আল-কুরআন আল্লাহর অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ সম্পর্কিত আয়াত

সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে আল-কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ তার বর্ণনা দিতে পারবেন। কুরআন চিরন্তন ও শাশ্বত অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ-প্রমাণ,পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা আল-কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে-ত বলতে পারবেন। কুরআনকে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের চূড়ান্ত মানদন্ড হিসেবে বিচার করতে পারবেন। আল-কুরআনের সকল চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় উত্তীর্ণ পবিত্র মহাগ্রন্থ হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন। কুরআনের ভাষা ও গুণগত মানের আলোচনা করতে পারবেন।কুরআন জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল উৎস- একথার বর্ণনা দিতে পারবেন।সর্বশেষ আসমানী কিতাব হিসেবে কুরআনের বর্ণনা দিতে পারবেন।কুরআন মানব জীবনের জন্য অপরিহার্য ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ-তা ব্যাখ্যা করতে পারবেন।

অনুবাদ

১ আমি আমার বান্দার প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা এর অনুরূপ কোন সূরা আনয়ন কর এবং তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে আহ্বান কর। (সূরা আল-বাকারা: ২৩)

২. তারা কি বলে, সে এটি নিজে রচনা করেছে? বল, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা আনয়ন কর এবং আল্লাহ ব্যতীত অপর যাকে পার, ডেকে নাও। (সূরা হ্রদঃ ১৩)

৩. বল, যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ আনয়ন করতে পারবে না। (সূরা আল-ইসরা: ৮৮)

চিরন্তন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় উত্তীর্ণ মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এক অতুলনীয় অনুপম ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ। জ্ঞান- বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, এটা মহান আল্লাহর প্রত্যক্ষ কালাম। কুরআনের বাক্যশৈলী, বলিষ্ঠ যুক্তিধারা ও ভাষার মাধুর্য আরবদের গর্ব-অহংকারকে ম্পান ও নিষ্প্রভ করে দেয়। কুরআনের অত্যুচ্চ ভাব-ভাষা, অলংকার, উপমা, ছন্দ- মূর্ছনা, রচনার শৈল্পিকতা, বিষয়বস্তুর অভিনব গ্রন্থনা, বাক্যের অনুপম বিন্যাস, শাব্দিক দ্যোতনা সব ঘিরে এক অতুলনীয় চিরন্তন সাহিত্যিক মানে সদা অধিষ্ঠিত গ্রন্থ। তাই এ গ্রন্থখানি মহানবী (সা)-এর শাশ্বত মুজিযাপূর্ণ এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ। যে সকল দৃষ্টিকোণে এ গ্রন্থখানি আল্লাহর অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত তা এখানে তুলে ধরা হলো

আরো পড়ুন: চরিত্র গঠনে আল-কুরআনের শিক্ষার বিবরণ সর্ম্পর্কে বিস্তারিত

সুর ও ছন্দের দিক থেকে

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের মধ্যে একটি অকৃত্রিম সুর ও ছদের তাল বিদ্যমান। মানুষ যখন কুরআন তিলাওয়াত কর তখন এর বাহ্যিক উচ্চারণেই সে সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ে। কুরআনের শত্রুকেও সে সুর করে দেয় পাগলপারা। কুরআনের এ মোহনীয় সুর। সৌন্দর্য যুগে যুগে আকর্ষণ করেছে মানুষ ও জিন জাতিকে। তাই জিন জাতি যখন এ কুরআনের সুর নবীর কণ্ঠে শুনেছিল তখন তারা এ বলে মন্তব্য করেছিল 'আমরা এক আশ্চর্য কুরআন শুনেছি।

"বল, আমার প্রতি ওহী প্রেরিত হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে তা শুনেছে এবং বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি।" (সূরা আল-জিন: ১)

চিরন্তন চ্যালেঞ্জের দিক থেকে

কুরআনের বাকশৈলী, বলিষ্ঠ যুক্তিধারা ও ভাষার মাধুর্যে বিমোহিত হয়ে লোকেরা ইসলামের দিকে ধাবিত হতে শুর করে। একে আল্লাহর মহান বাণী বলে গ্রহণ করে। কিন্তু কিছু লোক নিজেদের কুসংস্কার ও জেদের বশবর্তী হয়ে একে মানুষের রচনা বলে এটাতে থাকে। একে কবিতা, যাদু ইত্যাদি বলে উপহাস করে। এতে আল্লাহ তাআলা তাদের লক্ষ্য করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, এটা যদি সত্যিই কোন মানুষের রচনা হয়ে থাকে, তাহলে তোমরা তো বলিষ্ঠ অলংকারপূর্ণ ভাষার অধিকারী। তোমরা অনুরূপ বাক্য রচনা করে দেখাও। কোন মানুষই প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত কুরআনের অনুরূপ বাক্য রচনা করতে পারেনি। এ চিরন্তন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় কেউ সফল হয়নি।কুরআনের বিরোধিতাকারীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেও ব্যর্থতার গ্লানি আনত শিরে স্বীকার করে নিজেদের অপারগতা প্রকাশ করে অকুণ্ঠচিত্তে তারা বলতে বাধ্য হয়েছে না মানুষের বাণী নয়।"

অবশ্যই এ অক্ষমতার কথা কুরআন চ্যালেঞ্জ করে আগেই বলেছিল "তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার অনুরূপ কোন সূরা রচনা করে আন। আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে ডাক। তোমরা যদি সত্যবাদী হও।" (সূরা আল-বাকারা: ২৩)

কুরআনের এ চ্যালেঞ্জ কেউ গ্রহণ করে অনুরূপ কোন সূরা বা বাক্য তৈরি করতে পারেনি। সূরা বনী ইসরাঈলের অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ "সমগ্র মানবজাতি ও জিনজাতি একত্র হয়ে সকলে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করেও কুরআনের অনুরূপ বাক্য রচনা করতে পারবে না।" (সূরা বনী ইসরাঈল : ৮৮)

বিষয়বস্তুর ব্যাপকতার দিক থেকে

এ মহাগ্রন্থটি বিষয়বস্তুর ব্যাপকতার দিক থেকে এক অভিনব ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ। কাঠামোগতভাবে সংক্ষিপ্ত পরিসর হলেও এর বক্তব্য ও বিষয়বস্তুর ব্যাপকতা সুগভীর। প্রতিটি শব্দ, বাক্য ও বক্তব্য এতই ব্যাপকাত্মক যে, এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে হাজার হাজার পৃষ্ঠা সম্বলিত তাফসীর গ্রন্থের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ফরাসি মণীষীর মন্তব্যটি যথার্থ বলে প্রতীয়মান হয়। তিনি বলেছেনঃ "কুরআন বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বিজ্ঞান সংস্থা, ভাষাবিদদের জন্য শব্দকোষ, বৈয়াকরণের জন্য এক ব্যাকরণ গ্রন্থ এবং আইন বিধানের জন্য একটি বিশ্বকোষ।"

মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এমন একটি মাহাত্ম্যপূর্ণ গ্রন্থ, যাতে সকল বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এসম্পর্কে আল্লাহ বলেন-

"আর আমি তোমার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছি যা প্রত্যেকটি বিষয়েরই সুস্পষ্ট বর্ণনা দানকারী এবং হেদায়াত, রহমত ও সুসংবাদ সে-সব লোকের জন্য যারা আত্মসমর্পণকারী।" (সূরা আন-নাহল: ৮৯) 

আরো পড়ুন: নিয়াত ও ইখলাস সংক্রান্ত হাদিস 

সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাপূর্ণ গ্রন্থের দিক থেকে

কুরআনুল কারীম সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাপূর্ণ মহিমান্বিত আসমানী কিতাব, সর্বাধিক কল্যাণের ভাণ্ডার হিসেবে এটি একটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ। এ কুরআনের প্রভাব এতই গভীর যে, একে যদি কোন পর্বতের উপর নাযিল করা হত, তাহলে সে পর্বত বিদীর্ণ হয়ে যেত। এর অতীব মাহাত্ম্য সম্বন্ধে স্বয়ং আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন

"আমি যদি এ কুরআন পাহাড়ের উপর নাযিল করতাম, তবে তুমি দেখতে পেতে তা আল্লাহর ভয়ে নত হয়ে বিদীর্ণ হয়ে গিয়েছে। আমি এ সমস্ত দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য বর্ণনা করি যাতে তারা চিন্তা করে।" (সূরা আল-হাশর ২১)

কুরআনুল কারীম মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি খুবই সম্মান ও গৌরবের বস্তু। হযরত আয়েশা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)- এর নিকট হতে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। যার বাষা নিন্মরুপ-

মহানবী (সা) বলেন, "প্রত্যেক জিনিসেরই কিছু সম্মান বা গৌরবের বিষয় থাকে, আমার উম্মতের সৌন্দর্য ও গৌরবের বিষয় হল কুরআন।" (আবু-নুআয়ম, হিলওয়াতুল আউলিয়া)

মহানবী (সা) আরো বলেন, "নিশ্চয় এ কুরআন আল্লাহর রজ্জু। অতি উজ্জ্বল আলো এবং উপকারী মহৌষধ। যে ব্যক্তি একে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, তার জন্য মুক্তির চুক্তিপত্র হবে এবং যে তা মেনে চলবে সে নাজাত পাবে।"

সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থের দিক থেকে

কুরআনুল কারীম বিশ্ব মানবতার প্রতি আল্লাহর সর্বশেষ আসমানী কিতাব হিসেবে এটি একটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ। এরপর কিয়মত পর্যন্ত আর কোন আসমানী কিতাব নাযিল হবে না। এর আগে মানব জাতির হিদায়াতের জন্য তাওরাত, যাবুর, ইনজিলসহ আরো ১০০ খানা সহিফা বিভিন্ন নবী-রাসূলগণের কাছে নাযিল হয়েছিল। বর্তমানে এ আসমানী কিতাবগুলো আসল ভাষা ও অবিকল অবস্থায় সংরক্ষিত নেই। বর্তমানের তাওরাত, যাবুর ও ইনযিল আসল নয়। ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ও পাদ্রীদের সুবিধামত বিকৃত করাণ ফলে ঐসব গ্রন্থের ওহীর আসল ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মানুষের সৎ পথ প্রদর্শনের জন্যে পবিত্র কুরআনই পথ নির্দেশ করবে এবং এর অবিকৃত ও সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহই নিয়েছেন। আল্লাহ বলেনঃ

"আমিই কুরআন নাযিল করেছি এবং অবশ্য এর সংরক্ষক।" (সূরা আল-হিজর: ৯)

চিরন্তন ও শ্বাশ্বত সত্যগ্রন্থ হিসেবে

পূর্বের সকল আসমানী কিতাবই ছিল নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠী, জাতি বা ভৌগোলিক সীমারেখা বেষ্টিত জনগোষ্ঠীর জন্য। আর তা ছিল নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হিদায়াতের উৎস। পক্ষান্তরে কুরআনুল কারীম কোন নির্দিষ্ট জাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, দেশ বা কালকে কেন্দ্র করে নাযিল হয়নি। এটা বরং সমগ্র বিশ্ব মানবতার জন্য সর্বাত্মক হিদায়াতের সওগাত নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। তাই এটা চিরন্তন, শ্বাশ্বত ও বিশ্বজনীন গ্রন্থ হিসেবে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ। মহান আল্লাহ এ মর্মে ঘোষণা করেনঃ

"এটা তো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ মাত্র।" (সূরা ছোয়াদ ৮৭)

আরো পড়ুন: পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত হাদীস সম্পর্কে বিস্তারিত

পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে

এ পবিত্র কুরআনই ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মূলনীতি ও অনুশাসনের উৎস। পবিত্র কুরআনের উপরই ইসলামের সম্পূর্ণ ইমারতের অবকাঠামো প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ মানুষকে তাঁর খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাদের উপর বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য আরোপ করেছেন। মানব জাতির বর্তমান ও অনাগত কালের যেসব সমস্যা ও প্রয়োজন দেখা দেবে, তার সব কিছুরই মূলধারা ও মূলনীতি পবিত্র কুরআনে বলে দেয়া হয়েছে।

হযরত মুহাম্মদ (সা) বিশ্বনবী এবং সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোন নবী-রাসূল পৃথিবীতে আসবেন না। কাজেই পবিত্র কুরআনের মাধ্যমেই ইসলামী জীবনব্যবস্থা পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। এরপর জীবন বিধান হিসেবে জীবন পথের দিশাস্বরূপ কোন কিছুরই প্রয়োজন হবে না। জীবন ব্যবস্থার পরিপূর্ণতার কথা ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা বলেন।

"আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।" (সূরা আল-মায়িদা ৩) 

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন-

"আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফির।" (সূরা আল-মায়িদা: ৪৪)

মহানবী (সা) বলেছেনঃ

 "যে ব্যক্তি সুললিত কণ্ঠে কুরআন পড়ে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়।"

চূড়ান্ত মানদণ্ডের দিক থেকে

ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইসলামী আইন-কানুন সংক্রান্ত যে কোন আলোচনায় পবিত্র কুরআনই চূড়ান্ত দলীল হিসেবে বিবেচিত। এতেই মানব জাতির ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের অত্যাবশ্যকীয় যাবতীয় বিষয় ও ঘটনাবলীর বিবরণ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা এমর্মে ঘোষণা করেন। এ কুরআন মানব জাতির জন্য সুস্পষ্ট দলীল এবং বিশ্বাসীদের জন্য পথ-নির্দেশ ও অনুগ্রহ।" (সূরা আল-জাসিয়া :২০)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, "হে মানবমন্ডলী। তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। নাযিল করেছি।" (সূরা আন-নিসা: ১৭৪)

জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল উৎসের দিক থেকে

জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল উৎস হিসেবে পবিত্র কুরআন আল্লাহর এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ। এ গ্রন্থে মহান স্রষ্টা ও সৃষ্টিকুলের সম্পর্ক, সৃষ্টি জগতের রহস্য, ভূতত্ত্ব, সৌর বিজ্ঞান, পদার্থ ও রসায়ন, মনোবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, সমাজকল্প, ইতিহাস, দর্শন, নীতিশাস্ত্র, ধর্মতত্ত্ব প্রভৃতি জ্ঞান-ভান্ডারে পরিপূর্ণ এ অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ সকল যুগের মানুষের মনে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা ও আবিষ্কারের নব নব দিগন্তের সন্ধান দিয়ে আসছে। জাগতিক ও আধ্যাত্মিক দিকের চরম বিকাশে এ কুরআনের অতুলনীয় ভূমিকা রয়েছে।

আল্লাহ বলেন, "এগুলো জ্ঞানগর্ভ বিজ্ঞানময় কিতাবের আয়াত, পথনির্দেশ ও করুণার আধার সত্যপরায়ণদের জন্য।" (সূরা লুকমান: ২-৩)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, "নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিবসের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য, যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর স্বরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমীন সৃষ্টির বিষয়ে; তারা বলে, হে আমাদের প্রভু। এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি।" (সূরা আলে-ইমরান। ১৯১-১৯২)

সারকথা

বিশ্বমানবের চরম দুর্দিনে মানবতা যখন অবহেলিত, অপমানিত ও নির্যাতিত, জড়বাদ, বস্তুবাদ এবং ভোগবাদের গোলক ধাঁধায় যখন সকলেই দিশেহারা, বিভ্রান্ত, পথভ্রষ্ট ও আত্মবিস্মৃত, মানব জাতির এমন সংকটময় মুহূর্তে বিশ্ব মানবতার পরিপূর্ণ বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে চিরন্তন ও শ্বাশ্বত সত্য গ্রন্থ হিসেবে, পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে, চূড়ান্ত মানদন্ড ও চিরন্তন চ্যালেঞ্জ হিসেবে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল উৎস হিসেবে মানবতার সামগ্রিক কল্যাণ ও মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ হিসেবে নাযিল হয়।

মূলত মানব জাতির ইতিহাস পরিবর্তনে, মানবতার পূর্ণ বিকাশ ও উন্মেষ সাধনে পবিত্র কুরআনের অবদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আল-কুরআন মানুষের চিন্তা জগতে ও নৈতিক জগতে অভূতপূর্ব বিপ্লব এনেছে। ব্যক্তিগত, সমাজগত জীবনে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মহান বিপ্লবের সৃষ্টি করেছে। আর এ মহা বিপণ্ডবের অধিনায়ক হলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা)। তাঁর সংবিধান হলো অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ আল-কুরআন। সুতরাং মানব জীবনে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক চ্যালেঞ্জিং ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url