জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
জাহান্নাম হলো সেই স্থান যেটিকে আল্লাহ তাআলা পাপাচারীদের শাস্তির জন্য তৈরি করেছেন। আর জান্নাত হলো সেই স্থান যেটিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়জনদেরকে পুরস্কৃত করার জন্য তৈরি করেছেন। আর এটি আমাদের জীবনকর্ম দ্বারাই। নির্ধারিত হবে, আমরা জান্নাতftের দিকে যাচ্ছি নাকি জাহান্নামে দিকে যাচ্ছি।
ভূমিকা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য পরকালে দুটি ঠিকানা তৈরি করেছেন। একটি জান্নাত অপরটি জাহান্নাম। যদি ভাল আমল করে ও ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে যেতে পারে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের ঠিকানা দান করবেন। পক্ষান্তরে যদি দুনিয়াতে ঈমান আনার সৌভাগ্য না হয় অথবা ঈমান আনয়ন করলেও গাফলতির কারণে পাপে নিমজ্জিত থাকে এবং তাওবা ছাড়াই তার মৃত্যু হয়ে যায়, তাহলে তার ঠিকানা হবে জাহান্নামে।
আরো পড়ুন: চোগলখোরি জঘন্য অপরাধ কবরে আযাব ও চোগলখোরির প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত
পুঁজ পান করানো হবে
প্রচণ্ড শাস্তির কারণে জাহান্নামিদের ক্ষুধা-পিপাসা মারাত্মক হবে। তারা কেবল খাইতে চাইবে। যা। দেওয়া হবে তাই খাবে ও পান করবে। তাদেরকে পুঁজ ও রক্ত মিশ্রিত পানি পান করতে দেওয়া হবে।
আল্লাহ বলেন-
তার সামনে দোজখ রয়েছে। তাতে পুঁজ ও রক্ত মিশ্রিত পানি পান করানো হবে। ঢোক গিলে তা পান করবে এবং গলার ভেতরে প্রবেশ করাতে। কমই পারবে।
(সুরা ইব্রাহিম, আয়াত: ১৬-১৭)
আগুনের পোশাক, গরম পানি ও লোহার হাতুড়ি দিয়ে শাস্তি দেওয়া হবে
দোজখীদের শাস্তি বহুমুখী। আল্লাহ তাআলা বলেন-'যারা কাফির, তাদের জন্য আগুনের পোষাক তৈরি করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেওয়া হবে। ফলে তাদের পেটে যা আছে, তা এবং চামড়া গলে বের হয়ে যাবে। তাদের জন্য আছে লোহার হাতুড়ি। তারা যখনই যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বলা হবে, দহন শাস্তি ভোগ করো।'
কুরআনে বর্ণিত 'দোজখের ৭টি দরজার' তাফসির প্রসঙ্গে আতা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এ দরজাগুলো ভীষণ দুঃখ-কষ্ট ও কঠিন বিপদ-মুসিবতে ভরা। যারা জানা সত্ত্বেও জিনা করেছে, তাদের নিকৃষ্টতম পঁচা দুর্গন্ধে এগুলো দুর্গন্ধময় হয়ে থাকবে।
দোজখীদেরকে জিনাকারীদের যৌনাঙ্গ থেকে নিঃসৃত পঁচা-দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় পান করানো হবে মাকহুল দামেশকি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, দোজখীরা খুব পঁচা দুর্গন্ধ পেয়ে বলবে, এর চাইতে বেশি দুর্গন্ধ আমরা আর কখনও পাইনি। তাদেরকে বলা হবে, এটা জিনাকারীদের লজ্জাস্থানের পঁচা দুর্গন্ধ। জাহান্নামে জুববুল হুজন নামক এক উপত্যকায় খচ্চরের মতো বিরাট বিচ্ছু জিনাকারীকে দংশন করতে থাকবে। প্রতি দংশনে এক হাজার বছর পর্যন্ত বিষের যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকবে। তারপর গোশত খসে পড়বে এবং শরীর থেকে পুঁজ বের হবে।
বেনামাজিকে জাহান্নামের মালহাম নামক অঞ্চলের উটের ঘাড়ের মতো মোটা এবং প্রায় এক মাসের পথের সমান লম্বা বিষধর সাপ দংশন করতে থাকবে। প্রতি দংশনের বিষ ৭০ বছর পর্যন্ত যন্ত্রণা দেবে, এরপর গোশত খসে পড়বে।
যারা সোনা-রূপার জাকাত দেয় না, সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তাদের কপালে, পিঠ ও পার্শ্বে শেক দিয়ে বলা হবে, এখন তোমরা তোমাদের জমাকৃত সম্পদের মজা ভোগ করো।
এছাড়াও সুদখোর, মিথ্যুক, নিন্দুক, চোর-ডাকাত, জালিম-অত্যাচারী, অন্যের অধিকার নষ্টকারী, মা- বাপের অবাধ্য ও তাদেরকে কষ্টদানকারী সন্তানের জন্যও বহু আজাব রয়েছে। এখানে শুধু দু-একটা দলের আজাবের সামান্য ইঙ্গিত দেওয়া হলো।
আরো পড়ুন: পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের গুরুত্ব সালাত আদায় না করার পরিণতি ও ফরজ হওয়ার ইতিহাস
গায়ের চামড়া পরিবর্তন করে জ্বালানো হবে
আল্লাহ তাআলা বলেন -
'কখনই নয়। নিশ্চয় এটা লেলিহান অগ্নি। যা চামড়া তুলে নেবে। [সুরা মা'আরেজ, আয়াত ১৫-১৬)
'যখন তাদের দেহের চামড়া আগুনে পুড়ে পুড়ে গলে যাবে, তখন (সঙ্গে সঙ্গে) সেখানে অন্য চামড়া সৃষ্টি করে দেব; যেন তারা আজাবের স্বাদ পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে। বস্তুত আল্লাহ বড়ই শক্তিশালী এবং নিজের ফায়সালাসমূহ কার্যকরী করার কৌশল খুব ভালো করেই জানেন।'
[সুরা নিসা, আয়াত: ৫৬]
চামড়া পরিবর্তন করা হচ্ছে এবং পুড়ে যাচ্ছে, পুনরায় আবার তা তৈরি হচ্ছে এ অনুভূতি কখনো জাহান্নামিদের থাকবে না। কেননা (পৃথিবীতে) যদি কোনো বস্তু প্রতি সেকেন্ডে দশবার পর্যন্ত পরিবর্তন হয়, তবে তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু কোনো বস্তু যদি প্রতি সেকেন্ডে দশবারের বেশি পরিবর্তন হয়, তবে তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। বরং ঐ বস্তুকে স্থির দেখি। যেমন বিদ্যুৎ এর বাতি। বিদ্যুৎ প্রতি সেকেন্ডে পঞ্চাশ বার দিক পরিবর্তন করে, অর্থাৎ একটি বাতি জ্বলা অবস্থায় দেখি, কারণ যেহেতু সেকেন্ডে দশবারের বেশি দিক পরিবর্তন হচ্ছে তাই আমরা বাতিকে স্থির দেখি। তদ্রুপ জাহান্নামিদেরকে প্রতি সেকেন্ডে কয়েকশবার চামড়া পরিবর্তন করা হবে, কিন্তু জাহান্নামিগণ মনে করবে, সেই পুরানো চামড়াই শরীরে আছে এবং তা অবিরাম পুড়ে চলছে।
জাহান্নামিরা ছায়ার মধ্যে থাকবে
'তারা গরম বাষ্প, টগবগ করা ফুটন্ত পানি এবং কালো ধোঁয়ার ছায়ার মধ্যে থাকবে। তা (কখনো না ঠাণ্ডা হবে, না হবে শান্তিদায়ক)'।
[সুরা ওয়াকিয়া : ৪২-৪৫]
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, কালো বর্ণের আগুনে জাহান্নামিদেরকে নিক্ষেপ করা হবে। তাই যখন তারা সেখানে প্রবেশ করবে, তখন চারদিকে অসহ্য তাপ ও ধোঁয়ার মতো ঘোলাটে অন্ধকার দেখবে। এ অবস্থার কথাই উপরোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে।
জাহান্নামিদের খাদ্য ও পানীয়
জাক্কুম বৃক্ষ হবে খাদ্য এবং ফুটন্ত পানি শরীরের উপর ঢেলে দেওয়া হবে। ক্ষুধার জ্বালায় জান বেরিয়ে যাবে। তখন তারা খাদ্য চাইবে। কিন্তু খাদ্য তো দেওয়া হবে না, দেওয়া হবে অখাদ্য। যেটা পাবে সেটাই চাইবে।
এ মর্মে আল্লাহ বলেন-
'নিশ্চয়ই জাক্কুম বৃক্ষ পাপীর খাদ্য হবে। গলিত তামার মতো পেটে ফুটতে থাকবে। যেমন পাটি। ফুটে। একে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে। তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির। আজাব ঢেলে দাও। [সুরা দোখান, আয়াত: ৪৩- ৪৮]
আরও বলেন-
অতঃপর পান করার জন্য তাদের ফুটন্ত পানি দেওয়া হবে। [সুরা ছাফ্ফাত : ৬৭]
অন্যত্র বলা হয়েছে-
'অবশ্যই তারা জাক্কুম গাছের খাদ্য খাবে। ওগুলোর দ্বারাই পেট ভর্তি করবে। আর উপর হতে টগবগ করে ফুটন্ত পানি পিপাসা কাতর উটের ন্যায় পান করবে। [সুরা ওয়াকিআহ, আয়াত: ৫২-৫৩]
জাক্কুম, ঈধপঃং জাতীয় গাছ। আরবের তিহামা অঞ্চলে এ গাছ জন্মে। এর স্বাদ তিক্ত এবং গন্ধ অসহ্য। ঐ গাছ ভাঙ্গলে দুধের মতো সাদা কস বের হয়, যা গায়ে লাগলে সঙ্গে সঙ্গে ফোস্কা পড়ে। ঘা হয় এবং গা ফুলে ওঠে। আগেই বলা হয়েছে। পৃথিবীর সঙ্গে আখিরাতের কোনো বস্তুর নামের মিল থাকলেও মূলত ঐ দুই বস্তু এক নয়। পৃথিবীর জাক্কুম গাছের তুলনায় আখিরাতের জাক্কুম আরও নিকৃষ্ট। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন-
যদি জাক্কুমের এক বিন্দু পৃথিবীতে পড়ে, তবে তা সারা বিশ্বের প্রাণীকুলের আহার্য বস্তুকে বিকৃত করে ফেলবে।
সুতরাং এক ফোঁটা জাক্কুম যদি পৃথিবীর নদ-নদীতে ফেলা হয়, তবে তা পৃথিবীবাসীর সমস্ত খাদ্য দ্রব্যকে বিনাশ করে দেবে।
জাক্কুম গাছের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন
(মুসনাদে আহমাদ: খণ্ড, ১, পৃষ্ঠা-৩০০)
তা এমন একটি গাছ যা জাহান্নামের তলদেশ হতে। বের হয়। তার ছড়াগুলো এমন, যেন শয়তানগুলোর মাথা?'
'শয়তানগুলোর মাথা' এ কথাটি একটি দৃষ্টান্ত। যেমন আমরা কারও চেহারা বিবর্ণ দেখলে বলি একেবারে পেত্নীর মতো দেখতে। ঠিক এমনি একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে শয়তানের মাথার দৃষ্টান্ত। এ যে অত্যন্ত অরুচিকর, অখাদ্য, কুখাদ্য তা বুঝানোই হচ্ছে উক্ত আয়াতের অভিপ্রায়।
সুরা গাশিয়ায় বলা হয়েছে-
তাদেরকে ফুটন্ত কূপের পানি পান করানো হবে। কাঁটা যুক্ত শুষ্ক ঘাস ছাড়া আর কোনো খাদ্য তাদের জন্য থাকবে না। তা দেহের পুষ্টি সাধন করবে না এবং তাতে ক্ষুধারও উপশম হবে না।
[সুরা গাশিয়া, আয়াত: ৫-৭]
সে পানি শুধুমাত্র গরম ও ফুটন্তই হবে না, বরং তা তামা বা কঠিন কোনো ধাতুকে তাপ প্রয়োগে তরল করা হলে, সেই উত্তপ্ত তরলের মতো হবে।
ইরশাদ হচ্ছে-
'তারা পানির আকাঙ্ক্ষা করলে গলিত ধাতুর ন্যায় পানি সরবরাহ করা হবে। যা তাদের মুখমণ্ডলকে ঝলসে দেবে। এটা কতো নিকৃষ্ট পানীয় এবং জাহান্নাম কতোই না নিকৃষ্ট স্থান।
আরও বলা হয়েছে,
সে পানি পান করা মাত্র) তা তাদের নাড়ি ভূড়িকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে।
[সুরা মুহাম্মদ, আয়াত: ১৫]
'সেখানে ঠাণ্ডা ও পানোপযোগী কোনো বস্তুর স্থান তারা পাবে না। যদিও বা কিছু পায় তা হচ্ছে উত্তপ্ত গরম পানি ও দুর্গন্ধযুক্ত মিশ্রিত রক্ত।
(সুরা নাবা, আয়াত: ২৪)
সুরা ইব্রাহিমে বলা হয়েছে-আর গলিত পুঁজ পান। করানো হবে, যা সে অতিকষ্টে গলধঃকরণ করবে এবং তা গলধঃকরণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। চতুর্দিক থেকে মৃত্যু যন্ত্রণা তাকে গ্রাস করে নেবে কিন্তু তবুও তার মৃত্যু হবে না।
(সুরা ইব্রাহিম, আয়াত: ১৬-১৭)
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'যদি সেই দুর্গন্ধময় পুঁজ এক বালতি পৃথিবীতে ফেলে দেওয়া হতো, তবে তা গোটা পৃথিবীকে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ করে তুলত।
আরো পড়ুন: পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ অঙ্গ, কীভাবে পবিত্রতা অর্জন করবেন সেই সম্পর্কে ব্যাখ্যাসহ বিস্তারিত
জাহান্নামিরা জান্নাতীদের নিকট খাদ্য ও পানীয় চাবে
'জাহান্নামিরা জান্নাতিদেরকে ডেকে বলবে, আমাদেরকে সামান্য পানি দাও কিংবা আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছেন, তা হতে কিছু আমাদের দিকে নিক্ষেপ করে দাও। জবাবে জান্নাতিগণ বলবে, আল্লাহ তাআলা এ দুটো বস্তুই কাফিরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং-২৫৮৪; মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড,৩, পৃষ্ঠা-২৮)
[সুরা আরাফ, আয়াত: ৫০]
উল্লেখিত আয়াত হতে প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবী যেমন স্থান কাল ও পাত্রের দ্বারা সীমাবদ্ধ কিন্তু আখিরাত স্থান-কালের সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে। কেননা জান্নাতের পরিধি যেমন বিশাল ঠিক তেমনিভাবে জাহান্নামের পরিধিও বিশাল। তবুও এ দুপ্রান্ত থেকে একজন অপরজনের অবস্থা অবলোকন করতে পারবে এবং পরস্পর কথাও বলবে, তাতে তাদের দৃষ্টিপাত বা কণ্ঠস্বরে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে না।
জাহান্নামিরা আফসোস করবে
তারা জাহান্নামের কঠোর আজাব দেখে আফসোস করে বলবে-
'সেদিন সত্যিকার রাজত্ব হবে দয়াময় আল্লাহর আর কাফিরদের পক্ষে দিনটি হবে কঠিন। জালিম সেদিন আপন হাত দুটো দংশন করতে করতে বলবে, হায়! আফসোস, আমি যদি রাসুলের পথ অনুসরণ করতাম। হায়! আমি যদি অমুককে বন্ধু না বানাতাম। সে আমার কাছে উপদেশ আসার পরই আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করছে। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়। (সুরা ফুরকান: ২৬-২৯)
জাহান্নামের আজাব স্থায়ী
আল্লাহ তাআলা বলেন-
'অপরাধীরা জাহান্নামের আযাবে চিরস্থায়ী অবস্থান করবে। [সুরা যুখরুফ, আয়াত: ৭৪)
আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
জাহান্নামবাসীরা কাঁদতে থাকবে। তাদের চোখের পানিতে জাহাজ ভাসাতে চাইলে ভাসানো যাবে। তাদের চোখ থেকে অশ্রুর বদলে রক্ত বেরুবে।
শিকলে বেঁধে দাহ্য আলকাতরার জামা পরানো হবে
অপরাধীদের শাস্তি কঠিন। আল্লাহ বলেন,
(মুস্তাদরাকে হাকেম খণ্ড, ৪: পৃষ্ঠা-৬৪৮)
হাদিসের সনদ সহিহ, আল্লামা যাহাবি ও আলবানি একে সহিহ হাদিস বলেছেন। তুমি ঐ দিন পাপীদেরকে পরস্পরে শৃঙ্খলাবদ্ধ দেখবে। তাদের জামা হবে দাহ্য আলকাতরার এবং তাদের মুখমণ্ডলকে আগুন আচ্ছন্ন করে ফেলবে।
[সুরা ইব্রাহিম : আয়াত, ৪৯-৫০]
জাহান্নামিদেরকে যখন ফিরেশতারা এক হাতে চুলের মুঠি এবং অন্য হাতে পা ধরে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে নিয়ে যাবে, তখন জাহান্নামের পাহারাদারগণ জিজ্ঞেস করবে, তোমাদের কাছে কি কোনো সুসংবাদ দাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী পৌঁছেনি? তখন কাফিরগণ বলবে, হ্যাঁ, পৌঁছেছিল কিন্তু আমরা তাদেরকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতাম এবং মিথ্যা মনে করতাম। তখন আফসোস করবে এবং বলবে,
হায়! আমরা যদি শুনতাম এবং অনুধাবন (জ্ঞান দিয়ে চিন্তা-ভাবনা) করতাম, তবে আমরা আজ দাউ দাউ করে জ্বলা আগুনে নিক্ষিপ্ত লোকদের মধ্যে শামিল হতাম না।' [সুরা মুলক, আয়াত: ১০]
সুরা আনআমে বলা হয়েছে-
'হায়! সে সময়ের অবস্থা যদি তুমি দেখতে পারতে, যখন তাদেরকে জাহান্নামের কিনারায় দাঁড় করানো হবে; তখন তারা বলবে: হায়! আমরা যদি দুনিয়ায় আবার ফিরে যেতে পারতাম এবং সেখানে আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা মনে না করতাম, আর ঈমানদার লোকদের মধ্যে শামিল হতে পারতাম।
(সুরা আনআম, আয়াত: ২৭)
তাদের এ আবেদন-নিবেদন ব্যর্থ হয়ে যাবে। আল্লাহ সরাসরি তাদের কথাকে প্রত্যাখ্যান। করবেন। ইরশাদ হচ্ছে:
'তাদেরকে যদি পূর্ববর্তী জীবনের দিকে ফিরিয়েও দেওয়া হয়, তবুও তারা সে সব কাজই করবে, যা হতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। তারা তো সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী।
[সুরা আনআম, আয়াত : ২৮]
সুরা যুমারে বলা হয়েছে-
যে সব লোক কুফরি করেছিল তাদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা যখন সেখানে পৌঁছাবে তখন তার (অর্থাৎ জাহান্নামের) দরজাগুলো খোলা হবে এবং তার কর্মচারীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের নিকট তোমাদের নিজেদের মধ্যে এমন কোনো রাসুল কি আসেনি, যে তোমাদেরকে তোমাদের রবের আয়াতসমূহ শুনিয়েছে এবং তোমাদেরকে এ বলে ভয় প্রদর্শন করেছেন যে, এ দিনটি অবশ্যই একদিন তোমাদেরকে দেখতে হবে?' তারা বলবে, 'হ্যাঁ এসেছিল! কিন্তু আজাব হওয়ার ফায়সালা কাফিরদের ভাগ্যলিপি হয়ে গিয়েছে।
[সুরা যুমার, আয়াত: ৭১]
মানুষ যখন হতাশ ও পেরেশান হয়ে যায় তখনই তার মুখ দিয়ে হতবাক কথা বের হয়। উপরোক্ত দৃষ্টান্তটি তার নমুনা।
আরো পড়ুন: যাকাত কি যাকাত না দেওয়ার পরিনতি যাকাত ফরজ হওয়ার কারণ স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাত
দুনিয়ার আগুন থেকে জাহান্নামের আগুনের তেজ ৭০ গুণ বেশি
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-তোমাদের দুনিয়ার আগুন, জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, এটা কি যথেষ্ট নয়? তিনি উত্তরে বলেন, এর সঙ্গে আরও ৬৯ গুণ যোগ করা হবে এবং প্রত্যেকটির গুণ এ আগুনের মতো।
নিম্নতম শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তি
নুমান ইবনু বাশির থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
সবচাইতে কম সাজাপ্রাপ্ত জাহান্নামি ব্যক্তি হলো যার দুটো জুতার মধ্যে আগুনের দুটো ফিতা থাকবে। তা মাথার মগজকে এমনভাবে টগবগিয়ে সিদ্ধ করতে থাকবে যেন পাতিলে সিদ্ধ করা হয়। সে মনে করবে, তার চাইতে মতো কঠিন আজাব আর কেউ ভোগ করছে না। অথচ, সেটা হলো সবচেয়ে কম আজাব।
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৩২৬৫ ও সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২৮৪৩)
সামুরা ইবনু জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন -
আগুন কাউকে ছোট গিরা পর্যন্ত, কাউকে হাঁটু পর্যন্ত, কাউকে কোমর পর্যন্ত এবং কাউকে কাঁধ পর্যন্ত ঢেকে নেবে।
(সহীহ বুখারি, হাদিস নং-৬৫৬১; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২১৩)
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২৮৪৫)
জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী নারী
উসামা ইবনু জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'আমি জান্নাতের গেটে দাঁড়িয়ে দেখলাম, এর অধিকাংশ অধিবাসী গরিব-মিসকিন। ধনীরা আটকা পড়েছে। জাহান্নামিদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর পর আমি জাহান্নামের গেটে দাঁড়িয়ে দেখলাম, তাদের অধিকাংশই নারী।
জাহান্নামিদের দাঁত ওহুদ পাহাড়সম চামড়ার ঘনত্ব এবং দুই ঘাড়ের ব্যবধান তিন দিনের পথের দূরত্বের সমান
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
(জাহান্নামে) কাফিরের দাঁত হবে উহুদ পাহাড় সমান এবং চামড়ার ঘনত্ব হবে তিন দিনের পথের দূরত্বের সমান।
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৩২৪১; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৭৩৭)
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২৮৫১)
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url