আখলাক বা মানুষের স্বভাব চরিত্র সর্ম্পকে বিস্তারিত

আজ এই আর্টিকেলটিতে আখলাক বা স্বভাব চরিত্র সুন্দর করব। 

আখলাক

অইট্র স্বভাব ও চরিত্রকে আরবিতে আখলাক বলে। চরিত্র ভালো হলে জীবন সুন্দর হয়। সুখের হয়। আখিরাতে শান্তি পাওয়া যায়। সুখ পাওয়া যায়। সুন্দর ও ভালো চরিত্রই সচ্চরিত্র। যেমন সত্য কথা বলা। রোগীর সেবা করা। আব্বা-আম্মাকে সম্মান করা। প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার করা।

মন্দ স্বভাব ও খারাপ চরিত্রকে অসচ্চরিত্র বলা হয়। চরিত্র অসৎ হলে কেউ তাকে ভালোবাসে না। সকলে ঘৃণা করে। তার সাথে কেউ মেলামেশা করে না। খেলা করে না। আল্লাহ তাকে অপছন্দ করেন। মন্দ স্বভাব ও খারাপ চরিত্র হলো মিথ্যা কথা বলা, লোভ করা, অপচয় করা, পরনিন্দা করা ইত্যাদি।

আমাদের মহানবি (স) ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।”

মহানবি (স) বলেন, "সত্যিকার মুমিন তারাই, যাদের চরিত্র সুন্দর।"

নিচে সচ্চরিত্র এবং অসচ্চরিত্রের একটি তালিকা দেওয়া হলো:

সচ্চরিত্রের তালিকা

১। আব্বা-আম্মার সাথে ভালো ব্যবহার করা।

২। শিক্ষককে সম্মান করা।

৩। বড়দের সম্মান করা

৪। ছোটদের স্নেহ করা

৫। সত্য কথা বলা ও ওয়াদা পূরণ করা

৬। সালাত আদায় করা

অসচ্চরিত্রের তালিকা

১। আব্বা-আম্মার সাথে খারাপ ব্যবহার করা।

২। লোভ করা।

৩। অপচয় করা।

৪। পরনিন্দা করা।

৫। অহংকার করা।

৬। সালাত আদায় না করা।

আমরা চরিত্র সুন্দর করব। সকলে আমাদের ভালোবাসবে। আল্লাহ আমাদের উপর খুশি হবেন। দুনিয়াতে আমরা শান্তি পাব। পরকালে পাব জান্নাত।

আমরা সর্বদা-

ইমান আনব, সালাত আদায় করব।

আব্বা-আম্মা, শিক্ষক ও বড়দের সম্মান করব।

 ছোটদের স্নেহ করব, সত্য কথা বলব। 

স্বভাব চরিত্র সুন্দর করব, শান্তি পাব।

আরো পড়ুনমানব জীবন সমস্যার সমাধানে আল-কুরআনের ভূমিকা

আব্বা-আম্মাকে সম্মান করা

আব্বা-আম্মা আমাদের সবচেয়ে আপনজন। তাঁরা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেন। স্নেহ-মমতা ও দরদ দিয়ে লালন-পালন করেন। না খেয়ে আমাদের খাওয়ান। আমাদের অসুখ-বিসুখ হলে তাঁরা সেবাযত্ন করেন। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আমাদের সুখে তারা সুখী হন। আনন্দ পান। আমাদের কষ্টে কষ্ট পান। দুঃখ পান। তারা সবসময় আমাদের কল্যাণ কামনা করেন। দোয়া করেন।

সবসময় আব্বা-আম্মার সাথে ভালো ব্যবহার করা আমাদের কর্তব্য। আমরা তাঁদের সম্মান করব। শ্রদ্ধা করব। তাঁদের সাথে রাগারাগি করব না। ঝগড়া-বিবাদ করব না। কর্কশ ভাষায় কথা বলব না। তাঁদের মনে কষ্ট দেব না। সব সময় হাসিমুখে কথা বলব। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আব্বা-আম্মাকে সালাম দিয়ে বের হব। আবার বাড়িতে ফিরে আসলে আব্বা-আম্মাকে সালাম জানাব। সুন্দর সুন্দর কথা বলব।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, (কুল লাহুমা ক্বাওলান কারীমা)।"

অর্থ: তুমি আব্বা-আম্মার সাথে সুন্দর সুন্দর কথা বল।

তাঁদের ভালো খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করব। তাঁদের অসুখ হলে সেবাযত্ন করব। তাঁদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলব। তাঁরা বুড়ো হয়ে গেলে তাঁদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করব। তাঁদের কাজে ও চলাফেরায় সাহায্য করব।

আল্লাহ বলেন -ওয়াবিল ওয়ালিদাইনি ইহসানা)।”

অর্থ: আব্বা-আম্মার সাথে উত্তম ব্যবহার করো।

আব্বা-আম্মার মৃত্যুর পর তাঁদের প্রতি আমাদের অনেক কর্তব্য রয়েছে। আব্বা-আম্মার জিম্মায় যদি কোনো ঋণ থাকে তা পরিশোধ করব। দান-খয়রাত এবং নফল ইবাদত করে তাঁদের আত্মার মাগফেরাত চাইব। মঙ্গল কামনা করব। আমরা সবসময় আব্বা-আম্মার জন্য দোয়া করব-

(রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানী সাগীরা)।

অর্থ: হে আমার প্রতিপালক, আমার আব্বা-আম্মা আমাকে ছোটবেলায় যেমনি সেবাযত্নে লালন-পালন করেছেন, আপনি তাঁদের প্রতি তেমনি দয়া করুন।

মহানবি (স) বলেছেন, "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত।"

আমরা সর্বদা-

আব্বা-আম্মার কথা শুনব ও মানব।

তাঁদের শ্রদ্ধা করব, সম্মান করব।

তাঁদের অবাধ্য হব না।

তাঁদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করব।


শিক্ষককে সম্মান করা 

আব্বা-আম্মার মতো শিক্ষক আমাদের প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে তোলেন। তিনি আমাদের কুরআন, সালাত ও আদব-কায়দা শেখান। তিনি সৎ ও ন্যায়ের পথে চলতে শেখান। অন্যায় ও অসৎ পথে চলতে নিষেধ করেন। তিনি আমাদের আপনজন। আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা করব।

কেমনভাবে লিখতে হয়? কীভাবে পড়তে হয়? এসব শিক্ষক আমাদের শেখান। জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা বিষয় আমরা তাঁর কাছে শিখি। কুরআন ও হাদিসের কথা শিখি। দেশ ও দশের কথা শিখি। আমরা তাঁকে সম্মান করব। তাঁকে মর্যাদা দেব।

শিক্ষকের সাথে সব সময় ভালো ব্যবহার করব। তাঁর সাথে দেখা হলে তাঁকে সালাম দেব। তাঁকে ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করব। তিনি শ্রেণিকক্ষে যা পড়াবেন মনোযোগ দিয়ে শুনব। তাঁর সাথে সবসময় নম্রভাবে কথা বলব। তিনি শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় যদি বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে তাঁর অনুমতি নিয়ে যাব। তিনি অসুস্থ হলে তাঁকে দেখতে যাব।

তাঁর সেবাযত্ন করব। তাঁর আদেশ-উপদেশ মেনে চলব। তাঁর সাথে কখনো বেয়াদবি করব না। সব সময় তাঁর কথা শুনব। তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করব।

আমরা ওয়াদা করব,

শিক্ষকের আদেশ-উপদেশ মানব 

তাঁকে সালাম দেব, তাঁর সেবা করব 

তিনি যা শেখাবেন মন দিয়ে শিখব 

তাঁকে সম্মান করব, দোয়া করব।

বড়দের সম্মান করা এবং ছোটদের স্নেহ করা

আব্বা-আম্মা আমাদের আদর করেন। দাদা-দাদি ও নানা-নানি আদর করেন। শিক্ষক আমাদের স্নেহ করেন। যারা বয়সে বড় তাঁরা আমাদের ভালোবাসেন। স্নেহ করেন। আমরা বড়দের সম্মান করব।

যেসব ছেলেমেয়েরা আমাদের উপরের শ্রেণিতে পড়ে আমরা তাদের সম্মান করব। আমাদের বাড়ির যেসব কাজের লোক বয়সে বড় আমরা তাঁদের শ্রদ্ধা করব। সম্মান করব।

যারা বয়সে বড় তাদের সাথে দেখা হলে আমরা তাদের সালাম দেব। আদবের সাথে কথা বলব। ভালো ব্যবহার করব। আদেশ-উপদেশ মেনে চলব।

আমাদের ছোট ভাইবোন আছে। নিচের শ্রেণিতে অনেক ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে। যারা আমাদের চেয়ে বয়সে ছোট, আমরা তাদের আদর করব। স্নেহ করব। তারা কাঁদলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেব। কোলে নেব। ভালো কথা শেখাব। তাদের কাঁদাব না। মারব না। গালি দেব না। তাদের সালাম দেওয়া শেখাব। পড়া বলে দেব।


বাস, স্টিমার বা অন্য কোনো যানবাহনে বৃদ্ধ লোক উঠেন। বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমরা বসে থাকলে উঠে দাঁড়াব। তাঁদের বসতে দেব। তাঁরা খুশি হবেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ খুশি হবেন।

ফুয়াদ চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। যারা তার চেয়ে বয়সে বড়, সে তাদের সালাম দেয়। শ্রদ্ধা করে। সম্মান করে। যারা তার চেয়ে বয়সে ছোট, সে তাদের আদর করে। স্নেহ করে। সকলে ফুয়াদকে ভালোবাসে।

মহানবি (স) বড়দের সম্মান করতেন। ছোটদের স্নেহ করতেন। সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। মহানবি (স) বলেন, "যে ছোটদের স্নেহ করে না, আর বড়দের সম্মান দেখায় না, সে আমার উম্মত না।"

আমরা সর্বদা-

বড়দের শ্রদ্ধা ও সম্মান করব 

ছোটদের আদর ও স্নেহ করব 

বড়-ছোটর মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ব 

আল্লাহকে খুশি রাখব।

আরো পড়ুন: চরিত্র গঠনে আল-কুরআনের শিক্ষার বিবরণ সর্ম্পর্কে বিস্তারিত

প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার 

আমাদের আশেপাশে যারা বসবাস করে তারা আমাদের প্রতিবেশী। বাস, ট্রেন, লঞ্চ, স্টিমারে সহযাত্রী আমাদের প্রতিবেশী। বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অবস্থানকারী ছাত্রছাত্রীরা একে অপরের প্রতিবেশীর মতো।

আমরা প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার করব। তাদের সাথে কুশল বিনিময় করব। কেউ ক্ষুধার্ত হলে তাকে খাদ্য দেব। মহানবি (স) বলেছেন, "যে নিজে পেটভরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে সে মুমিন নয়।"

প্রতিবেশী অসুস্থ হলে সেবা করব। বিপদে সাহায্য করব। তার যাতায়াতের রাস্তা কথ করে দেব না। তার সুখে খুশি হব। তার কষ্টে কষ্ট পাব। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলব না। জোরে টেলিভিশন, রেডিও-ক্যাসেট বাজাব না, যাতে প্রতিবেশীর অসুবিধা হয়।

প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া করব না। কষ্ট দেব না। হিংসা করব না। মিলেমিশে থাকব। তাহলে পরিবেশ সুন্দর হবে। সুখ-শান্তি বজায় থাকবে। আল্লাহ খুশি হবেন। পরকালে জান্নাত পাওয়া যাবে। আর যদি প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া করি, হিংসা করি তাহলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন। দুনিয়াতে শান্তি পাব না। পরকালেও শান্তি পাব না।

মহানবি (স) বলেন, "যার অত্যাচার ও অন্যায় আচরণ থেকে তার প্রতিবেশী রক্ষা পায় না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।"

প্রতিবেশীর মৃত্যু হলে তার বাসায় যাব। বাসার সবাইকে সান্ত্বনা দেব। সহানুভূতি জানাব। জানাজায় শরিক হব। ভালো ব্যবহার করব। যদি প্রতিবেশী হিন্দু, বৌদ্ধ বা অন্য ধর্মের লোকজন হয়, তাদের সাথেও সুন্দর ব্যবহার করব। সকল প্রতিবেশীর সাথে উত্তম ব্যবহার করব। আল্লাহ খুশি হবেন। মহানবি (স) বলেন, "আল্লাহর কাছে সেই প্রতিবেশী সবচেয়ে উত্তম, যে তার প্রতিবেশীর কাছে উত্তম।

আমরা সর্বদা-

প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার করব, বিপদে সাহায্য করব, অসুখ হলে সেবা করব, ঝগড়া করব না, কষ্ট দেব না, মিলেমিশে থাকব, শান্তি বজায় রাখব।

রোগীর সেবা করা 

আমাদের বাড়িতে আব্বা-আম্মা, দাদা-দাদি, ভাইবোন আছেন। বাড়ির আশেপাশে প্রতিবেশীরা আছেন। বিদ্যালয়ে সহপাঠীরা আছে। আত্মীয় স্বজন ও খেলার সাথি আছে।

আমাদের মধ্যে কারও জ্বর হয়। নানা রকমের রোগ হয়। অসুখ হয়। আমরা বিভিন্ন সময়ে অসুস্থ হয়ে যাই। শরীর দুর্বল হয়ে যায়। অসহায় বোধ করি। জ্বর হলে ভীষণ খারাপ লাগে। কোনো কিছু খেতে ভালো লাগে না। তখন চিকিৎসার দরকার। ডাক্তার ডাকা দরকার। সেবাযত্নের প্রয়োজন। জ্বর হলে মাথায় পানি দেওয়া প্রয়োজন। জ্বরের মাত্রা বেশি হলে সমস্ত শরীর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে। রোগীর সেবা করতে হবে। ইনশাআল্লাহ রোগ ভালো হয়ে যাবে। রোগ থেকে মুক্তি পাবে।

অসুখ-বিসুখ ও রোগশোক আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য একটি পরীক্ষা। রোগীর সেবা করতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মহানবি (স) সবসময় রোগীর সেবা করতেন।

মহানবি (স) বলেছেন- (আরবী) অর্থ, তোমরা রোগীর সেবা কর।

ফুয়াদ খুব ভালো ছেলে। একবার তার আম্মার ভীষণ জ্বর হলো। বাসায় আর কেউ নেই। সে তার আম্মার চিকিৎসার জন্য ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসলো। ডাক্তার সাহেব তার আম্মাকে পরীক্ষা করে বলল, "ফুয়াদ, তোমার আম্মার মাথায় পানি দাও। আর এই ওষুধ সময়মতো খাওয়াবে। ইনশাআল্লাহ ভালো হয়ে যাবে।” ফুয়াদ সময়মতো তার আম্মাকে ওষুধ খাওয়াল। মাথায় পানি দিল। আল্লাহর কাছে তার আম্মার আরোগ্য লাভের জন্য দোয়া করল। আল্লাহর রহমতে তার আম্মা সুস্থ হয়ে উঠলেন। ফুয়াদ আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করল।

আমরা রোগীর সেবাযত্ন করব, তার খোঁজখবর নেব, আল্লাহর কাছে আরোগ্যের জন্য দোয়া করব।

সত্যকথা বলা

সত্যকথা বলা মহৎ গুণ। যে সত্যকথা বলে তাকে সত্যবাদী বলে। সত্যবাদীকে আরবিতে সাদিক  বলা হয়।

যে সত্যকথা বলে তাকে সকলে ভালোবাসে। সকলে বিশ্বাস করে। আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। সে আল্লাহর কাছে প্রিয়। পৃথিবীতে সে সকলের কাছে প্রিয় ও সম্মানিত। পরকালে সে জান্নাত লাভ করবে।

মিথ্যা সকল পাপের মূল। যে মিথ্যাকথা বলে তাকে মিথ্যাবাদী বলে। আরবিতে তাকে কাযিব (৩১) বলা হয়। মিথ্যাবাদীকে কেউ ভালোবাসে না। বিশ্বাস করে না। সকলে তাকে ঘৃণা করে। অপছন্দ করে। তার বিপদে কেউ সাহায্য করে না। আল্লাহও তাকে ঘৃণা করেন। ভালোবাসেন না। পরকালে তার জন্য জাহান্নাম।

আমাদের মহানবি (স) ছোটবেলা থেকে আজীবন সকলের কাছে সত্যবাদী বলে পরিচিত ছিলেন। তিনি সবসময় সত্যকথা বলেছেন। অন্যদেরকে সত্যকথা বলতে নির্দেশ দিয়েছেন। উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলেন নি। তাই সকলে তাঁকে সম্মান করতেন। শ্রদ্ধা করতেন।

মহানবি (স) বলেন, " সত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, আর মিথ্যা ধ্বংস করে।" মহানবি (স) আরও বলেন, "তোমরা সবসময় সত্য বলবে। কেননা সত্য পুণ্যের পথে, নিয়ে যায়। আর পুণ্য জান্নাতে নিয়ে যায়।"

একটি ঘটনা:

একদিন মহানবি (স)-এর কাছে একজন লোক এসে বলল, 'হে আল্লাহর নবি (স), আমি চুরি করি। মিথ্যা কথা বলি। আরও অনেক অন্যায় করি। এখন আমি এগুলো ছেড়ে দিতে চাই। বলুন, আমি প্রথমে কোনটি ছেড়ে দেব?'

মহানবি (স) বললেন, "মিথ্যা কথা বলা ছেড়ে দাও।" লোকটি মিথ্যা কথা বলা ছেড়ে দিল। আর মিথ্যা বলা ছেড়ে দেওয়ার কারণে সব অন্যায় থেকে সে বেঁচে গেল।

আমরাও সব-সময় সত্য কথা বলব, সকলের সম্মান ও আদর পাব, মিথ্যাকথা বলব না, জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাব।

আরো পড়ুন: নেতার আনুগত্য জীবন ব্যবস্থা  ও নেতার কি কি গুণাবলী থাকা অবশ্যক

ওয়াদা পালন করা

ওয়াদা পালন করা অর্থ কথা দিয়ে কথা রাখা। কথামতো কাজ করা। চুক্তি রক্ষা করা। কারও সাথে কোনো কথা দিলে তা রক্ষা করার নাম ওয়াদা পালন করা।

আমরা কথাবার্তায় বা কাজেকর্মে কারও সাথে কোনো কথা দিয়ে থাকলে বা চুক্তি করলে তা পূরণ করব। তাহলে সবাই আমাদের বিশ্বাস করবে। ভালোবাসবে। আল্লাহও খুশি হবেন।

আল্লাহ বলেন, "হে মুমিনগণ! তোমরা ওয়াদা পূরণ কর।"

যে ওয়াদা পালন করে সে সকলের কাছে প্রিয় হয়। সম্মানিত হয়। সকলে তাকে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে। বিপদে পড়লে সাহায্য করে। আল্লাহ তার প্রতি খুশি থাকেন। আখিরাতে সে সুখ পায়। শান্তি পায়। জান্নাত লাভ করে।

ওয়াদা পালন না করা খুবই অন্যায়। মারাত্মক অপরাধ। যে ওয়াদা পালন করে না তাকে কেউ ভালোবাসে না। বিশ্বাস করে না। বিপদে সাহায্য করে না। সম্মান করে না। আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন না। আখিরাতে সে কষ্ট পাবে। সে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে।

আমাদের মহানবি (স) কাউকে কোনো কথা দিলে তা রক্ষা করতেন। ওয়াদা করলে তা পালন করতেন। মহানবি (স) এবং কুরাইশদের মধ্যে হুদাইবিয়ার সন্ধি হয়েছিল। কুরাইশগণ যখন এ সন্ধি অমান্য করল তখন মহানবি (স) এ সন্ধি বাতিল করে দেন।

ওয়াদা পালন না করলে ধর্ম থাকে না। মহানবি (স) বলেন, "যে ওয়াদা পালন করে না, তার ধর্ম নেই।"

আমরা কথা দিয়ে কথা রাখব, ওয়াদা পালন করব। কথামতো কাজ করব, মানুষের ভালোবাসা লাভ করব। কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করব না, অবিশ্বাসী হব না। আল্লাহর প্রিয় হব, জান্নাত লাভ করব।

লোভ না করা 

যত পায় আরও চায়। বেশি বেশি চায়। এর নামই লোভ। লোভ করা পাপ। লোভ আমাদের অনেক ক্ষতি করে। অনেক অশান্তি সৃষ্টি করে। দুঃখ-কষ্ট বাড়ায়। লোভের কারণে মানুষ নানা অন্যায়ে লিপ্ত হয়। পাপ করে। সে সুখী হয় না। শান্তি পায় না।

যে লোভ করে তাকে লোভী বলে। লোভী মানুষকে কেউ ভালোবাসে না। সম্মান দেয় না। সকলে তাকে ঘৃণা করে। কেউ তার সাথে বন্ধুত্ব করে না। মেলামেশা করে না। তার বিপদে কেউ সাহায্য করে না। সে পাপী। আর এই পাপ তাকে মৃত্যুর দিকে টেনে নেয়। ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। কথায় বলে- 'লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।'

একটি কাহিনী শুনব

হযরত দাউদ (আ)-এর উপর যাবুর কিতাব নাজেল হয়েছিল। তিনি মধুর কণ্ঠে কিতাব পড়তেন। আর তা শোনার জন্য শনিবারে সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত তীরে আসত। শনিবার তাদের মাছ ধরা নিষেধ ছিল। কিন্তু কিছু লোভী লোক সে নিষেধ অমান্য করল। তারা ঐদিন ফাঁদ পেতে মাছ আটকে রাখল এবং পরে ধরল। অন্যায় করল। তাদের উপর আল্লাহর আজাব এল। এই লোভের কারণে তারা ধ্বংস হয়ে গেল।

আমাদের মহানবি (স)-এর মধ্যে কোনো লোভ-লালসা ছিল না। মহানবি (স) বলেন, "তোমরা লোভ থেকে সাবধান থাক। লোভ তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ধ্বংস করে দিয়েছে।"

আমরা লোভ করব না, অন্যায় করব না।

ধ্বংস হব না, লোভ থেকে বিরত থাকব।

অপচয় না করা

অপচয় অর্থ ক্ষতি, অপব্যয়, নষ্ট। বিনা প্রয়োজনে কোনো কিছু নষ্ট করাকে অপচয় বলে। অপচয় করা বড় পাপ।

আল্লাহ বলেন, (ইন্নাল মুবাজ্জিরীনা কানু ইখওয়ানাশ শায়াতীন)।”

অর্থ: নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।

আমরা অনেক সময় অনেক জিনিস নষ্ট করি। অপচয় করি। প্রয়োজনের বেশি খাবার নিই। খেতে পারি না। ফেলে দেই। বিনা প্রয়োজনে ফুলের ও ঘরের বাতি জ্বালিয়ে রাখি। ফ্যান চালাই। পানির কল খুলে রাখি। এতে বিদ্যুৎ অপচয় হয়। পানি নষ্ট হয়। অকারণে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখি। মনে করি যে একটা দিয়াশলাইয়ের কাঠি বেঁচে গেল। কিন্তু এতে প্রচুর গ্যাস অপচয় হলো।

আমাদের মধ্যে অনেকে বাজি পোড়ায়। পটকা ফোটায়। এসব অপচয়। অনেকে বিড়ি, সিগারেট খায়। এগুলো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো খেলে ক্যান্সার হয়। টাকা-পয়সার অপচয় হয়। অনেকে দুষ্টামি করে খড়কুটায় আগুন দেয়। এতে অনেক সময় বিপদ ঘটে। ঘরে আগুন লাগে। দোকানে আগুন লাগে। এ সবকিছুই অপচয়।

আমরা কোনো কিছু অপচয় করব না। আমরা প্রয়োজনের বেশি কিছু করব না। নেব না। নষ্ট করব না। অপব্যয় করব না। অপচয় করা থেকে বিরত থাকব। তাহলে কম খরচ হবে। অভাব দূর হবে। সুখ-শান্তি থাকবে। ব্যক্তিগত ও জাতীয় সম্পদ রক্ষা পাবে। আল্লাহ খুশি হবেন।

আমরা কোনো জিনিস নষ্ট করব না, 

অপচয় করব না, যথাযথ ব্যবহার করব। 

ব্যক্তিগত ও জাতীয় সম্পদ রক্ষা করব

আল্লাহর হুকুম মেনে চলব।

পরনিন্দা না করা 

পরনিন্দা করা অর্থ গিবত করা, পরচর্চা করা, দুর্নাম রটানো। কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষের কথা বলার নাম গিবত বা পরনিন্দা।

যে পরনিন্দা করে তাকে পরনিন্দুক বলে। পরনিন্দা করা হারাম। মহান আল্লাহ পরনিন্দা করতে নিষেধ করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, "তোমরা একে অপরের দোষ খুঁজে বেড়াবে না।"

আল্লাহ তায়ালা পরনিন্দা করাকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। কোনো ভাই তার মৃত ভাইয়ের গোশত কখনো খেতে পারে না। এটা জঘন্যতম অপরাধ।এটা মহাপাপ।

পরনিন্দুক মহাপাপী। সে সমাজে শান্তি নষ্ট করে। আল্লাহ তাকে ঘৃণা করেন, ভালোবাসেন না। যে ব্যক্তি পরনিন্দা বা গিবত করে সে জান্নাতে যেতে পারবে না।

মহানবি (স) বলেন, "পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।"

পরনিন্দা না করা সুন্দর চরিত্রের একটি বিশেষ গুণ। পরনিন্দার কারণে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। সমাজে শত্রুতা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা লোপ পায়। শান্তি নষ্ট হয়।

আমরা পরনিন্দা বা গিবত করব না। কারও কুৎসা রটাব না। কারও দুর্নাম করব না। অপবাদ দেব না। পরনিন্দা থেকে বিরত থাকব। তাহলে আমাদের মাঝে অশান্তি থাকবে না। আমাদের মাঝে সুখ-শান্তি বজায় থাকবে। একটি সুন্দর সুখী সমাজ গড়ে উঠবে। আল্লাহ খুশি হবেন। দুনিয়াতে আল্লাহর রহমত লাভ করব। পরকালে জান্নাতের অনন্ত সুখ-শান্তি ভোগ করব।

পরনিন্দা করব না, পরনিন্দা শুনব না। 

সুন্দর জীবন গড়ব, সুন্দর সমাজ গড়ব।


আল্লাহ হাফেজ**


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url