মাযহাব কি ফিক্হ শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ মাযহাব সমূহ
মাযহাব কি ইসলামের ৪টি প্রসিদ্ধ মাযহাব হচ্ছে সংক্ষিপ্ত হানাফী মাযহাব, মালিকী মাযহাব, শাফিঈ মাযহাব ও হাম্বলী মাযহাব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা জানতে পারবেন।
মাযহাব কি
ইসলামী শরীআতের কতক আহকাম (বিধান) কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। এতে আল্লাহ ও রাসূলের (স) ইচ্ছা মানুষের কাছে সহজেই বোধগম্য। এ জাতীয় আহকামের দলীলগুলো (আয়াত ও হাদীস) কাতয়ী বা অকাট্য। এ দলীলগুলো একাধিক অর্থও বহন করে না। ফলে এতে ইজতিহাদ ও গবেষণার প্রয়োজন নেই। এছাড়া কতিপয় দলীল আছে যেগুলো পূর্বের মতো নয়, কেননা এগুলো একাধিক অর্থ বহন করে। এক্ষেত্রে শরীআতের বিধান প্রণয়নের ব্যাপারে ফকীহ ও মুজতাহিদ ব্যক্তির ইজতিহাদের অবকাশ রয়েছে। ফকীহ ব্যক্তি গবেষণার মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি অর্থের আলোকে মতামত প্রদান করেন। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ফকীহ ব্যক্তির অনুসৃত মতোকে মাযহাব বলা হয়। মাযহাবের অনুসারীদেরকে মুক্কাল্লেদীন অথবা মুত্তাবেয়ীন বলা হয়। নিরক্ষর ও মূর্খ ব্যক্তিরা মাযহাবের তাকলীদ বা অনুকরণ করবে আর আলিমগণ মাযহাবের ইত্তেবা বা অনুসরণ করবে। প্রত্যক মাযহাবের ইমামগণের ভিন্ন ভিন্ন মূলনীতি রয়েছে। সুতরাং তাদের অনুসৃত মাযহাব ও খুঁটিনাটি বিষয়ে মতোবিরোধ হওয়া স্বাভাবিক। ইসলামে মাত্র চারটি স্বীকৃত মাযহাব রয়েছে যেমন: হানাফী মাযহাব, মালিকী মাযহাব, শাফিঈ মাযহাব ও হাম্বলী মাযহাব। এ চারটি মাযহাব আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মতের উপর প্রতিষ্ঠিত। মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমান এ চারটি মাযহাবের কোন না কোনটির অনুসরণ করে থাকেন।
ফিক্হ শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ মাযহাবসমূহ
হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ইমাম আবু হানীফা নুমান ইবনে ছাবিত। তিনি কুফা নগরীতে ৮০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫০ হিঃ সালে বাগদাদের কারাগারে ইন্তিকাল করেন।
আরো পড়ুন: ইমাম আবু হানীফা (র)-এর জীবনী
হানাফী মাযহাবের পরিচয়
ইমাম আবু হানীফাই সর্বপ্রথম নিয়মত্যোন্ত্রিক পদ্ধতিতে ফিকহ শাস্ত্রের গোড়াপত্তন করেন এবং স্বীয় জীবদ্দশায় এর পূর্ণতা দান করেন। তাঁরপর অন্যান্য ফকীহগণ স্ব স্ব ফিকহ সম্পাদন করেন।
ইমাম আবু হানীফা (র) কোন মাসআলার ব্যাপারে কুরআনের আয়াত বা হাদীস না পেলে আহকাম প্রণয়নে নিজ রায় (কিয়াস) প্রয়োগ করতেন। কেননা কুরআন ও হাদীসের দলীল হল সীমিতো সংখ্যক। পক্ষান্তরে, মানব জীবনের দৈনন্দিন ঘটনাবলি ও সমস্যা অনেক। অতএব সকল মাসআলার সমাধান সরাসরি দলীল যারা দেয়া অসম্ভব। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তিনি অন্যান্য প্রসিদ্ধ মাযহাবের ইমামগণের মতো ছিলেন না। তিনি সহীহ হাদীস পেলে তাতে আমল করতেন এবং তার উপর ভিত্তি করে আহকাম বা বিধান প্রণয়নে ইজতিহাদ করতেন।
ইমাম আবু হানীফা (র) ক্ষেত্র বিশেষে খবরে ওয়াহিদ বাদ দিয়ে কিয়াস অবলম্বন করেছেন। কেনান তাঁর যুগে মিথ্যা হাদীস রটনা শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ইমাম আবু হানীফা (র) ফাতওয়া বা মতামত প্রদানের ব্যাপারে অত্যন্ত নির্মাক ছিলেন, এমনকি যে সব ঘটনা ও সমস্যা এখনও সৃষ্টি হয়নি সে সব বিষয়েও তিনি ২. ফাতওয়া দিয়ে গেছেন। তিনি ইমাম আধম হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। এমনকি ইমাম শাফিঈ বলেন, সকল মানুষ ফিকহের ব্যাপারে আবু হানীফার পরিবার।
ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মাযহাবের মূলনীতি
ইমাম আবু হানীফা (র)-এর গবেষণা ও ইজতিহাদের মূলনীতি ছিল নিম্নরূপ-
মাসায়েল গবেষণার ব্যাপারে কুরআনের আয়াত থেকে দলীল গ্রহণ করতেন। কেননা কুরআনই হল ইসলামী শরীআতের মূল উৎস। কুরআনে দলীল না পেলে তিনি সহীহ ও মাশহুর হাদীসের (সঠিক ও প্রসিদ্ধ হাদীস যা কমপক্ষে ৩জন রাবী বর্ণনা করেছেন) শরণাপন্ন হতেন। তবে খবরে ওয়াহিদ (যে হাদীস ১/২ জন রাবী বর্ণনা করেছেন) গ্রহণ করতে নিম্নের তিনটি শর্ত দিয়েছেন-
১. তা কুরআনের এবং মাশহুর বা প্রসিদ্ধ হাদীসের সঙ্গে যেন সাংঘর্ষিক না হয়:
২. অনুরূপভাবে তা যেন সাহাবীদের আমলের বিপরীত না হয়;
৩. তদ্রুপ খবরে ওয়াহিদের বর্ণনাকারী যেন তার বর্ণিত হাদীসের বিপরীত আমল না করেন।
তিনি ফাতওয়া বা মতামত প্রদানের ব্যাপারে অত্যন্ত নির্ভীক ছিলেন, এমনকি যে সব ঘটনা ও সমস্যা এখনও সৃষ্টি হয়নি সে সব বিষয়েও তিনি ফাতওয়া দিয়ে গেছেন। ফলে ফিকহ শাস্ত্রে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। তিনি ইমাম আযম হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর পরবর্তী ইমামগণের কেউ এ সম্মানের অধিকারী ছিলেন না। এমনকি ইমাম শাফিঈ বলেন, সকল মানুষ ফিকহের ব্যাপারে আনু হানীফার পরিবার। (তৃতীয় পাঠে হানাফী মাযহাবের মূলনীতির বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে।
ইমাম আবু হানিফা (র) কোন মাসআলার ব্যাপারে কুরআনের আয়াত বা হাদীস না পেলে আহকাম প্রণয়নে নিজ রায় (কিয়াস) প্রয়োগ করতেন।
আরো পড়ুন: ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (র) ও তাঁর মাযহাব
মালিকী মাযহাব
ইমাম মালিক (র)-এর মাযহাবের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
মালিকী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ইমাম মালিক ইবনে আনাস ইবনে আবু আমের। তিনি ৯৩ হি সালে মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৭৯ হিঃ সালে মদীনাতেই ইন্তিকাল করেন।
ইমাম মালিক (র) মদীনায় জন্মগ্রহণের ফলে হাদীস শাস্ত্রে অগাধ শায়িতা লাভ করেন। কেননা মদীনাই ছিল হাদীসের কেন্দ্রস্থল। তিনি ইমাম নাফে' যায়েদ ইবনে আসলাম, ইবনে শেহাব আয়যুহরী, শুরায়িক ইবনে আবদুল্লাহ ও আব্দুল্লাহ ইবনে যাকওয়ান প্রমুখ ইমামগণের নিকট ইলমুল হাদীস শিক্ষা করেন। অবশ্য তাঁর প্রথম শ্রেণীর উস্তাদগণের মধ্যে রয়েছেন, রবীয়াহ ইবনে আবদুর রহমান, যিনি ছিলেন আহলুর রায় এর অন্তর্ভুক্ত।
ইমাম মালিকের মধ্যে হাদীস ও কিয়াস উভয়ের সমন্বয় ছিল। তাঁর প্রণীত মাসায়েলের মধ্যে যেমনভাবে কুরআন ও সুন্নাহর দলীল ছিল, তদ্রুপ তিনি প্রয়োজন বোধে কিয়াস, ইসতিহসান (উত্তম চিন্তা বা মতামত), ইসতিসহাব (প্রত্যেক বিষয়ের মূল অবস্থা) ও উরফ (প্রচলিত প্রথা) প্রয়োগ করেছেন।
মালিকী মাযহাবের উসূল বা মূলনীতি
ইমাম মালিক (র) শরীআতের বিধানাবলি গবেষণার ক্ষেত্রে কতগুলো মূলনীতি গ্রহণ করেছেন যা নিম্নরূপ-
১. আল কুরআন: ইমাম মালিক মাসয়ালা গবেষণার ব্যাপারে সর্বপ্রথম কুরআন হতে দলীল নিতেন। কেননা কুরআনই হল ইসলামী শরীআতের মূল উৎস।
২. সুন্নাহ: যে সব বিষয়ের দলীল সরাসরি কুরআনে নেই, তিনি সে সব বিষয়ের দলীল সুন্নাহ হতে নিতেন। অবশ্য তিনি ইমাম আবু হানীফার মতো হাদীস গ্রহণের ব্যাপারে এতেঠ কঠিন শর্তারোপ করেছেন। করেননি। তিনি কিয়াসকে খবরে ওয়াহিদের উপর প্রাধান্য দিতেন না। অবশ্য খবরে ওয়াহিদের বেলায় তাঁর আরোপিত শর্ত ছিল যেন, তা মদীনাবাসীদের আমলের বিপরীত না হয়। তার নিকট হাদীসে মুরসাল দলীল হিসেবে গণ্য হতো। হিজাযবাসীদের বর্ণিত হাদীস তাঁর নিকট সর্বাপেক্ষা বেশী গ্রহণ যোগ্য ছিল।
৩. ইজমা: ইমাম মালিক ইজমায়ে উম্মতের বা উম্মতের ঐকমত্যের উপর নির্ভর করতেন, কারণ ইজমার ব্যাপারে কারো দ্বিমতো নেই।
৪. কিয়াস: কোন বিষয়ের দলীল কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়ে না পাওয়া গেলে তিনি কিয়াসের আশ্রয় নিতেন।
৫. মদীনাবাসীদের আমল বা ক্রিয়াকর্ম: তাঁর মতে মদীনাবাসীদের আমল প্রায় রাসূলের (স) পক্ষ হতে হাদীস বর্ণনার সমপর্যায়ের। অবশ্য অন্যান্য ইমামগণ মদীনাবাসীদের আমল দলীল হিসেবেগ্রহণ করেননি।
৬. সাহাবীগণের উক্তি। তাঁর নিকট সাহাবীগণের আমল কিয়াসের চেয়ে অধিকতর গ্রহণীয়।
৭. ইসতিহসান: কিয়াসে জলী বা প্রকাশ্য কিয়াসের বিপরীত উত্তম চিন্তা ও মতামতকে ইসতিহসান বা কিয়াসে খফী বলা হয়। এ ছাড়া তিনি ইণ্ডিসহাব (প্রত্যেক বিষয়ের মূল অবস্থা) এবং মাসালেহ মুরসালা (ব্যাপক কল্যাণমূলক চিন্তাকে) ও দলীল হিসেবে ব্যবহার করতেন।
ইমাম মালিকের 'মুয়াত্তা' গ্রন্থ পাঠ করলে তাঁর মাযহাবের মূলনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত হওয়া যায়।
আরো পড়ুন: ইমাম মালিক (র) ও তাঁর মাযহাব
শাফিঈ মাযহাব
শাফিঈ মাযহাবের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস আশ-শাফিঈ আল-কোরেশী এ মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৫০ হিঃ সালে ফিলিস্তীনের গাজায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০৪ হিঃ সালে মিসরে ইন্তিকাল করেন।
ইমাম শাফিঈর দুইটি মাযহাব রয়েছে। কাদীম (পুরাতন) মাযহাব ও জাদীদ (নতুন) মাযহাব। ইরাকে যে সব বিধানাবলি গবেষণা করেন তা হলো পুরাতন মাযহাব। আর মিষার যে সব দিধানাবনি গবেষণার মাধ্যমে প্রণয়ন করেন তা নতুন মাযহাব নামে খ্যাত। মিসরে ফিকহর উপর আসে।
তিনি মাসআলা গবেষণার ব্যাপারে মধ্যামপন্থী ছিলেন। কট্টর আহলুল হাদীসের মাত্রা কিয়াগাজ একেবারে খুঁড়েও ফেলতেন না। আবার কুরআন হাদীসের দলীল বাদ দিয়ে শুধু ভিয়াসের উপরও নির্ভর করতেন না।
শাফিঈ মাযহাবের মূলনীতি
ইমাম শাফিন (র) মাযহাবকে কতিপয় মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন। যদি কুরআন ও সুন্নাহ হচে কোন বিষয়ে সরাসরি আয়াত বা হাদীস না পাওয়া যেত তবে ইজমায়ে উম্মত যথা উন্মতের ঐকমত্যের উপর আমল করতেন। অবশ্য তিনি মাসআলা গবেষণার ব্যাপার ধনয়ে ওয়াহিনকে (১/২ জন রাবীর বর্ণনাকৃত হাদীস) গুরুত্ব দিতেন। কুরআন-সুন্নাহ ও ইজমায়ে কোন বিষয়ের দলীল না পাওয়া গেলে তিনি কিয়াস প্রয়োগ করতেন। অবশ্য সে কিয়াদের স্বপক্ষে কুরআন ও সুন্নাহ হতে দীবাদ থাকা আবশ্যক ছিল। এছাড়া ইসতিহসান (উত্তম চিন্তা ও মতামত) তাঁর নিকট দলীল হিসেবে গৃহীত হতো না। সাহাবীদের ফাতওয়াও তাঁর নিকট দলীলা হিসেবে গৃহীত হতো।
শাড়ির মাধহ্যাবের উল্লিখিত মূলনীতি দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, শাড়িই মাযহাবে শরীআতের দলীলের সাথে সঠিক কিয়াসের সমন্বয় ঘটেছে।
ইমাম শাফিঈ (র) মাযহাবকে কতিপয় মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন। যদি কুরআন ও সুন্নাহ হতে কোন বিষয়ে সরাসরি আয়াত বা হাদীস না পাওয়া যেত তথ্য উন্মতের ঐক উপর আমল করতেন।
হাম্বলী মাযহাব
হাম্বলী মাযহাবের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
হাবলী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা হলেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র)। তিনি ১৬৬ হি. সালে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ২৪১ হি. সালে ইজিকাল করেন। ইমাম আহমদ প্রকৃত পক্ষে একজন মুহাদ্দিস ছিলেন। ফিকহর চেয়ে হাদীসেই তাঁর প্রগাঢ় জ্ঞান ছিল। যে সব বিষয়ে তিনি হাদীস গেছেন না সে বিষয়ে ফাতওয়া দেয়া অপছন্দ মনে করতেন। এমন কি তিনি তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব 'অনলমুসনাদ কৈও ফিকহ ভিত্তিক অধ্যায়ে প্রণয়ন করেননি। বরং সনদ ভিত্তিক অধ্যায়ে প্রণয়ন করেন।
হ্যাম্বলী মাযহাবের মূলনীতি
ইমাম আহমদের ইজতিহাদ ইমাম শাফিউর সমপর্যায়ের ছিল। কেননা তিনি ইমাম শাফিউর নিকট ফিকহ শাস্ত্র শিক্ষা করেন। ইমাম ইবনু কাইয়্যিম আল-জাওযীয়য় ইমাম আহমাদ (র) সম্পর্কে বলেন তাঁর (আহমাদের) ফাতওয়া পাঁচটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে। তা নিম্নরূপ-
১. দুমুস কুরআন এবং রাসূল (স) হতে বর্ণিত হাদীস। তিনি কুরআন ও হাদীস মোতাবেক ফাতওয়া দিতেন। এতে কারো বিরোধিতার পরোয়া করতেন না। বিষদ্ধ হাদীদের উপর তিনি কিয়াসে বা রায়কে প্রাধান্য দিতেন না।
২. সাহাবীগণের ফাতওয়া কোন সাহাবীর ফাতওয়া পেলে তাঁর উপর ভিত্তি করে তিনি দিতেন, যদি ঐ সাহাবীর ফাতওয়ায় অন্যান্য সাহাবীদের জিভ্রমতো না থাকত। আর ি একথাও বলতেন না যে, এ ফাতওয়ার উপর ইজমা (ঐকমত্যে) হয়েছে। এ ছাড়া সাহাবীগণের
ফাতওয়ার উপর তিনি কিয়াসকে প্রাধান্য দিতেন না।
৩. সাহাবীগণের ফাতওয়ায় মাতোবিরোধ থাকলে, যার ফাতওয়া কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক হাজা তার উপর ভিত্তি করে ফাতওয়া দিতেন। যদি তাদের কারো উক্তি কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক না হতো, তবে তিনি তাদের কথা উদ্ধৃত করতেন। কিন্তু কোনোটির উপর জোরালোভাবে ফাতওয়া দিতেন না।
৪. হাদীসে মুরসাল তিনি গ্রহণ করতেন, যদি কোন বিষয়ের উপর বিষদ্ধ হাদীস না পেতেন। কেননা তাঁর মতে মুরসাল ও দুর্বল হাদীস কিয়াস অপেক্ষা শ্রেয়।
৫. তিয়াস। কোনো বিষয়ে দুর্বল হাদীস বা সাহাবীদের উক্তি না পেলে তিনি প্রয়োজনবেছে কিয়াস প্রয়োগ করতেন। কোনো মাসজালার ব্যাপারে পরস্পর বিরোধী দলীল পেলে তিনি ঐ বিষয়ে ফাতওয়া বা ঘরো প্রকাশ থেকে বিরত থাকতেন।
আরো পড়ুন: ইমাম শাফিঈ (র) ও তাঁর মাযহাব
ভৌগোলিক ভিত্তিতে চার মাযহাবের বর্তমান অবস্থা
আহলুদসুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকীদার উপর প্রতিষ্ঠিত উল্লেখিত চার মাযহাব মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়েয় আছে। কোনো দেশে সাযহাব চতুষ্টয়ের শুধু একটি মাযহাবের আধিক্য দেখা যায়। আবার কোনো দেশে একাধিক মাযহাব পাওয়া যায়। ভৌগোলিক সীমারেখা হিসেবে বিভিন্ন দেশে মাযহাবগুলোর অবস্থা নিম্নরূপ।
১. মরক্কোতে শুধু মালিকী মাযহাবই বিদ্যমান। আলজিয়ার্স, তিউনিসীয়া ও পশ্চিম ত্রিপোলীতে মালিকী মাযহাবের আধিক্য দেখা যায়। এ সব দেশে মালিকী মাধত্যর ছাড়া অপর কোন মাবহার নেই বললেই চলে। তবে তিউনিশিয়ায় কিছু সংখ্যক লোক হানাফী মাযহাবের অনুসারী। তারা হলেন তুর্কী বংশোদ্ভূত।
২. মিসরে সংখ্যাধিক্যের দিক থেকে রয়েছে যথাক্রমে শাফিঈ, মালিকী, হানাফী মাযহাবের লোক। অবশ্য ফাতওয়া ও বিচার কার্যে হানাফী মাযহাবকেই প্রাধান্য দেয়া হয়।
৩. সুদানের বেশির ভাগ লোক মালিকী মাযহাবের অনুসারী। আর সেখানে বিচার কার্স ও ফাতওয়া প্রদানে মালিকী মাযহাবকেই অনুসরণ করা হয়।
৪. সিরিয়া ও ইরাকের অধিকাংশ লোক হানাফী।
৫. ফিলিস্তীনের অধিকাংশ লোক শাফিঈ মাযহাবভুক্ত।
৬. তুর্কীস্তান ও আরসেনিয়া এবং বলকান অঞ্চলের সব লোকই হানাফী।
৭. কুর্দিস্তান ও আরমেনিয়ার বেশীরভাগ লোক শাফিঈ মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত।
৮. ইরানের সুন্নীদের বেশির ভাগ লোক শাফিঈ মাযহাবের অনুসারী। আর সামান্য সংখ্যক হানাফী।অবশ্য ইরানের অধিবাসীদের বেশির ভাগই শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত।
৯. আফগানিস্তানের সকল অধিবাসীই হানাফী মাযহাবের অনুসারী।
১০. কুকাজ অঞ্চলের বেশির ভাগ লোক হানাফী।
১১. ভারতের মুসলমানদের বেশির ভাগ লোক হানাফী। অবশ্য আহলে হাদীসও রয়েছে।
১২. পাকিস্তান ও বাংলাদেশের লোকসংখ্যার সিংহভাগই হানাফী মাযহাবের অনুসারী। তবে কিছু সংখ্যক আহলে হাদীসও আছে।
১৩. ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা ও ফিলিপিন দ্বীপপুঞ্জ ও তৎপার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অধিকাংশ লোক শাফিঈ মাযহাবভুক্ত।
১৪. ব্রাজিলের মুসলমানদের অধিকাংশ লোক হানাফী মাযহাবভুক্ত।
১৫. সৌদি আরবে চার মাযহাবের লোকই কম বেশি দেখা যায়। তবে সেখানে হাম্বলিদের সংখ্যা বেশি। আর গোটা সৌদি আরবে ফাতওয়া ও বিচার কার্যে হাম্বলী মাযহাব অনুসৃত হয়। সেখানকার নাজদবাসীদের সকলেই হাম্বলী। আমীরের অধিকাংশ লোক শাফিঈ। অবশ্য হিজাযের বিভিন্ন শহরে হানাফী ও মালিকী মাযহাবযুক্ত লোকও পাওয়া যায়।
১৬. ওমানে শাফিঈ ও হাম্বলী উভয় মাযহাবের লোক পাওয়া যায়। তবে সেখানকার অধিকাংশ লোক এবাজী সম্প্রদায়ভুক্ত। আর এবাজী মাযহারই রাষ্ট্রীয় মাযহাব।
১৭. কাতার, বাহরাইন, কুয়েতের অধিকাংশ লোক মালিকী মাযহাবভুক্ত। অবশ্য সেখানে কিছু লোক হাবলীও আছে।
১৮ ইয়েমেনের উত্তর ও দক্ষিণভাগ মিলিয়ে সেখানকার অধিবাসীদের অধিকংশ লোক নিয়া যায়দী মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত। এ মাযহাবের আকীদা প্রায় আহলুস সুন্নাহর আকীদার কাছাকাছি। অবশ্য সেখানে শাফিঈ ও হানাফী মাযহাবভুক্ত লোকও রয়েছে।
আল্লাহ হাফেজ**
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url