খেসারি ডাল খাওয়ার উপকারিতা খেসারি ডালের পুষ্টিগুণ ও অপকারিতা


আজ এই আর্টিকেলটিতে খেসারি ডাল খাওয়ার উপকারিত পুষ্টিগুণ ও খেসারি ডাল খাওয়াও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ভূমিকা

খেসারি ডাল (Lathyrus sativus), বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অঞ্চলে প্রচলিত একটি শস্য, যা মূলত পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খেসারি ডাল একটি বিশেষ ধরনের ডাল যা প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। তবে, এতে লেসিন নামক একটি উপাদান থাকে যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। সাধারণত, সঠিক পরিমাণে এবং অন্যান্য ডালের সাথে মিশিয়ে খেলে এটি পুষ্টিকর হতে পারে।

খেসারি ডাল খাওয়ার উপকারিতা

প্রোটিনের ভালো উৎস: খেসারি ডাল প্রোটিনে সমৃদ্ধ, যা পেশী গঠন ও মেরামতের জন্য উপকারী। এটি বিশেষ করে যারা নিরামিষভোজী তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ফাইবার সমৃদ্ধ: এতে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে, যা পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়ক।

লোহা এবং অন্যান্য মিনারেল: খেসারি ডাল লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ফসফরাসের ভালো উৎস। লোহা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে সহায়ক এবং ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স: এতে ভিটামিন সি এবং বি কমপ্লেক্স ভিটামিনের উপস্থিতি থাকায় শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শক্তি বাড়ে।

কম ক্যালোরি ও চর্বি: এটি সাধারণত কম ক্যালোরি এবং কম চর্বি যুক্ত খাবার, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। 

তবে, খেসারি ডাল খেতে হলে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত:

অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন: অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এতে লেসিন নামক একটি উপাদান থাকে যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে নার্ভ সিস্টেমের সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে।

সঠিক রান্না: খেসারি ডাল রান্নার আগে ভালভাবে ভিজিয়ে এবং রান্না করা উচিত যাতে এটি সহজে হজম হয় এবং পুষ্টি বজায় থাকে।

আরো পড়ুন: মসুর ডালের পুষ্টিগুণাগুণ  মসুর ডাল খাওয়ার  উপকারতিা ও অপকারিতা

খেসারি ডালের পুষ্টিগুণ

খেসারি ডালের (Lathyrus sativus) পুষ্টিগুণ অনেক ধরনের। এটি একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও, সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। এখানে এর প্রধান পুষ্টিগুণগুলো তুলে ধরা হলো:

প্রোটিন: খেসারি ডাল প্রোটিনের ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম ডালে প্রায় ২৫-৩০ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা মাংসের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে।

ফাইবার: এতে উচ্চমাত্রার ডায়েটরি ফাইবার থাকে, যা পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে এবং হজমের উন্নতি করতে সাহায্য করে।

লোহা: খেসারি ডালে লোহা প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা রক্তস্বল্পতা (আনিমিয়া) প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডালে প্রায় ৪-৭ মিলিগ্রাম লোহা থাকে।

ভিটামিনস: খেসারি ডালে বিভিন্ন ভিটামিনের উপস্থিতি থাকে, যেমন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (বিয়ানিন, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, ফোলেট ইত্যাদি), যা শক্তি উৎপাদন ও মেটাবলিজমে সহায়ক।

মিনারেলস: এতে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও জিঙ্কের মতো মিনারেলস থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য, হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা, এবং বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয়।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: খেসারি ডালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে, যা ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

কম ক্যালোরি: এটি কম ক্যালোরি সমৃদ্ধ, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

যদিও খেসারি ডাল অনেক পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এতে লেসিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। সঠিকভাবে রান্না ও মিতব্যয়ীভাবে খেলে এটি স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্য হতে পারে।

আরো পড়ুন: মানবাধিকার কি মানবাধিকার সংক্রান্ত ইসলামী মৌলনীতি ও বিস্তারিত আলোকপাত

খেসারি ডাল খাওয়ার অপকারিতা

খেসারি ডাল (Lathyrus sativus) এর অনেক পুষ্টিগুণ থাকলেও, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। প্রধান অপকারিতাগুলো হলো:

নিউরোটক্সিসিটি (Neurotoxicity): খেসারি ডালে লেসিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীরের স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যাকে "খেসারি ডাল বিষক্রিয়া" বা "হিভেটিসম" বলা হয়, যা কোমরবেদনা, পায়ে শক্তি হ্রাস, এবং নড়াচড়ার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য: যদিও ফাইবার পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, অতিরিক্ত পরিমাণে খেসারি ডাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি হতে পারে। এটি ক্যালোরির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং অন্যান্য খাবারের সঠিকভাবে হজমের সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।

অতিরিক্ত ক্যালোরি: খেসারি ডাল উচ্চ প্রোটিনের সাথে সাথে কিছু পরিমাণে ক্যালোরিও প্রদান করে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণ হতে পারে।

হরমোনাল অসঙ্গতি: খেসারি ডালে কিছু অ্যান্টি-নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর থাকতে পারে যা হরমোনাল অসঙ্গতি সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি নিয়মিত উচ্চ পরিমাণে খাওয়া হয়।

ভিটামিন ও মিনারেল ভারসাম্য: অত্যধিক খেসারি ডাল খাওয়া হলে অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলের সঠিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

খেসারি ডাল সঠিকভাবে এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হলে এটি সাধারণত নিরাপদ। তবে, যদি কেউ দীর্ঘমেয়াদীভাবে এটি অধিক পরিমাণে খান, তাহলে তাদের উচিত পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সঠিকভাবে রান্না ও মিতব্যয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে যে এটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে উপকারি থাকবে।

সবাই স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন।

ধন্যবাদ**



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url