হযরত মুহাম্মদ (স) সর্বশ্রেষ্ঠ নবী

আজ এই আর্টিকেলটিতে  হযরত মুহাম্মদ (স) যে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী তা বর্ণনা করতে পারবেন। আল-কুরআনের আলোকে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারবেন। আল-হাদীসের আলোকে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারবেন; হযরত মুহাম্মদ (স)-এর উপর 'আল-কুরআন অবতীর্ণ হওয়াই যে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ' তা ব্যাখ্যা করতে পারবেন।

হযরত মুহাম্মদ (স) সর্বশ্রেষ্ঠ নবী

হযরত মুহাম্মদ (স) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও বিশ্বনবী-এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে দুনিয়াতে সম্মানিত করেছেন এবং পরকালেও মর্যাদাবান করেছেন, যা অন্য কোন নবী ও রাসূলগণ লাভ করতে সক্ষম হননি। পার্থিব জীবনে আল্লাহ তা'আলা হযরত মুহাম্মদ (স)-কে আশিটিরও অধিক বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত মর্যাদা দান করেছিলেন, যেগুলোতে তিনি একক বিশেষত্বের অধিকারী ছিলেন। এ সকল বৈশিষ্ট্য তাঁর একার জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। এ পৃথিবীতে তাঁর আবির্ভাবের পূর্বেই আল্লাহ তা'আলা তাঁর অনেক বৈশিষ্ট্যের কথা প্রকাশ করেছিলেন এবং তাঁর আবির্ভাবের পর সেগুলোকে আরো সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, তিনি নবী ও রাসূলদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। নিম্নে কুরআনও হাদীসের আলোকে তা প্রমাণ করা হল:

আরো পড়ুন: নবী ও রাসূলগণের নিষ্পাপ হওয়া

এ পৃথিবীতে তাঁর আবির্ভাবের পূর্বেই আল্লাহ তা'আলা তাঁর অনেক বৈশিষ্ট্যের কথা প্রকাশ করেছিলেন এবং তাঁর আবির্ভাবের পর সেগুলোকে আরো সৌন্দর্যমন্ডিত করেছেন।

আল-কুরআনের আলোকে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ

১. হযরত মুহাম্মদ (স) সম্পর্কে সকল নবী ও রাসূলের নিকট থেকে আল্লাহ তা'আলার অঙ্গীকার গ্রহণ:

আল্লাহ তা'আলার এ অঙ্গীকার গ্রহণের ফলে হযরত মুহাম্মদ (স) সকল নবী ও রাসূলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে প্রমাণিত হন। এ প্রসঙ্গে তিনি ঘোষণা করেছেনঃ

"স্মরণ কর, যখন আল্লাহ নবীগণের অংগীকার নিয়েছিলেন যে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমতে যা কিছু দিয়েছি অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকরূপে যখন একজন রাসূল আসবে তখন তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি স্বীকার করলে এবং এ সম্পর্কে আমার অংগীকার কি তোমরা গ্রহণ করলে? তারা বলল, আমরা স্বীকার করলাম। তিনি বললেন, তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।" (সূরা আলে-ইমরান: ৮১)।

হযরত আলী ও ইবনে আবাস (রা) বলেন, "আল্লাহ তা'আলা সকল নবী ও রাসূলের কাছ থেকে মুহাম্মদ (স) সম্পর্কে এ অঙ্গীকার নেন যে, তারা স্বয়ং যদি তাঁর সময়ে জীবিত থাকেন, তবে যেন তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং তাঁকে সাহায্য করেন এবং স্বীয় উম্মতকেও যেন এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে যান।"

হযরত মুহাম্মদ (স) যদি সে সব নবী ও রাসূলগণের সময়ে আবির্ভূত হতেন, তবে তিনি সবার নবী হতেন এবং তাঁরা সবাই তাঁর উম্মত হতেন। এতে বুঝা যায় যে, তিনি শুধু নিজের উন্মতেরই নবী নন, নবীগণেরও নবী। হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন, "আজ যদি মূসা (আ) জীবিত থাকতেন, তবে তিনি আমার অনুসরণ করা ছাড়া তাঁর কোন পথ থাকত না।

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে যখন হযরত ঈসা (আ) পৃথিবীতে অবতরণ করবেন, তখন তিনিও আল- কুরআন এবং তোমাদের নবীর বিধি বিধান মেনে চলবেন।

২. তাঁর সম্পর্কে সকল নবীর অবহিত হওয়া: 

পৃথিবীতে এমন কোন নবীর আবির্ভাব ঘটেনি যিনি হযরত মুহাম্মদ (স), তাঁর প্রেরিত হওয়া, আবির্ভাবের সময়, হিজরাত এবং তাঁর নিদর্শনাবলী ও গুণাবলী সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। এ সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ (স) বলেন:

"আমি যখন আল্লাহর নিকট সর্বশেষ নবী হিসেবে স্বীকৃত, তখন হযরত আদম (আ) মাটির সাথে মিশ্রিত ছিলেন। তিনি আরো বলেন। আমি হযরত ইবরাহীম (আ)-এর দুআর ফসল, হযরত ঈসা (আ) এর সুসংবাদ এবং আমার মায়ের স্বপ্ন-যখন তিনি আমাকে ভূমিষ্ঠ করেছিলেন তখন তিনি দেখেছেন যে, তার গর্ভ থেকে আর্ভিভূত হয়েছে এক উজ্জ্বল আলো যার দ্বারা সিরিয়ার রাজপ্রসাদসমূহ আলোকিত বা হয়েছে।"

মায়সারাতুল ফজর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম: হে আল্লাহর রাসূল। আপনি কখন থেকে নবী ছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, আদম (আ) যখন আত্মা ও শরীর-এর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করছিলেন।"

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) যে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ছিলেন তা উপরে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আমরা জানি, হযরত আদম (আ) সর্বপ্রথম মানুষ ও নবী। কিন্তু তাঁর জন্মের পূর্বেই আল্লাহ তা'আলা হযরত মুহাম্মদ (স)-কে নবীরূপে স্বীকৃতি দিয়েছেন। যদিও তিনি এ পৃথিবীতে সর্বশেষ নবী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এটাই তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের উজ্জ্বল প্রমাণ।

মহানবী (স) একজন নবী এবং রাসূল হওয়া সত্ত্বেও প্রথম মুসলমান হওয়ার জন্য আদিষ্ট হয়েছেন, যা অন্যান্য নবী-রাসূল থেকে স্বতন্ত্র। সুতরাং এ স্বতন্ত্রতা নবীদের মধ্যে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বই বহন করে।

আরো পড়ুন: রিসালাত নবুওয়াত রিসালাত ও নবুওয়াত-এর পরিচয়

৩. মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মুজিযা তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ:

 আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম (আ) থেকে নিয়ে হযরত মুহাম্মদ (স) পর্যন্ত অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের সত্যতা প্রমাণ ও মানুষকে সৎপথের সহায়ক শক্তিরূপে তাঁদের প্রত্যেককে কোন না কোন অলৌকিক প্রমাণ বা মুজিযা দান করেছেন। সেগুলো তাঁদের নবুওয়াতের পক্ষে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে কাজ করেছে। সকল যুগে রিসালাতের সত্যতা প্রমাণ ও হিদায়াতের পথ সুগম করে ঈমানী সফলতা আনয়নে মুজিযার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু তাঁদের সকলেরই মুজিযা ছিল তৎকালীন সময়ের জন্য। তাঁদের তিরোধানের সাথে সাথে তাঁদের মুজিযারও অবসান ঘটেছিল। যেমন- হযরত মূসা (আ)-এর লাঠি যা সাপে পরিণত হত, হযরত ঈসা (আ) মাটির টুকরায় ফুঁ দিলে পাখি হয়ে উড়ে যেত ইত্যাদি।

হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াতী জীবনে অসংখ্য মুজিযা সংঘটিত হয়েছিল। তাঁর সবচেয়ে বড় মুজিযা হচ্ছে, আল-কুরআন। উম্মী হওয়া সত্ত্বেও আল-কুরআনের মত গ্রন্থ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর উপর নাযিল হওয়াটাই এত বড় মুজিযা যে, তাঁর রাসূল হওয়ার উপর বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য এটাই যথেষ্ট। আল-কুরআনকে তিনি সর্বসমক্ষে প্রমাণ হিসেবে বিরোধীদেরকে-এর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রকাশ্যে আহবান করেছিলেন। কিন্তু কেউই আল-কুরআন এর মতো একটি গ্রন্থ রচনা তো দূরের কথা, আল-কুরআনের অনুরূপ একটি ক্ষুদ্র সূরাও রচনা করতে সক্ষম হয়নি। আল-কুরআনে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মুজিযার সঙ্গে মোকবিলা করার জন্য অমুসলিমদের আহবান করে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন: 

আমি আমার বান্দার প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার অনুরূপ একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে আহসান কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।" (সূরা আল-বাকারা: ২৩)

এই আয়াতটি আল-কুরআনের অন্যতম চিরন্তন মুজিযা এবং অবিশ্বাসীদের প্রতি চিরন্তন চ্যালেঞ্জ। আল-কুরাআন সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থ এবং কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। আল-কুরআন মহানবী (স)-এর শ্রেষ্ঠ মুজিযা যা চিরস্থায়ী। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মুজিযার চিরস্থায়িত্ব তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের দলীল বহন করে।

৪. হযরত মুহাম্মদ (স) ছিলেন খাতামুল আম্বিয়া:

এটা নবীগণের উপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, তিনিই নবুওয়াতের ধারা গতমকারী। হযরত আদম (আ) যখন আত্মা ও শরীর এ দুয়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করছিলেন তখন তিনি নবী ছিলেন। তিনি মানব সমাজের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বনি আদম। প্রত্যেক নবীর জীবন ব্যবস্থা বা শরীআত ছিল স্বল্প সময়ের জন্য। একজন নবীর তিরোধন হয়ে গেলে আরেকজন নবী নতুন বিধান নিয়ে আবির্ভূত হতেন। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (স) যে বিধান নিয়ে এসেছেন, তা কিষানত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে। আর অন্যান্য নবীগণ কোন গোত্র বা দেশের জন্য আবির্ভূত হতেন এবং তাসের তিরোধানের সাথে সাথে সেই শরীআত রহিত হয়ে যেত। কিন্তু সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স) সকল যুগের সকল জাতির মানুষের হিদায়েতের জন্য আবির্ভূত হয়েছেন। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াত সর্বকালের সকল যুগের মানুষের হিদায়াতের জন্য উপযোগী হওয়াটা অন্যান্য নবীদের উপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে।

৫. নবীদের প্রতি আল্লাহর সম্বোধন

আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম (আ) থেকে নিয়ে আম্বিয়ায়ে কিরামগণের নাম ধরে সম্বোধন করেছেন কিন্তু কোথাও হযরত মুহাম্মদ (স)-কে নাম ধরে সম্বোধন করেননি। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:

"আমি তোমার প্রতি ওহী পাঠিয়েছি, যেমন ওহী পাঠিয়েছিলোম নূহের প্রতি এবং সে সমস্ত নবী- রাসূলের প্রতি যারা তার পরে প্রেরিত হয়েছে। আর ওহী পাঠিয়েছি ইসমাঈল, ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার সন্তানবর্গের প্রতি এবং ঈসা, আইয়ুব, ইউনুস, হারুন ও সুলাইমানের প্রতি। আর আমি দাউদকে দান করেছি যাবুর।" (সুরা আন-নিসা: ১৬৩)

আল-কুরআনের যে সকল স্থানে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নাম উল্লিখিত হয়েছে, সেখানে তাঁকে নাম ধরে সম্মোধন করা হয়নি। বরং সেখানে তাঁর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন।

"মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নয়, বরং সে আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী।" (সূরা আল-আহযাব: ৪০)

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ

"মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল, তার সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর আর নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদারত দেখবে।" (সূরা আল-ফাতহ:  ২৯)

আল্লাহ তা'আলা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-কে যখনই 'সম্বোধন করেছেন, তখন তাকে হে নবী বা হে রাসূল বলে সম্বোধন করেছেন। কখনো নাম ধরে সম্বোধন করে বলেননি যে, (হে মুহাম্মদ)। এমনকি রাসূলের সামনে কন্ঠস্বর উঁচু না করার এবং একে অপরের সাথে যে রকমভাবে উঁচু স্বরে কথা বলে এবং নাম ধরে ডাকে সেরূপ তাঁর বেলায় করতে উম্মতদেরকে নিষেধ করেছেন, যা অন্যান্য নবীদের বেলায় নিষিদ্ধ ছিল না। এতে রাসূল (স)-এর উচ্চ মর্যাদা এবং অন্যান্য নবী-রাসূলের থেকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়।

আরো পড়ুন: শিরক কী শিরকের প্রকারভেদ  শিরকের কারণ ব্যাখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত

৬. কিয়ামত দিবসে নবীদের নেতা নির্বাচিত হওয়া তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ 

যখন কিয়ামত দিবস অনুষ্ঠিত হবে, তখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) সকল নবীর নেতা বা ইমাম নির্বাচিত হবেন এবং তাঁদের খতীব হবেন। তাঁদের সুসংবাদদাতা হবেন। তাঁদের নাচায়াতকারী হবেন। আর এটা হবে তাঁর জন্য সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা।

তিরমিযী শরীফের হাদীসে বর্ণিত আছে। রাসূল (স) বলেন-

"কিয়ামত দিবসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আমাকে উঠানো হবে, যখন তারা একত্রিত হবে তখন আমি তাদের খতীব হব, যখন তারা নিরাশ হয়ে যাবে তখন আমি তাদের সুসংবাদদাতা হব, প্রশংসার পতাকা সেদিন আমার হাতে থাকবে। আমি আদম সন্তানদের মধ্যে আল্লাহর কাছে বেশী সম্মানিত হব, এতে গর্বের কিছু নেই।"

 অপর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল (স) বলেছেন। "কিয়ামত দিবসে আমি নবীগণের নেতা হব এবং তাদের খতীব হব এবং তাঁদের শাফায়াতকারী হব। এতে আমার গর্ব নেই।” (ইমাম আহমদ, তিরমিযী, হাকেম)।

যখন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, তখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) সকল নবীর নেতা বা ইমাম নির্বাচিত হবেন এবং তাঁদের খতীব হবেন। তাদের সুসংবাদদাতা হবেন। তাঁদের শাফায়াতকারী হবেন।

৭. অন্যান্য নবীর তাঁর পতাকাতলে সমবেত হওয়া

কিয়ামত দিবসে সকল নবীর হযরত মুহাম্মদ (স)-এর পতাকাতলে সমবেত হওয়া তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। কিয়ামত দিবসে লোকজন তথা নবীগণ তাঁর পতাকতলে সমবেত হবেন। আর এটা হবে তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা। হযরত ওবাদা ইবন সামেত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স) বলেছেন। "আমি কিয়ামত দিবসে মানবজাতির নেতা হব, এতে আমার কোন গর্ব নেই। কিয়ামত দিবসে সবাই আমার পতাকা তলে অবস্থান করবে।"

হযরত মুহাম্মদ (স)-এর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে অপর একটি হাদীসে বর্ণিত। তিনি বলেন,

"আমাকে সকল নবীর উপর ছয়টি বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আমার পূর্বে অন্য কাউকে তা দেওয়া হয়নি। আমার অগ্র এবং পশ্চাতের সকল অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। মালে গণীমত (যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ) আমার জন্য বৈধ করা হয়েছে, আমার পূর্বে কারো জন্য তা বৈধ ছিল না। আমার উম্মতকে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত করা হয়েছে। জমীনকে আমার জন্য মসজিদ এবং পবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে। আমাকে হাউজে কাওছার দান করা হয়েছে। শত্রুর অন্তরে ভয়-ভীতির দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, পৃ. ৪৬৯)

৮. জান্নাতের দরজায় সর্বপ্রথম আঘাত করা তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ 

পারলৌকিক জীবনে তিনি সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজায় আঘাত দিবেন এবং তার জন্য সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর পূর্বে অন্য কারো জন্য জান্নাতের দরজা খোলা হবে না। হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে, হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন:

"কিয়ামত দিবসে আমার অনুসারী সংখ্যা অন্যান্য নবীর অনুসারীদের তুলনায় বেশি হবে। আর আমি হব জান্নাতের দরজায় আঘাতকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি।" (মুসলিম)

হযরত মুহাম্মদ (স) সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যাকে পুলসিরাত পার হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। মহানবী (স)-এর এ সকল বিরল সম্মান ও মর্যাদা যা উপরে আলোচনা। করা হয়েছে। এ সবগুলোই সকল নবীদের উপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে নবী-রাসূলগণের যে শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিয়েছেন, হযরত মুহাম্মদ (স)-এর শানেই তা বিশেষভাবে প্রযোজ্য।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url