ইসলামে গর্ভধারণ ও সন্তান প্রতিপালন সম্পর্কে বিস্তারিত

গর্ভ ধারণ ও সন্তান প্রতিপালন গর্ভাবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর করণীয় সম্পর্কে বলতে পারবেন। ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তান ধারণে স্ত্রীকে বাধা দেওয়া সঠিক নয়" এ সম্পর্কে বলতে পারবেন। সন্তান প্রতিপালনে মায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য আলোচনা করতে পারবেন।


গর্ভধারণ

সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলনই হচ্ছে ইসলামের পারিবারিক জীবনের লক্ষ্য এবং যে মিলন এ উদ্দেশ্য সম্পন্ন করে, তাই ইসলামসম্মত মিলন। এ মিলনের ফলে সন্তান যখন স্ত্রীর গর্তে স্থান লাভ করে তখন একাধারে স্বামী ও স্ত্রীর উপর এক নবতর দায়িত্ব অর্পিত হয়। তখন স্ত্রীর দায়িত্ব এমনভাবে জীবন যাপন ও দিন-রাত অতিবাহিত করা, যাতে করে গর্ভস্থ সন্তান সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে, বেড়ে উঠার ব্যাপারে কোনরূপ বিঘ্নের সৃষ্টি না হয়। স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে এমন সব কাজ ও চাল-চলন থেকে বিরত থাকা, যার ফলে সন্তানের নৈতিকতার উপর খারাপ প্রভাব পড়তে না পারে। এ পর্যায়ে পিতার কর্তব্যও কিছুমাত্র কম নয়। তাকেও স্ত্রীর স্বাস্থ্য, চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া ও বিশ্রামের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে এবং মা ও সন্তান- উভয়ের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় যত্ন ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে।

গর্ভে সন্তান সঞ্চার হওয়ার পর মায়ের কর্তব্য স্বীয় স্বাস্থ্য এবং মন উভয়কেই যথাসাধ্য সুস্থ রাখতে চেষ্টা করা। কেননা গর্ভস্থ ভ্রূণের সাথে মায়ের দেহ-মনের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। এ সময় মা যদি অধিক মাত্রায় শারীরিক পরিশ্রম করে, তবে গর্ভস্থ সন্তানের শরীর গঠন ও বৃদ্ধির উপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি, নাচ, ব্যয়াম ও অধিক পরিশ্রম প্রভৃতি ভ্রূণের পক্ষে বড়ই ক্ষতিকর। শুধু তাই নয়, গর্ভবতী নারীর চাল-চলন, চিন্তা-বিশ্বাস, গতিবিধিও চরিত্রের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে গর্ভস্থ সন্তানের মন ও চরিত্রের উপর। এ সময় মা যদি নির্লজ্জভাবে চলাফেরা করে, করে কোন লজ্জাকর কাজ, তবে তার গর্ভস্থ সন্তানও অনুরূপ নির্লজ্জ ও চরিত্রহীন হয়ে গড়ে উঠবে এবং তার বাস্তব প্রকাশ দেখা যাবে তার যৌবনকালে। পক্ষান্তরে এ সময় মা যদি অত্যন্ত চরিত্রবতী নারী হিসেবে শালীনতার সব নিয়ম-কানুন মেনে চলে, তার মন- মগজ যদি এ সময় পূর্ণভাবে ভরে থাকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, পরকালের ভয় এবং চরিত্রের দায়িত্বপূর্ণ অনুভূতিতে, তবে সন্তানও তার জীবনে অনুরূপ দায়িত্ব জ্ঞানসম্পন্ন, চরিত্রবান ও আল্লাহর প্রতি অনুগত হয়ে গড়ে উঠবে। ভ্রূণের সঙ্গে মায়ের কেবল দেহেরই সম্পর্ক নয়, মনেরও যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে, সে দৃষ্টিতে বিচার করলে উপরের কথাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। এ জন্যে গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের কর্তব্য এ সময় শালীনতা ও লজ্জাশীলতার বাস্তব প্রতিমূর্তি হয়ে সব সময় আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হওয়া, কুরআন তিলাওয়াত ও নিয়মিত নামায আদায় করা। 'ভাল মা হলে ভাল সন্তান হবে, আমাকে ভালো মা দাও আমি ভালো জাতি দেব'- নেপোলিয়নের সে কথাটির কার্যকারিতা ঠিক ঐ সময়ই অর্থবহ হয়ে উঠবে।

সূরা 'আল-বাকারার'-এ আয়াতে قد موا لانفسكم 'এবং তোমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ রচনার জন্যে এমনি ব্যবস্থা গ্রহণ করো' অংশের দু'টো অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে: দুনিয়ার বৈষয়িক কাজ-কর্মে এতদূর লিপ্ত হয়ে যেও না, যার ফলে তোমরা দীনের কাজে গাফিল হয়ে যাও। আর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে-স্ত্রী সহবাস করবে তোমরা এ নিয়াত সহকারে যে, তোমরা আল্লাহর মেহেরবাণীতে যেন সন্তান লাভ করতে পার এবং দুনিয়ার জীবনে যেন সে সন্তান তোমাদের কাজে লাগতে পারে। তোমরা যখন বৃদ্ধ, অকর্মণ্য ও উপার্জনক্ষম হয়ে যাবে, তখন যেন তারা তোমাদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। আর তারা তোমাদের রূহের শাস্তি ও মাগফিরাতের জ্ন্যে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পায়ে। এভাবেই পিতামাতার মঙ্গলময় প্রবিষ্যৎ রহিত হতে পারে। এ ভবিষ্যৎ বংশদর ইহকালীন যেমন কল্যাণকর, পরকালীনও ঠিক তেমনি কল্যাণকর।

আরো পড়ুন: বিবাহ পাত্র-পাত্রী নির্বাচন একে অপরকে দেখার নিয়ম

সন্তান ধারণে বাধাদান

একজন স্ত্রী গর্ভধারণ করে সন্তান জন্য দেওয়ার মাধ্যমেই সে তার নারীত্বের বহিঃ প্রকাশ ঘটাতে চায়। গর্তে সন্তান ধারণ করা এবং তা মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সময় ভূমিষ্ঠ করা একজন নারী বা স্ত্রীর প্রকৃতিগত স্বভাব। তাই সন্তানকে গর্ভে ধারণ করা, সেজন্য কষ্ট স্বীকার করে গর্তে তা রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রতিটি মায়ের তথা স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। গর্ভে সন্তান আসলে স্বামী-স্ত্রীর উপর দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- তারা উভয়েই তা সংরক্ষণের জন্যে তৎপর হবে। গর্ভস্থ সন্তানকে সম্পদ মনে করে সকল প্রকার বিশাদাগাদ থেকে রক্ষা করতে হবে এবং সন্তান নষ্ট করার সকল পদ্ধতি থেকে দূরে থাকতে হবে। কিন্তু অনেক স্বামী-স্ত্রী বা পিতা-মাতা গর্ভস্থ সন্তানের উপর বিপদ চাপিয়ে দেন এবং গর্ভস্থ ভ্রূণ যাতে অঙ্কুরিত হতে না পারে সে জন্য সব ব্যবস্থা করে গর্ভপাত ঘটিয়ে খাবেন। এটা ইসলামের বিধান সম্মত নয়। তা সত্ত্বেও প্রাচীনকাল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত নানা ধরণের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে গর্ত নষ্ট করে দেয়ার বা গর্ভপাত ঘটানোর।

প্রাচীনকাল থেকেই স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলনের ফলে যাতে গর্ভে সন্তান না আসতে পারে তার জন্য তারা আয়ন করত। আর সন্তান এসে গেলে তারা গর্ভপাত ঘটাত। জাহেলিয়াত যুগে সন্তানের আধিক্য কিংবা আদৌ সন্তান না হওয়ার কিংবা কন্যা সন্তান হওয়ার আশংকা থেকে বাঁচার জন্য তারা এ কাজ করত। তা ছাড়া অজান্তে একজন স্ত্রীর গর্ভ সঞ্চার হয়ে গেলে প্রসবের সঙ্গে সঙ্গে অথবা সন্তান কিছুটা বড় হলেও তারা এ শিশু সন্তানকে হত্যা করত। আর এ হত্যা মানব জাতির ইতিহাসকে কলংকিত করেছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে গর্ভনিরোধ, গর্ভপাত, ভ্রূণ হত্যা কিংবা সদ্য প্রসূত সন্তান হত্যা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ এবং তা অন্যার কাজ এবং তা মানব হত্যার সামিল। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একজন মায়ের গর্ভনিরোধ, গর্ভপাত ও ভ্রূণ হত্যার প্রয়োজন হলে তা ভিন্ন কথা এবং ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু মায়ের জীবনের ঝুঁকি এড়ানোর উদ্দেশ্যে এরকমটি করা বৈধ, তা ছাড়া অন্য কোন কারণে এ কাজকে ইসলাম সমর্থন করে না।

আরো পড়ুন: ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ ও পরিবার এবং মানব সৃষ্টি

সন্তান প্রতিপালনে মায়ের দায়িত্ব

সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই মায়ের উপর সন্তান লালন-পালনের কতিপয় দায়িত্ব এসে যায়। নিম্নে মায়ের সন্তান লালন-পালনের বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হল-

১. দুগ্ধ দান: একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হবার সাথে সাথে শাখা যেরূপ তার মূলের প্রতি মুখাপেক্ষী থাকে, তেমনি শিশু তার মায়ের মুখাপেক্ষী থাকে। আর মায়ের স্তনেও তখন দুধ এসে যায় শিশুর খাদ্য হিসেবে। শিশুর জন্মের সাথে সাথে মা তার বুকের শাল দুধ শিশুকে খাওয়াবেন। শিশুর স্বাস্থ্য, মন-মানস, রুচি ও ভবিষ্যৎ গঠনে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। এজন্য শিশুকে দুগ্ধ দান করার জন্য মায়ের প্রতি ইসলামের নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ বলেন-

'জননীগণ নিজ সন্তানদের পূর্ণ দু'বছর স্তন্য দান করবে। (সূরা আল-বাকারা: ২৩৩)

২. পরম স্নেহে প্রতিপালন: সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মাতা সন্তানকে হৃদয়ের দরদ ও পরম স্নেহ-যত্ন সহকারে লালন-পালন করবেন। মনে কোনরূপ ঘৃণা না রেখে নিজ হাতে সন্তানের পরিচর্যা করবেন। সন্তানকে আদর-যত্ন দিয়ে বড় করে তুলবেন। সন্তানকে সম্পদ মনে করবেন।

৩. সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষাদান: সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব মায়ের উপরই ন্যস্ত। যেহেতু শিশুরা মায়ের সান্নিধ্যে বেশিক্ষণ থাকে এবং মায়ের সাথে প্রথম কথা বলতে শুরু করে তাই মা'ই হলেন শিশুর প্রধান শিক্ষয়িত্রী। আরবী ভাষায় একটি প্রবাদ আছে-

মা হলেন ঘরে সন্তানের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।' মায়ের আচরণ, তাঁর কথাবার্তা এমনকি চাল-চলন সবকিছু শিশু অনুসরণ করে, তাই মাকে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। শিশুর এ ওয়াট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মাতা-পিতা উভয়কেই ইসলামী আদর্শে আদর্শবান হয়ে শিশুকে তদনুযায়ী গড়ে তোলা কর্তব্য।

৪. পিতৃহীন সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করা: পিতার সাথে মাতাও সন্তানকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সম্ভাব্য সব রকমের সহযোগিতা দান করবেন। আর দুর্ভাগ্যবশত যদি পিতা মারা যান, তবে মাতাকে এককভাবে এ গুরু দায়িত্ব পালন করতে হবে। এরূপ ত্যাগ- তিতিক্ষা ও গুরু দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে মহান আল্লাহ মাকে অফুরন্ত পুরস্কার প্রদান করবেন। এমন কি কিয়ামতে ঐ মা মহানবীর (স.) পাশাপাশি অবস্থান করবেন বলে হাদীসে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। মহানবী (স.) বলেন-

'যে বিধবা মহিলা রূপ-গুণ এবং বংশ মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও ইয়াতীম সন্তানদের লালন-পালন করার উদ্দেশ্যে পুনঃবিয়ে করেনি এবং ইয়াতীম সন্তানদের লালন-পালন করতে গিয়ে কষ্ট ও পরিশ্রমে তার চেহারা মলিন হয়ে গিয়েছে, এমনকি তার ইয়াতীম সন্তানগণ সংসারে প্রতিষ্ঠিত হওয়া অথবা মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত কষ্ট করতেই থাকে, রাসূলুল্লাহ (স.) তাঁর মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় দ্বারা ইশারা করে বললেন, আমি এবং ঐ বিধবা মহিলা কিয়ামতের দিন এমনিভাবে পাশাপাশি অবস্থান করব।' (আবু দাউদ)

৫. ধর্মীয় শিক্ষাদান: একজন মা তার সন্তানকে উত্তমভাবে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারেন। নিজে ধর্মীয় জীবন যাপন করে সন্তানকে ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান এবং দু'আ-কালাম শিক্ষা দিতে হবে। ওযু- গোসল, পাক-নাপাক, হালাল-হারাম ইত্যাদি বিষয়ে মা নিজেই শিক্ষকের ভূমিকা পালন করবেন। সন্তান কথা বলতে চাইলে তাকে কালিমা তাইয়্যেবা শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। হাদীসে আছে, 'যে ব্যক্তির প্রথম ও শেষ কথা শাহাদাতের কালিমা হবে সে জান্নাতি হবে।'

৬. পরিচ্ছন্ন জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করা: সুস্থ-সবল সন্তান গড়ে তোলার জন্য সন্তানের পরিচ্ছন্নতার দিকে মায়ের খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দিতে হবে। নিজেকে ও পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিজেদের ঘর-দরজা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাসহ সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা মায়ের দায়িত্ব। আল কুরআনে এসেছে:

'বলুন, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যেসব শোভার বস্তু সৃষ্টি করেছেন, কে তা হারাম করেছে? (সূরা আল-আরাফ ৩২)

মহানবী (স.) বলেন:

'আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতা ভালবাসেন। তিনি পরিচ্ছন্ন, অতএব তিনি পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। তিনি দয়াবান, অতএব তিনি দয়ালু মানুষকে ভালবাসেন। তিনি দাতা, অতএব তিনি দানশীল লোকদেরকে ভালবাসেন। সুতরাং তোমরা তোমাদের ঘরের আঙিনা পরিচ্ছন্ন রাখ এবং ইয়াহুদীদের সাথে সাদৃশ্য বজায় রেখো না। (তিরমিযী)

৮ আদব-কায়দা ও সৌজন্য শিক্ষা: শিশু সন্তান মাকে বেশি অনুসরণ করে। কাজেই শিশু সন্তানকে আমর কায়দা, সৌজন্যবোধ শিখাতে হবে। সুন্দর আচার-আচরণে তাকে গড়ে তুলতে হবে। শিশুকে ছদ্রতা, বিনয় সরলতা, সততা, সত্যবাদিতা ইত্যাদি গুণ্যবলী অর্জনে সহায়তা করতে হবে। খারাপ আচার আচরণ, কৃষ্ণভালে থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতে হবে।

৯. মন-মানসিকতার বিকাশ: শিশুর মানসিক বিকাশে মায়ের ভূমিকা সীমাহীন। মা তা মানসিকতা গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারেন। মায়ের উন্নত চিন্তা, রুচি, ভাষা, আদ তামাদ্দুন, কৃষ্টি-সভ্যতা, ঐতিহ্য, আচার-আচরণ ইত্যাদি শিশুর মন-মালস গড়ে তোলার সহায়ক হয়। কাজেই মাকে শিশুর মানসিক গঠন ও বিকাশে উত্তম ভূমিকা পালন করতে হবে। মায়েরা তাদের মধ্যে উন্নত মানসিকতা সৃষ্টি করবেন। সব সময় সন্তানদেরকে আশাবাদী করতে হয়। কোন ব্যাপারে নিরাশ হাত দেওয়া ঠিক নয়। নিয়মিত জান্নাত ও জাহান্নামের জীবন্ত চিত্র তাদের সামনে তুলে ধরবেন। এতে তাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম পরকালের মুক্তি ও পুরস্কারকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হবে। তাদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত হবে। কখনো যেন তাদের আত্মসম্মানবোধে আঘাত না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। বৈত সীমা পার্যন্ত তাদের মানসিক প্রবণতাকে উৎসাহিত করবেন। তাদেরকে পরিকল্পিত জীবন যাপনে অভ্যন্ত করে গাড় তুলাবেন। অপসংস্কৃতির সয়লাব থেকে বেঁচে থাকার মত তাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করবেন। তাদের মধ্যে বীরত্ব ও দৃঢ়তা অবলম্বনের শিক্ষা দেবেন। এমনভাবে জীবনের সঠিক লক্ষ ও উদ্দেশ্য স্থির করে দেবেন যাতে আজীবন। তারা এর উপর অটল-অবিচল থাকে। তাদের মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ সৃষ্টি করার বিষয়ে শিক্ষা দেবেন। মানুষ আল্লাহর খলিফা। আল্লাহর হুকুম-আহকাম পালন করাই মানুষের প্রকৃত দায়িত্ব-কর্তব্য। প্রতিটি মানুষের উপর একদিকে রয়েছে আল্লাহর অর্থাৎ স্রষ্টার অধিকার, আর অপরদিকে রয়েছে- অগণিত সৃষ্টির অধিকার। তাই তাদের মনে সকলের অধিকার আদায়ের চেতনা জাগ্রত করাতে হবে। তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধ পালনের অনুভূতি সৃষ্টি করে দিতে হবে।

আবদুল কাদের জিলানী (র.)-এর মা তার পুত্রকে যেভাবে সত্য কথা বলা এবং সৎপথে চলার আদর্শ শিখিয়েছিলেন তাঁর মত সকল মা-কেই হতে হবে। হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর মা বিবি হাজিরা যেভাবে সন্তানকে আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী করার জন্য সহাস্যবদনে স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন মা হিসেবে সন্তানকে আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেয়ার মানসিকতা গড়ে তুলবে হবে।

১০. ব্যবহারিক শিক্ষা : দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক কাজ থাকে- যা একজন মা তার শিশুকে সহজে শেখাতে পারেন। নিজেদের ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় গোছানো, ঘর-দুয়ার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, ওযু-গোসল করে পাক-সাফ হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিতে পারেন। বিশেষ করে মেয়ে সন্তানকে গৃহস্থালী কাজ-কর্মে অভ্যস্ত করে তোলা, রান্না-বান্না ও অন্যান্য কাজের শিক্ষা দিয়ে দক্ষ ও সুনিপুণ গৃহিনী করে গড়ে তুলতে পারেন।

১১. সন্তানের তত্ত্বাবধান: একজন আদর্শ মাতার সবচেয়ে বড় কতব্য হচ্ছে তার সন্তানদের তত্ত্বাবধানপ্রপ্রপপ্র করা, সন্তানদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাওয়া। মাকেই মমতাময়ীর ভূমিকা নিয়ে সন্তানকে উত্তমরুপে গড়ে তুলতে হবে। কেননা ইসলাম মাকে গৃহের দায়িত্বশীলরূপে স্থির করেছে। হাদীসে এসেছে।

. 'আর স্ত্রী তার স্বামীর এবং পরিবার-পরিজন ও সন্তানদের তত্ত্বাবধায়ক। কাজেই সেও তার মারিত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

সারকথা

সন্তান সমাজে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কোন মতেই পিতা-মাতা সন্তানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবেন না। সন্ত্রাণের ভরণ-পোষণ, চিকিৎসা, অন্ন-বস্ত্র, শিক্ষা, সভ্যতা, চরিত্র গঠন ইত্যাদির প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা কন পি মারারই খায়িত্ব। আর এ সামগ্রিক দায়িত্ব পালন করতে পারালই "নিতা-মাতার মধ্যে মহাদ আসাদ সাহাবীর হওয়া যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url