। আর তার বিনিময়স্বরূপ আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। হজ্জের ন্যায় উমরাহ করার গুরুত্বও কম নয়। উমরাহ করা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর সুন্নাত। হজ্জ যেমন নির্দিষ্ট সময় ও দিনক্ষণ অনুসারে আদায় করতে হয় উমরাহ কিন্তু তেমন নয়। যে কোন সময়ে উমরাহ আদায় করা যায়। উমরাহর সাওয়াব হিসেবে মহানবী (সা) বলেন- এক উমরাহ করা থেকে অপর উমরাহ করা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে মানুষ যত সগীরা গুনাহ করবে, আল্লাহ তা ক্ষমা করে দেবেন। সুতরাং সামর্থ্যবান মুসলমান নর-নারীদের জন্য এ আমল দু'টি করা বাঞ্ছনীয়।

উমরা হজ্জ 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রাসূল (সা) বলেছেন: তোমরা হজ্জ ও উমরা পর পর সঙ্গে সঙ্গে আদায় কর। কেননা এ দু'টি কাজ দারিদ্র্য ও গুনাহ্-খাতা নিশ্চিহ্ন করে দেয়, যেমন রেত লৌহের মরিচা ও স্বর্ণ-রৌপ্যের জঞ্জাল দূর করে দেয়। আর হজ্জে মাবরুর বা কবুল হওয়া হজ্জের সওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (আবু দাউদ, তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে খুযায়মা ও ইবনে হিববান) মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর এ বাণীতে হজ্জ এবং উমরাহ উভয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তিনি যা বলেছেন- উহার শাব্দিক অর্থ হল 'হজ্জ ও উমরার মধ্যে একটিকে অপরটির পরে পরে কর। অর্থাৎ এ দুটি অনুষ্ঠান কাছাকাছি সময়ের মধ্যে পালন কর। এ হাদীসের নির্দেশ অনুসারে 'হজ্জে কিরান' করে এ আদেশ পালন করা যায়, নতুবা হজ্জ করে উমরা আদায় করা যায় বা উমরা করে হজ্জ করা যায়। তায়্যিবী বলেছেন, রাসূল (সা)-এর এ কথাটির অর্থ হল:

তোমরা যখন উমরা সমাপন করলে তখন তোমরা হজ্জ কর, আর যখন হজ্জ অনুষ্ঠান শেষ করলে, তখন তোমরা অবশ্যই উমরা করবে।

উমরা عمرة শব্দের অর্থ الزيارة 'সাক্ষাত বা দেখার জন্য উপস্থিত হওয়া'। আর শরীঅতের পরিভাষায়- উমরাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে 
 পরিচিত এবং সুনির্দিষ্ট কতকগুলো অনুষ্ঠান বিশেষ দলীল দ্বারা প্রমাণিত নিয়ম ও পদ্ধতিতে পালন করা। (ইমাম শাওকানী)

মুল্লা আলী-আলকারী বলেন, শরীঅতের পরিভাষায় আল্লাহর ঘর তওয়াফ করা ও সাফা- মারওয়ায় দৌড়ানোর সংকল্প করার নাম উমরা।

হজ্জের জন্য সময় ও দিন-তারিখ নির্দিষ্ট। সেই সময় ও দিন-তারিখ ছাড়া হজ্জ আদায় হয় না। কিন্তু উমরার জন্য কোন সময় বা দিন-তারিখ নির্দিষ্ট নেই। উহা সব সময় এবং যে কোন সময়ই থেকে পারে। কেউ কেউ হজ্জের মাসে উমরা করা মকরূহ মনে করেন। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা এর কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ও
দলীল নেই। কেননা স্বয়ং মহানবী (সা) ও হজ্জের সময় ও মাসে উমরা করেছেন। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) আরাফাতে অবস্থানের দিন উমরা করা মাকরূহ মনে করেছেন মাত্র। 

'হজ্জে মাবরুর' বলতে বোঝায়, যে হজ্জ আল্লাহর নিকট গৃহীত হয়েছে, কিংবা যে হজ্জ উদযাপন কালে এক বিন্দু গুনাহের স্পর্শও লাগেনি, তাই 'হজ্জে মাবরুর।' বিশেষজ্ঞদের ভাষায় এ শব্দটির বিভিন্ন অর্থ বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বটে। কিন্তু সব কথার সার একই। আর তা হল- যে হজ্জ পালনে যাবতীয় নিয়ম বিধান যথাযথভাবে পালন করা হয়েছে।

ফলে প্রত্যেকটি কাজ ঠিক সেভাবেই সম্পন্ন করা হয়েছে যেভাবে সম্পন্ন হওয়া আল্লাহর পছন্দ এবং তাঁর সম্মতি ও সন্তোষের কারণ, তাই হজ্জে মাবরুর। হজ্জে মাবরুর শব্দের অর্থ সম্পর্কে ইমাম নববী (র) বলেনঃ


হজ্জে মাবরুর তাই, যা করার সময় কোনরূপ গুনাহ করা হয়নি।

হজ্জ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ, এটা ফরয। এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ বা মতবিরোধ নেই। কিন্তু আলোচ্য হাদীসে হযরত মুহাম্মদ (সা) হজ্জ ও উমরা পালনের নির্দেশ এক সঙ্গে দিয়েছেন। এ কারণে শরীঅতে উমরাহর আসল মর্যাদা কি, তা আলোচনা করা আবশ্যক। নিম্নে উমরাহর গুরুত্ব তুলে ধরা হল।

উমরা হজ্জের গুরুত্ব

এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদে আল্লাহর নির্দেশ উদ্ধৃত হয়েছে-

"তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও উমরা পূর্ণ করো।" (সূরা আল-বাকারা ১৯৬) প্রসঙ্গে ইমাম মালিক (র) বলেন-

উমরা করা সুন্নাত। তা তরক করার অনুমতি কেউ দিয়েছে, এমন কথা আমার জানা নেই। ইমাম আবু হানীফা (র.) উমরা করা হজ্জের মতই কর্তব্য বলে মনে করতেন। তবে তাঁর মতে উমরাহ রাসূলে করীম (সা)-এর প্রবর্তিত 'সুন্নাত' এবং দলীল দ্বারা প্রমাণিত। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহও এমত প্রকাশ করেছেন। এ পর্যায়ে হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহর একটি বর্ণনা উদ্বৃত করা যায়। 

তিনি বলেন- একটি লোক রাসূল (সা)- কে সালাত, যাকাত ও হজ্জ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে- এ কাজ কি

অবশ্য কর্তব্য? জবাবে মহানবী (সা) বললেনঃ 'হ্যা'। পরে জিজ্ঞাসা করল উমরা সম্পর্কে উমরা করাও কি ওয়াজিব? জবাবে মহানবী (সা) বললেন-

উহা ঠিক ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য নয়। তবে তুমি যদি উমরাহ আদায় কর, তা হলে উহা তোমার জন্য খুবই কল্যাণবহ হবে।

হযরত আমের ইবনে রবীয়াহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলে করীম (সা) বলেছেনঃ এক উমরা থেকে আর এক উমরা পর্যন্ত এ দু'টির মধ্যবর্তীকালের সমস্ত গুনাহ ও ভুলত্রুটির জন্য উহা কাফফারা স্বরূপ। আর হচ্ছে মাবরুর-এর একমাত্র প্রতিফল হল জান্নাত। (মুসনাদে আহমদ)

আলোচ্য হাদীসে হজ্জ ও উমরাহর সওয়াব স্পষ্ট ভাষায় ঘোষিত হয়েছে। হাদীসের প্রথমাংশে উমরাহর সওয়াব ও কল্যাণ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার সারকথা হল, 'একটি উমরাহ থেকে আর একটি উমরাহ পর্যন্ত যে সময়, এ সময়ে যত গুনাহ খাতা হবে, তা সবই ক্ষমা প্রাপ্ত হবে। অবশ্য কেবল সগীরা গুনাহই মাফ হয়ে যাবে, কবীরা গুনাহ নয়। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে একই অর্থবোধক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
 এক উমরা থেকে অপর উমরা পর্যন্ত মাঝখানে করা গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (তিরমিযী)


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url