হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াতের প্রমাণ

আজ এই আর্টিকেলটিতে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াত সম্পর্কে বর্ণনা দিতে পারবেন; আল কুরআনের আলোকে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াত প্রমাণ করতে পারবেন; হযরত মুহাম্মদ (স)-এর অলৌকিক ঘটনাবলীর মাধ্যমে তাঁর নবুওয়াত প্রমাণ করতে পারবেন; মিরাজ বা ঊর্ধ্বগমনর ঘটনার দ্বারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর নবুওয়াতের প্রমাণ দিতে পারবেন; হাদীস দ্বারা নবুওয়াতের প্রমাণ করতে পারবেন; যুক্তিভিত্তিক প্রমাণ দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াত প্রমাণ করতে পারবেন।

হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াতের প্রমাণ

মানব জাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (স) পর্যন্ত অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন।

আল-কুরআনে বেশ কিছু সংখ্যক নবী-রাসূলের বর্ণনা এসেছে। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াত সম্পর্কে আল-কুরআনে দীর্ঘ আলোচনা ও যুক্তি-প্রমাণ রয়েছে। তাছাড়া হাদীসে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াতের অনুকূলে অসংখ্য যৌক্তিক প্রমাণ রয়েছে।

আল-কুরআন দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াতের প্রমাণ। মহান আল্লাহ তা'আলা কুরআনে ঘোষণা করেছেন:

"আমি তো তোমার নিকট ওহী পাঠিয়েছি যেমন ওহী পাঠিয়েছিলাম নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি।" (সূরা আন-নিসা: ১৬৩)

মহান আল্লাহ আরও বলেন-

"এছাড়া এমন অনেক রাসূল পাঠিয়েছি যাদের ইতিবৃত্ত আমি তোমাকে ইতোপূর্বে শুনিয়েছি এবং এমন অনেক রাসূল পাঠিয়েছি যাদের বৃত্তান্ত তোমাকে শুনাইনি। আর আল্লাহ মূসার সাথে সরাসরি কথোপকথন করেছেন। আমি সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের প্রেরণের পর আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করার কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে। আল্লাহ পাক পরাক্রমশালী।" (সূরা আন-নিসা: ১৬৪-১৬৫)

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন:

"মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নয়, বরং সে আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।" (সূরা আল-আহযাব: ৪০)

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন।

"আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।" (সূরা সাবা: ২৮)

কুরআনে আরো বর্ণিত আছে:

"সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করে চালাতে চেষ্টা করত, আমি অবশ্যই তার ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং কেটে দিতাম জীবন-ধমনী। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তাকে রক্ষা করতে পারে। ( সূরা আল-হাককাহ ৪৪-৪৭ ) 

এ দ্বারা প্রমাণিত হয়, মহানবী (স) ওহী লাভ করেছেন।

আরো পড়ুন: নিফাক কি মুনাফিকের শ্রেণী বিভাগ মুনাফিকের আলামতসমূহ মুনাফিকের পরিণতি 

হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়তের প্রমাণ

মহানবী (স)-এর মুজিযা বা অলৌকিকতা তাঁর নবুওয়াতের স্পষ্ট প্রমাণ। হযরত মুহাম্মদ (স) নবুওয়াতের দাবি করেছেন এবং স্বীয় দাবীর অনুকূলে অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা ও বিষয় প্রদর্শন করেছেন। তাঁর এসব অলৌকিক ঘটনা বা মুজিযা দু'ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। যথাঃ

১. তিনি আল-কুরআন প্রচার করেছেন এবং আরবের বড়-বড় পণ্ডিতদেরকে তা দ্বারা চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং আরবের বড়-বড় পণ্ডিতদেরকে তা হারা চ্যালেঞ্জ করেছেন। অথচ তারা বিজ্ঞ পণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও আল- কুরআনের অনুরূপ কোন বাকা বা সূরা রচনা করতে সক্ষম হয়নি. যদিও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছিল। আল-কুরআনে এ মর্মে ঘোষণা দেয়া হয়েছে: 

"আমি আমার বান্দার প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার অনুরূপ একটি সূরা রচনা করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে আহবান কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।" (সূরা আল-বাকারা :২৩) 

বলাবাহুল্য, আল-কুরআনের এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাহস কোন যুগের মানুষের পক্ষেই সম্ভব হয়নি বরং সকলেই স্বীকার করে নিয়েছে, ليس هذا من كلام البشر াৎ 'এটা কোন মানুষের কথা নয়।' আল-কুরআনের এ অলৌকিকতাই হযরত মুহাম্মদ (স) -এর নবুওয়াতের প্রমাণ।

২. মহানবী (স) সাধারণ নিয়মের বাইরে এমন অনেক অলৌকিক ঘটনা প্রদশর্ন করেছেন যা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। যেমন: আঙ্গুলের ইশারা দ্বারা চন্দ্র দ্বিখণ্ডিতকরণ, উৎপীড়িত উস্ত্রীর অভিযোগ তাঁর কাছে দায়ের এবং পাথরের সাথে, গাছ-পালার সাথে এমনকি চতুষ্পদ প্রাণীর সাথে তাঁর কথা বলা, তাঁর বিরহে খেজুর গাছের শুকনা কাজের ক্রন্দন করা (যার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তিনি মসজিদে নববীতে খুতবা দান করতেন) তাঁর হাতেই স্বল্প খাদ্যে বহু লোকের তৃপ্তির সাথে ক্ষুধা নিবৃত হওয়া, সামান্য পানি দ্বারা বহু লোকের অযু, গোসলসহ ও তৃষ্ণা নিবারণ হওয়া, তাঁর উপর মেঘমালার ছায়াদান ইত্যাদি। এসব বাস্তব ঘটনা হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াতের প্রমাণ বহন করে।

হযরত মুহাম্মদ (স) উম্মী হওয়া তাঁর নবুওয়াতের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ 

আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেনঃ

"তুমি তো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করোনি এবং নিজ হাতে কোন কিতাবও লিখনি যে, মিথ্যাবাদীরা সন্দেহ পোষণ করবে।" (সূরা আল-আনকাবুত: ৪৮)

এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, প্রাচীনাকালের আসমানী কিতাবসমূহের শিক্ষা, পূর্ববর্তী নবীদের জীবন কাহিনী, অতীতের ধর্মের আকীদা-বিশ্বাস, আদিম জাতিসমূহের ইতিবৃত্ত, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি ও নৈতিক শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে যে গভীর বিস্তৃত জ্ঞানরাজি উম্মী নবীর মুখ দিয়ে নিঃসৃত হয়েছে, তা ওহী ছাড়া আর কোন উপায়ে তাঁর অবগত হওয়া সম্ভব ছিল না। হযরত মুহাম্মদ (স) যদি উম্মী না হতেন, তাহলে বাতিলপন্থীরা সন্দেহ করতো যে, তাঁর কথাগুলো জ্ঞান প্রসূত। কিন্তু নবী উম্মী হওয়াতে এ ধরনের কোন সন্দেহের আদৌ কোন অবকাশ নেই।

আরো পড়ুন: তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ ও তাওহীদের পরিচয়

মিরাজ বা ঊর্ধ্বগমন মহানবী (স)-এর নবুওয়াতের প্রমাণ 

আল-কুরআনে ঘোষিত হয়েছে,

"পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মাসজিদুল হারাম থেকে আল-মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি বরকতময় করেছিলাম, তাকে আমার নিদর্শন দেখাবার জন্য। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।" (সূরা আল-ইসরা: ১)

৬২০ খ্রিস্টাব্দের রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে নবী করীম (স) আল্লাহ তা'আলার আহবানে বোরাক যোগে মসজিদে হারাম হতে বায়তুল মাকদিস গমন করেন। সেখান থেকে মানব জ্ঞানের সীমা অতিক্রম করে ঊর্ধ্বজগতে গমন করে আরশ, কুরসী, লাওহ-কলম, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি পরিভ্রমণ শেষে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে আবার ভূ-পৃষ্ঠে ফিরে আসেন। এ ঘটনাটি মহানবী (স) এর নবুওয়াতের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ।

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন:

"নক্ষত্রের কসম, যখন তা অস্ত যায়। তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয় এবং সে মনগড়া কথাও বলে না। এ তো ওহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়। তাকে শিক্ষা দেয় শক্তিশালী প্রজ্ঞা সম্পন্ন, সে নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিল, তখন সে ঊর্ধ্ব দিগন্তে, অত:পর সে তার নিকটবর্তী হল, অতি নিকটবর্তী। ফলে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি যা ওহী করবার তা ওহী করলেন, যা সে দেখেছে, তার অন্তর তা অস্বীকার করেনি। সে যা দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে তার সাথে বিতর্ক করবে? নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল প্রান্তবর্তী বরই গাছের নিকট, যার নিকট অবস্থিত জান্নাতুল মাওয়া।" (সূরা আন-নাজম: ১-১৫)।

মহানবী (স)-এর পরিচ্ছন্ন জীবন তাঁর নবুওয়াতের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ

মহানবী (স)-এর শৈশবকাল থেকে নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত ৪০ বছর এক বাস্তব জীবন আরববাসীদের সাথেই কাটিয়েছেন। মহানবী (স)-এর জীবন তাদের সামনে দ্বি-প্রহরের সূর্যের মতো ঝলমল করছে। তাঁর কথাবার্তা, চাল-চলন, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেন-দেন, বিয়ে-শাদী, সামাজিকতা ইত্যাদি যাবতীয় কাজ-কর্ম তাদের সাথেই সম্পর্কিত ছিল। তাঁর জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ও তাদের অজানা ছিল না।

• মহানবী (স)-এর নবুওয়াত-পূর্ববর্তী জীবনের ঘটনাবলী, তাঁর চরিত্র-মাধুর্য, সুন্দর কার্যাবলী, সর্বাত্মক সততা, সত্যবাদিতা, মানবতাবোধ, দয়া-মায়া, উন্নত চিন্তা, সাহসিকতা, প্রতিভা, জ্ঞান-প্রজ্ঞা, দৃঢ়চিত্ততা ইত্যাদি অতীব উচ্চাঙ্গের সুকুমার বৃত্তি এবং নিরেট নিরক্ষতার প্রেক্ষাপটে এমন আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিতভাবে ওহী নাযিল হওয়া নবুওয়াতের সত্যতার এমন এক জ্বলন্ত প্রমাণ, যাকে অস্বীকার করা যে কোন বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন লোকের পক্ষে অসম্ভব।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াত পরবর্তী জীবন নবুওয়াতের প্রমাণ 

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াত পরবর্তী জীবন ও নবুওয়াত পূর্ববর্তী জীবনের ন্যায় পরিচ্ছন্ন। তিনি অতীব উচ্চাঙ্গের জীবনাচার, মুমিনদের জীবনে তাঁর শিক্ষার বিপ্লবাত্মক প্রভাব, সুস্পষ্ট যুক্তিযুক্ত আকীদা বিশ্বাস, অত্যন্ত নিখুঁত ও পরিচ্ছন্ন ইবাদাত, উৎকৃষ্টতম চরিত্র এবং মানব জীবনের জন্য সর্বোত্তম নীতিমালা ও বিধান শিক্ষাদান কথায়-কাজে পূর্ণ সঙ্গতি ও সামঞ্জস্য এবং সব ধরনের বিরোধিতা ও বাধা বিপত্তির মোকাবিলায় অটুট মনোবল ও অবিচল নিষ্ঠা, আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা ইত্যাদি অতুলনীয় বৈশিষ্ট্য তাঁর নবুওয়াতের সুস্পষ্ট প্রমাণ।

নবীর বাস্তব ভিত্তিক সুষম নীতিমালা প্রবর্তন তাঁর নবুওয়াতের প্রমাণ

নবী (স)-এর বাস্তব ভিত্তিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে সুষম নীতিমালা প্রবর্তন, যা আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে কল্পনাতীত ছিল। এই উম্মী ব্যক্তিটি অন্ধকার যুগে জন্মগ্রহণ করেও আধুনিক যুগের প্রতিষ্ঠাতা ও সারা দুনিয়ার মহান নেতা হিসেবে স্বীকৃত। তিনি কেবল বিশ্বাসীদেরই নেতা নন বরং অবিশ্বাসীরাও তাঁকে শ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে স্বীকার করেন। কেননা তিনি বিশ্ববাসীর চিন্তাধারার মোড় পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তিনি তাদেরকে সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেন। তিনি ভাববাদিতা, বস্তুবাদিতা, সৃষ্ট বস্তুর পূজা ও বৈরাগ্যবাদ থেকে যুক্তিবাদ ও বাস্তববাদ এবং যথার্থ আল্লাহ-ভীতি ভিত্তিক ধার্মিকতার দিকে ফিরিয়ে এনেছেন। তিনি বিশ্বের প্রচলিত চিন্তাধারাকে পাল্টে দিয়ে জীবনের সর্বক্ষেত্রে যেমন অর্থনীতি, সামজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, যুদ্ধনীতি, কুটনীতি এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সকল দিক ও বিভাগের জন্য প্রবর্তন করেছেন সুষম মূলনীতি, আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার চালিকানীতি, যা পূর্বে বিশ্ব মানবের কাছে অকল্পনীয় ছিল। আর এটা-আল্লাহ প্রদত্ত নবুওয়াতের জ্ঞান ছাড়া আর কিছুতেই সম্ভব ছিল না। সুতরাং মহানবী (স)-এর বাস্তব ভিত্তিক সুষম নীতিমালা প্রবর্তন তাঁর নবুওয়াতের উৎকৃষ্ট দলীল।

নবী (স)-এর বাস্তব ভিত্তিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে সুষম নীতিমালা প্রবর্তন, যা আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে কল্পনাতীত ছিল। তিনি কেবল বিশ্বাসীদেরই নেতা নন বরং অবিশ্বাসীরাও তাঁকে শ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে স্বীকার করেন।

আরো পড়ুন: প্রথম মানব ও নবী হযরত আদম (আ)

জাহিলিয়া যুগের সকল অন্ধকারের অবসান ঘটিয়ে বৈপ্লবিক পবির্তন সাধন মহানবী (স)-এর নবুওয়াতের প্রমাণ

মহানবী হযরত মুহম্মদ (স) প্রায় চল্লিশ বছরকাল জাহেলী যুগে অতিবাহিত করেছেন। যেখানে কোন নীতি নৈতিকতার বালাই ছিল না। সমাজ অন্যায়, অবিচার, নৈরাজ্য, মিথ্যা, ঝগড়া, বিবাদ ও যুদ্ধ বিগ্রহে ভরে গিয়েছিল। তখন সমগ্র বিশ্বে মানবতার চরম অবক্ষয় ঘটেছিল। যে জাতির মধ্যে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন সে জাতির কোন শিক্ষা, সংস্কৃতি, তাহযীব- তামাদ্দুন ও মানবতাবোধ বলতে কিছুই ছিল না। এমন একটি জাতির মধ্যে জন্যগ্রহণ করে এবং বড় হয়েও তিনি অতীব পূত-পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করার পর তাঁর জীবনে আসে এক মহাবিপ্লব। চারদিকের ঘূর্ণায়মান নিশ্চিদ্র অন্ধকারের মাঝে মুক্তির আলোক-রশ্মি তিনি নিয়ে এলেন। তিনি তাদের প্রতিটি লোকের চরিত্র এমনভাবে গঠন করলেন এবং তাদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখায় এমনভাবে শিক্ষিত করে তুললেন যে, তারা তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে সমগ্র বিশ্বকে ঈমান ও ইসলামের অনিন্দ্য সুন্দর জ্যোতির আলোকে আলোকিত করে তোলেন। সমকালীন বিশ্বের অধিকাংশ সচেতন মানুষ স্বেচ্ছায় তাঁর আদর্শের অনুসারী হয়েছিল। আর গোটা দুনিয়ায় তার আদর্শের বিপ্লব ঘটেছিল। এমন ব্যক্তিত্ব নবুওয়াত ব্যতীত কল্পনাই করা যায় না।

বিশ্বের সকল মানুষ থেকে শ্রেষ্ঠ গুণাবলীর অধিকারী হওয়া তাঁর নবুওয়াতের প্রমাণ

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) মানবতার ইতিহাসে এক আত্যাশ্চর্য ও সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব যার তুলনা ইতিহাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পাওয়া যায় না। ইতিহাসে যারা মহামণীষী হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন তাদেরকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মুকাবিলায় দাঁড় করালে তাঁর সামনে ক্ষুদে বামুনটির মতো মনে হবে। বিশ্ব মণীষীগণের মধ্যে একজনও এমন খুঁজে পাওয়া যাবে না যার শ্রেষ্ঠ ও উন্নত গুণাবলী জীবনের একটি বা দু'টি বিভাগ ছাড়িয়ে আরো বিস্তৃত হতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (স) ই কেবল ব্যতিক্রম। তাঁর মধ্যে সমস্ত গুণাবলী একত্রিত হয়েছে। এ ধরনের সর্বগুণের অধিকারী দ্বিতীয় আর কোন ব্যক্তির নাম ইতিহাসের পাতায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই এমন ব্যক্তিত্ব নবী না হয়ে পারেন না।

সর্বোপরি একজন লোক মিথ্যা নবুওয়াতের দাবি করবেন আর আল্লাহ তা'আলা তাঁর চরিত্রে এতসব বিভিন্ন প্রতিভা ও গুণের সমাবেশ ঘটাবেন এবং দীর্ঘ তেইশ বছর পর্যন্ত তাঁকে সুযোগ দিয়ে দুনিয়ায় প্রচলিত সমস্ত মতবাদের উপর তাঁর মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করবেন, শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য করে তাঁকে জয়ী করবেন এবং তাঁর প্রবর্তিত মতবাদকে চিরস্থায়ী করে দিবেন, তা কখনো হতে পারে না। এ সব কথা কোন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন লোক চিন্তাও করতে পারে না। কাজেই এটা দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে, হযরত মুহাম্মদ (স) আল্লাহ প্রেরিত নবী-রাসূল ছিলেন। তাঁর নবুওয়াত প্রাপ্তির ব্যাপারে কোন রকম সন্দেহ ও সংশয়ের অবকাশ নেই। মুসলিম পণ্ডিতদের সর্বসম্মত অভিমত হচ্ছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াত অস্বীকারকারীরা কাফির, তাদের কোন নেক আমল আল্লার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। তারা অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।

আল্লাহ হাফেজ**

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url