সূরা আল-নূরের আলোকে ব্যভিচারের পরিণাম ও দন্ডবিধি
ব্যভিচারের ভয়াবহতা ও শাস্তির বিধান
আর এই আইনগত দন্ড কেবল শেষ ও চরম ব্যবস্থা হিসেবেই গ্রহণ করে। ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া এ লন্ডবিধান কার্যকর করার অধিকার অপর কাউকে দেওয়া হয়নি। ইসলামের সকল দন্ডবিধিও শান্তি দেয়ার অধিকার শুধু রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের। ইসলামী আইন ব্যভিচারের শাস্তিকে রাষ্ট্রীয় আইনের একটি অংশ বলে ঘোষণা করেছে। যেহেতু ব্যতিচার একটি মহাঅপরাধ এবং অনেক অপরাধের সমষ্টি, তাই ইসলামী আইনে এর শাস্তিও সবচাইতে গুরুতর বলা হয়েছে।
ইসলাম সব সময়ই এ কাজকে ঘৃণার চোখে দেখেছ। এর বীভৎসতা ও মারাত্মক প্রতিক্রিয়াকে অতান্ত প্রকট করে দেখিয়েছে। এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছে এবং তীব্র নিষেধাজ্ঞা উচ্চারণ করেছে। এর নিকটে যেতেও কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছে। এ অপরাধের প্রতি উদ্বুদ্ধ ও আকৃষ্ট করে এমন সব কাজের আশেপাশে ঘোরাফেরা করা এবং এ পালে লিপ্ত হয়ে পড়ার আশংকা থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ দূরে সরিয়ে রাখার জন্য সর্বতোভাবে নির্দেশ প্রদান করেছে-এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরজানে কঠোর বাণী উচ্চারিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাজালা বলেন-
"তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।" (সুরা আল-ইসরা। ৩২) কাছেও যেয়ো না'- খারা বোঝানো হয়েছে যে, যিনার প্রাককালীন কার্যাবলী এবং ব্যতিচার সহজ ও সম্ভব করে তোলে এমন সব কর্ম হতে নিও না এবং তোমরা নিজেরাও তা করো না। এর ঘৃণ্যতা ও নিষিদ্ধতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে এ আয়াতে-
"তারা আল্লাহর সাথে কোন ইলার ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তারা তাকে হত্যা করে না এবং তারা ব্যভিচার করে না।" (সূরা আল-ফুরকান: ৩৮)
এখানে ব্যভিচারকে দুটি মহাপাপের সঙ্গে উল্লেখ করে বাজিচারের ভয়াবহতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
ব্যভিচারের শান্তি কার্যকারী হওয়ার শর্তাবলী
আমরা জানি, ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি সর্বাধিক কঠোর। কোন ব্যক্তিকে অপরাধী সাব্যস্ত করার জন্য কেবল 'সে ব্যভিচার করেছে', এতটুকুই যথেষ্ট নয়। বরং ব্যভিচারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করার জন্য ইসলামী আইন কতিপয় কঠোর শর্ত আরোপ করেছে। যাতে সামান্য এট্রটি থাকলে অথবা সন্দেহ দেখা দিলে ব্যভিচারের চরম শাস্তি 'হান্দ' মওকুফ হয়ে যায়। শর্তগুলো নিম্নরূপ-
১। ইসলামী শরীআতের অন্যান্য বিষয়ে দুইজন সাক্ষী যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয় কিন্তু ব্যভিচারের শাস্তি বা 'হান্দ' প্রয়োগ করার জন্যে চারজন সাক্ষীর চাক্ষুষ ও দ্ব্যর্থহীন সাক্ষ্য জরুরি। সূরা আল-নিসায়, এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আরো যে কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে, তা হচ্ছে-সাক্ষ্যদাতা যদি মিথ্যুক বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাকে ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ আরোপের অভিযোগে অভিযুক্ত করে তার উপর 'হান্দে কষফ' বা ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদের শান্তি জারি করা হবে। অর্থাৎ এরূপ মিথ্যা সাক্ষীদাতাকে ৮০টি বেত্রাঘাত করা হবে। ফলে সামান্য সন্দেহ থাকলেও কোন ব্যক্তি এই সাক্ষ্যদানে অগ্রসর হবে না।
২। মুসলিম হতে হবে। অমুসলিমকে ব্যভিচারের শাস্তি দেয়া যাবে না।
৩। সরকারীভাবে ব্যভিচার মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ অপরাধের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এমন সব নির্লজ্জতা বন্ধ করতে হবে। ব্যভিচারকে সহজ ও সম্ভব করে এমন সব সুযোগ স্থগিত করতে হবে। অন্যথায় ব্যভিচারের শাস্তি প্রদান করা যাবে না।
৪। এ শাস্তি সরকারীভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ছাড়া অপর কাউকে ব্যভিচারীর বিরুদ্ধে কোনরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করার এবং শাস্তি দেওয়ার অধিকার দেয় না। ইসলামী আইন ব্যভিচারের শাস্তিকে রাষ্ট্রীয় আইনের একটি অংশ বলে ঘোষণা করেছে। যদি ব্যভিচারের সুস্পষ্ট প্রমাণ না থাকে, কিন্তু পুরুষ-নারীর অবৈধ অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। তবে বিচারক তাদের অপরাধ অনুপাতে দন্ডমূলক শাস্তি বেত্রাঘাত ইত্যাদি জারি করতে পারেন।
আরো পড়ুন: মানবাধিকার কি মানবাধিকার সংক্রান্ত ইসলামী মৌলনীতি ও বিস্তারিত আলোকপাত
অবিবাহিতের ব্যভিচারের শাস্তি
যে নারী বা পরুষ বিবাহিত নয়, যদি ব্যভিচারের অপরাধ করে, তাহলে তার শাস্তি হচ্ছে একশতটি বেত্রাঘাত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন-
'ব্যভিচারিনী ও ব্যভিচারী-তাদের প্রত্যেকে একশত কশাঘাত করবে।" (সূরা আন-নূর: ২)
বিবাহিত নারী-পুরুষের ব্যভিচারের শাস্তি
সর্বসম্মতিক্রমে ইসলামী আইনে এর শাস্তি হচ্ছে প্রস্তরাঘাত করে হত্যা করা। কারণ বিবাহিত নারী-পুরুষের ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া জঘন্যতম অপরাধ, তাই এর শান্তিও কঠিন রাখা হয়েছে।
সারকথা
আমরা জানি-ব্যভিচার একটি জঘন্যতম দন্ডনীয় অপরাধ। মানব সমাজের সুস্থতার জন্যে ইসলাম ব্যভিচারকে নিষিদ্ধ করেছে এবং তা প্রতিরোধ করার জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রেখেছে। বিবাহের ব্যবস্থাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও যারা এ জঘন্য পাপে লিপ্ত হয়, তা হলে এ শান্তি উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে কার্যকর হবে। অবিবাহিত নারী-পুরুষ যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে এর শান্তি একশত বেত্রাঘাত। আর বিবাহিত হলে প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদন্ড।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url