আসমানী কিতাব ও মালাইকা আসমানী কিতাবের পরিচয় ও এর প্রতি বিশ্বাস
আসমানী কিতাবের পরিচয় আসমানী কিতাবের আলোচ্য বিষয় আসমানী কিতাবের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ আসমানী কিতাব নাযিলের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে পারবেন:আসমানী কিতাবের সংখ্যা ও অস্তিত্ব বিষয়ে বিবরণ আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস সম্বন্ধে বর্ণনা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আসমানী কিতাব ও মালাইকা
আসমানী কিতাবের পরিচয় ও এর প্রতি বিশ্বাস
আসমানী কিতাবের পরিচয়
আসমানী কিতাব ইসলামী বিশ্বাসের একটি মৌলিক বিষয়। সাতটি বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপনেব নাম ঈমান, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আসমানী কিতাবে বিশ্বাস। আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাসে যদি অতি সামান্যতম গরমিল থাকে তাহলে ঈমান নামক অমূল্য রত্নের মাঝে ত্রুটি দেখা দেবে। আসমানী কিতাব হচ্ছে ঐ কিতাব যা যুগে যুগে মানবতার হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তাঁর বাছাইকৃত নবী-রাসুলগণের ওপর নাযিল করেছেন। আসমানী কিতাবই হচ্ছে একমাত্র নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ, যা বিভ্রান্ত মানবতাকে সত্য, সুন্দর ও সৎ পথের সন্ধান দিয়ে থাকে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দুনিয়ার মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূলের মাধ্যমে তাঁর বাণী বা বিধি-বিধান প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা'আলার ঐ বাণীকেই আসমানী কিতাব বলা হয়। অন্য কথায় যে সকল গ্রন্থে আল্লাহ তা'আলার বাণী বা ওহী লিপিবদ্ধ রয়েছে, তাকে আসমানী কিতাব বলা হয়। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়ম-নীতি ইত্যাদি যা কিছু তিনি নবী-রাসূলগণের নিকট পাঠিয়েছেন তার সবই আসমানী কিতাবের আলোচ্য বিষয়।
আরো পড়ুন: ফেরেশতার পরিচয় ও তাঁদের দায়িত্ব
আল্লার মুনিয়ার মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য মন্ত্রী ও রাসূলের যথামে ডাঁর বাণী হোকণ করেছেন। আল্লাহ আদমী ফিতার বা হয়।
আসমানী কিতাবের আলোচ্য বিষয়
• আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আসমানী গ্রন্থসমূহে তার সৃষ্টির বর্ণনা দিয়ে তার সৃষ্টি বৈচিত্র্য সম্পর্কে মানব জাতিকে সমাক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আল্লাহর পরিচয়, তাঁর ক্ষমতা, তাঁর সার্বভৌমত্ব, তাওহীদ, ডিসালাত, আখিরাত ইত্যাদি সম্পর্কে এতে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এ দুনিয়াতে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য, মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহও এতে আলোচিত হয়েছে। তাছাড়া দুনিয়াতে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের বিভিন্ন দিকের বিধি-বিধানও এতে সবিস্তারে বিধৃত হয়েছে। বেহেশত ও দোযখের চিত্র এবং কারা এ বেহেশতের অধিকারী হবেন এবং কারা দোযখের অধিবাসী হবে তারও বর্ণনা এতে দেয়া হয়েছে। মোটকথা আসামনী কিতাবই হচ্ছে মানুষের পথনির্দেশিকা বা জীবন দ্বিধান।
আসমানী কিতাবের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
মানব জীবনে আসমানী কিতাবের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মানুষকে একদিকে যেমন আশরাফুল মাখলুজার বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে, তেমনি তাদেরকে আসমানী কিতাবের মাধ্যমে দুনিয়াতে চলা-ফেরা, আচার-আচরণ, লেন-দেন, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বিভিন্ন বিবান মেওয়া হায়ছে। এসব বিধি-বিধান দেয়া না হলে মানুষ তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী, তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী, তা জামাতে পারত না। ফলে তার জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে সে সঠিক দিকনির্দেশনা পেত না। এ দিকনির্দেশনার অভাবে সে তার জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে পারত না। আল্লাহ আ'মাল্য আসমানী কিতাদের মাধ্যমে আমাদেরকে এসব বিষয়ে শিক্ষাদান করেছেন। যেমন-আল-
কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেছেন-
"আমি সফল রাসূলকে তার স্বজাতির ভাষাভাষি করে প্রেরণ করেছি, তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করবার জন্য।" (সূরা ইবরাহীম :৪)
আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক জাতির জন্য যুগে যুগে, নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন যেন তারা আল্লাহর একত্ববাদকে স্বীকার করে নেয়। আসমানী কিতাব প্রেরণ না করলে যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি এ হিদায়াতের বাণী থেকে বঞ্চিত হয়ে দিশেহারা হয়ে যেত। কারণ আল্লাহ তা'আলা আল-কুরআনের প্রথম সূরায় উল্লেখ করেছেন-
"তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।" (সূরা আল-আলাক: ৫)
আসমানী কিতাব প্রেরণের অন্য একটি প্রয়োজনীয়তা হল, এর দ্বারা মানুষের বাহ্যিক শরীরকে বাইরের ময়লা থেকে এবং তাদের অন্তরসমূহকে দুনিয়ার চাকচিক্য ও শয়তানের প্রতারণা থেকে পবিত্র করা। আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন-
"তিনিই উন্মীদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত্তি করে তাঁর আয়াতসমূহ এবং তাদের পবিত্র করে।" (সূরা আল-জুমুআহ: ২ )
জাসমানী কিতাব প্রেরণ করে আল্লাহ তা'আলা মানুষদের পরকালে পেশকৃত ওযর আপত্তির জবাব দিয়েছেন, যেন মানুষ পরকালে বলতে না পারে যে, আপনি আমাদের নিকট কোন কিতাব পাঠাননি, যনি পাঠাতেন তাহলে আমরা তা শুনতান। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন-
"যাতে রাসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে।" (সূরা আন-নিসা : ১৬৫)
আল্লাহ তা'আলা কোন জাতির কাছে আসমানী কিতাব না পাঠিয়ে তাকে শাস্তি দেন না। সুতরাং যারা ধংসের পথ বেছে নেয়, তারা যেন দলীল-প্রমাণ দেখার পরই বেছে নেয়। এছাড়া যারা মুক্তির পথ পছন্দ করে তারাও যেন দলীল-প্রমাণ দেখার পরই তা করে। যেমন আল্লাহ বলেন-
"আমি রাসূল না পাঠান পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেই না।" (সূরা আল-ইসরা : ১৫)
এ সকল আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে, মানব জীবনে আসমানী কিতাবের গুরুত্ব অপরিসীম।
আরো পড়ুন: মাযহাব কি ফিক্হ শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ মাযহাব সমূহ
আসমানী কিতাব নাযিলের উদ্দেশ্য
পৃথিবীতে নবী-রাসূলগণের ওপর যত কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তার সবই আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে অবতারিত, অমোঘ বাণী। আর এ বাণী প্রেরণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর সাথে বান্দার তথা আবদ এ যানুন-এর সম্পর্ক ও পরিচয় করিয়ে দেয়া। এ সম্পর্ক কিভাবে বজায় রাখতে হবে, কিতাব তা সাঙলে দেয়। আসমানী কিতাবের উদ্দেশ্য হচ্ছে পথভ্রষ্ট, দিকভ্রান্ত বিশ্ব মানবতাকে হিদায়াত করা, সহজ সরল পথে পরিচালিত করা, মানবজীবনের উদ্দেশ্যকে সফল করে তোলা এবং মানব সমাজকে কল্যাণের পথে আরবান করা।
হক-বাতিল: ব্যায়-অন্যায় এবং সত্য-অসভ্যের মধ্যে পার্থক্য এবং বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ সম্বলিত জিডিবি প্রতিশ্রতি ও শাস্তির বিষয় বর্ণনা করাই হচ্ছে আসমানী কিতাব নাযিলের উদ্দেশ্য।
আসমানী কিতাবের উদ্দেশ্য হচ্ছে-পথতই, দিয়তান্ত বিশ্ব মানবতাকে বিদায়াত কথা সহজ সরল পথে পরিচালিত তোলা এবং মানব সমাক্ষরে কল্যাণের পথে আহবান করা।
সর্বোপরি শয়তানী শক্তির বেড়াজাল হতে আল্লাহর বান্দাদের বের করে আনা এবং সকল মতবাদের ওপর ইসলামের বিজয় সাধন করে মানবতাকে মুক্তি দেয়াই আসমানী কিতাব নাযিল করার লক্ষ্য। আল্লাহ আসমানী কিতাব প্রেরণের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন-
"তিনিই তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, অপর সমস্ত দীনের উপর একে জয়যুক্ত করার জন্য।" (সূরা আল-ফাতহ : ২৮)
আসমানী কিতাব নাযিলের অপর উদ্দেশ্য বর্ণনায় আল্লাহ তা'আলা হযরত মুহাম্মদ (স)-কে সম্বোধন করে বলেন, 'এ কিভাব আপনার প্রতি নাযিল করার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, আপনি লোকদেরকে অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে হিদায়াতের আলোকজ্জ্বল পথের দিকে বের করে নিয়ে আসবেন।' (সূরা ইবরাহীম: ১)
"আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন। সেই অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা কর।" (সূরা আন-নিসা: ১০৫)
আসমানী কিতাবের সংখ্যা
শরহে উমদাতুল ক্বারী গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আসমানী কিতাবের সংখ্যা ১০৪ খানা। যেমন- হযরত আবু যার গিফারী (রা) হতে বর্ণিত। সে সকল রাসুলের প্রতি আল্লাহর বাণী কিতাব ও সহীফা আকারে নাযিল হয়েছে, এ কিতাব এবং সহীফার সর্বমোট সংখ্যা ১০৪ খানা। এ সকল আসমানী কিতাবসমূহের মধ্যে সহীফা বা ছোট কিতাব ১ শ খানা। হযরত শীছ (আ)-এর প্রতি ৫০ খানা, হযরত ইদরীস (আ)-এর প্রতি ৩০ খানা। হযরত ইবরাহীম (আ) প্রতি ১০ খানা এবং হযরত আদম (আ), এর প্রতি ১০ খানা অবতীর্ণ হয়েছিল।"
বাকি ৪ খানা হল প্রধান এবং প্রসিদ্ধ আসমানী কিতাব। এ ৪টি প্রধান আসমানী কিতাব পর্যায়ক্রমে, তাওরাত বনী ইসরাইলকে হিদায়াতের জন্য হযরত মুসা (আ)-এর প্রতি; যাবুর হযরত দাউদ (আ)- এর প্রতি: ইনজীল হযরত ঈসা (আ)-এর প্রতি এবং বিশ্ব মানবতার হিদায়াতের জন্য সর্বশেষ ও পূর্ববর্তী সমস্ত কিতাব রহিতকারী 'আল-কুরআন' সর্বশেষ নবী ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়।
আরো পড়ুন: ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (র) ও তাঁর মাযহাব
আসমানী কিতাবসমূহের অস্তিত্ব
লাওহে মাহফুজে সমস্ত আসমানী কিতাব বিদ্যমান থাকলেও পৃথিবীর বুকে একমাত্র কুরআন ছাড়া অন্যান্য আসমানী কিতাব অনুপস্থিত। বর্তমানে কুরআন ছাড়া আসমানী কিতাবের নামে যে সকল কিতাব পাওয়া যায়, তার কোনটাই মূল ভাষা ও অর্থে সুরক্ষিত নেই। বরং সেগুলোতে রয়েছে ব্যাপক রদবদল। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন-
লাওহে মাহফুজে সমত একমাত্র কুরআন ছাড়া অনুপস্থিত। বর্তমানে কিতাবের বামে যে সমন ভিতরে পাওয়া যায় তার
"তারা শব্দগুলোর আসল অর্থ বিকৃত করে।" (সূরা আল-মায়েদা: ১৩)
লাওহে মাহফুজে সমস্ত আসমানী কিতাব বিদ্যমান থাকলেও পৃথিবীর বুকে একমাত্র কুরআন ছাড়া অন্যান্য আসমানী কিতাব অনুপস্থিত। বর্তমানে কুরআন ছাড়া আসমানী কিতাবের নামে যে সকল কিতাব পাওয়া যায়, তার কোনটাই মূল ভাষা ও অর্থে সুরক্ষিত নেই।
বুখতে নসর নামক একজন প্রতাপশালী ইয়াহুদীর শাসনামলে তাওরাত গ্রন্থ সম্পূর্ণ রূপে বিলীন হয়ে যায়। তখন লোকদের যা মুখস্থ ছিল তা লিপিবদ্ধ করে তার মধ্যে নিজেদের সুবিধামত রদবদল করে নিয়ে জনৈক বাদশাহ এটা ধংস করে দিরে ইয়াহুদী আলিমগণ তা জোড়াতালি দিয়ে একীভূত করে আর-এর মধ্যেও নিজেেেদর অনেক নতুন নতুন ধর্মীয় আচার-পদ্ধতি সংকলিত করে তার নাম দেয় সেপটুনাজেন্ট।
এ রূপে খ্রিস্টানদের কবল থেকে হযরত ঈসা (আ)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার পর ইনজীলের একটি মাত্র আসল কপি বর্তমান ছিল। খ্রিস্টানরা তা জ্বালিয়ে ফেলে। তারপর তাঁর অনুসারীগণের মধ্য হতে কিছু লোক হযরত ঈসা (আ) কর্তৃক বর্ণনা এবং ইনমিলের কিছু বিষয় যা তাদের স্মরণ ছিল এর সাথে নিজেদের সুবিধামত বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে নেয়, যা বর্তমানে ইনজীল, মথী, লুক, মারকস, ৩০ টেস্টামেন্ট, নিউ টেস্টামেন্ট ইত্যাদি নামে প্রসিদ্ধ।
আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর ওপর যে আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছিল, বর্তমানে সেটাই একমাত্র কিতাব যা বিশ্ববাসীর সামনে আসল ও অবিকৃতরূপে বিদ্যমান। আল-কুরআনের একটি যের, জবর, পেশ কিংবা একটি নুকতাও পরিবর্তিত হয়নি। বরং এটা কিয়ামত পর্যন্ত প্রচলিত ও বলবৎ থাকবে। কারণ, এর সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ নিজেই নিয়ে ঘোষণা করেন।
"আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই তার সংরক্ষক।" (সূরা আল-হিজর: ৯)
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন-
"এর সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই।" (সূরা আল-কিয়ামাহ: ১৭)
যেহেতু কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সাথে সাথে অন্যান্য আসমানী কিভাবের বিধি-বিধান রহিত হয়ে গিয়েছে সেহেতু কুরআনই হচ্ছে আসমানী হিদায়াত ও ঐশী শিক্ষা সংক্রান্ত সর্বশেষ কিতাব। সুতরাং ঐশী হিদায়াতের অন্বেষণকারী ব্যক্তিদের জন্য এ সর্বশেষ কিতাবের অনুসরণ করা একান্ত অপরিহার্য।
আরো পড়ুন: ইমাম আবু হানীফা (র)-এর জীবনী
কুরআন নাযিল হওয়ার সাথে সাথে অন্যান্য আসমানী কিতাবের বিধি- বিধান রহিত হয়ে গিয়েছে সেহেতু কুরআনই হচ্ছে আসমানী হিদায়াত ও ঐশী শিক্ষা সংক্রান্ত সর্বশেষ কিতাব।
আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস
নবী-রাসূলগণের প্রতি যত কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে, এগুলো সবই আল্লাহর পক্ষ হতে জিবরাঈল (আ)- এর মারফতে প্রেরিত। আসামানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস করা ঈমানের অঙ্গ। মুমিন মুসলমান হওয়ার জন্য যেমন সমস্ত নবী-রাসূলের প্রতি ঈমান আনা আবশ্যক, তেমনি সমস্ত আসমানী কিতাবের ফিডার। প্রতিও ঈমান আনা আবশ্যক। এটা ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ মর্মে আল-কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন-
"তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তাতে যারা ঈমান আনে।" ( সূরা আল-বাকারা:৪ )
মহান আল্লাহ আরো ঘোষণা করেন-
"তাদের সকলে আল্লাহে, তাঁর ফেরেশতাগণে, তাঁর কিতাবসমূহে এবং তাঁর রাসূলগণে ঈমান আনয়ন করেছে।" (সূরা আল-বাকারা : ২৮৫)
সারসংক্ষেপ
আসমানী কিতাব ইসলামী আকিদার একটি মৌলিক বিষয়। সাতটি বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের নাম ঈমান। তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আসমানী কিতাব। আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাসে যদি অতি সামান্যতম গরমিল থাকে; তাহলে ঈমান নামক অমূল্য রত্নের মাঝে ত্রুটি দেখা দেবে সন্দেহাতীতভাবে। আসমানী কিতাব হচ্ছে, ঐ কিতাব যা যুগে যুগে মানবতার হিদায়াতের জন্য মহান আল্লাহ তার বাছাইকৃত নবী-রাসূলগণের ওপর নাযিল করেছেন। আসমানী কিতাবই হচ্ছে, একমাত্র নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ, যা বিভ্রান্ত মানবতাকে সত্য সুন্দর পথের সন্ধান দেয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দুনিয়ার মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূলের মাধ্যমে তাঁর বাণী বা বিধি-বিধান প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা'আলার ঐ বাণীকেই আসামনী কিতাব বলা হয়। অন্য কথায় যে সকল গ্রন্থে আল্লাহ তা'আলার বাণী বা ওহী লিপিবদ্ধ রয়েছে তাকে আসমানী কিতাব বলা হয়। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়ম-নীতি ইত্যাদি যা কিছু তিনি নবী-রাসূলদের নিকট পাঠিয়েছেন, তার সবই আসমানী কিতাবের আলোচ্য বিষয়।
আসমানী কিতাবের সংখ্যা ১০৪ খানা। এর মধ্যে প্রসিদ্ধ হল তাওরাত, যাবুর, ইনজীল ও কুরআন। বর্তমানে একমাত্র কুরআনের অস্তিত্ব ও শিক্ষা অবিকৃত অবস্থায় আছে। মানবজাতি কুরআন থেকেই তাদের পথের দিশা পেয়ে আসছে এবং ভবিষ্যতে ও পেতে থাকবে।
আল্লাহ হাফেজ**
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url