চিরস্থায়ী জান্নাতের সুখ-শান্তির বিস্তারিত বর্ণনা

 

আজ এই আর্টিকেলটিতে জান্নাতের প্রার্থনা, জান্নাতের ফল, জান্নাতের মিউজিক জান্নাতি ঘরের ঔজ্জ্বল্য জান্নাতি ঘরের সেটিং জান্নাতি ঘরের অভ্যন্তরে সুইমিংপুল জান্নাতের নাম বা শ্রেণিবিন্যাস জান্নাতেআদন জান্নাতের আপ্যায়ন জান্নাতি পোশাক জান্নাতি নারীদের বাহন জান্নাতি নারীদের সম্মানে হুরদের তিলাওয়াত জান্নাতের ছাদ আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

জান্নাতের প্রার্থনা

হযরত মামশাদ দীনপুরী রহ. নমক জনৈক বুযুর্গ গত হয়েছেন। তাঁর ইন্তিকালের সময় কেই একজন তাঁর জন্য দোয়া করছিল, হে আল্লাহ, আপনি তাঁকে জান্নাত দান করুন। কিতাবে লিখে, জবাবে তিনি বলেন, গত বিশ বছর যাবত পূর্ণ সজ্জায় জান্নাত আমার সম্মুখে পেশ করা হচ্ছিল, আমি মুহূর্তের জন্যও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে জান্নাতের দিকে তাকাইনি। সুতরাং এ জাতীয় ঘটনাবলি হলো মহব্বত ও ভালোবাসার প্রাবল্যের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। অন্যথায় জান্নাত প্রার্থনা করা ও জান্নাত লাভে সচেষ্ট হওয়া মুমিনের কাজ।

এটিই হওয়া সঠিক মুমিনের প্রত্যাশা। কি উদ্দেশ্যে জান্নাতের প্রত্যাশা করবে? এ নিয়তে নয় যে, জান্নাতের পানাহারের বস্তুসামগী থাকবে, বাসস্থান থাকবে, বিভিন্ন প্রকার নিয়ামত থাকবে। বরং এ নিয়তে জান্নাতের প্রত্যাশা করবে যে, সেখানে মুমিনগণ আল্লাহ তাআলার দীদার লাভে ধান্য হবে। সুতরাং প্রত্যেক মুমিনগণ মনে জান্নাতের প্রত্যাশা থাকা নেকির কাজ।

আরো পড়ুন: গিবত কি বিভিন্ন ধরনের গিবত ও গিবতের ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত 

জান্নাতের ফল

জান্নাতের বৃক্ষরাজি সম্পর্কে বণিত রয়েছে যে. জান্নাতি ব্যক্তির মনে যদি কোনো ফল ভক্ষণের আগ্রহ জন্মে তাহলে সেই ফলের বৃক্ষটি তার খুবই কাছে চলে আসবে এবং ফল মুখে চলে আসবে। জান্নাতের ফল উপবিষ্ট, শায়িত ও দণ্ডায়মান সকলেই স্ব-স্ব অবস্থায় লাভ করবে।

কুরআনে কারিমে রয়েছে,

তার বৃক্ষছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং তার ফলসমূহ তাদের আয়ত্তাধীন রাখা হবে।'

অর্থাৎ জান্নাতের ফল সকল জান্নাতি আপন অবস্থায় থেকেই লাভ করতে সক্ষম হবে। দুনিয়াতে তো ফল পাড়তে বাগানে যেতে হয়, গাছে উঠতে হয় অথবা নিজের থেকে কিছু নিক্ষেপ করতে হয়। কিন্তু জান্নাতের ফল সকল স্ব-স্ব স্থানে ও অবস্থানকালেই লাভ করবে। জান্নাতের ফলজ বৃক্ষগুলোও হবে বিস্ময়কর। সে সম্পর্কে কুরআনে কারিমে রয়েছে

উভয়ের মধ্যে প্রত্যেক ফল বিভিন্ন রকমের হবে।

(সুরা ইনসান, আয়াত-১৪)

(সুরা আর রহমান, আয়াত- ৫২)

জান্নাতের মিউজিক

জান্নাতের উদ্যানরাজি সম্পর্কে এরূপ বিশদ বিবরণ বর্ণনা করা হয়েছে যে, তা এত বেশি মনোরম ও মনমুগ্ধকর হবে; কোনো কোনো বর্ণনাতে রয়েছে যে, জান্নাতের প্রতিটি বৃক্ষের ফলের সাথে বাঁশি জাতিয় এক-প্রকার বস্তু থাকবে। জান্নাতে যখন বায়ু প্রাবাহিত হবে তখন গাছের ডালগুলো আন্দোলিত হতে থাকবে আর বাঁশিগুলো বাজতে থাকবে। তা হতে এতো শ্রুতিমধুর ধ্বনি ধ্বনিত হতে থাকবে যা শ্রবণে জান্নাতি ব্যক্তি সারা জীবন তা শুনার প্রত্যাশা করবে। জান্নাতের বৃক্ষরাজিকে আল্লাহ এরূপভাবে তৈরি করেছেন যে, তা যেমনিভাবে ফল দিবে, তেমনিভাবে ছায়াও দিবে এবং তাতে এমন শ্রুতি মধুর মিউজিকও থাকবে যা প্রতিটি জান্নাতি ব্যক্তির মধ্যে অফুরন্ত এক সুখানুভূতি ও মাস্তী তৈরি করবে। জান্নাতের প্রতিটি ঘরই এরূপ হবে।

জান্নাতি ঘরের ঔজ্জ্বল্য

হযরত আব্বস রাযি. হতে বর্ণিত, জান্নাতের গৃহসমূহ আকাশের নক্ষত্র অপেক্ষা অধিক উজ্জ্বল হবে। মানুষ যেমনিভাবে বলে থাকে, 'ঝকঝকে হীরক খণ্ড'। হীরকের ঔজ্জ্বল্য তো সাধারণ হয়ে থাকে। নক্ষত্রের ঔজ্জ্বল্য এবং দীপ্ত তাদাপেক্ষা অনেক বেশি হয়ে থাকে। জান্নাতিদের বাসভবনকে নক্ষত্রের সাথে তুলনা করা হয়েছে যে, তাদের বাসভবন নক্ষত্র অপেক্ষা অধিক উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান হবে। ঘরের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ বিষয় হলো একই ঘরে অধিক সময় বাস করলে একই ফর্নিচার দীর্ঘ দিন দেখে নতুন কোনো সুখানুভূতি জাগ্রত হয় না বরং এক প্রকার বিরক্তি ভাব তৈরি হয়। 

জান্নাতি ঘরের সেটিং

অনেক গৃহকর্তী রয়েছে যারা দু এক বছর পর পরই ঘরের সেটিং পরিবর্তন করে। কখনো দেখা যায় ফার্নিচারও পরিবর্তন করে যাতে একটি নতুনত্ব তৈরি হয়। কেননা প্রত্যেক নতুনের মাজেই স্বতন্ত্র স্বাদ নিহিত থাকে। সুতরাং জান্নাতের গৃহসমূহের মাঝেও আল্লাহ তাআলা এই সৌন্দর্য রেখে দিয়েছেন যে, তার ঘরসমূহের ডিজাইন প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হতে থাকবে। প্রত্যহ সকালে জান্নাতি ব্যক্তির প্রত্যাশা অনুযায়ী তার ঘরের ডিজাইন পরিবর্তিত হতে থাকবে। নারীরা সাধারণত ঘর সাজাতে গিয়ে ইচ্ছা করে, এখানে ফুল থাকুক, ওখানে অমুক বস্তু থাকুক ইত্যাদি। সুতরাং তারা যেভাবে চাইবে তাদের ঘরগুলো সেভাবেই সজ্জিত হয়ে যাবে। তাদের গৃহ সজ্জা প্রতিনিয়তই পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তাদের মন যেরূপ প্রত্যাশা করবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সেরূপই করে দিবেন।

সুতরাং চিন্তা করুন, সেটি কিরূপ একটি স্থান হবে। যেখানে আমাদের কল্পনাতে একটি মনোরম প্রাসাদের ছবি আঁকা মাত্রই নির্মিত হয়ে যাবে।

আজকাল তো মহিলারা ঘরের পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার জন্য রোজ দ'ঘণ্টা সময় ব্যয় করে। কখনো বা জানালার গ্লাস পরিষ্কার করছে, কখনো ফার্নিচার আর কখনো কার্পেট পরিষ্কার করছে। কিন্তু যত কিছুই করুক সেই এক ঘরেই তা তাকে থাকতে হচ্ছে। ভালো হোক আর মন্দ হোক সারাজীবন তো সে ঘরেই কাটাতে হয়। অথচ জান্নাতের ঘরসমূহের ডিজাইন আল্লাহ তাআলা জান্নাতিদের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিনিয়তই পরিবর্তন করে দিবেন।

জান্নাতি ঘরের অভ্যন্তরে সুইমিংপুল

দুনিয়াতে যেমনিভাবে বিভিন্ন বাড়িতে সুইমংপুল থাকে। অনেকে সুইমং পুলে গোসল করতে পছন্দও করে। জান্নাতের প্রতিটি ঘরেই সুইমংপুল থাকবে। হাদিসে এসেছে, 'রহমত' নামক একটি নদী থাকবে; প্রতিটি জান্নাতে যার প্রবাহ থাকবে। অর্থাৎ তা প্রত্যেকটি জান্নাতি ব্যক্তির গৃহ পাশ দিয়ে প্রবাহিত হবে। যাতে তারা গোসল করতে চাইলে গোসলের যাবতীয় সুবিধা তারা পায়।

জান্নাতের নাম বা শ্রেণিবিন্যাস

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যতগুলো জান্নাত তৈরি করেছেন। সেগুলো হলো,

  • জান্নাতুল ফিরদাউস।
  •  দারুল খুলাদ।
  •  দারুস সালাম।
  •  দারুল মাকাম।
  • জান্নাতুল আদন।
  •  জান্নাতুল মাওয়া।
  • জান্নাতুল নাইম।
  •  দারুল আকার।

এই জান্নাতুল ফিসদাউসেই আল্লাহ তাআলা রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে সম্মানিত স্থান দান করবেন। অপর একটি জান্নাতের নাম হলো, 'জান্নাতে আদন'। হাদিসে রয়েছে, জান্নাতে আদন ব্যতীত অন্য সকল জান্নাতই আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাদের মাধ্যমে তৈরি করেছেন। কিন্তু একমাত্র জান্নাতে আদন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজ কুদরাতি হাতে তৈরি করেছেন। এটিই সেই বিশেষ জান্নাত যাতে জান্নাতিরা আল্লাহর দিদার লাভে ধান্য হবে। আল্লাহ তাআলা এই জান্নাতটি স্বহস্তে তৈরির কারণ হলো, মানুষ যেমনিভাবে কাউকে আমন্ত্রণ জানালে অনেক ক্ষেত্রে নিজ হাতেই অতিথির অবস্থানস্থলের সেটিং করে থাকে, তেমনিভবে আল্লাহ তাআলাও বান্দাকে স্বীয় দিদার ধন্য করার স্থানটি নিজ হাতে তৈরি করেন।

আরো পড়ুন: পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের গুরুত্ব সালাত আদায় না করার পরিণতি ও ফরজ হওয়ার ইতিহাস 

জান্নাতেআদন

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেহেতু স্বীয় বান্দাদের আপন দিদার দানে ধান্য করবেন, সেহেতু দিদারস্থল তথা জান্নাতেআদনকে তিনি স্বহস্তে তৈরি করেছেন। হাদিসে রয়েছে সে জান্নাত তৈরির সিমেন্ট হবে মিশক, তার ঘাস হবে। জাফরান, তার পাথর হবে মুক্তার, তার মাটি হবে আম্বরের। এবার ভেবে দেখুন জান্নাতে আদন কিরূপ হবে। যেটিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিজেই সাজাবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

কেই জানে না তার জন্যে কৃতকর্মের ফলস্বরূপ কি কি নয়ন-প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে।

সুতরাং জান্নাতের প্রতিটি ঘরে ফার্নিচার থাকবে। মহিলারা ফার্নিচার ইত্যাদি গৃহস্থালীর যাবতীয় জিনিস নিজের পছন্দ মতই নিয়ে থাকে। উত্তম থেকে উত্তম ও উন্নত থেকে উন্নত মানের ফার্নিচার নিজের ঘরে সংগ্রহ করতে পারলেই নারীরা সন্তুষ্ট থাকে। জান্নাতের ঘরগুলোতেও ফার্নিচার থাকবে। আল্লাহ তাআলা মসনদ তথা মঞ্চ তৈরি করে রাখবেন, মিম্বর তৈরি করে রাখবেন, বসার জন্য চেয়ার প্রস্তুত থাকবে। তাতে হেলান দেয়ার জন্য বালিশ থাকবে। সে প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

( সুরা সাজদা, আয়াত- ১৭)

স্বর্ণ খচিত সিংহাসন। তারা তাতে হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে।

সুতরাং চিন্তা করুন, যে মঞ্চ স্বর্ণের তৈরি হবে এবং যাতে স্বর্ণের কারুকার্য থাকবে সেটি কত চমৎকার ও উন্নতমানের ফার্নিচার হবে। তাতে লোকেরা পরস্পর মুখোমুখি হয়ে মজলিস সাজিয়ে বসবে। জান্নাতিদের জন্য সেবক নিয়োজিত থাকবে। 

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা।" এ সকল সেবকরা জান্নাতিদের পাশে ঘুরে বেড়াবে যে, কোনো নির্দেশ থাকলে আমাদের নির্দেশ করুন। এরা হবে জান্নাতি সেবক। তাদেরকেই গিলমান' বলা হয়েছে। কুরআনে কারিমে তাদের সম্পর্কে রয়েছে,

(সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত- ১৫-১৬)

(সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত- ১৭)

তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা। আপনি তাদের দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মনি-মুক্তা।

অর্থাৎ তারা এতো অধিক পরিমাণ সুদর্শন ও সুন্দর হবে যে, ঘরের মধ্যে তাদের ছড়ানো মুক্তা সদৃশ মনে হবে।

হাদিসে রয়েছে, জনৈক সাহাবি উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট নিবেদন করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, জান্নাতি সেবকদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা যেই বর্ণনা দিয়েছে যে, তারা ছড়ানো মুক্তা সদৃশ হবে। তাহলে যারা সে জান্নাতের অধিকারী হবে তাদের সৌন্দর্য রূপ সুষমার অবস্থা কিরূপ হবে? সে সকল সেবকদের নিকট জান্নাতিদের সেবার জন্য পাত্র থাকবে। পানাহারের জন্য তারা দস্তরখান বিছাবে। কুরআন মাজিদে দস্তরখান বিছানোর তারতিব ও আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন।

(সুরা ইনসান, আয়াত- ১৯)

জান্নাতিদের দস্তরখানের বিন্যস্তকরণ

পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে। অর্থৎ এমন পানপাত্র থাকবে যাতে পানীয় থাকবে।

(সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত- ১)

যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্ত ও হবে না। অর্থাৎ সেই পানায় ও শরাব হবে শরাবন তাহূরা তথা পবিত্র শরাব, যা পান করলে কোনো প্রকার নেশার সৃষ্টি হবে না। সুতরাং তারা প্রথমে দস্তরখানে সেই পাত্র রাখবে। অতঃপর তাদের দ্বিতীয় কাজ হবে,

আর তাদের পছন্দমত ফল-মুল নিয়ে। ফল রাখার পর তৃতীয় কাজ হবে, এবং রুচিমত পাখীর মাংস নিয়ে।

(ওয়াকিয়া- ২০-২১)

অর্থাৎ তারপর তাদের নিকট পাখীর ভূনা গোশত পরিবেশন করা হবে। এখানে আমাদের জান্নাতি দস্তরখানের বিন্যাস শেখানো হয়েছে। সুতরাং মহিলারা যখন ঘরে দস্তরখান বিছাবে তারাও এভাবেই বিছাবে। দস্তরখান বিছিয়ে প্রথম তাতে প্লেট রাখবে, অতঃপর পানীয় রাখবে, তারপর ফল, ফলের পর রান্না করা খাবার রাখবে। আল্লাহ তাআলা জান্নাতের দস্তরখানের যে বিন্যাস বর্ণনা করেছেন, আপনারা যদি সে অনুযায়ী আমল করেন, তাহলে আপনারা আল্লাহর পক্ষ থেকে। প্রতিদান প্রাপ্ত হবেন। এখন থেকেই যদি আপনারা জান্নাতি দস্তরখান বিছানোর প্রাকটিস করতে থাকেন তাহলে আশা করি আল্লাহ তাআলা আপনাদের বঞ্চিত করবেন না।

জান্নাতিরা যখন আহার করবে তখন يتنازعون فيها তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। হাদিস শরিফে রয়েছে যে, জান্নাতে খাবার পর্যপ্ত পরিমাণ থাকবে। তথাপি প্রত্যেকে আগ্রহ ও মহব্বত এবং পরস্পরের মধ্যে অন্তরঙ্গতার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ খাবার একে অপরের হাত থেকে কেড়ে নিবে। অর্থাৎ একটি পাত্রে খাবার রাখা থাকলে সেখানে যদি কয়েকজন নারী বসা থাকে একজন খাবার নেয়ার জন্য প্রথমে সে পাত্রে হাত দিবে, অপরজনও প্রথমে খাবার তুলে নেয়ার জন্য পাত্রে হাত দিবে। এটা হবে উপভোগ (উহলডু) করার জন্য। কেননা খাবারের পাত্রে সকলের জন্য পর্যপ্ত পরিমাণ খাবার থাকবে। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাদের উপভোগ তথা উহলডু করার সুযোগ দেয়া হবে। তাই আহারের সময় কেউ বলবে, আমি আনার নিবো, কেউ বলবে, আমি আম নিবো। জান্নাতের সব ফলই দুনিয়ার ফল সদৃশ হবে, তবে স্বাদ সেগুলো হবে দুনিয়ার ফল অপেক্ষা অতি উন্নত ও বিস্ময়কর। 

বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, একই প্রজাতির ফলের স্বাদ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র হবে। জান্নাতের প্রতিটি ফল এমনকি প্রতিটি লোকমার স্বাদ হবে স্বতন্ত্র। ফলে জান্নাতের খাবার হবে অত্যন্ত উপভোগ্য একটি ব্যাপার। আরো মজার বিষয় হলো, যত খাবারই জান্নাতি ব্যক্তি গ্রহণ করবে ঢেকুরের মাধ্যমে তা হজম হয়ে যাবে। ঢেকুর হতে মিশকের ন্যায় সুগন্ধি ছড়াবে। পনুরায় জান্নাতি ব্যক্তি ক্ষুধা অনুভব করবে এবং খেতে শুরু করবে।

আরো পড়ুন: পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ, কীভাবে পবিত্রতা অর্জন করবেন সেই সম্পর্কে ব্যাখ্যাসহ বিস্তারিত

জান্নাতের আপ্যায়ন

জান্নাতে জান্নাতি ব্যক্তি নিজ ঘরে অপর জান্নাতি ব্যক্তিকে আপ্যায়ন করবে। কিছু কিছু নারীর প্রত্যাশা থাকবে হযরত ফাতিমা রাযি. কে নিজ ঘরে আমন্ত্রণ জানানোর ও আপ্যায়ন করার। সুতরাং প্রত্যাশা মোতবেক জান্নাতের রমণীকূল সরদার হযরত ফাতিমা রাযি. তার ঘরে তাশরিফ আনবেন। কারো কামনা হবে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের জীবন সঙ্গিনী উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা সিদ্দীকা রাযি.-কে আপ্যায়ন করার। সুতরাং তাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তিনি তাদের ঘরে তাশরিফ আনবেন। কেউ কেউ বিবি মারয়ামকে দাওয়াত করবে। কেউ বিবি আছিয়াকে দাওয়াত করবে। জান্নাতে সকল সম্মানিতা নারীদের তারা আমন্ত্রণ জানাবে। দুনিয়াতে যে সকল নেককার নারীদের মধ্যে পারস্পরিক বুন্ধুত্ব ছিল এবং একে অপরকে নেক কাজে উদ্বুদ্ধ করত তারাও একে অপরকে দাওয়াত করবে।

চিন্তা করুন, সে নিমন্ত্রণ কত আনন্দঘণ ও উপভোগ্য হবে। কারণ যাকেই আমন্ত্রণ জানাতে চাইবে সে-ই আমন্ত্রিত হয়ে আমন্ত্রণকারীর ঘরে এসে উপস্থিত হবে। আমন্ত্রণকারীরও আপ্যায়নের জন্য কোনো প্রকার প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়বে না। দুনিয়াতে তো কাউকে দাওয়াত করলে মহিলাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। সারা দিন রান্নাঘরে কাটাতে হয়, অন্য আরো অনেক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু জান্নাতের আপ্যায়ন এরূপ হবে না। আমন্ত্রণ জানাবে, কিন্তু কোনো প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে না।

জান্নাতিপোশাক

হাদিস শরিফে বর্ণিত রয়েছে, জান্নাতে একটি আনার বৃক্ষ থাকবে যার প্রতিটি আনার জান্নাতিদের কাপড় ও পোশাকাদি রাখার জন্য লাকিজ স্বরূপ হবে। সুতরাং তারা আনার খোলা মাত্রই কাপড়ের জোড়াগুলো পেয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর পক্ষ থেকে আনার বৃক্ষ লাগানো থাকবে, তাতে আনার থাকবে, আনারের ভিতর থেকে তাদের জন্য অত্যন্ত মনোরম ও সুন্দর পোশাক জোড়া বের হবে। দুনিয়াতে তো কাপড় ধৌত করতে হয়, ইস্ত্রি করাতে হয়, এরপর তা পরিধান করা যায়। কিন্তু জান্নাতে তারা প্রতিদিন নতুন পোশাক পরিধান করবে। সুতরাং ধৌত করা বা ইস্ত্রি করার কোনো প্রয়োজন হবে না। আর তা আল্লাহ তাআলার মর্জি অনুযায়ী আনারের ফ্যাক্টরীতে তৈরি হবে। সেগুলোর প্রতিটি জোড়াই অপরটি অপেক্ষা ভিন্নতর হবে। সে পোশাক হবে অপূর্ব সুন্দর। হাদিস শরিফে রয়েছে যে, জান্নাতিদের পোশাকে ত্রিশ হাজার রং চমকাতে থাকবে। বর্তমানে নারীরা যে পোশাক পরিধান করে তাদের ম্যাচিং করে পোশাক পরিধান করার বড়ই শখ। সধারণত দুই/চার রংয়ের মধ্যে ম্যাচিং করা সম্ভব হয়। অধিকন্তু পাঁচ/ছয় রংয়ের মধ্যে ম্যাচিং করা সম্ভব হয়। অথচ জান্নাতে সত্তর হাজার রংয়ের ম্যাচিং হবে এবং এর মাধ্যমে তাদের সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জান্নাতি নারীদের এরূপ সৌন্দর্য দান করবেন। জান্নাতি পুরুষদের আল্লাহ তাআলা রেশমের কাপড় দান করবেন ও স্বর্ণেও চুড়ি পরিধরন করাবেন।

আজ যদি যুবকদের বলা হয় যে, কুরআন মাজিদে রয়েছে, আল্লাহ তাআলা পুরুষদের চুড়ি পরিধান করাবেন, তখন তারা পেরেশান হয়ে বলে, কী ব্যাপার আল্লাহ তাআলা পুরুষদের চুড়ি পরিধান করাবেন? অথচ নিজেরা ঘড়ি হাতে দিয়ে হাত দুলিয়ে দুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাদের যদি ঘুড়ি সুন্দর লাগে, তাহলে আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত চুড়ির সৌন্দর্য কিরূপ হবে?

জান্নাতি নারীদের বাহন

পৃথিবীতে মানুষের নিকট বিভিন্ন প্রকার বাহন থাকে। কারো কাছে থাকে টয়েটো গাড়ি, আবার কারো কাছে থেকে জি.এম.সি. যার কাছে যত বেশি দামী গাড়ি থাকে, নারীরা তাতেই ততবেশি খুশি। আল্লাহ তাআলা জান্নাতে তাদের জন্য বাহনের ব্যাবস্থা করবেন। আল্লাহ তাআলা পুরুষদের জন্য আবলাক ঘোড়ার ব্যবস্থা করবেন। আবলাক হলো সে হীরা, যাতে সাদার মাঝে সরু কালো রেখা থাকে। ফলে তা খুবই সুন্দর ও সুদর্শন মনে হয়। জান্নাতিদের ঘোড়ার রং এরূপ হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের বাহন হিসাবে তা দান করবেন। কিন্তু নারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা উন্নতমনের উষ্ট্রীর ব্যবস্থা করবেন। উষ্ট্রীর উপর স্বর্ণের তৈরি হাওদা থাকবে। হাওদার উপর গদি থাকবে। তারা গদিতে আরাম করে বসবে। ঘোড়াতে আরোহন করাটাও কিছুটা কষ্টকর, তাই আল্লাহ তাআলা পুরুষদের জন্য বাহন হিসাবে ঘোড়ার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু নারীদের জন্য আরো বেশি আরমদায়ক ও কোমল বাহনের ব্যবস্থা করেছেন। অতএব নারীদের বাহন হবে উষ্ট্রী। তার উপর স্বর্ণ নির্মিত হাওদা থাকবে, তাতে কোমল ও নরম গদি থাকবে, নারীরা সেজেগুজে বধূবেশে তাতে উপবেশন করবে। কিন্তু এ সকল ঘোড়া বা উষ্ট্রীর আওয়াজ দুনিয়ার ঘোড়া বা উষ্ট্রীর আওয়াজের ন্যায় হবে না বরং সেগুলোর আওয়াজ হবে অত্যন্ত সুন্দর ও শ্রুতি মধুর (গংরপধষ ংড়হফ) ফলে জান্নাতি ব্যক্তি চাইবে যে, সেগুলো পুনঃ পুনঃ আওয়াজ করতে থাকুক আর আমরা তা শুনতে থাকি। দুনিয়াতে। আমরা দেখে থাকি যে, নারীরা গৃহস্থালীর কজকর্মে মশগুল থাকে আর টেপ রেকর্ডারে কারো ওয়াজ কুরআন তিলাওয়াত বা হামদ-নাত শুনে থাকে। কাজকর্মের মধ্যে নিয়োজিত থাকাবস্থায় শুনার মত কিছু হলে সে খুশি থাকে। 

জান্নাতি নারীদের সম্মানে হুরদের তিলাওয়াত

জান্নাতে আল্লাহ তাআলা নারীদের জন্য টেপ রেকর্ডারের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। হাদিস শরিফে রয়েছে, জান্নাতের শত শত হৃর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। জান্নাতি নারীগণ যখন স্বীয় প্রাসাদ পরিদর্শন করবে, তখন তারা মহলের যে স্থান দিয়ে গমন করবে সেখান দিয়েই হুরদের কুরআন তিলাওয়াত শুনতে পারে। জান্নাতি নারী স্বামী বা সন্তানদের সাথে আলাপরত থাকবে আর হুররা দাঁড়িয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকবে। এভাবেই আল্লাহ তাআলা জান্নাতিদের ঘরে টেপ রেকর্ডারেরর ব্যবস্থা করে দিবেন।

আল্লামা কুরতুবি রহ. লিখেন, জান্নাতিদের নিকট আছরের সময়ের মত দৃশ্য মনে হবে, না দুপরের ন্যায় খুব বেশি আলো ঝলমলে হবে, না; রাতের অন্ধকারচ্ছন্ন থাকবে।

আরো পড়ুন: যাকাত কি যাকাত না দেওয়ার পরিনতি যাকাত ফরজ হওয়ার কারণ স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাত

জান্নাতের ছাদ

আল্লাহ তাআলার আরশই হবে জান্নাতের ছাদ। আল্লাহ তাআলার আরশের পর্দা দিনের বেলা উঠিয়ে ফেলা হবে এবং রাতের বেলা পর্দা ফেলা হবে। এভাবে রাত ও দিনের আগমন এবং প্রস্থান অনুমান করতে সক্ষম হবে।

আল্লাহ তাআলার দীদার

কখনো কখনো হঠাৎ জান্নাতের বৃক্ষরাজি হতে 'আল্লাহ আকবার' ধ্বনি ধ্বনিত হতে থাকবে। জান্নাতের ফিরিশতাগণও তখন অনুরূপ ধ্বনি দিতে থাকবে। হাদিস শরিফে রয়েছে, 'আল্লাহু আকবর' ধ্বনি শুনা মাত্রই জান্নাতিগণ বুঝতে পারবে যে, এই সময়ে দুনিয়াতে আমরা নমায আদায় করতাম। প্রতি দিন পাঁচ বার জান্নাতের বৃক্ষরাজি হতে 'আল্লাহু আকবর' ধ্বনি শুনিয়ে তাদের আযানের আওয়াজের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। তেমনিভাবে জুমআর দিন সম্পর্কেও তারা জ্ঞাত হবে। কেননা প্রতি জুমআর দিন আল্লাহ তাআলা জান্নাতিদের স্বীয় দর্শন দানে ধন্য করবেন। সুতরাং যে দিন আল্লাহ তাআলার দীদার লাভ হবে সেদিন তারা বুঝবে যে, আজ জুমআর দিন। অতএব, জান্নাতিরা জুমআর দিনের অপেক্ষায় থাকবে।

আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার

জান্নাতিরা মাস সমাপ্তির ব্যাপারে এভাবে অবহিত হবে যে, সে সময়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে তাদের উপহারসমাগ্রী (Gift pack) প্রদান করা হবে। যেমনিভাবে ইদের সময় বন্ধু- বান্ধব পরস্পর উপহারসামগ্রী প্রেরণ করে থাকে, তেমনিভাবে আল্লাহ তাআলাও মাস সমাপ্তির পর স্বীয় জান্নাতিবন্দাদের জন্য উপহার সামগ্রী পেরণ করবেন। 

বিষয়টিকে এভাবেও বোঝা যায় যে, দুনিয়াতে কেউ চাকর হলে এবং মালিকের সেবা করলে মাস শেষে মালিক তাকে বেতন প্রদান করে থাকে। সুতারাং দুনিয়ার মালিক যেমনিভাবে মাস শেষে বেতন প্রদান করে থাকে তেমনিভবে জীবিতাবস্থায় যারা আল্লাহ তাআলার ইবাদত করেছে আর এখন অবসর জীবন কাটাচ্ছে তাদেরও আল্লাহ তাআলা মাস শেষে উপহার

প্রদান করবেন। অবসর গ্রহণের পরও অফিস থেকে অবসর গ্রহণকারী কিছু পরিমাণ অর্থ লাভ করে থাকে। তেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা স্বীয় জান্নাতি বান্দাকে উপহার প্রদান করবেন। প্রত্যেক বান্দার অন্তরে এই আনন্দ থাকবে যে, দেখ, আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি কিরূপ উপহার লাভ করেছি। সুতরাং স্বীয় উপহারের প্যাকেট খুলে আনন্দিত হবে। তেমনিভাবে স্ত্রীও স্বীয় উপহারের প্যাকেট খুলে আনন্দিত হবে। সন্তানরাও তেমনিভাবে স্বীয় উপহারের প্যাকেট খুলে আনন্দিত হবে। সকলেই মাস শেষে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে (Gift pack) প্রাপ্তির প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষমান থাকবে। কোনো বন্ধুর পক্ষ থেকে উপহার বক্স পেলে কী পরিমাণ আনন্দিত হয়ে ব্যক্তি। তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে উপহার প্রপ্তিতে ব্যক্তির আনন্দের মাত্রা কী পরিমাণ হবে? ব্যক্তি কি পরিমাণ স্বাদানুভব করবে তাতে?

আল্লাহ হাফেজ**



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url