সরকার কি সরকারের গতানুগতিক শ্রেণীবিভাগ
সরকারের গতানুগতিক শ্রেণীবিভাগের বর্ণনা করতে পারবেন।রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটল কিভাবে সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন তা ব্যাখ্যা করতে পারবেন: কিভাবে সরকারের আধুনিক শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে তা ব্যাখ্যা করতে পারবেন: গতানুগতিক ও আধুনিক শ্রেণীবিভাগের মধ্যে পার্থক্য নিরুপন করতে সক্ষম হবেন।
ভূমিকা
সরকার রাষ্ট্রের একটি মৌলিক উপাদান। রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বপালনকারী আইনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকার সার্বক্ষণিক ভাবে ক্রিয়াশীল। সরকার বলতে কোন একক প্রতিষ্ঠানকে বোঝায় না। বরং সংবিধানের অধীনে ও সমর্থনে আইনানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত সকল প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও এজেন্সীকে সরকারের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। সংবিধানে বর্ণিত আদেশাবলীকে বাস্তবায়িত করার দায়িত্বসম্পন্ন সকল প্রতিষ্ঠানের সমষ্টিবাচক অভিব্যক্তিই হল সরকার। বিভিন্ন রাষ্ট্রের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভিন্নতার কারণে সরকারের ভিন্ন ভিন্ন রূপ আমরা দেখতে পাই। বিশ্বের প্রতিটি দেশে সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ইচ্ছা প্রকাশিত ও কার্যকরী হয়। সরকারের ক্ষমতা ও কার্যাবলীকে মূলত তিনটি শাখায় ভাগ করা হয়। যথা: আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। সাধারণত আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন করে। শাসন বিভাগ প্রণীত আইন কার্যকর করে। বিচার বিভাগ আইনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং আইন অমান্যকারীকে শাস্তি প্রদান করে। এভাবে তিনটি বিভাগের মাধ্যমে সরকার তার ভূমিকা পালন করে।
আরো পড়ুন: গণতন্ত্রের গুণাবলী গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ, সাফল্যের শর্তাবলী ও সীমাবদ্ধতা
সরকারের শ্রেণী বিভাগ
সরকারের গতানুগতিক শ্রেণীবিভাগ
মানুষের সংগঠিত রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনার সূত্রপাত ঘটেছে; আরম্ভ হয়েছে আদর্শ সরকারের অনুসন্ধান। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণও নতুন নতুন চিন্তার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। উপযুক্ত সরকার হলো তাঁদের চিন্তার অন্যতম বিষয়। কোন রাষ্ট্রের মধ্যে যে ব্যক্তি-সমষ্টি রাষ্ট্রপরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন তাদের নিয়েই সরকার গঠিত হয়। ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে সরকারকে প্রধানত: তিনশ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। গ্রীক দার্শনিক হেরোডোটাস (Herodotus) সরকারকে তিন শ্রেণীতে Tripartite) বিভক্ত করেছেন। যেমন: রাজতন্ত্র (Monarchy) ধনিকতন্ত্র (Oligarchy) এবং গণতন্ত্র (Democracy)।
গ্রীক দার্শনিক প্লেটো তাঁর বিখ্যাত 'দি রিপাবলিক' গ্রন্থে তিনটি বিশুদ্ধ সরকার এবং তৎসঙ্গে এদের তিনটি বিকৃত রূপের বর্ণনা দিয়েছেন। যেমন:-
বিশুদ্ধ / ভাল সরকার (Pure forms of govt.)
রাজতন্ত্র (Monarchy)
অভিজাততন্ত্র (Aristocracy)
স্বাভাবিক গণতন্ত্র (Moderate Democracy)
বিকৃত রূপ (Perverted forms of govt.)
স্বেচ্ছাচারতন্ত্র (Tyranny)
ধণিকতন্ত্র (Oligarchy)
উগ্র গণতন্ত্র (Extreme Democracy)
প্লেটোর মতে রাজতন্ত্র সর্বাপেক্ষা উত্তম সরকার এবং এর বিকৃত রূপ অর্থাৎ স্বেচ্ছাচারতন্ত্র হলো সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ধরনের সরকার।
আরো পড়ুন: উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য এবং সংবিধান প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন পদ্ধতি
এরিস্টটল কর্তৃক সরকারের শ্রেণীবিভাগ
গ্রীক দার্শনিক এরিষ্টটল সরকারকে রাষ্ট্রের প্রাণস্বরূপ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'The Politics'এর চতুর্থ অধ্যায়ে সরকারের শ্রেণী বিভাগের বর্ণনা দিয়েছেন। এরিস্টটল দু'টি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে এ শ্রেণীবিভাগ করেছেন। তাঁর এই শ্রেণী বিভাগের পিছনে মূলত গ্রীক নগর রাষ্ট্রগুলোর সাংবিধানিক কাঠামোর অভিজ্ঞতা কাজ করেছে। তাঁর দুটি মূলনীতি হলো (ক) সংখ্যানীতি এবং (খ) লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নীতি। উদ্দেশ্যনীতি আবার 'স্বাভাবিক' ও 'বিকৃত' এ দুইটি উপবিভাগে বিভক্ত।
ক) এরিষ্টটল সংখ্যার ভিত্তিতে সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন। যে রাষ্ট্রে চরম ক্ষমতা একজনের উপর ন্যস্ত থাকে তাকে রাজতন্ত্র বলে। আবার যেখানে রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতা কয়েকজনের উপর ন্যস্ত থাকে তাকে অভিজাততন্ত্র বলা হয়। যেখানে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতা বহুজনের উপর ন্যস্ত তাকে বলা হয় গণতন্ত্র।
খ) উদ্দেশ্য নীতি অনুযায়ী তিনি আবার তিনটি বিভাগের প্রত্যেকটিকে স্বাভাবিক (Normal) ও বিকৃত (Perverted)-এ দু'ভাগে ভাগ করেছেন। জনসাধারণের উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধন রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলে তাকে তিনি স্বাভাবিক রূপ এবং যেখানে রাষ্ট্র শ্রেণী বা ব্যক্তিস্বার্থে পরিচালিত হয় তাঁকে তিনি বিকৃত রূপ বলে উল্লেখ করেছেন।
সুতরাং এরিষ্টটল সংখ্যা ও উদ্দেশ্য এ দু'টি মূলনীতি প্রয়োগ করে সরকারকে মোট ছয়ভাগে ভাগ করেন। তাঁর প্রদত্ত শ্রেণীবিভাগ নিম্নের ছকের মাধ্যমে দেখানো গেল।
সরকার
সংখ্যানীতি
সরকারের শ্রেণী
একজনের শাসন (Rule by one)
কয়েকজনের শাসন (Rule by a few)
বহুজনের শাসন (Rule by many)
উদ্দেশ্যনীতি
স্বাভাবিক
রাজতন্ত্র (Monarchy)
অভিজাততন্ত্র (Aristocracy)
মধ্যতন্ত্র (Polity)
বিকৃত
স্বৈরতন্ত্র (Tyranny)
ধনিকতন্ত্র (Oligarchy)
গণতন্ত্র (Democracy)
এরিষ্টটল সরকারের রূপ বিশ্লেষণ করে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, অভিজাততন্ত্র উত্তম সরকার। তবে তিনি মধ্যতন্ত্রকে (Polity) সর্বাপেক্ষা বাস্তবধর্মী বলে উল্লেখ করেন। গণতন্ত্র বলতে তিনি প্রধানত দরিদ্র ও অযোগ্য জনগণের শাসন ব্যবস্থাকে বুঝিয়েছেন। পক্ষান্তরে মধ্যতন্ত্র বা পলিটি বলতে এরিষ্টটল মধ্যবিত্তের শাসনকে বুঝিয়েছেন, যারা খুব ধনীও নন আবার খুব দরিদ্র নন। পলিটি হল এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষাকারী সংবিধান। এটি তার মতে উৎকৃষ্ট ধরনের ব্যবস্থা হতে পারে।
সরকারের এই ত্রিপক্ষীয় শ্রেণীবিভাগ যুগে যুগে রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ও দার্শনিকগণ কর্তৃক সমাদৃত হয়েছে। তাঁরা এ শ্রেণীবিভাগকে সঠিক বলে গ্রহণ করেছেন। সুতরাং বলা যায়, সরকারের গতানুগতিক শ্রেণীবিভাগ সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে বটে কিন্তু এটি সরকারের আধুনিক শ্রেণী বিভাগ সম্পর্কিত অনেক জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
সরকারের আধুনিক শ্রেণীবিভাগে অধ্যাপক ষ্টীফেন লীকক-এর মতবাদ
অধ্যাপক লীকক সরকারের একটি বিজ্ঞানসম্মত শ্রেণী বিভাগ উপহার দিয়েছেন। তিনি সরকারকে গণতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র হিসেবে শ্রেণীবিন্যাস করেন। অতঃপর তিনি গণতন্ত্রকে আবার সীমিত রাজতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র হিসেবে শ্রেণীবিন্যাস করেন। তার মতে প্রত্যেক সরকারকে আবার এককেন্দ্রিক বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের শ্রেণীভুক্ত করা যায়।
অধ্যাপক লীকক আধুনিক সরকারের শ্রেণীবিভাগ করতে গিয়ে যে নীতিগুলো অবলম্বন করেছেন সেগুলো হলো ১ সার্বভৌম ক্ষমতার অবস্থান ২. রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতায় আসার পদ্ধতি ৩. আইন বিভাগ ও শাসনবিভাগের সম্পর্ক এবং ৪ ক্ষমতার বন্টননীতি। এগুলো আলোচনার দাবী রাখে।
১ সার্বভৌম ক্ষমতার অবস্থান: রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার অবস্থান ও প্রয়োগ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে লীকক আধুনিক সরকারকে গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র এ দু'ভাগে বিভক্ত করেছেন। সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকলে তাকে গণতন্ত্র এবং সার্বভৌম ক্ষমতা একজন বা একদল দ্বারা পরিচালিত হলে তাকে একনায়কতন্ত্র বলে।
২. রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতায় আসার পদ্ধতি: রাষ্ট্র প্রধানের ক্ষমতা আরোহণের পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তিনি গণতান্ত্রিক সরকারকে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র এবং প্রজাতন্ত্র এ দু'ভাগে ভাগ করেছেন। যে শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতালাভ করেন তাকে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বলে। আর পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতালাভ করলে তাকে প্রজাতন্ত্র বলে।
৩. ক্ষমতার বন্টন নীতি: ক্ষমতার বণ্টন নীতির উপর ভিত্তি করে তিনি গণতান্ত্রিক সরকারকে দু'ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন, এককেন্দ্রিক সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার। যখন একটি কেন্দ্রের হাতে সরকারের ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে তখন তাকে এককেন্দ্রিক সরকার বলে। আর সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা হলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে। ব্রিটেন হল এককেন্দ্রিক সরকার ও আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র হল যুক্তরাষ্ট্রীয় মৌলিক ব্যবস্থার উদাহরণ।
৪ আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের সম্পর্ক: আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে অধ্যাপক লীকক গণতান্ত্রিক সরকারকে পার্লামেন্ট শাসিত সরকার ও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার এ দু'ভাগে ভাগ করেছেন। পার্লামেন্ট শাসিত সরকারে শাসনবিভাগ আইন বিভাগের উপর নির্ভরশীল এবং আইন পরিষদের নিকট দায়ী থাকে। কিন্তু রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারে শাসন বিভাগ আইন পরিষদের উপর নির্ভরশীল নয় এবং তার কাছে দায়ী থাকে না। পার্লামেন্ট শাসিত সরকারে শাসনকার্যের ভার ন্যস্ত থাকে আইন পরিষদের কাছে দায়ীত্বশীল মন্ত্রিপরিষদের উপর। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় শাসনভার ন্যস্ত থাকে রাষ্ট্রপতি বা প্রেসিডেন্টের উপর। ব্রিটেনে, ভারতে এবং বাংলাদেশে পার্লামেন্ট শাসিত ব্যবস্থা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
অধ্যাপক স্টিফেন লীককের শ্রেণীবিন্যাস
সরকার
গণতন্ত্র একনায়কতন্ত্র
নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রজাতন্ত্র
সংসদীয় পার্লামেন্ট পার্লামেন্ট শাসিত সরকার রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার এককেন্দ্রিক সরকার -যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এককেন্দ্রিক সরকার -যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এককেন্দ্রিক সরকার - যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার।
আরো পড়ুন: এককেন্দ্রিক সরকার এককেন্দ্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্য এককেন্দ্রিক সরকারের দোষ ও গুণ
আর এম ম্যাকাইভারের শ্রেণীবিভাগ
অধ্যাপক আর, এম ম্যাকাইভার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চারটি সূত্র ধরে সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন। যথা-সাংবিধানিক, সাম্প্রদায়িক, অর্থনীতিক ও সার্বভৌম সংক্রান্ত।
ক. সাংবিধানিক: রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার সংবিধানিক ভিত্তিতে সরকারকে রাজতন্ত্র, সীমিত রাজতন্ত্র, ঈশ্বরতন্ত্র, প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র ও প্রজাতান্ত্রিক সরকার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
খ. সাম্প্রদায়িক: সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে তিনি আবার সরকারকে উপজাতীয় সরকার, নগররাষ্ট্র, জাতীয় রাষ্ট্র এবং বিশ্বরাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
গ অর্থনৈতিক: আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সরকারকে সামন্তবাদী, পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক সরকার বলে উল্লেখ করেছেন। ঘ সার্বভৌমত্ব: রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে তিনি সরকারকে এককেন্দ্রিক, যুক্তরাষ্ট্রীয় ও সাম্রাজ্য এই তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন।
অধ্যাপক আর, এম ম্যাকাইভারের শ্রেণীবিভাগ বেশ কিছুদিন যাবৎ জনপ্রিয়তা লাভ করলেও বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তা অপ্রতুল বলে অনেকে মনে করে থাকেন।
গতানুগতিক ও আধুনিক শ্রেণীবিভাগের মধ্যে পার্থক্য
সরকারের গতানুগতিক শ্রেণী বিভাগ ও আধুনিক শ্রেণী বিভাগের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যেমনঃ-
গতানুগতিক শ্রেণীবিভাগ অপর্যাপ্ত: গতানুগতিক শ্রেণীবিভাগ অপর্যাপ্ত, কিন্তু আধুনিক শ্রেণী বিভাগ ব্যাপক ও পর্যাপ্ত। যেমন গতানুগতিক শ্রেণীবিভাগে গণতন্ত্রকে সরকারের একটি রূপ হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রের যে আরও রূপ রয়েছে যেমন সীমিত রাজতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র, পার্লামেন্ট শাসিত সরকার, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার, এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এগুলো দেখানো হয়নি।
গতানুগতিক শ্রেণীবিভাগ অবৈজ্ঞানিক: গতানুগতিক শ্রেণীবিভাগ সংখ্যার উপর অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছে, কিন্তু গুণগত দিকটিকে উপেক্ষা করেছে। তা'ছাড়া গতানুগতিক শ্রেণীবিভাগ যান্ত্রিক, অন্যদিকে আধুনিক শ্রেণী বিভাগ জীবন্ত।
গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণার দিক দিয়ে পার্থক্য: গতানুগতিক শ্রেণী বিভাগে গণতন্ত্রকে যে জন্যে ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক শ্রেণীবভিাগের গণতন্ত্রকে সে অর্থে ব্যবহার করা হয় নি। আধুনিক কালে মোটামুটি গণতন্ত্রই হলো সর্বোৎকৃষ্ট সরকার বলে মনে করা হয়।
সার কথা
রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য চারটি মৌলিক উপাদানের মধ্যে সরকার অন্যতম। অতি প্রাচীনকালে থেকেই সরকারের বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ চলে আসলেও পরিবেশ ও পরিস্থিতির বিভিন্নতা সরকারের বিভিন্ন প্রকার শ্রেণী বিভাগের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। অবশ্য যুগে যুগে এ শ্রেণী বিভাগের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ঘটেছে। যেমন গতানুগতিক শ্রেণী বিভাগ বিভিন্ন দৃষ্টি কোন থেকে সমালোচিত হয়েছে এবং আধুনিক শ্রেণী বিভাগ সেই স্থান পূরণে সচেষ্ট হয়েছে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url