নিয়াত ও ইখলাস সংক্রান্ত হাদিস

 আজ এই আর্টিকেলটিতে কুরআন ও হাদীসের আলোকে নিয়াত ও ইখলাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।



নিয়াত ও ইখলাস সব রকমের কথায় ও কাজে আবশ্যক। নিয়াত ও ইখলাস ব‍্যতিত কোন কাজের মূল্য আল্লাহর কাছে অর্থহীন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

"তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও যাকাত দিতে। এটাই সঠিক দীন।" (সূরা আল-বাইয়েনাহ: ৫) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-

 "আল্লাহর নিকট পৌছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত বরং পৌছাঁয় তোমাদের তাকওয়া।" (সূরা আল-হজ্জ। ৩৭) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-

"বল, তোমাদের অন্তরে যা আছে তা যদি, তোমরা গোপন অথবা প্রকাশ কর আল্লাহ তা অবগত আছেন।" (সূরা আলে ইমরান: ২৯)

নিয়াত ও ইখলাসের গুরুত্ব

 আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছিঃ সমস্ত কাজের ফলাফল নিয়াত অনুযায়ী হবে। প্রত্যেকেই যে নিয়াতে কাজ করবে সে তাই পাবে। কাজেই যার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য হয়েছে তার হিজরত আল্লাহ ও রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য হয়েছে বলে পরিগণিত হবে। আর যে ব্যক্তি কোন পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারের ইচ্ছায় কিংবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার আশায় হিজরত করবে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হয়েছে বলে গণ্য হবে। (বুখারী, মুসলিম)

হিজরত ও মুহাজির

হিজরত শব্দের অর্থ পরিত্যাগ করা আর মুহাজির শব্দের অর্থ পরিত্যাগকারী। প্রকৃত মুহাজির হলো সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহ তাআলা যা কিছু নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ করে। এক ব্যক্তি যখন ইসলাম গ্রহণ করে তখন থেকে তার হিজরতের কাজ শুরু করতে হয়। প্রথমে তার মন ও মস্তিষ্ক থেকে ইসলামের বিপরীত আকীদা-বিশ্বাসসমূহ বের করে দেয়- এটা তার প্রথম হিজরত। দ্বিতীয় পর্যায়ে সে আল্লাহর যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ পরিত্যাগ করে, হারাম জিনিস ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সম্পূর্ণরূপে সকল নিষিদ্ধ জিনিস ও কাজ পরিত্যাগ করার জন্য পূর্ণ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র অপরিহার্য। তৃতীয় পর্যায়ে সে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ণ শক্তিতে চেষ্টা করতে চায়। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের অবস্থা এদিক দিয়ে যদি চরম নৈরাশ্যজনক মনে হয় তখন সে নিরুপায় হয়ে সমাজ ও দেশত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। প্রচলিত ভাষায় একেই বলা হয় হিজরত। কিন্তু আলোচ্য হাদীস থেকে জানা গেল যে, এটাই আসল ও একমাত্র হিজরত নয়। হিজরতের আসল অর্থ ত্যাগ করা। আর দেশত্যাগ করা এর চূড়ান্ত পর্যায় ও সর্বশেষ উপায়।

হিজরত দু' প্রকার

১। যাহিরী বা প্রকাশ্য হিজরত। অর্থাৎ যেখানে ইসলাম বিপন্ন, সে স্থান ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া। 

২। আর দ্বিতীয় প্রকারের হিজরত হলো বাতিনী বা অপ্রকাশ্য হিজরত। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক নিষিদ্ধ কার্যাবলী পরিত্যাগ করা। বস্তুত যাহিরীর তুলনায় বাতিনী হিজরত খুব কঠিন ও সুরূহ ব্যাপার। কেননা এটা হলো নাফসের সাথে জিহাদ। নবী করীম (সা) বলেছেন-  অর্থাৎ নাফসের বা প্রবৃত্তির সাথে লড়াই করাই হল কঠিন জিহাদ।" মূলত জিহাদ হলো হিজরতের বাস্তবরূপ।

নিয়াত অনুসারে সকল কাজের প্রতিদান দেয়া হবে।

 আবু ইসহাক সাদ ইবন আবী ওয়াক্কাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি হাজ্জাতুল বিদার বছরে খুব রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে দেখতে আসলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আমি খুব রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছি যেমনটি আপনি দেখছেন। আমার যে সম্পদ রয়েছে তার ওয়ারিস একমাত্র আমার কন্যাই হবে। তাহলে আমি কি আমার সম্পদের তিন ভাগের দুই ভাগ সাদকা করে দেব? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, না। আমি আবার বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। তাহলে অর্ধেকটা (দান করে দেই)? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। তাহলে তিন ভাগের এক ভাগ (দান করে দেই)? তিনি বললেন, তিন ভাগের এক ভাগই দান কর। আর এটাই অনেক বেশী অথবা (বলেন) অনেক বড়। তোমার ওয়ারিসগণকে নিঃসম্বল অবস্থায় না রেখে তাদেরকে ধনবান করে রেখে যাওয়াই উত্তম যেন তাদেরকে মানুষের নিকট হাত পাততে না হয়। তুমি আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য যাই ব্যয় কর না কেন, এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দেবে তারও প্রতিদান তোমাকে দেয়া হবে। আবু ইসহাক বলেন আমি বললাম। হে আল্লাহর রাসুল। আমি কি আমার সঙ্গীগণের হিজরতের পর মক্কায় রয়ে যাব? তিনি বললেন, তুমি থেকে গিয়ে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য যে কাজই কর না কেন, তাতে তোমার মর্যাদা ও সম্মান অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। খুব সম্ভব তুমি থেকে যাবে। তখন অনেকে তোমার দ্বারা উপকৃত হবে। আবার অনেকে তোমার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ। আমার সাথীদের হিজরত সম্পন্ন কর এবং তাদেরকে পিছনে ফিরিয়ে দিও না। তবে সাদ ইবনে খাওলা কিন্তু সত্যিই কৃপার পাত্র। মক্কায় তার মৃত্যুতে রাসূলুল্লাহ (সা) সমবেদনা প্রকাশ করেন। (বুখারী ও মুসলিম)

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন। আল্লাহ তোমাদের শরীর ও চেহারার প্রতি

ভ্রুক্ষেপ করেন না, বরং তোমাদের মনের ও কর্মের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। (মুসলিম) আবু মুসা আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞেস করা হল, কোন ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য লড়াই করে, আর কেউ আত্মসম্মান ও বংশগত মর্যাদার জন্য লড়াই করে, আবার কেউ বা লোক দেখানোর জন্য লড়াই করে- এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন : যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করার জন্য লড়াই করে সেই আল্লাহর পথে। (বুখারী ও মুসলিম)

আবু বাকরা নুফাই ইবনে হারেস সাকাফী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) বলেছেনঃ যখন দু'জন মুসলিম তাদের তরবারী নিয়ে একে অপরের সম্মুখীন হবে এবং একজন অন্যজনকে হত্যা করলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। এটা হত্যাকারী সম্পর্কে কিন্তু নিহত ব্যক্তির কি দোষ? মহানবী (সা) বললেন, কেননা সে তার সঙ্গীকে হত্যার ইচছা করেছিল। (বুখারী ও মুসলিম)।

হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন। একটি সৈন্যদল কাবার ওপর হামলা করতে যাবে। যখন তারা সমতলভূমিতে পৌঁছবে, তখন তাদের পূর্বের ও পরের লোকজনসহ ভূমিকে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। হযরত আয়েশা (রা) বললেন: আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে রাসূলুল্লাহ। কি করে তাদের পূর্বের ও পরের সব লোকসহ ভূমি ধ্বসিয়ে দেয়া হবে? অথচ তাদের মধ্যে বহু নগরবাসী ও এমন লোক থাকবে যারা হামলাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তাদের পূর্বের ও পরের লোকসহ ভূমি ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। তারপর তাদের নিয়াত অনুযায়ী তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (র) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে এখানে বুখারীর শব্দাবলীই উদ্ধৃত হয়েছে।

আলোচ্য হাদীসে নিয়াতের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। মানুষ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নিজেকে যত সন্দুর বেশ ভূষার দ্বারা শোভা বর্ধন করুক না কেন তার উদ্দেশ্যে যদি ভিন্নতা থাকে তা হলে তার বাহ্যিক দৃশ্যাবলীর কোনই মূল্য হবে না। এ হাদীসে তাই বলা হয়েছে। বেশ ভূষা দ্বারা মানুষ নিজেকে অলি আল্লাহ দাবি করতে পারে। রাসূলের সুন্নাতের অনুসারী দাবি করতে পারে। কিন্তু তার মধ্যে যদি ইখলাস এর পরিবর্তে কপটতা থাকে তবে আল্লাহর কাছে সে কোন প্রতিদান পাবে না। এমনিভাবে লোক দেখানো যে কোন কাজ আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না। হাদীসটিতে তারই ইঙ্গিত রয়েছে।

হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরত নেই। তবে জিহাদ ও নিয়াত রয়েছে। যখনই তোমাদেরকে জিহাদের জন্য তলব করা হবে তখনই তোমরা বের হয়ে যাবে। (বুখরী ও মুসলিম)

আরো পড়ুন: আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও ক্ষমতা সম্পর্কিত বিস্তারিত বর্ণনা 

ব্যাখ্যা 

ইমাম নববী বলেন, এ হাদীসের অর্থ হচ্ছে- মক্কা থেকে হিজরত করার হুকুম এ হাদীস বর্ণনাকালে ছিল না। কারণ তখন মক্কা ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল।

আবু আবদুল্লাহ জাবের ইবনে আবদুল্লাহ আল আনসারী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোন এক জিহাদে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, মদীনায় এমন কিছু সংখ্যক লোক রয়েছে, তোমরা যে সমস্ত স্থানে সফর কর এবং যে ময়দান অতিক্রম কর সেখানে তারা তোমাদের সাথেই থাকে। তাদেরকে রোগে আটকে রেখেছে। (মুসলিম) অন্য বর্ণনায় আছে, তারা সওয়াবে তোমাদের সাথে শরীক হবে। ইমাম বুখারী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে এভাবে বর্ণনা করেছেন। আমরা তাবুকের জিহাদ থেকে নদী করীম (সা)-এর সাথে ফিরে আসার পর তিনি বললেন। মদীনায় এমন একদল লোক রয়ে গিয়েছে যারা আমাদের সাথে আসেনি এবং ফোন ময়দানও অতিক্রম করেনি। কিন্তু তবুও তারা আমাদের সাথেই আছে বলে গণ্য করা হবে। কেননা তাদের জিহাদে যাওয়ার ইচয়া ছিল কিন্তু তাদেরকে বিশেষ ওজর আটকে রেখেছে। তাদের ওজরের কারণে তারা না আসতে পারায় তারা পার পেয়ে যাবে।

হযরত আবু ইয়াযীদ মাআন ইবনে আখনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি, তাঁর পিতা এবং দাদা সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেনঃ আমার পিতা ইয়াযীদ কিছু দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) সাদকা দানের জন্য বের করলেন, তিনি মসজিদে কোন একটি লোকের কাছে তা রেখে দিলেন। আমি গিয়ে তা নিয়ে নিলাম। এতে আমার পিতা বললেন, আল্লাহর কলম। আমি তোমাকে দেবার ইচ্ছা করিনি। আমি তখন বিষয়টা রাসুলুল্লাহ (সা)-এর কাছে উপস্থাপন করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, হে ইয়াজিদ। তুমি তোমার জন্য নিয়াত করনি এবং হে মাআন তুমি তোমার জন্য গ্রহণ করনি।

ব্যাখ্যা

মানুষের কর্মময় জীবন পরিশুদ্ধ ও যথার্থ হিসেবে অনুষ্ঠিত করার জন্য সর্বাগ্রে যে বিষয়টির প্রতি কুরআন-হাদীসে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হল-ইখলাস ও নিয়াত। ইবাদত সংক্রান্ত কোন কাজ করতে গেলে তার উদ্দেশ্য সঠিক থেকে হবে। উদ্দেশ্যের মধ্যে যদি কোন কপটতা থাকে তা হলে তার দ্বারা যত গুরুত্বপূর্ণ কর্মই সাধিত হোক না কেন তার কোন মূল্য বা প্রতিদান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া যাবে না। আবার কোন কাজ বা ইবাদতে যদি ইখলাস বা একাগ্রতা না থাকে তবে সে কাজ বা আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে না। আলোচ্য পাঠে নিয়াত এবং একাগ্রতার গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, প্রত্যেক কাজের ফলাফল তার নিয়াতের উপরই প্রদান করা হবে। উদাহরণ হিসেবে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হিজরত করে তবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। আর কোন ব্যক্তি যদি পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কিংবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হিজরত করে থাকে তবে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। দ্বিতীয় হাদীসে আবু ইসহাক সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিত হাদীসে নিয়াত এবং এখলাস সংক্রান্ত বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি যদি হিজরত না করে মক্কায় বসবাস করার নিয়াত করে। কিন্তু তার নিয়াতের মধ্যে কোন কপটতা বা লৌকিকতা নেই, যেমনটি উক্ত সাহবীর বেলায় হয়েছে। উক্ত সাহাবী হিজরতের পরও মহানবী (সা)-এর অনুমতিক্রমে মক্কায় থেকেছেন। তিনি যখন মহানবী (সা)-এর কাছে মক্কায় অবস্থান করার অনুমতি প্রার্থনা করেছিলেন। তখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) তাঁকে মক্কায় থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন যদিও হিজরত করার আদেশ তখন বলবৎ ছিল এবং মহানবী (সা) সহ সাহাবাই কিরামগণ মদীনায় হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। নিয়াত ও ইখলাসের কারণে এমতাবস্থায় নবী করীম (সা) সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা) কে বললেন-তুমি মক্কায় থেকে দিয়ে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য যে কাজই করনা কেন, তাতে তোমার সম্মান অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। মহানবী (সা) বাহ্যিক ইবাদাত, পোষাক ও লৌকিকভার উপর নিয়াত ও ইখলাসকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। মুসলিম শরীফে সর্ণিত এক হাদীসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেন- যে আল্লাহতাআলা মানুষের পোষাক পরিচছদ ও বাহ্যিক কৃতকর্মের দিকে গুরুত্ব প্রদান করেন না। কারো চেহারার দিকেও নম্বর দেননা। বরং তিনি অন্তরের দিকে তাকান সেখানে কি আছে। কারণ আল্লাহর কাছে লৌকিকতার বা বাহ্যিক ও লোক দেখানো কর্মকান্ডের কোনই মূল্য নেই। কেননা বাহ্যিক কর্মকান্তও নৌক্তিকতা নিয়ারের মূল্যায়ন করেনা। অপমাধীরা অপরাধকে ঢাকার জন্য এবং মুনাফিকরা ঈমানদারদের ধোঁকা দেয়ার জন্য অনেক সময় কপটতার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এ সকল মানুষের মধ্যে অনেকের কথা-বার্তায় মধু থাকে এবং আচার-আচরণ দ্বারা মানুষকে মুগ্ধ করে। পক্ষান্তরে তাদের নিয়াত খারাপ থাকায় তারা ক্ষতি করে বসে। ভাল নিয়াতে অতি ক্ষুদ্র কাজ করলেও তার বিনিয়ময় আল্লাহর কাছে রয়েছে। আর খারাপ নিয়াতে যত ভাল কাজ করা হোক না কেন বা উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ রৌপ্য আল্লাহর রাস্তায় দান করা হোক না কেন তার বিনিময়ে আল্লাহ কোন প্রতিদানই দেবেন না। বরং তার সকল কর্মকান্ড নিষ্ফল হয়ে যাবে। বুখারী শরীফের হাদীসে আছে মহানবী (সা) বলেছেন যে, একটি দল পবিত্র কাবা শরীফের উপর হামলা করতে আসবে। যখন তারা সমতল ভূমিতে পৌঁছবে তখন তাদের পূর্বের ও পরের লোকজনসহ ভূমিকে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। অথচ তাদের মধ্যে অনেক লোক এমন থাকবে, যারা কাবা ঘর ধ্বংস করতে আসেনি। তা সত্ত্বেও তাদেরকে ভূমি ধ্বসিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হবে। কিয়ামতের দিন তাদের নিয়াত অনুযায়ী তারা ফল লাভ করবে। কাজেই সব কিছুতেই নিয়াতকে প্রাধান্য দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। লৌকিকতা ও কপটতা পরিহার করে আমাদের নিয়াতকে বিশুদ্ধ করতে হবে। তা হলেই কেবল সাফল্য লাভের আশা করা যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url