ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ ও পরিবার এবং মানুষের মর্যাদা

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ ও পরিবার এবং মানুষের মর্যাদা, বস্তুবাদ ও অন্যান্য ধর্মের দৃষ্টিতে মানুষের মর্যাদা বর্ণনা করতে পারবেন। বিশ্ব প্রকৃতিতে মানুষের মর্যাদা সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারবেন। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা করতে পারবেন।


ভূমিকা

বস্তুবাদীদের দৃষ্টিতে মানুষ অন্যান্য সৃষ্টির মত একটি প্রাণি মাত্র। মানুষের পৃথক কোন বিশেষত্ব নেই। অনেকে মনে করেন, মানুষ শুধু বাকশক্তি সম্পন্ন প্রাণি। ডারউইনীয় মতবাদ অনুসারে মানুষ বানরের বংশজাত। বস্তুবাদী নাস্তিকেরা মানুষের আত্মা আছে বলে বিশ্বাস করে না। এক কথায় মানুষ, ক্রমবিবর্তন ধারার এক স্তরের জীবমাত্র। ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহ তা'আলা মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে সৃষ্টির সেরা করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাই সে সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে সমাজবদ্ধভাবে জীবন যাপন করে। সমাজের প্রাথমিক স্তর তথা পরিবারের গুরুত্ব মানব জীবনে সবচেয়ে বেশী। তাই সভ্য মানুষের সকলেই পরিবারের কাঠামোতে মিলেমিশে একত্রে বসবাস করে। পরিবার প্রথা নতুন কিছু নয়। পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে পরিবার প্রথার সৃষ্টি হয়। আর সেই প্রথা ইসলামী বিশ্বসহ সকল জাতির মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে। পৃথিবীতে দুই ধরনের পরিবার রয়েছে। ইসলামী পরিবার ও অনৈসলামিক পরিবার। পরিবারের মাধ্যমে নানা ধরনের কার্যাবলি সাধিত হয়, যা পরিবারের বাইরে সম্ভব নয়। আলোচ্য ইউনিটে ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ সৃষ্টি, মানুষের মর্যাদা, পারিবারিক জীবনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব, পরিবারের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, পরিবারের কার্যাবলি, ইসলামী পরিবারের বৈশিষ্ট্য, ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রভৃতি বিষয় আলোচিত হয়েছে। আলোচনার সুবিধার জন্য এ ইউনিটকে ৮টি পাঠে ভাগ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: আসমানী কিতাব ও মালাইকা আসমানী কিতাবের পরিচয় ও এর প্রতি বিশ্বাস

মানুষের মর্যাদা

ইসলাম মানুষকে তার সঠিক মর্যাদা ও উপযুক্ত সম্মান দিয়েছে। মানুষকে আল্লাহ তা'আলা এই পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন। তাঁর সকল সৃষ্ট জীবের মধ্যে মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সম্মান দিয়েছেন। পৃথিবীর সবকিছু মানুষের অধীন করে দিয়েছেন। আর মানুষকে নিজের বান্দা ও খলীফা হিসাবে ঘোষণা দিয়ে নিজের সাথে সম্পর্কিত করেছেন। সৃষ্টিলোকে মানুষের মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব এবং বিশিষ্টতা এখানেই।

কুরআন ও হাদীস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলাম মানুষকে যতখানি মর্যাদা, গুরুত্ব এবং সম্মান দান করেছে অন্যকোন ধর্ম বা মতবাদ তা দেয়নি। নিম্নে বস্তুবাদী সমাজ, অন্যান্য ধর্ম ও ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মর্যাদা তুলে ধরা হলঃ

বস্তুবাদী ও অন্যান্য ধর্মের দৃষ্টিতে মানুষ

বস্তুবাদীদের দৃষ্টিতে মানুষ এই পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টির মত একটি প্রাণি মাত্র। মানুষ একটা দেহসত্তা। এর বিশেষত্ব যেমন কিছু নেই, তেমনি অন্যান্যের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্ব বা স্বাতন্ত্র্য কিছু নেই। স্থানের বিবেচনায় মানুষ অতি নগণ্য ও ক্ষুদ্র সত্তা। কালের বিবেচনায় মানুষ একেবারে অনুল্লেখযোগ্য প্রাণি। কারও মতে মানুষ 'খোদায়ী আত্মা'; কেউ বা বলেছেন, "বাকশক্তি সম্পন্ন প্রাণি।" ডারউইন বলেছেন, মানুষ বানরের বংশজাত। হিন্দু ধর্ম মানুষকে একদিকে দেবতা, অবতার ও ভগবান বলেছে, অপরদিকে মানুষকে ইতর থেকে ইতরতর, অস্পৃশ্য বলে ঘৃণা করেছে। খ্রিস্টধর্মে মানুষকে খোদার সাথে সম্পর্কিত তথা পুত্র বানিয়েছে, বস্তুবাদী নাস্তিকরা মানুষের আত্মা আছে বলে স্বীকার করে না। বরং এরা প্রকৃতিজাত, অধঃগামী এক জীব। এককথায় মানুষ ক্রম বিবর্তনের এক স্তরের জীব মাত্র। এর কোন উচ্চতর মর্যাদা বা বিশিষ্টতা নেই।

আরো পড়ুন: রিসালাত নবুওয়াত রিসালাত ও নবুওয়াত-এর পরিচয়

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মর্যাদা

মানুষ এক মর্যাদাসম্পন্ন সৃষ্টিঃ ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ এক মর্যাদাসম্পন্ন সৃষ্টি। মানুষের এ মর্যাদা ও সম্মান যেমন আল্লাহর নিকট, তেমনি বিশ্বলোকের সবকিছুর ওপর। আল্লাহ তা'আলা তাকে মহান উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে রূপ, আকার-আকৃতি ও গঠন-প্রকৃতি দিয়েছেন সবকিছু থেকে ভিন্নতর, সবকিছুর তুলনায় উন্নত ও উত্তম করে। আল্লাহ রূহ মানুষের দেহ সত্তায় ফুঁকে দিয়েছেন। আল্লাহ ফেরেশতা দ্বারা মানুষকে সিজদাও করিয়েছেন।

বিশ্ব প্রকৃতিতে মানুষের মর্যাদা: এ বিশ্ব চরাচরে মানুষ তুচ্ছ নয়। বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে এক ছোট্ট প্রাণি হয়েও বিশেষ স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষ শ্রেষ্ঠ, আশরাফুল মাখলুকাত। আল্লাহ তা'আলা বলেন-

আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, তাদেরকে জলে-স্থলে চলাচলের জন্য বাহন দান করেছি, তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং আমি সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।

(সূরা বনী ইসরাঈল: ৭০)

মানুষের অধীন সবকিছু : এ দুনিয়ার সবকিছু- যা আছে উর্ধ্বলোকে, যা আছে ভূতলে, ধরিত্রীতে- সেই সবকিছুই মানুষের অধীন, মানুষের একান্ত অনুগত, মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত। আর দৃশ্য-অদৃশ্য যত নিয়ামত ও কল্যাণকর যা কিছু আছে- সবই বিপুলভাবে আল্লাহ তা'আলা মানুষের জন্য দান করেছেন। এক কথায় সবকিছু মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। আর মানুষকে আল্লাহর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। 

হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন-

'হে আদম সন্তান। আমি তো তোমাকে কেবল আমার জন্য সৃষ্টি করেছি। আর অন্যান্য সবকিছু সৃষ্টি করেছি তোমার জন্য।'

মানুষ ইচ্ছা শক্তিসম্পন্ন বিবেকবান সত্তা: মানুষ কেবল জীব দেহের অধিকারী সত্তা নয়, বরং মানুষ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন, বিবেকবান, বিদ্যা-বুদ্ধি ও চিন্তা-গবেষণা শক্তি সম্পন্ন সত্তা। আসলে এই মানুষ হল সমস্ত সৃষ্টির নির্যাস, সৃষ্টিকুলের গৌরবের অমূল্য ও অতুলনীয় একমাত্র ধন। 

পৃথিবীতে যত প্রাণি আছে তার কোনটিই মানুষের ন্যায় ইচছা শক্তি রাখে না। তারা বিবেকবান, বিদ্যাবুদ্ধি ও চিন্তা-গবেষণার অধিকারীও নয়।

মানুষ আল্লাহর সুন্দরতম সৃষ্টিঃ নিখিল সৃষ্টিলোকের মধ্যে মানুষের অবয়ব, আকৃতি, গঠন কাঠামো অত্যন্ত সুন্দর। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:

'আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে। (সূরা আত-তীন: ৪)

এর দ্বারা মানুষের বাহ্যিক আকৃতি এবং সুষম অঙ্গ সমাবেশ বুঝানো হয়েছে।

মানুষই একমাত্র সৃষ্টি, যার মুখ অধোগতি সম্পন্ন নয়। সে ঝুঁকে বুকে ভর দিয়ে চলে না, বরং তার একটি ঋজু দৃঢ়তা রয়েছে এবং সে তার খাদ্য হাত দ্বারা গ্রহণ করে। মানুষের হাত, মুখ, মাথা, পা ইত্যাদি সুসামঞ্জস্যভাবে সৃষ্টি যে, তার কাজকর্ম পূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা করে সম্পন্ন করতে পারে। অভ্যন্তরীণ দিকে বুদ্ধিবৃত্তি, ধীশক্তি, সভ্যতা, শালীনতাবোধ, বাগ্মীতা, উচ্চতর বিচার শক্তি মানুষকে অন্যান্য সৃষ্টি থেকে অবশ্যই উন্নততর অবস্থা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে।

অন্যান্য সৃষ্টির মাঝে মানুষের মর্যাদাঃ মানুষ ছাড়া বিশ্বের আর যত সৃষ্টি আছে সবকিছুই আল্লাহ তা'আলা প্রদত্ত সুনির্দিষ্ট ও সুনির্ধারিত নিয়মের অধীনেই চলছে। কেবলমাত্র মানুষের জন্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবন পথে চলার নির্দেশনা দিয়ে আসমানী কিতাব ও নবী-রাসূল পাঠনো হয়েছে। এটা মহান আল্লাহর বিশেষ দয়া হিসেবেই মানুষ পেয়েছে।

আল্লাহর দৃষ্টিতে মানুষের মর্যাদাঃ কুরআনের বহু আয়াতে আল্লাহর কাছে মানুষের নৈকট্য ও মানুষের কাছে আল্লার নৈকট্যের কথা বলা হয়েছে। মানুষ ও আল্লাহর মাঝে কোন দেয়াল বা মাধ্যম নেই। মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করলে আল্লাহ কোন মাধ্যম ছাড়াই তার জবাব দেন। আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ সাথে সাথে তার ডাকে সাড়া দেন। এথেকেই বুঝা যায় আল্লাহর কাছে মানুষের স্থান ও মর্যাদা কত ঊর্ধ্বে।

 আল্লাহ তা'আলা বলেন-

'আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল: ৭০)

আরো পড়ুন: নবী ও রাসূলগণের নিষ্পাপ হওয়া

ঊর্ধ্বলোকে মানুষের স্থান: উচ্চতর জগতে বা আত্মার জগতে মানুষের যে স্থান, তা এতই উচ্চ ও মহান যে, আল্লাহর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের মাথা তাদের সামনে অবদমিত হয়। উচ্চতর জগতে মানুষের মর্যাদার কোন তুলনা নেই। এজনাই আল্লাহ তা'আলা তাঁর মহান সৃষ্টি ফেরেশতাদেরকে আদেশ দিয়েছিলেন মানুষকে সিজদা করতে।

বস্তু জগতে মানুষের মর্যাদা: এ বস্তু জগতে মানুষের মর্যাদা হচ্ছে মানুষ পৃথিবীর সকল সৃষ্টির নির্যাস। মানুষকে কেন্দ্র করেই এ বিশ্বলোকের সৃষ্টি। মানুষ প্রধান বা শ্রেষ্ঠ সকল সৃষ্টির। মানুষের কর্মক্ষেত্র হচ্ছে বিশাল বিশ্বলোক। এখানে যা কিছু আছে সবই মানুষের জন্য। মানুষ তার ওপর নিজের ইচ্ছা প্রয়োগ করে। এসব কিছুই মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত। এখানে কোন সৃষ্টিই মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে টিকে থাকতে পারে না।

খিলাফতের দায়িত্বের কারণেই মানুষ শ্রেষ্ঠ: এ দুনিয়ায় মানুষের মর্যাদা হচ্ছে- সে আল্লাহর খলীফা বা প্রতিনিধি। মানুষের সৃষ্টিতত্ত্ব থেকে দেখা যায় মানুষ নিকৃষ্ট সারবস্তু থেকে সৃষ্ট। কিন্তু তার মধ্যে আল্লাহ তা'আলার ফুঁকে দেয়া রূহ এবং দুনিয়ায় তাঁকে খিলাফত প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দান করার কারণেই এত বড় মর্যাদার অধিকারী। মানুষের এ মর্যাদা কেবলমাত্র আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার ওপরই নির্ভরশীল।

মানুষ আল্লাহর শরী'আতের ধারক বাহক: এই বিশ্বলোকে মানুষ মহান আল্লাহর খিলাফতের সুকঠিন দায়িত্ব পালন করে। খিলাফতের দায়িত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ আমানত। আর তা হল আল্লাহর শরী'আত বহন, পালন ও আল্লাহর নিকট জবাবদিহির যোগ্যতা অর্জন। বিশ্বলোকে মানুষ ছাড়া এ কঠিন দায়িত্ব আর কারও বহন করার যোগ্যতা নেই, এজন্য বিশ্বলোকে মানুষের এত মর্যাদা।

মানুষ দায়িত্বশীল সত্তা: সৃষ্টিলোকের মধ্যে মানুষই একমাত্র দায়িত্বশীল সত্তা। মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করবে। অন্যান্য সৃষ্টি লোকের প্রতি তার দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে, তা তাকে যথাযথভাবে পালন করে সৃষ্টিলোকের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। বিচারের দিন তার সব কাজের হিসাব নেওয়া হবে। ভাল কাজের জন্য দেওয়া হবে পুরস্কার আর মন্দের জন্য দেয়া হবে শাস্তি।

আল্লাহর দাসত্ব: সৃষ্টি লোকের সেরা সৃষ্টি মানুষ কেবলমাত্র আল্লাহরই ইবাদত-বন্দেগী ও দাসত্ব স্বীকার করবে পার্থিব জীবনের সকল ক্ষেত্রে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার জন্য আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে একনিষ্ঠভাবে। আল্লাহর ঘোষণা এ রকমই, 'আমি জিন্ন ও মানুষকে একমাত্র আমার ইবাদাত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।' (সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬)

নবী-রাসূলের আগমনঃ মানুষ শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী বলেই মানুষের মাঝে আল্লাহর পথ দেখানোর জন্য নবী-রাসুল প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যকোন প্রাণির জন্য নবী-রাসূল প্রেরিত হননি। মানুষ যাতে ভুল পথ অবলম্বন করে গোমরাহ ও বিপথগামী না হয় এজন্য এ ব্যবস্থা। এর মধ্যেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।

আল্লাহর বাণীর ধারক ও বাহক মানুষ: মানুষ শ্রেষ্ঠ বলেই মানুষের কাছে মানুষের মধ্য থেকে আল্লাহর মনোনীত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। আল্লাহর এই বিশাল সৃষ্টিলোকের মধ্যে আর কাউকেই এ মর্যাদা দেওয়া হয়নি। আল্লাহর বাণীর ধারক ও বাহক এবং প্রচারকরূপে মানুষকেই মনোনীত করা হয়েছে। যেমন- কুরআনে এসেছে- "নিশ্চয় আমি আমানত পেশ করেছি আকাশ মন্ডল, পৃথিবী ও পর্বতমালার উপর, ওরা তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং ভয় পেয়েছে; পরে মানুষ এই আমানত বহন করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। (আল- আহযাব: ৭২)

মানুষ অনন্ত মহাজবনের অভিযাত্রী: এ জীবনই মানুষের শেষ নয় এবং মৃত্যুই মানুষের জীবনের যবনিকা টেনে দেয় না। মৃত্যুর পরে মানুষ অনন্ত মহাজীবনে প্রবেশ করবে। অন্যান্য সৃষ্টিলোক মৃত্যু ও কিয়ামতের পরই নিঃশেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মানুষের রয়েছে বারযাখ জীবনের সুখ বা শাস্তি, পুনরুত্থান দিবসের হিসাব-নিকাশ, পুলসিরাত, বিচারের পরের অনন্ত অফুরন্ত মহা পুরস্কারস্বরূপ জান্নাতের চিরসুখময় অনন্ত জীবন অন্যথা জাহান্নামের সীমাহীন দুর্ভোগ ও মহা শান্তি। অন্যান্য সৃষ্টি জগতের মধ্যে মানুষের এ আখিরাতের মহা জীবনের অধিকারী হওয়াও তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে।

পবিত্র জীবিকা: আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টিলোকের মধ্যে মানুষকেই কেবল পবিত্র জীবিকা প্রদান করেছেন। তিনি অনিষ্টকর, অপবিত্র, নীচ ও হীনবস্তু আহার করা থেকে মানুষকে বিরত রেখেছেন। জীবন ধারণের জন্য উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করা, জীবনোপকরণ আবিষ্কার ও তৈরি করতে কেবল মানুষকেই শিখিয়েছেন। মানুষকে তিনি সৃষ্টিলোকের বড় বড় জীব জানোয়ারকে পদানত করে নিজের কাজে লাগানোর জ্ঞান দিয়েছেন। মানুষকে জলে, স্থলে, পাহাড়ে-পর্বতে ভ্রমণের কৌশল শিখিয়েছেন। এসবের মধ্যদিয়েও মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার অতুলনীয়তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

সারকথা

এই মহাবিশ্বে মানুষ তুচ্ছ ও হীন নয়, নয় কোন জড়দেহবিশিষ্ট ইতর প্রাণির মত কোন জীব। মানুষ উন্নত- উচ্চতর আত্মা ও দেহধারী মেধা-মননশীল বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন মহান আল্লাহর এক মহা মূল্যবান সৃষ্টি। যার অধীন সৃষ্টিলোকের সবকিছু। তাই মানুষ কারও কাছে তার মাথা অবনত করতে পারে না। মানুষ কেবল আল্লাহর খিলাফত কায়েম করবে, নিজের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখবে। আর তাহলেই অনন্ত জীবনে সুখী হতে পারবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url