গণতন্ত্রের গুণাবলী গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ, সাফল্যের শর্তাবলী ও সীমাবদ্ধতা

আজ এই আটিকেলটিতে গণতন্ত্রের গুণাবলী ব্যাখ্যা করতে পারবেন, গণতন্ত্রের সফলতার শর্তাবলী ব্যাখ্যা করতে পারবেন, গণতন্ত্রের সফলতার শর্তাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।


ভূমিকা

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্বপক্ষে ও বিপক্ষে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যুক্তিতর্কের অবতারণা সত্বেও গণতন্ত্র গ্রহণীয় কিংবা বর্জনীয় সে সম্পর্কে কোন স্থায়ী সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের পক্ষে অদ্যাবধি সম্ভব হয় নি। জনলক, জন স্টুয়ার্ট মিল, বেন্থাম, টকভিল, হার্বার্ট স্পেনসার, লাস্কি, বার্কার, ব্রাইস প্রমুখ রাষ্ট্রনীতিবিদরা গণতন্ত্রকে 'সর্বশ্রেষ্ঠ শাসন' বলে প্রমাণ করার জন্য নানা প্রকার যুক্তি প্রদর্শন করেছেন। অন্যদিকে প্লেটো, এরিস্টটল, লেকী, উইলি, ফাগুয়ে, কার্লাইল, নীটসে, হল, প্রেসকট প্রমুখ পন্ডিতগণ ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গণতন্ত্রকে চরমভাবে সমালোচনা করে এ শাসন ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো তুলে ধরেন।

আরো পড়ুন: গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্র

গণতন্ত্রের গুণাবলী

গণতন্ত্রের পক্ষের রাষ্ট্রনীতিবিদেরা গণতন্ত্রের নিম্নলিখিত গুণাবলীর জন্য এর স্বপক্ষে তাঁদের যুক্তি তুলে ধরেনঃ

সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার গুরুত্ব : 'সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা'-এ তিনটি আদর্শের উপর ভিত্তি করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। গণতন্ত্রে সকলেই সমান; সমঅধিকারের নীতিটি শুধু তত্ত্বগতভাবে নয়, বাস্তবেও গৃহীত হতে দেখা যায়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ধনী-গরীব, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই আইনের চোখে সমান। গণতন্ত্রে সবাই আইন দ্বারা সমভাবে সংরক্ষিত হবার সুযোগ পায় বলে প্রত্যেকে নিজ নিজ ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে। অন্যভাবে আমরা বলতে পারি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার ভোগ করতে পারে।

 ন্যায় ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা: গণতন্ত্রে ন্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠা সম্ভব। রাজনৈতিক সত্যের উপলব্ধির জন্য প্রয়োজন পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা এবং ভাব-বিনিময়। একমাত্র গণতন্ত্রেই তা' সম্ভব। এ কারণেই গণতন্ত্রকে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার উপর প্রতিষ্ঠিত শাসন ব্যবস্থা বলে অভিহিত করা হয়।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও শাসিতের সার্বিক কল্যাণ সাধন সম্ভব: শাসক ও শাসিতের স্বার্থের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে সর্বাধিক জনগণের সর্বাধিক মজাল সাধনের সমস্যাই হল সুশাসনের প্রধান সমস্যা। শাসিতকে শাসকের পদে উন্নীত করা সম্ভব হলে এ সমস্যার সমাধান করা সহজ হয়। একমাত্র গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাতেই শাসিত শাসকের পদে অধিষ্ঠিত হতে পারে বলে এ ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় শাসিতের কল্যাণ সর্বাধিক অর্জন করা যায়। কেননা, এ ব্যবস্থায় সরকারী নীতি ও কার্যাবলী শাসিতের ইচ্ছানুসারে পরিচালিত হয়, সরকার শাসিতের সমর্থনের জোরে অধিকতর শক্তিশালী হয়ে কাজে অনুপ্রাণিত হতে পারে, ব্যক্তিস্বার্থ সংরক্ষিত করে তা ব্যাপকভাবে জনস্বার্থ বৃদ্ধি করতে সমর্থ, রাষ্ট্রীয় স্বার্বভৌম ক্ষমতার অংশীদার হয়ে এ শাসনব্যবস্থা সর্বাপেক্ষা বেশী জনকল্যাণ সাধন করতে সমর্থ।

রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধির সহায়ক: গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ধনী-গরীব, অভিজাত-সাধারণ, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শাসনকার্য পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে। তাছাড়া নির্বাচনের সময় সমকালীন সমস্যাবলী সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা- সমালোচনার ফলে জনগণ রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠে; তাদের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানসিক ও চারিত্রিক উন্নতি সাধিত হয়।

দেশপ্রেম জাগরিত হয়: অনেকের মতে, একমাত্র গণতন্ত্রই জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পারে। কেননা, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রত্যেকেই অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সকলের স্বার্থ সমভাবে সংরক্ষিত হয় বলে জনসাধারণ এ ধরনের শাসনব্যবস্থাকে একান্তভাবে নিজেদের শাসন বলে মনে করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হয় এবং দেশের উন্নতির জন্য সকলেই সচেষ্ট হয়ে উঠে। গণতান্ত্রিক চেতনা যতই গভীরতা লাভ করবে জনগণ ততই ব্যক্তিস্বার্থ অপেক্ষা সামগ্রিক স্বার্থকেই প্রাধান্য দিবে।

সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ করে: গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনমতের প্রাধান্য স্বীকৃত বলে সরকার জনমতের!ভয়ে সাধারণত স্বৈরাচারী হতে পারে না। ক্ষমতাসীন দল বা গোষ্ঠী একথা ভাল করেই জানে যে, জনমতের বিরুদ্ধে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে পরবর্তী নির্বাচনে নিজেদের রাজনৈতিক ভাগ্য বিপর্যয়কে সাদরে আহবান করা।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে স্থায়ী। অনেকের মতে, স্থায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য গুণ। এরূপ শাসনব্যবস্থা জনগণের সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত বলে সরকারের প্রতি জনগণ অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদর্শন করে। ফলে এরূপ শাসনব্যবস্থা যথেষ্ট পরিমাণে স্থায়িত্ব লাভ করে।

বিপ্লবের সম্ভাবনা কম: এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা জনগণের হাতে থাকায় কোন গণতান্ত্রিক সরকার জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করতে থাকলে জনগণ অতি সহজেই ব্যালটের মাধ্যমে সে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেদের পছন্দমত সরকার গঠন করতে পারে। ফলে জনগণের অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হয়ে তা রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের আকার ধারণ করতে পারে না। এ ভাবে ব্যালটের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সরকারের পরিবর্তন সম্ভব হয় বলে এ ধরনের শাসনব্যবস্থা অনেকের নিকট কাম্য।

আরো পড়ুন: সংবিধান ও সরকার সংবিধানের সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ

গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ, সাফল্যের শর্তাবলী ও সীমাবদ্ধতা

গণতন্ত্রের সফলতার শর্তাবলী

বর্তমানকালে প্রচলিত শাসনব্যবস্থার মধ্যে গণতন্ত্র সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও সর্বোত্তম শাসনব্যবস্থা হলেও- একে যথার্থরূপে বাস্তবে রূপ দে'য়া খুব সহজ কাজ নয়। হেনরী মেইন বলেন, "সকল প্রকার সরকার ব্যবস্থার মধ্যে গণতন্ত্র সবচেয়ে কঠিন" ("Of all the forms of government, democracy is by far the most difficult")। গণতন্ত্রকে যথাযথভাবে সফল করে তুলতে হলে কতকগুলো শর্ত পালন করতে হয়। গণতন্ত্রের সাফল্যের এ সকল শর্তাবলী নিচে আলোচনা করা হলো:
গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য: গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ছাড়া গণতন্ত্রের সাফল্য কখনই আসতে পারে না। জনসাধারণকে গণতন্ত্রের মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হতে হবে, আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে অপরের মধ্যেও আত্মপ্রত্যয়ের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।

শিক্ষার প্রসার: গণতন্ত্রের সফলতার জন্য প্রয়োজন সুনাগরিকের। কিন্তু সুনাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হল নির্লিপ্ততা, ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা, সংকীর্ণ দলীয় মনোভাব। এসব প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের জন্য প্রয়োজন প্রকৃত গণতান্ত্রিক শিক্ষার। গণতান্ত্রিক শিক্ষা বলতে কেবল পুথিগত বিদ্যার্জন বুঝায় না। এ শিক্ষা হবে যথার্থ নাগরিকতাবোধ বিস্তৃতি শিক্ষা। এরূপ শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ ব্যক্তি, সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী অপেক্ষা দেশের সামগ্রিক স্বার্থকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। তারা নিজ নিজ অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ থাকে, যা গণতন্ত্রের জন্য অত্যাবশ্যক।

সু-সংগঠিত রাজনৈতিক দল ও বহুদলীয় ব্যবস্থা: বর্তমান যুগে গণতন্ত্রের সফল কার্যকারিতার জন্য দেশে সুষ্ঠু দলীয় ব্যবস্থার বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। কেননা, রাজনৈতিক দলই জনমত গঠনে সাহায্য করে। এর মাধ্যমেই সরকারকে নির্বাচকমন্ডলীর কাছে জবাবদিহি করতে হয়। এছাড়াও বহুদলীয় ব্যবস্থা গণতন্ত্রের সফলতার জন্য অপরিহার্য। একাধিক রাজনৈতিক দলের বিকাশের মাধ্যমে গণতন্ত্র আরও বেশী কার্যকর হতে পারে।

সুযোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব: গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে কার্যকর করার জন্য প্রয়োজন সুযোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের। সৎ, ন্যায়পরায়ণ, সাহসী, বিবেকবান, দূরদর্শী এবং নিষ্ঠাবান নেতৃত্বই কেবল পারে গণতন্ত্রকে বাস্তব রূপ দিতে। অধ্যাপক গেটেল বলেন, গণতন্ত্রের সাফল্য শাসকবৃন্দের দক্ষতা ও জনগণের সন্তুষ্টির উপর নির্ভরশীল।"

সৎ, সুদক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ সরকারী কর্মচারী: শাসনকার্য সুদক্ষভাবে পরিচালনার জন্য যে শিক্ষা ও বিশেষ জ্ঞানের দরকার হয়, অনেক সময়ই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধিগণের তা থাকে না। তাই শাসনকার্য পরিচালনার জন্য সরকারী কর্মচারীদের উপর তাদের বিশেষ ভাবে নির্ভর করতে হয়। কিন্তু সরকারী কর্মচারীরা যদি সৎ, সুদক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ এবং জনকল্যাণকামী না হন, তাহলে গণতন্ত্র তার ইস্পিত লক্ষ্যে কখনই উপনীত হতে পারবে না।

আইনের শাসন: গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম শর্ত হচ্ছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আইনের চোখে সবাইকে সমানভাবে দেখতে হবে। প্রত্যেকটি লোক যেন মনে করতে পারে যে, সে আইনের ছত্রছায়ায় একান্ত নিরাপদে বাস করছে। কারও খেয়াল ও মর্জির খেসারত যেন অন্য কাউকে দিতে না 

আরো পড়ুন: হযরত মুহাম্মদ (স) সর্বশ্রেষ্ঠ নবী

সহিষ্ণুতা ও সমঝোতা মনোভাব: গণতন্ত্রে সকলেই যাতে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ মতাদর্শ প্রচার করতে পারে, ইচ্ছানুযায়ী যে-কোন আদর্শকে সমর্থন করতে পারে, সেজন্য অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন। এ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন আত্মসংযম এবং সহিষ্ণুতার। গণতন্ত্রে সরকার ও বিরোধীপক্ষকে সহিষ্ণু হতে হয় এবং আপোসধর্মী মনোভাব প্রদর্শন করতে হয়। সরকারকে মান্য ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা বিরোধী পক্ষের যেমন কর্তব্য, তেমনি বিরোধী পক্ষের মতামতকে যথাযোগ্য মূল্য দেয়াও সরকারের কর্তব্য। এ রকম পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া না থাকলে গণতন্ত্র কখনই সফল হতে পারে না।

রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার: গণতন্ত্রের সফলতার জন্য নাগরিকদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারের শুধু স্বীকৃতিই যথেষ্ট নয়, সেগুলোকে বাস্তবে কার্যকরী করা প্রয়োজন। এ জন্য অবশ্যই বাক্ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, চলাফেরা করার স্বাধীনতা, সংঘ-সমিতি গঠনের স্বাধীনতা, সর্বোপরি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। সেই সাথে প্রয়োজন জান-মাল রক্ষার অধিকার, ধর্মের অধিকার ও সামাজিক সাম্যের অধিকার ইত্যাদি।

অর্থনৈতিক সাম্য: গণতন্ত্রকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক সাম্যের প্রতিষ্ঠা। যে সমাজে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য বিদ্যমান, দেশের সম্পদ কতিপয় পুঁজিপতির নিয়ন্ত্রণাধীন, সেখানে মানুষ কখনই সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক জীবনযাপন করতে পারে না। লাস্কি যথার্থই বলেন, "গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য জনগণের মধ্যে ব্যাপক ধনবৈষম্য দূর করা দরকার।"

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ: অনেকে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণকে গণতন্ত্রের সফলতার অন্যতম শর্ত বলে মনে করেন। তাদের মতে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হলে জনগণ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। ফলে তাদের রাজনৈতিক জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।

লিখিত সংবিধান: লেকী, হেনরী মেইন প্রমুখ লেখক গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য লিখিত সংবিধানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেন, সংবিধান লিখিত হলে সাধারণ মানুষ নিজেদের অধিকার, কর্তব্য, সরকারী ক্ষমতার সীমা-এসব সম্পর্কে সম্যক অবহিত হতে পারবে। ফলে সরকার সহজে স্বৈরাচারী হতে পারবে না।

জাতীয় স্বার্থের প্রাধান্য ও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা: জাতীয় স্বার্থের প্রাধান্য কোন সমাজে প্রতিষ্ঠিত না হলে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর অবাধ প্রতিযোগিতায় জাতীয় কল্যাণ ব্যাহত হতে পারে এবং এর ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্ষতবিক্ষত হতে বাধ্য। তাই গণতন্ত্রের সফলতার জন্য প্রয়োজন জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা।

স্বাধীন বিচার বিভাগ: স্বাধীন বিচার বিভাগ গণতন্ত্রের সফলতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সাথে গণতন্ত্রের কার্যকারিতা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।

ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ: সরকারের ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব এর বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে স্বতন্ত্রীকৃত না থাকলে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য বিঘ্নিত হয়। এ সম্পর্কে ফরাসী রাষ্ট্রচিন্তাবিদ মন্টেঙ্কু তার প্রসিদ্ধ 'The Spirit of Laws' গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তার আলোচনা থেকে এটা বুঝা যায় যে, গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ প্রয়োজন।

বিচার বিভাগের প্রাধান্য: মৌলিক মানবাধিকারের সংরক্ষণের জন্য বিচার বিভাগের প্রাধান্য অনস্বীকার্য। বিচার বিভাগের প্রাধান্য সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ করে। বিচার বিভাগের প্রাধান্য রক্ষার জন্য বিচার বিভাগকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। বিচার বিভাগের প্রাধান্যকে গণতন্ত্রের সফলতার অন্যতম শর্ত মনে করা হয়।

সারকথা

সমাজব্যবস্থার মূল লক্ষ্য যদি মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মনুষ্যত্ব বিকাশ হয়, তবে গণতন্ত্র বাস্তবিক অর্থেই শ্রেষ্ঠ শাসনব্যবস্থা। গণতন্ত্র মানুষকে মহত্তর জীবনের স্বাদ গ্রহণের উপযুক্ত করে, সমাজ জীবনে সৃষ্টি করে সুস্থ পরিবেশ। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নাগরিক স্বাধীনভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে পারে। জনগণ রাজনৈতিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত হয়ে উঠে।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্বপক্ষে ও বিপক্ষে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যুক্তিতর্কের অবতারণা সত্ত্বেও গণতন্ত্র গ্রহণীয় কিংবা বর্জনীয় সে সম্পর্কে কোন স্থির সিদ্ধান্ত উপনীত হওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের পক্ষে অদ্যাবধি সম্ভব হয়নি। এরিস্টটল, জন স্টুয়ার্ট মিল, বেস্থাম, টকভিল, হার্বার্ট স্পেনসার, লাস্কি, বার্কার, ব্রাইস প্রমুখ রাষ্ট্রনীতিবিদেরা গণতন্ত্রকে 'সর্বশ্রেষ্ঠ শাসন' বলে প্রমাণ করার জন্য নানা প্রকার যুক্তি প্রদর্শন করেছেন। অন্যদিকে লেকী, উইলি, ফাগুয়ে, কার্লাইল, নীটসে, হল, প্রেসকট প্রমুখ পন্ডিতগণ ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গণতন্ত্রকে চরমভাবে সমালোচনা করে এ শাসন ব্যবস্থার অসারতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url