পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ, কীভাবে পবিত্রতা অর্জন করবেন সেই সম্পর্কে ব্যাখ্যাসহ বিস্তারিত

পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ, প্রস্রাব-পায়খানা থেকে কীভাবে পবিত্রতা অর্জন করতে হয় এবং পবিত্রতা অর্জন না করলে করা আযাবের কারণ এবং ইবাদতে পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।


ভূমিকা 

প্রস্রাব-পায়খানা থেকে উত্তম রূপে পবিত্রতা অর্জন করা ইবাদাতের অংশ। পানি, মাটি, টিস্যু পেপার, পাথরের টুকরা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায়। তবে মাটি বা পাথরের টুকরা দ্বারা পরিস্কার হওয়ার পর পানি দ্বারা ধৌত করা উত্তম। প্রস্রাব-পায়খানা থেকে উত্তমরূপে পরিস্কার ও পবিত্র না হলে সালাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে না। পায়খানা-প্রসাব থেকে যথাযথ অর্থাৎ ইসলামের বিধি অনুযায়ী পবিত্রতা অর্জন না করা বড় গুনাহের কাজ এবং সে জন্য কবরের আযাব অবধারিত। যথাযথভাবে পবিত্রতা অর্জনকারীকে আল্লাহ ভালবাসেন। সূরা তাওবার ১০৮ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা অর্জনকারীদের প্রশংসা করেছেন।

আরো পড়ুন: যাকাত কি যাকাত না দেওয়ার পরিনতি যাকাত ফরজ হওয়ার কারণ স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাত

পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ 

হযরত আবূ মালিক আল-আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে করীম (সা) বলেছেন: পবিত্রতা- পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। আর 'আলহামদুলিল্লাহ' বাক্যটি আমলের পাল্লা পূর্ণ মাত্রায় ভরে দেয়, 'সুবহানাল্লাহ' ও 'আলহামদুলিল্লাহ' বাক্যদ্বয় পূর্ণ করে দেয় আকাশমন্ডল ও পৃথিবীকে। আর সালাত হল জ্যোতি, সাদকা হল অনস্বীকার্য দলীল, ধৈর্য হল আলো এবং কুরআন হল তোমার পক্ষের প্রমাণ অথবা তোমার বিরুদ্ধে দলীল। প্রত্যেক মানুষেরই সকাল হয়, পরে সে নিজের সত্তারই বেচা-কেনা করে। অতঃপর সে হয় তাকে (নিজকে) মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করে, নতুবা তাকে (নিজকে) সে ধ্বংস করে দেয়। (মুসলিম)

ব্যাখা

হাদীসটি মূলত নবী করীম (সা)-এর একটি ভাষণ। এতে ইসলামের কয়েকটি মূলনীতি সন্নিবেশিত রয়েছে বিধায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। যদিও এ হাদীসে অন্যান্য মৌল বিষয় রয়েছে তবুও পবিত্রতা ও পরিস্কার পরিচছন্নতার দলীল হিসেবে এখানে হাদীসটি গ্রহণ করা হয়েছে। কেননা হাদীসের প্রথম বাক্যটিই পবিত্রতা বা তাহারাত সম্পর্কিত বিধান যা হাদীসের কিতাবসমূহে 'তাহারাত' পর্যায়ে উদ্ধৃত হয়েছে। এ হাদীসে বর্ণিত طهور অর্থ পবিত্রতা অর্জন।

হাদীসের শব্দ شطر - অর্থ অর্ধেক। ইমাম তিরমিযী অপর একজন সাহাবী থেকে অন্য ভাষায় এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তা ভাষা হলঃ

"পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।"

মূলত شطر ও نصف শব্দদ্বয়ের অর্থ একই। আর উভয় ধরনের বর্ণনায় হাদীসের অর্থ হল, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা ঈমানের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

হাদীসে পবিত্রতাকে 'ঈমানের অর্ধেক' বলা হয়েছে। পবিত্রতার যা সওয়াব তা ঈমানের সওয়াবের অর্ধেক পরিমাণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। বলা হয়েছে, ঈমান যেমন পূর্ববর্তী সব ভুলত্রুটি ও গুনাহ্ খাতা দূর করে দেয়, ওযুও অনুরূপ কাজ করে। তবে এটা ঈমান ব্যতিরেকে বৈধতা লাভ করে না। এটা যেহেতু ঈমানের উপর নির্ভরশীল, এ কারণে এটা 'ঈমানের অর্ধেক' হওয়ার সমার্থবোধক বলা হয়েছে। এখানে 'ঈমান' বলে 'সালাত'কে বোঝানো হয়েছে।

 আর 'তাহারাত'-পবিত্রতা হল সালাত শুদ্ধ হওয়ার অপরিহার্য শর্ত। ফলে, এটা ঈমানের অর্ধেকের সমান। আর شطر শব্দ বললে যে শাব্দিক অর্থে পুরাপুরি 'অর্ধেকই থেকে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। ইমাম নববীর মতে এ জবাবটি অধিক গ্রহণযোগ্য। ইমাম তুরপুশতী বলেছেন, 'ঈমান' হল শিরক্ থেকে পবিত্রতা, যেমন 'তহুর' হল ওযুহীন অবস্থা থেকে পবিত্রতা লাভ। ফলে, এ দু'টি-ঈমান ও তাহারাত-উভয়ই পবিত্রতার ব্যাপার। উহাদের একটি মানুষের অভ্যন্তরীণ দিকের সাথে সংশ্লিষ্ট, আর দ্বিতীয়টি বহিরাঙ্গের সাথে সংশ্লিষ্ট।

ইমাম গাযালীর বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, 'তাহারাত' বা পবিত্রতার চারটি পর্যায় রয়েছেঃ (ক) বাহ্যিক দিক অপবিত্রতা ও ময়লা-আবর্জনা থেকে পবিত্রকরণ। (খ) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে পাপ-গুনাহ ও অপরাধ থেকে পবিত্রকরণ। (গ) খারাপ ও ঘৃণ্য চরিত্র থেকে অন্তরকে পবিত্রকরণ এবং (ঘ) আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছু থেকে মন, অন্তর ও হৃদয়কে পবিত্রকরণ। সকল নবী-রাসূল এবং বিশ্বাসীগণের পবিত্রতার এটাই হল মূল কথা। এর প্রত্যেকটি পর্যায়ে 'তাহারাত' যেমন হল অর্ধৈকটি কাজ। প্রত্যেকটি পর্যায়ে বর্জন ও ত্যাগ আছে, তেমনি আছে গ্রহণ ও অলংকরণ। এ হিসেবে বর্জন হল অর্ধেক আমল। কেননা, অপর অংশ এরই উপর নির্ভরশীল। আল্লাহর নির্ভুল পরিচিতি ও তাঁর মা হৃদয়ে স্থান লাভ করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছু হৃদয় মন থেকে বিদায় গ্রহণ না করবে। কেননা কারো হৃদয়ে এ দুটি কখনো একত্রিত থেকে পারে না। অনুরূপভাবে হৃদয়-মন থেকে খারাপ চরিত্র ও পংকিল মানসিকতার বিলীন হওয়া অতঃপর এর উত্তম ও মহান চরিত্রগুণে অভিষিক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর প্রথমে পাপ থেকে মুক্তি লাভ এবং পরে আল্লাহর আনুগত্যের গুণে অলংকৃত হওয়া আবশ্যক।

অতএব, বহিরাঙ্গের পবিত্রতার পর আত্মার (روح) পবিত্রতা, এর পর হৃদয়ের (قلب) পবিত্রতা এবং সর্বশেষে অন্তরলোকের গভীর গহনের পবিত্রতা বাঞ্ছনীয়। একারণে 'তাহারাত' বলতে কেবল বহিরাঙ্গের পবিত্রতাকে যথেষ্ট মনে করা মূলতই ভুল। কেননা, তাতে এ পবিত্রতার আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলার সমূহ আশংকা রয়েছে।

আরো পড়ুন: হালাল ও হারাম উপার্জন হারাম উপার্জন থেকে দান করা ও অপরের অধিকার হরণ 

প্রস্রাব-পায়খানা থেকে পবিত্রতা অর্জন

হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেন: আমি তোমাদের জন্য পিতার সমতুল্য। আমি তোমাদেরকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিক্ষা দিচ্ছি। অতএব তোমাদের কেউ যখন পায়খানায় যাবে তখন যেন কিবলামুখী হয় এবং কিবলাকে পিছনে ফেলে না বসে। কেউ যেন তার ডান হাত দ্বারা পবিত্রতা লাভের কাজ না করে। এজন্য তিনি তিন খন্ড পাথর ব্যবহার করার নির্দেশ দিতেন এবং গোবর ও হাড় ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। 

(আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমী)

ব্যাখ্যা

প্রকৃতিগত কারণে প্রস্রাব-পায়খানা করা মানুষের জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। প্রস্রাব-পায়খানা করলে মানুষের শরীর নাপাক হয়, সালাত আদায় করার উপযুক্ত থাকে না। কাজেই একদিকে যেমন পায়খানা প্রস্রাবের জন্য শরীয়তসম্মত নিয়ম জানতে হবে তেমিনি জানতে হবে তজ্জনিত অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনের নিয়ম। আলোচ্য হাদীসে নবী করীম (সা) তা-ই শিক্ষা দিয়েছেন। হাদীসটির শুরুতেই এ শিক্ষাদানের ব্যাপারে সমগ্র মুসলিম উম্মতের মুকাবিলায় রাসূলে করীম (সা)-এর সঠিক মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেছেন: 'আমি তোমাদের পিতার মত।' এ কথাটি দ্বারা রাসূলের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক স্পষ্ট করে তোলা হয়েছে, যেন মুসলমানরা তাঁর নিকট তাদের দ্বীনী ব্যাপারে কোন কিছু জিজ্ঞেস করতে লজ্জা না পায়। ঠিক যেমন পুত্র পিতার নিকট নিজের কোন অসুবিধার কথা বলা থেকে নিছক লজ্জার কারণে বিরত থাকে না, এখানেও ঠিক তেমনি। এখানে পিতা-পুত্রের দৃষ্টান্ত দিয়ে নবী করীম (সা) প্রসঙ্গত একথাটিও স্পষ্ট করে তুললেন যে, পিতার কর্তব্য হল সন্তানদেরকে শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া এবং সন্তানের কর্তব্য হল তা গ্রহণ ও পালন করা। সন্তানের কর্তব্য যেমন পিতার আদেশ-নিষেধ-উপদেশ পালন করে চলা, তেমনি সর্বসাধারণ মুসলমানদের কর্তব্য হল রাসূলের কথা মেনে চলা। আর রাসুলের (সা) কর্তব্য হল-উন্মাতকে সঠিক শিক্ষাদান করা। 

এ হাদীসে পায়খানা-প্রস্রাবের উদ্দেশ্যে বসা ও এ থেকে পবিত্রতা অর্জনের নিয়ম শিক্ষা দেয়া হয়েছে। হাদীসের মূল শব্দ غائط অর্থ নিচু স্থান। পায়খানা-প্রস্রাবের জন্য বসার উদ্দেশ্যে সাধারণত নিচুস্থান নির্ধারণ করা হয় বলে এ শব্দটি পায়খানা-প্রস্রাব করার স্থান এবং পায়খানা প্রস্রাব করা এ উভয় অর্থ প্রকাশ করে। হাদীসে বলা হয়েছে, তোমাদের কেউ যখন প্রস্রাব-পায়খানায় বসবে তখন যেন কিবলামুখী হয়ে কিংবা কিবলাকে পিছনে ফেলে না বসে। কেননা, 'কিবলা' বিশেষভাবে নামাযের জন্য একটি পবিত্র দিক। সে দিকেই আল্লাহর ঘর-কাবা শরীফ অবস্থিত। প্রস্রাব-পায়খানার দুর্গন্ধময় ও নাপাক আবর্জনাপূর্ণ স্থানে কিবলার মুখামুখি হয়ে বসা বা একে পিছনে ফেলে বসা অত্যন্ত বেয়াদবীমূলক কাজ। সে কারণে রাসুলে করীম (সা)-এর এ নিষেধ বাণী। উন্মুক্ত স্থান হোক কিংবা প্রাচীর বেষ্টিত স্থান প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় এ নিষেধ সর্বত্রই পালনীয়।

'ডান হাত দ্বারা পবিত্রতা লাভের কাজ করবে না' অর্থাৎ পায়খানা বা প্রস্রাব করার পর এর ময়লা পরিস্কারের কাজে ডান হাত ব্যবহার করা নিষেধ। কেননা ডান হাতখানা বিশেষভাবে পানাহার ও অন্যদের সাথে মুসাফাহা ইত্যাদি কাজের জন্য নির্দিষ্ট। আর বাম হাত দেহের নিদাংশের কাজে এবং ময়লা আবর্জনা ও অপবিত্রতা বিদূরণের কাজে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট।

পায়খানা করার পর ময়লা সাফ করার জন্য নবী করীম (সা) সাধারণত তিনখানা পাথর খন্ড ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে যে- নবী করীম (সা) আরব দেশের অধিবাসী ছিলেন এবং আরব দেশ হল ঊষর-বুষর মরুভূমি। সেখানে সর্বত্র পানি এবং মাটি পাওয়া কঠিন। তাই জনসাধারণের পক্ষে এসব ক্ষেত্রে প্রস্তরখন্ড ব্যবহার না করে কোন উপায় ছিল না। কিন্তু প্রস্রাব-পায়খানার ময়লা থেকে পবিত্র হওয়ার এটাই একমাত্র ও সর্বত্র ব্যবহার্য উপায় নয় এবং নবী করীম (সা)-ও সব সময় প্রস্তরখন্ড দ্বারাই পবিত্রতা অর্জন করতেন এমন কথাও নয়। এজন্য তিনি নিজে পানিও ব্যবহার করতেন। এ পর্যায়ে হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদীসটি অকাট্য প্রমাণ। তিনি বলেছেন:

নবী করীম (সা) যখন পায়খানায় যেতেন, তখন আমি তার জন্য একটি পাত্রে পানি নিয়ে এগিয়ে যেতাম। তিনি এর যারা ময়লা পরিষ্কার করে পবিত্রতা লাভ করতেন। পরে তিনি তাঁর হাত মাটির উপর ঘষতেন। এর পর আমি তাঁর জন্য অপর এক পাত্রে করে পানি নিয়ে আসলে তিনি এর দ্বারা ওযু করতেন। (আবু দাউদ, দারিমী, নাসাঈ)

ব্যাখ্যা

প্রস্তর খন্ড কিংবা শুদ্ধ মাটি দ্বারাই যে পায়খানা-প্রস্রাব পরিস্কার করতে হবে, এমন কোন শর্ত ইসলামী শরীআতে নেই। তবে নবী করীম (সা) নিজে পায়খানা প্রস্রাবের পরে ঢিলা/কুলুখ দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতেন। এরপর অধিক পবিত্রতা অর্জনের জন্য তিনি হাত মাটিতে ঘষেছেন। মাটিতে ঘষে কিংবা সাবান জাতীয় পদার্থ ছারাও হাত ধৌত করা যেতে পারে। ইবনে হাজার আল-আসকালানী 'ইস্তিঞ্জা' বা 'পায়খানা-প্রস্রাবের ময়লা ও দুর্গন্ধ দূর করে পবিত্রতা অর্জনের' এ পদ্ধতিকেই 'সুন্নাত' বলেছেন। শুধু তা-ই নয়, প্রস্রাব-পায়খানা করার পর এর ময়লা থেকে পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে কেবল পানি ব্যবহার করা এবং পানি ব্যবহারের পূর্বে কোন পাথরখন্ড কিংবা শুদ্ধ মাটির ঢেলা ব্যবহার করা আল্লাহর নিকটও অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ। কুবাবাসী তা-ই করতেন বলে কুরআন মাজীদে তাঁদের প্রশংসা করা হয়েছে। কেননা পূর্ণ মাত্রায় ময়লা পরিষ্কার করা ও পবিত্রতা অর্জন করা কেবল পানি ছারাই সম্ভব। এ কারণে এ কাজে শুষ্ক গোবর কিংবা হাড় ব্যবহার করতে স্পষ্ট নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এর সাহায্যে প্রকৃতভাবে ময়লা পরিষ্কার করা যায় না।

আরো পড়ুন: চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও রাহাজানির পরিণতি সংক্রান্ত হাদীস সম্পর্কে বিস্তারিত 

পায়খানা-প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন- এ কবরদ্বয়ে সমাহিত লোক দু'টির উপর আযাব হচ্ছে। আর তেমন কোন বড় গুনাহের কারণে এ আযাব হচ্ছে না। (বরং খুবই ছোট-খাটো গুনাহের দরুন আযাব হচ্ছে, অথচ তা থেকে বেঁচে থাকা কঠিন ছিল না)। তাদের একজনের উপর আযাব হচ্ছে। শুধু এ কারণে যে, সে প্রস্রাবের মলিনতা ও অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকার অথবা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকার জন্য কোন চিন্তা বা চেষ্টাই করত না। আর দ্বিতীয় জনের উপর আযাব হওয়ার কারণ এই যে, সে চোগলখুরী করত। পরে রাসূলে করীম (সা) (খেজুর গাছের) একটি তাজা শাখা নিয়ে ওটাকে মাঝখান থেকে চিরে দু'ভাগ করলেন। পরে এক এক ভাগ এক একটি কবরের উপর পুঁতে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন- হে আল্লাহর রাসূল। আপনি এ কাজ করলেন কি উদ্দেশ্যে? তিনি বললেন। আশা করা যায়, এ শাখাখন্ড দুটি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত এ দু' ব্যক্তির উপর আযাব অনেকটা লাঘব করে দেওয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

ব্যাখ্যা

হাদীসটি থেকে প্রথমত একথা জানা গেল যে, কবর আযাব থেকে পারে, হয় এবং এটা সত্য। দুনিয়ার সাধারণ মানুষ বাইরে থেকে কবর আযাব দেখতে বা অনুভব করতে না পারলেও নবী-রাসূলগণ আল্লাহর দেয়া আধ্যাত্মিক শক্তির বলে তা স্পষ্ট অনুভব করতে ও বুঝতে পারতেন। অতএব, কোন ব্যক্তির গুনাহের কারণে কবরে যে আযাব হবে, তাতে সন্দেহ নেই।

হাদীসে উল্লিখিত কবর দু'টিতে আযাব হওয়ার কথা বলে মহানবী (সা)-এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। একটি কবরে আযাব হওয়ার কারণ সম্পর্কে রাসূলে করীম (সা) বলেছেন, লোকটি প্রস্রাবের কদর্যতা থেকে বেঁচে থাকতে ও পরিত্র পরিচ্ছন্ন থাকতে চেষ্টা করত না। অর্থাৎ পায়খানা-প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জনের যে সকল নিয়ম বা পদ্ধতি ইসলাম নির্দেশ করেছে তার কোনটিই সে পালন করত না। আলোচ্য হাদীসে لا يستنزه لا يستتر এবং বুখারী

শরীফে উল্লেখিত لا يستبری এই তিনটি শব্দের একই অর্থ, একই মর্ম ও তাৎপর্য এবং তা হল পবিত্র হত না বা পবিত্রতা অর্জন করত না।

এ থেকে স্পর্ট হয় যে, প্রস্রাব-পায়খানা ইত্যাদির কদর্যতা ও অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকা এবং নিজের দেহ ও পোশাককে এসব ময়লা থেকে সুরক্ষিত রাখা আল্লাহ তাআলার বিশেষ নির্দেশ। এ নির্দেশ পালন করতে প্রস্তুত না হওয়া কিংবা এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন না করা বড় অপরাধ এবং সেজন্য কবরে আযাব ভোগ করতে হবে। দ্বিতীয় কবরটিতে আযাব হওয়ার কারণ সম্পর্কে নবী করীম (সা) বলেছেন, সে চোগলখুরী করত অর্থাৎ একজনের বিরুদ্ধে অন্যজনের নিকট কথা লাগাত। চোগলখুরী করা একটা অতি বড় গুনাহের কাজ। কুরআন মাজীদের একটি আয়াতে বলা হয়েছে:

"এবং অনুসরণ করো না তার- যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, পশ্চাতে নিন্দাকারী।" 

(সূরা আল-কালাম ১০-১১)

প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে ব্যুৎপত্তি সম্পন্ন কা'ব আহবার বলেছেন- তওরাতে চোগলখুরীকে সবচেয়ে বড় গুনাহ বলা হয়েছে। যে দুটি গুনাহের কারণে এ দু'ব্যক্তি কবর আযাব ভোগ করছিল, সে দুটি সম্পর্কে রাসূলে করীম (সা) আরো বলেছেন-

"লোক দুটি কোন বড় গুনাহের কারণে আযাব ভোগ করছে না।"

এর অর্থ এ নয় যে, এ গুনাহ দুটি বড় নয়-খুবই সামান্য ও নগণ্য। না, তা নয়। বরং এর অর্থ এই যে, এ গুনাহ্ দুটি এমন কাজ নয়, যা না করলেই নয়, যা ত্যাগ করা খুবই কঠিন ব্যাপার। বরং সত্য কথা এই যে, এ কাজ দুটি না করে খুব সহজেই চলা যেতে পারে। যদি কেউ এটা পরিত্যাগ করার সংকল্প গ্রহণ করে, তা হলে তাকে সেজন্য কোন বিশেষ কষ্ট স্বীকার করতে হবে না। কোনরূপ অসুবিধায় পড়তে হবে না। কোন ক্ষতিও হবে না কিন্তু তা সত্ত্বেও লোক দু'জন এ গুনাহ দুটি করেছে এবং তার ফলেই আজ কবরে তাদেরকে নিজ নিজ গুনাহের শাস্তিস্বরূপ আযাব ভোগ করতে হচ্ছে।

এ থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল যে, কবর আযাব কিংবা জাহান্নামের আযাব- যা-ই যাকে ভোগ করতে হবে, তা হবে তার নিজের ইচ্ছামূলক গুনাহের কারণে। ইচ্ছামূলকভাবে গুনাহ না করলে কাউকেও আযাব ভোগ করতে হবে না। তাই, ইচছাকৃতভাবে কোন ছোট গুণাহ ইচছাবশত মূর্খতা বৈ কিছু নয়। আমাদের সকলকে ইচছায়-অনিচছায় সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা বাঞ্ছনীয়।

ইবাদতে পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী করীম (সা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন: পবিত্রতা ব্যতীত সালাতই কবুল করা হয় না। -(তিরমিযী)

ব্যাখ্যা

পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কোন সালাতই কবুল করা হয় না, প্রত্যেক সালাতের পূর্বে পবিত্রতা অর্জন করা অপরিহার্য। পূর্বে পবিত্রতা অর্জন না করে কোন প্রকারের সালাত পড়লে তা আল্লাহর নিকট গৃহীত হবে না। হাদীসটির মাধ্যমে আমরা তাই জানতে পেরেছি।

মূল হাদীসের শব্দ হল طهور )তুহুরুন)। তুহুবুন শব্দ দ্বারা ওযু করা এবং গোসল করা উভয় কাজই বোঝায়।

আরবী আভিধানিকদের মতে 'তুহুর' শব্দের অর্থ 'ওষু' করা। আর 'তাহুর' طهور শব্দের অর্থ সেই পানি, যা দিয়ে ওযু করা হয়। আর 'কবুল' শব্দের তাৎপর্য হল নির্ভুল নিয়মে এর পালন ও বিশুদ্ধ হওয়া এবং এর বিনিময়ে প্রতিফল দান। অন্য কথায় আল্লাহর হুকুম পালনের দ্বারা স্বীয় দায়িত্ব আদায় করা ও এর জন্য নির্দিষ্ট ফল লাভ এভাবে যে নেক কাজের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ফললাভ করা হয়, তা কবুল হয়, আর যা এভাবে করা হয় না, তা কখনও কবুল হয় না। বস্তুত সালাত আল্লাহর সম্মুখে হাযির হওয়ার একটি অতীব পবিত্র ভাবধারাপূর্ণ ইবাদত। এ ইবাদত প্রকৃত পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কখনো কবুল থেকে পারে না।

এর কারণ হল- আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ঘোষণা করেছেন।

" অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকীদের কুরবানী কবুল করেন।" (সূরা আল-মায়িদা ২৭)

আলোচ্য হাদীসটি এ কথারই প্রতিধ্বনি এবং এরই বাস্তব রূপ। এটা অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, সালাতের জন্য পূর্বেই 'তাহারাত' বা পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব। সমগ্র মুসলিম উম্মত এ বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত যে সালাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য 'তাহারাত' বা পবিত্রতা পূর্বশর্ত। 'তাহারাত' ব্যতীত সালাত পড়া সম্পূর্ণ হারাম-

'তাহারাত' ব্যতীত কোন সালাতই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হয় না। এটা এক নিরংকুশ, সার্বিক ও চুড়ান্ত ঘোষণা। ফরয সালাত কিংবা নফল সালাত পবিত্রতা বাতীত কবুল না হওয়ার ব্যাপারে সবই সমান। জানাযার সালাতও যেহেতু এক প্রকারের সালাত, তাই ওটাও 'তাহারাত' ব্যতীত কবুল হবে না। অতএব, জানাযার সালাত পড়ার পূর্বেও যথারীতি পবিত্রতা অর্জন করে নিতে হবে। ইমাম বুখারী বলেছেন: জানাযার সালাতকে সালাত বলা হয়েছে, যদিও তাতে রুকু সিজদা নেই, তাতে সূরা ফাতিহা ও অন্যান্য সূরা বা আয়াত পাঠ করা হয় না। তাতে শুধু দোয়া, তাকবীর ও সালামই রয়েছে মাত্র। হযরত ইবন উমর (রা.) এ হাদীসের ভিত্তিতেই বলেছেন-

জানাযার সালাত পবিত্রতা অর্জনকারী ব্যতীত আদায় করা যাবে না। (ফাতহুল বারী

হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে করীম (সা) বলেছেন। যার মধ্যে আমানত নেই তার ঈমানও নেই। যার পবিত্রতা নেই তার সালাত গ্রহণযোগ্য থেকে পারে না। আর যার সালাত নেই তার দ্বীনও নেই। দ্বীন-ইসলামে সালাতের স্থান বা গুরুত্ব তা-ই যা মানবদেহে মস্তকের গুরুত্ব। 

(তাবারানী, মুজামুস-সাগীর)

ব্যাখ্যা

আলোচ্য হাদীসে ঈমান, দ্বীন-ইসলাম, পবিত্রতা, সালাত ও আমানত বা বিশ্বাসপরায়ণতার গুরুত্ব এবং এ সবের পারস্পরিক সম্পর্কের কথা সংক্ষেপে অত্যন্ত সুন্দর করে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমত বলা হয়েছে। যার আমানতদারী নেই বা যে আমানতদারী রক্ষা করতে পারে না তার ঈমান নেই। অন্য কথায়, প্রত্যেক বেঈমান ব্যক্তিই খিয়ানতকারী-বিশ্বাসঘাতক। ঠিক এর বিপরীত- প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তিই আমানতদার। ঈমান থাকলেই একজন লোক আমানতদারী রক্ষা করতে পারে। এ থেকে একথাও সুস্পষ্ট হয়ে উঠল যে, প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তিকে অবশ্যই আমানতদার হতে হবে, কারো মধ্যে আমানতদারী না থাকলে, খিয়ানত কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা দেখা দিলে বুঝতে হবে যে, তার হাজার ধার্মিকতার অন্তরালে সত্যিকার ঈমান বলতে কোন জিনিসের অস্তিত্ব তার মধ্যে নেই। ঈমান যে কোন নিঃসম্পর্ক একক জিনিস নয়। বরং বাস্তব কর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত, তা সুস্পষ্টরূপে জানা যায়।।

দ্বিতীয়ত বলা হয়েছেঃ যার পবিত্রতা নেই, তার সালাতও নেই। অপবিত্র ব্যক্তির পক্ষে সালাত পড়া জায়েয নয়। সালাতের এ পূর্বে অবশ্যই পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। গোসল ওয়াজিব হলে তা করতে হবে, অন্যথায় শুধু ওষু করেই সালাত পড়তে দাঁড়াবে। বস্তুত বিনা ওযূতে সালাত শব্ধ হয় না। শুধু তা-ই নয়, বরং বিনা ওযুতে সালাত পড়া বড় গুনাহ। 

তৃতীয়ত বলা হয়েছেঃ যার সালাত নেই, তার দ্বীনও নেই। বস্তুত সালাত হচ্ছে দ্বীন-ইসলামের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তাই সালাত না পড়লে দ্বীন-এর প্রাসাদ ধুলিসাৎ থেকে ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যেতে আর কিছুই বাকী থাকে না। 

সালাতের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য নবী করীম (সা) হাদীসের শেষাংশে একটি দৃষ্টান্তের উল্লেখ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে: একটি দেহের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে মস্তক। হাত, পা, কান ইত্যাদি কোন কিছুই না থাকলে মানুষের মৃত্যু ঘটে না। কিন্তু কারোও মস্তক ছিন্ন হলে এক মুহূর্তেই প্রাণবায় নির্গত হয়ে যায়। বস্তুত মস্তকবিহীন মানুষ বা প্রাণী যেমন ধারণা করা যায় না, সালাত বিহীন দ্বীন ও অনুরূপভাবে ধারণা করা যায় না।

এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ঈমানের সত্তরটিরও বেশী শাখা-প্রশাখা রয়েছে, এর বাস্তব রূপ এ হাদীসে সুন্দরভাবে দেখতে পাওয়া যায়। ঈমান হচ্ছে মানুষের মনের বিশ্বাসের ব্যাপার, কিন্তু এ বিশ্বাস বাস্তব কর্মের সাথে মোটেই সম্পর্কহীন নয়। বরং বাস্তব কর্মের সাথে এর এত দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে যে, কর্মের ভিতর দিয়ে ঈমানের রূপায়ণ থেকে না থাকলে ঈমানের অস্তিত্ব আছে বলেও বিশ্বাস করা যায় না। অনুরূপভাবে ঈমান না থাকলে কোন কর্মই গ্রহণযোগ্য থেকে পারে না। তাই বলতে হবে যে, ঈমান, আমল, বিশ্বাস ও কাজ একটি অভিন্ন জিনিস না হলেও তা ঠিক বীজ ও বৃক্ষের মতই অবিচ্ছেদ্য।

আরো পড়ুন: কোরবানি কি কোরবানির পশু জবাইয়ের নিয়ম ও পশু জবাইয়ের দোয়া 

পবিত্রতা অর্জনের মর্যাদা 

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী, হযরত জাবির ও হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। যখন কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হল- 'এ মসজিদে এমন সব লোক রয়েছে, যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে, আর আল্লাহ তাআলাও পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে 'ভালবাসেন' তখন নবী করীম (সা) আনসার সমাজের লোকদের সম্বোধন করে বললেনঃ 'হে আনসার সম্প্রদায়। আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা ও পরিশুদ্ধতা অর্জনের ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করেছেন। আমি জানতে চাই, তোমাদের পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি কি? তখন জবাবে তাঁরা বললেনঃ (পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে আমাদের পদ্ধতি হল) আমরা সালাতের জন্য ওযু করি, শরীর না-পাক হলে গোসল করি এবং পানি দ্বারা প্রস্রাব-পায়খানায় শৌচ করি। এটা শুনে নবী করীম (সা) বললেন, হ্যা, এটাই হল কুরআনে তোমাদের প্রশংসার কারণ। অতএব নিয়মিতভাবে এ পদ্ধতি অনুসরণ করে চলাই তোমাদের কর্তব্য। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)

ব্যাখ্যা

উল্লিখিত হাদীসে কুরআন মাজীদের যে আয়াতের অংশ উল্লেখ করা হয়েছে তা সূরা তাওবার ১০৮ নং আয়াতের শেষ অংশ। এ আয়াতাংশ 'কুবা'বাসী আনসারদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, তা রাসূলে করীম (সা)-এর কথা থেকেই জানা গেল। এ আয়াতে তাদের পবিত্রতা অর্জন প্রবণতার প্রশংসা করা হয়েছে। আর এ প্রশংসা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। এ প্রশংসা দেখে নবী করীম (সা)-এর মনে ধারণা জন্মেছিল যে, পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে তারা যে পদ্ধতি অনুসরণ করে তা আল্লাহর বিশেষ পছন্দ হয়েছে। তাই, তিনি তা সরাসরি তাঁদের নিকট থেকে জেনে নেয়ার উদ্দেশ্যে 'কুবা'র মসজিদে উপস্থিত হলেন এবং তাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে তাঁরা যা বলেছেন, তা আলোচ্য হাদীসে শুধু এতটুকুই উদ্ধৃত হয়েছে- আমরা সালাতের জন্য ওযু করি- ওযু করে সালাত পড়ি। আর ওযু তাঁরা নিশ্চয়ই সে নিয়মেই করতেন যা নবী করীম (সা) তাঁদেরকে শিখিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত বললেন-শরীর নাপাক হলে আমরা গোসল করি ও গোসল করে শরীরকে পবিত্র করে নিই। তৃতীয়ত, বললেন- আমরা প্রস্রাব ও পায়খানার পর পানি দ্বারা শৌচ করি। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী করীম (সা) নিজে বলেছেন-

এ আয়াতাংশ 'কুবা'বাসীদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে- তারা পানি দ্বারা শৌচ করে। (বাগাবী ও তিরমিযী)

সারকথা

প্রস্রাব-পায়খানা থেকে উত্তম রূপে পবিত্রতা অর্জন করা ইবাদাতের অংশ। পানি, মাটি, টিস্যু পেপার, পাথরের টুকরা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায়। তবে মাটি বা পাথরের টুকরা দ্বারা পরিস্কার হওয়ার পর পানি দ্বারা ধৌত করা উত্তম। প্রস্রাব-পায়খানা থেকে উত্তমরূপে পরিস্কার ও পবিত্র না হলে সালাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে না। পায়খানা-প্রসাব থেকে যথাযথ অর্থাৎ ইসলামের বিধি অনুযায়ী পবিত্রতা অর্জন না করা বড় গুনাহের কাজ এবং সে জন্য কবরের আযাব অবধারিত। যথাযথভাবে পবিত্রতা অর্জনকারীকে আল্লাহ ভালবাসেন। সূরা তাওবার ১০৮ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা অর্জনকারীদের প্রশংসা করেছেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url