বিবাহ ও এর প্রয়োজনীয়তা এবং বিবাহ সম্পর্কে ইসলামের বিধান

বিবাহের পরিচিতি ও তাৎপর্য বর্ণনা করতে পারবেন। কুরআন-হাদীসের আলোকে বিবাহের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করতে পারবেন। একাধিক বিবাহ সম্পর্কে ইসলামের বিধান আলোচনা করতে পারবেন। ইসলামের দৃষ্টিতে লিভ টুগেদার ও পতিতাবৃত্তির বিধান বলতে পারবেন।


বিবাহ: পরিচিতি ও তাৎপর্য

'নিকাহ' আরবি শব্দ-এর অর্থ হচ্ছে বিয়ে-শাদী বা বিবাহ। আভিধানিক অর্থ-একত্রিত করা, চুক্তি, বন্ধন, সংযুক্ত করা। ইসলামী পরিভাষায় ইচ্ছাকৃতভাবে একজন নারীর সারা শরীর দ্বারা আস্বাদিত হওয়ার 'আকদ বা চুক্তি'-কে বিয়ে-শাদী বা বিবাহ বলা হয়।

বিবাহ সংঘটিত হয় ইজাব ও কবুল শব্দ দ্বারা। এ দু'টি বিবাহের রুকন এবং উভয়টি ক্রিয়াপদ হতে হবে এবং উভয়টি অতীত কাল প্রকাশক হবে অথবা একটি অতীত কাল ও অপরটি ভবিষ্যৎ কাল হলেও চলবে। বিয়ে, বিয়ে দান, উপহার দান, মালিক বানানো ইত্যাদি শব্দ দ্বারাও বিবাহ সংঘটিত হতে পারে। অনুরূপ বিবাহ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্যে শর্ত হলো দু'জন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দু'জন নারী সাক্ষীর উপস্থিতিতে আব্দ সংঘটিত হওয়া। সাক্ষীদেরকে স্বাধীন, বুদ্ধিমান, প্রাপ্তবয়স্ক ও মুসলমান হতে হবে।

পৃথিবীর সকল মানুষকে আল্লাহ তা'আলা নারী-পুরুষ হতে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর বেঁধে দিয়েছেন দয়া ও মায়ার বাঁধনে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন-

'আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন- যাতে তোমরা তাদের নিকট শাস্তি পাও এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মধ্যে পরস্পরে ভালবাসা ও দয়া।  ( সূরা আর- রূম: ২১)

এ বিবাহ প্রক্রিয়া যেন অব্যাহত গতিতে বহমান থাকে সে ব্যবস্থাও তিনি করেছেন। আল্লাহ তা'আলা মানব প্রজন্মের অবিরাম আগমনধারা সুনিশ্চিত করার জন্যেই মানবের রক্তমাংসে দিয়েছেন কাম-ক্ষুধা। সেই কাম-ক্ষুধা নিভৃত করার বৈধপন্থা নির্দেশ করে আহবান করেছেন সে পথে পরিতৃপ্ত হতে। রাসূলুল্লাহ (স.) বিয়ের গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেছেন-

তোমরা প্রেমময়ী, অধিক সন্তান সম্ভবা নারীকে বিয়ে করবে। কারণ আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মাতের উপর গর্ব করবো।

মানুষের মধ্যে যে যৌনক্ষমতা রয়েছে এর সৃষ্টি উদ্দেশ্যহীন নয়। বরং মানব বংশের বৃদ্ধিই এর লক্ষ্য। আর সে জন্যই সৃষ্টি হয়েছে নারীর। ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে নারীকে গর্ভধারণের, সন্তান প্রসবের। আর মানুষকে উচ্ছৃংখলভাবে যত্রতত্র যৌনক্ষুধা নিবারণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বরং নিয়ম-নীতির আলোকে সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে সম্মানজনক পন্থায় কাম-চাহিদা পূরণ ও তা ফলপ্রদ করার পুণ্যময় রীতি প্রণয়ন করেছে শরী'আত। আর তারই নাম দেওয়া হয়েছে বিবাহ। যার অবর্তমানে মানুষ ও পশুতে ভেদাভেদ থাকে না। বিবাহের লক্ষ্য (সন্তান জন্ম দেওয়া) সাধিত না হলে থাকে না মানব বংশের অস্তিত্ব। সুতরাং মানব জীবনের কল্যাণ ও স্থিতিশীলতার জন্যে বিবাহ এক গভীর তাৎপর্যময় সত্য।

আরো পড়ুন: ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ ও পরিবার এবং মানব সৃষ্টি

বিবাহের প্রয়োজনীয়তা

বিবাহ একজন সুস্থ মানুষের জন্য অনিবার্যভাবে প্রয়োজন। মানুষের স্বভাবগত পরিচ্ছন্নতা, মানসিক ভারসাম্যতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার অন্যতম উপায় হচ্ছে বিবাহ। এ কারণেই অনিন্দ্য সুখের বাসভবন জান্নাতে বসেও যখন হযরত আদম (আ.) অতৃপ্তিতে ভুগছিলেন তখনই আল্লাহ তা'আলা মা-হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন তাঁর জীবন সঙ্গিনীরূপে। নর ও নারীর যুগল বাঁধনে শুরু হলো মানব জীবন। রক্তমাংসে সৃষ্ট এই মানুষের মধ্যে যে প্রকৃত যৌনক্ষুধা জমে ওঠে বয়সের পরতে পরতে তা একান্তই বাস্তব। সুতরাং ক্ষুধা যিনি দিয়েছেন সে ক্ষুধা নিবারণের পথও দেখাবেন তিনিই। আর তাই মহান আল্লাহ বিবাহ পদ্ধতির মাধ্যমেই তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহানবী (স.) বলেন-

'হে যুব সম্প্রদায়। তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করতে সক্ষম তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ, বিয়ে দৃষ্টি আনত রাখতে ও গুপ্তাঙ্গের হিফাযতে অধিক কার্যকর। আর যে ব্যক্তি বিয়ে করতে অক্ষম সে যেন রোযা রাখে। কেননা রোযা তার যৌনক্ষুধাকে অবদমিত করে।'

মানুষ যে খাবার গ্রহণ করে তা থেকে উৎপাদিত শক্তির নির্যাস হলো যৌনক্ষমতা। বিবাহের মাধ্যমে এ যৌনক্ষমতা যথার্থভাবে প্রবাহিত হতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি বিবাহ করার, স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করার ক্ষমতা না রাখে রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে রোযা রেখে শক্তি নিয়ন্ত্রিত করার আদেশ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনেও অনুরূপ 'আদেশ দিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামীন। বর্ণিত হয়েছে-

'তোমাদের মধ্যে যেসব ছেলের স্ত্রী নেই এবং যেসব মেয়ের স্বামী নেই তাদের এবং তোমাদের দাস- দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরকে বিয়ে দিয়ে দাও।  (সূরা আন-নূর: ৩২) 

যারা বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে না তাদেরকে দিয়েছেন ধৈর্যধারণের বিকল্প উপদেশ। আল্লাহ তা'আলা বলেন- 

'যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে।' ( সূরা আন-নূর: ৩৩)

মানব জীবনের জন্য পানাহার যেভাবে অপরিহার্য প্রয়োজন, আহার নিবাসের প্রয়োজনীয়তা যেভাবে যুক্তিতর্কের উর্ধ্বে, একজন যৌবনদীপ্ত মানুষের দৈহিক ও মানসিক জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে বিয়ের প্রয়োজনীয়তাও তেমনই। আর এ কারণেই কুরআন ও হাদীসে নির্দেশসূচক শব্দে উৎকীর্ণ করা হয়েছে বিবাহের আহবানকে।

ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব অসামান্য। বিবাহের প্রতি উৎসাহিত করে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন-

যে ব্যক্তি পূতঃপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে চায় সে যেন স্বাধীন ও ভদ্র নারীর সাথে প্রণয়বদ্ধ হয়।

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে 

 হযরত আবু আইউব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন: 'নবী-রাসূলগণের সুন্নাত চারটি। লজ্জাবোধ, সুগন্ধি ব্যবহার, মিসওয়াক করা এবং বিয়ে করা।

অন্য একটি বর্ণনায় আছে, হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর কয়েকজন সাহাবী একবার রাসূলুল্লাহ (স.)-এর জীবন সঙ্গিনীগণের খেদমতে এসে তাঁর ইবাদত সম্পর্কে জানতে চাইল। তা শুনে তাঁরা যেন নিজেদের ইবাদাত কম বলে মনে করল এবং সাথে সাথেই তাঁরা বলে উঠলো, তিনি কোথায় আর আমরা কোথায়? তাঁর তো পূর্বাপর সকল ত্রুটি ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। অতঃপর তাদের একজন বললেন, আমি কোন নারীকে বিবাহ করবো না। অন্যজন বললেন, আমি কখনো গোশ্ত খাবো না। আরেকজন বললেন আমি আর শয্যা গ্রহণ করে ঘুমাবো না। ঘটনাটি শুনে রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, লোকদের কি হলো। তারা এই এই বলে, অথচ আমি নামায আদায় করি আবার ঘুমাই, রোযা রাখি আবার ইফতার করি এবং নারীদেরকে বিবাহ করি। সুতরাং যে আমার আদর্শ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল সে আমার দলভুক্ত নয়।

উপরোক্ত আলোচনা হতে যে বিষয়গুলো আমরা জানতে পারি তা হচ্ছে

১. বিবাহের মাধ্যমে একজন মু'মিন বান্দা আল্লাহর সমীপে পবিত্র হয়ে ওঠার পথ পায়।

২. বিবাহ করা সকল নবী- রাসূলের সুন্নাত।

৩. বিবাহ করা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর আদর্শ।

এক কথায়, বিবাহের পবিত্র ছোঁয়ায় পরিচ্ছন্ন জীবন লাভ করে একজন বিবাহিত মু'মিন। মহানবীর আদর্শের আলোকে আলোকিত হয়ে ওঠে তার কর্মময় জীবন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন- 

হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন: 'কোন বান্দা যখন বিবাহ করল তখন সে দীনের অর্ধেকটা পূর্ণ করে ফেলল। সুতরাং সে যেন অবশিষ্ট অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে।'

মানুষের এই প্রাকৃতিক চাহিদার কারণেই মানুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অথচ শরী'আত এটাকে পুরো দ্বীনের অর্ধেক বলে আখ্যায়িত করেছে। কারণ শারীরিক, মানসিক ও চারিত্রিক উৎকর্ষ ও পবিত্রতা নির্ভর করে এর উপর। কেননা সমস্ত ইবাদাতের ক্ষেত্রে মানসিক ও চারিত্রিক স্থিতিশীলতা অবশ্যকাম্য যার অধিকাংশটাই উৎসারিত হয় বৈধ যৌনমিলনের মাধ্যমে, যার ভিত্তি হলো শুধু বিবাহ।

আরো পড়ুন: ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ ও পরিবার এবং মানুষের মর্যাদা

একক ও একাধিক বিবাহ

ইসলামের বিধানে একক বিবাহ ও বহু বিবাহ এ দুটোরই সম্মতি রয়েছে। তবে একক বিবাহই বেশী প্রচলিত। বহু বিবাহকে ইসলাম উৎসাহিত করেনি। তবে ক্ষেত্র বিশেষে শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি প্রদান করেছে মাত্র। তাই বলে অকারণে একধিক বিয়ে করতে এবং বিশেষ কারণ ব্যতীত ও শর্তসাপেক্ষে এক সঙ্গে চার জনের অধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবে না। নিম্নে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের বিষয়টি যুক্তির নিরীখে তুলে ধরা হল।

প্রাক-ইসলামী যুগে নারীর অবস্থা যে অত্যন্ত হীন ও জঘন্য ছিল তা আজ আর তর্কের বিষয় নয়, বরং সর্বজনস্বীকৃত সত্য। তখন নারীগণ পুরুষের ভোগের সামগ্রী ছিল মাত্র। নারীর যে নিজস্ব সত্ত্বা আছে তা সে সমাজে কেহ স্বীকার করত না। পুরুষ যত ইচ্ছা স্ত্রী গ্রহণ করতে ও যখন ইচ্ছা তালাক প্রদান করতে পারত। পিতার মৃত্যুর পর তার অন্যান্য সম্পত্তির ন্যায় স্ত্রীগণও পুত্রদের মধ্যে বণ্টিত হত। এহেন সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইসলাম রুখে দাঁড়ায় এবং এই সমুদয় ব্যবস্থাকে সমূলে উৎপাটিত করে নারীর ন্যায্য অধিকারসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। পুরুষ কর্তৃক স্ত্রী গ্রহণের সীমা শর্ত সাপেক্ষে ঊধর্ব সংখ্যক চারজন নির্ধারিত করা হয়। কেহ যদি শর্ত পালনে অর্থাৎ সমতা বিধানে অক্ষম হয় তবে তার জন্য একের অধিক স্ত্রী গ্রহণ করা কিছুতেই বৈধ নয়। আধুনিক পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থায় ও আমাদের প্রতিবেশী ভারতের হিন্দু সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষ কর্তৃক একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করা কেবল নিন্দনীয়ই নয়, কঠোর দন্ডনীয়ও বটে। এই ব্যবস্থার কারণ দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি বজায় রাখা এবং নারীর প্রতি অন্যায় অবিচারকে প্রতিরোধ করা। যদি কেবল এই কারণেই এই ব্যবস্থা হয়ে থাকে তবে এতে নতুনত্বের কিছু নেই। চৌদ্দশত বৎসর পূর্বে ইসলাম এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছে। একাধিক স্ত্রী গ্রহণে ইসলাম কর্তৃক আরোপিত শর্ত সমতা বিধানের অর্থ এই যে, যদি কোন ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীগণের সাথে সমান ব্যবহার দ্বারা দাম্পত্য জীবনের সুখ শান্তি বজায় রাখতে পারে ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা দিতে পারে তবে তার জন্য একান্ত প্রয়োজনবোধে উধর্বপক্ষে চারজন স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি আছে, কিন্তু কোন নির্দেশ নেই। আর যদি সকল ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করে সুখ-শান্তি বজায় রাখতে সক্ষম না হয়, তবে তার জন্য একাধিক স্ত্রী গ্রহণ নিষিদ্ধ। এখন লক্ষণীয় বিষয় যে, কোন স্বাস্থ্যবান পুরুষের জন্য যৌন সম্পর্কিত কারণে এক স্ত্রী কোন মতেই যথেষ্ট না হলে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা বা প্রতিবেশী হিন্দু সমাজ ব্যবস্থা মতে তার বেশ্যাগমন বা কোন বান্ধবী অন্বেষণের ন্যায় হীন ও জঘন্যতম সমাজ বিরোধী কাজে লিপ্ত হওয়ার আশংকা থাকে। পুরুষের এই আচরণ নারীর প্রতি কি একটা অবিচার নয়? অথচ এরূপ ক্ষেত্রে ইসলাম শর্ত সাপেক্ষে চারজন পর্যন্ত স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়ে নৈতিকতা বর্জিত অন্যায় ও অশ্লীলতাসহ সমাজ বিরোধী কার্যের হাত হতে মানব জাতিকে রক্ষা করে সমাজের অশেষ কল্যাণ সাধন করেছে। প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক ব্যক্তিই তা এক বাক্যে স্বীকার করবেন। এরূপ ক্ষেত্রে যদি কেহ ইসলামের সাম্যবাদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বলেন যে, এক পুরুষ চার স্ত্রী গহণ করতে পারলে এক নারী চার স্বামী গ্রহণ করতে পারবে না কেন? উত্তরে বলতে হয়, স্বামী হচ্ছেন স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানের পিতা। অতএব চার স্বামী হলে কোন স্বামী গর্ভজাত সন্তানের পিতা, তা শনাক্ত করার উপায় বের করা কঠিন? এরূপ বিতর্কিত ও শালীনতা বিরোধী নীতি ইসলাম গ্রহণ করতে পারে না। কোন ভদ্র মহিলাও শনাক্তবিহীন পিতার সন্তান জন্ম দিতে রাজী হবেন না। অতএব ইসলামের এ নীতি সাম্য ও সভ্যতার মোটেই পরিপন্থী নয়।

আরো পড়ুন: শিরক কী শিরকের প্রকারভেদ  শিরকের কারণ ব্যাখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত

ইসলামের দৃষ্টিতে লিভটুগেদার ও পতিতাবৃত্তি

ইসলাম স্বচ্ছতার ধর্ম, পবিত্রতার ধর্ম। ইসলাম বৈধ পন্থায় নারী-পুরুষের কামভাব চরিতার্থ করার পক্ষ সমর্থন করে এবং এ ব্যাপারে নারী-পুরুষকে উৎসাহিত করে। বিবাহ বর্জিত পন্থায় নারী পুরুষের একত্রে বসবাস, সহবাস, গণিকালয়ে গমন কোনটাই ইসলাম সমর্থন করে না। বরং ইসলাম বৈধ বিবাহ ব্যতীত নারী পুরুষের দৈহিক মিলন, একত্রে বাস অপরাধ হিসেবে ধার্য করেছে। ইসলামের বিধান মতে বিবাহ ব্যতীত নারী-পুরুষের একত্রে বসবাস, লিভ টুগেদার, সহবাস ইত্যাদি কর্ম ব্যাভিচারের সামিল। গণিকালয়ে গমনও একই অপরাধ। যারা এই ধরনের আচার-আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে ইসলামী বিধান মতে ব্যাভিচারের শাস্তিতে তারা নিপতিত হবে। নিকটাত্মীয় যাদেরকে বিবাহ করা ইসলামী বিধানমতে নিষিদ্ধ একমাত্র সে সকল নারী-পুরুষই একত্রে চলাফেরা করতে পারে বা একজন আরেকজনের সহযাত্রী হতে পারে। তবে তারা সহাবস্থান বা সহবাস করার কোন অধিকার রাখে না। ইসলামের বিধান হল যে, সহোদর যুবক-যুবতী ভাই বোনও একত্রে বসবাস বা লিভ টুগেদার করতে পারবে না। তাছাড়া বিয়ে ব্যতীত কোন যুবক-যুবতী, ছাত্র-ছাত্রী, সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধবী দু'জনে একত্রে নির্জনে চলাফেরা করতে পারবে না। তারা প্রেমের আতিশয্যে বিবাহ ব্যতীত লিভ টুগেদার করতে পারবে না। বিবাহ ব্যতীত বন্ধু-বান্ধবীর দাবী নিয়ে একত্রে বসবাস ও লিভ টুগেদার জঘন্য অপরাধ এবং ব্যভিচারের সামিল। এমনকি নির্জনে কথাবার্তা বলাও নিষিদ্ধ। কিন্তু আজকের বাস্তবতার দিকে তাকালে মনে হয়, যারা বিয়ে-শাদী করে বৈধ উপায়ে একত্রে বসবাস ও সংসার ধর্ম পালন করছেন তারাই মনে হয় ভুল পথে। পাশ্চাত্য সভ্যতার বিষফল আজ এত শক্তভাবে আমাদের সমাজে বাসা বাঁধছে যে তার ছোবল থেকেও আমাদের সমাজ মুক্ত নয়। তাই বলে, বিবাহে নিরুৎসাহিত হয়ে পশুর মতো যত্রতত্র যার তার সাথে যৌন সম্ভোগ করা যাবে না। পাশ্চাত্য সভ্যতার এ চরিত্র বিধ্বংসী কার্যকলাপ থেকে প্রতিটি মানুষকে বিশেষ করে প্রতিটি মুসলমান নর- নারীকে সচেতন থাকতে হবে। প্রগতীবাদের দাবীদার অনেক নারী বিবাহকে স্বেচ্ছায় গলায় ফাঁস নেয়ার মতো মনে করে থাকে। অথচ তারা পর পুরুষের সাথে অবাধে পশুর মত যৌন সম্ভোগ করে। বিনিময়ে কিছুই পায় না। এতে নারী তার সম্ভ্রম হারিয়ে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন ও ঘৃণিত হয়ে পড়ে। কাজেই বিবাহ ব্যতীত লিভ টুগেদার, গণিকালয় বা পতিতালয়ে গমন, পরকীয়া প্রেম, ছেলে-মেয়ের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টির মাধ্যমে দেহ দান, তা টাকার বিনিময়ে বা ভালবাসার বিনিময়ে হোক, কোনটাই ইসলাম স্বীকৃতি প্রদান করে না। তাই, পাশ্চাত্যের এ ইসলাম বিরোধী প্রথা পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য। এ বিষয়ে সমাজ যত তাড়াতাড়ি অনুধাবন করতে পারবে ততই সমাজের মঙ্গল ত্বরান্বিত হবে।

সারকথা

বিবাহ একজন সুস্থ মানুষের জন্য প্রকৃতিগত কারণেই প্রয়োজন। মানুষের স্বভাবগত পরিচ্ছন্নতা, মানসিক ভারসাম্যতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার অন্যতম উপায় হচ্ছে বিবাহ। বিবাহ সংঘটিত হয় ইজাব ও কবুলের মাধ্যমে। বিবাহ করা সকল নবী রাসূলের সুন্নাত। আল-কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমেই বিবাহ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বিবাহ একজন যৌবন দীপ্ত নর-নারীর দৃষ্টি আনত রাখে এবং গুপ্তাঙ্গের হিফাযত করে। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন সুস্থ সবল ও যৌবন তেজোদ্দীপ্ত পুরুষ শর্ত সাপেক্ষে ও প্রয়োজনের তাগিদে এক সাথে চার জন স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে। যাদের বিবাহ করার সামর্থ নেই কিন্তু যৌনক্ষুধা রয়েছে তাদেরকে রোযা রেখে ধৈর্য্য ধারণ করে কামভাব অবদমিত করতে হবে। বিবাহ ব্যতীত ইসলাম কোন-নর-নারীকে একত্রে মেলামেলা করার অনুমতি প্রদান করে না। বর্তমান ইউরোপীয় উচ্ছৃঙ্খলতার শিকার একশ্রেণীর যুবক-যুবতী বিবাহ ব্যতীত পরস্পরের প্রতি ভালবাসার কারণে একত্রে বসবাস বা লিট টুগেদার করে যৌন চাহিদা পূর্ণ করে। ইসলামে এ ধরনের জঘন্য কর্মের কোন অনুমতি নেই।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url