ইসলামে সম্পদের উত্তরাধিকারের বিধান পুরুষদের নারীদের নির্ধারিত অংশ

আজ এই আর্টিকেলটিতে ইসলামে সম্পদের উত্তরাধিকারের বিধান সম্পদের উত্তরাধিকার পুরুষদের নির্ধারিত অংশ নারীদের নির্ধারিত অংশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।


ভূমিকা

পুরুষদের জন্য সে সব ধন-সম্পদে নির্দিষ্ট অংশ রয়েছে, যা পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়-স্বজনরা রেখে গেছে, অনুরূপভাবে স্ত্রীলোকদের জন্যও সে সব ধন-সম্পদে অংশ রয়েছে, যা পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছে, তা অল্প কি বেশি হোক, এক নির্ধারিত অংশ। (সূরা আন-নিসা: ৭)

লোকেরা যে ধন-সম্পদ সংরক্ষিত করে রেখে যায়, তা তাদের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। এই বণ্টনে পুরুষ-নারী উভয় শ্রেণীর লোকেরা মীরাস বা অংশ পাওয়ার অধিকার সম্পন্ন হলে পুরুষ-নারী উভয়ই অংশীদার হবে। তা কেবল পুরুষ উত্তরাধিকারীরা পাবে, নারীরা পাবে না, কিংবা কেবল নারী উত্তরাধিকারীরা পাবে, পুরুষরা পাবে না, কুরআন তা অগ্রাহ্য করেছে। ইসলাম-পূর্ব জাহিলিয়াতের সময়ে নারী ও নাবালেগ সন্তানরা তা পেত না। তখন সামাজিকভাবে এই নীতি স্বীকৃত ও কার্যকর ছিল না, বংশের মধ্যে যারা যুদ্ধ করতে পারে, অস্ত্র চালাতে ও গনীমতের মাল লাভ করতে সক্ষম, কেবল তারাই পিতা-মাতার রেখে যাওয়া সম্পদের উত্তরাধিকারী হত। কুরআন এ নীতিকে রহিত করে দিয়েছে।

এছাড়া দান বা ওছিয়াতের মাধ্যমেও অন্যের সহযোগিতা করার জন্য ইসলামে জোর তাগিদ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কতিপয় নীতিমালা অবশ্য পালনীয় যা অত্র ইউনিটে আলোচিত হয়েছে। আলোচনার সুবিধার জন্য এ ইউনিটকে পাঁচটি পাঠে বিভক্ত করা হয়েছে। 

আরো পড়ুন: বিবাহ পাত্র-পাত্রী নির্বাচন একে অপরকে দেখার নিয়ম

সম্পদের উত্তরাধিকার

মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের প্রকারভেদ সম্পর্কে বলতে পারবেন। আসহাবুল ফুরূদ কাদেরকে বলা হয় এবং এরা কত জন তা উল্লেখ করতে পারবেন। আসাবা কাকে বলে, এরা কত প্রকার তা বর্ণনা করতে পারবেন।বিভিন্ন প্রকার আসাবার বর্ণনা দিতে পারবেন।

মহান আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনি ভাল করেই জানেন মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার কে কতটুকু পাবে। কাকে কতটুকু দিলে তার প্রতি কোন অন্যায় অবিচার হবে না। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে এ বিষয়টি অত্যন্ত পরিস্কার। তিনি নারী-পুরুষ উভয়ের সঠিক পাওনা তাঁর বাণীতে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।

মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের প্রকারভেদ

মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারগণ দুই প্রকার-

১. আসহাবুল ফুরূদ (নির্ধারিত অংশ প্রাপ্ত উত্তরাধিকারীগণ)

২. আসাবা (অবশিষ্টাংশ প্রাপ্ত উত্তরাধিকারীগণ)

আসহাবুল ফুরূদ

যেসব উত্তরাধিকারীদের জন্য ইসলামী শরী'আত কর্তৃক নির্ধারিত হিসসা বা অংশ রয়েছে তাদেরকে আসহাবুল ফুরুদ বলে।

আসহাবুল ফুরুদ মোট ১২ জন, এর মধ্যে চারজন পুরুষ এবং আটজন নারী। এ ১২ জন বিভিন্ন অবস্থায় মৃতের সম্পদের যে সব অংশ পাবেন তা হল- দুইভাগের এক অংশ, চার ভাগের এক অংশ, আট ভাগের এক অংশ, তিন ভাগের দুই অংশ, তিন ভাগের এক অংশ এবং ছয় ভাগের এক অংশ।

পুরুষগণ হলেন-

১. মৃতের পিতা,

২. মৃতের দাদা/মৃতের পিতার দাদা (এভাবে যত উপরে যাক না কেন)

৩. মৃতের বৈপিত্রেয় ভাই,

৪ মৃতের স্বামী।

নারীগণ হলেন-

১. মৃতের স্ত্রী

২. মৃতের কন্যা

৩. মৃতের ছেলের কন্যা, মৃতের নাতীর কন্যা (এভাবে যত নিচে যাকনা কেন)

৪. মৃতের সহোদর বোন

৫ মৃতের বৈমাত্রেয় বোন

৬. মৃতের বৈপিত্রেয় বোন

৭. মৃতের মাতা

৮ মৃতের দাদী

আসাবা

আসহাবুল ফুরূদ তথা নির্ধারিত অংশীদারগণকে তাদের অংশ প্রদান করার পর বাকী সমুদয় পরিত্যক্ত সম্পদের উত্তরাধিকার যারা হবেন তাদেরকে আসাবা বলে।

আসাবার প্রকারভেদ

আসাবা বা অবশিষ্টাংশের অধিকারীগণ তিন প্রকার-

১. উত্তরাধিকারী স্বয়ং নিজেই আসাবা,

২. উত্তরাধিকারী অন্যের মধ্যস্থতায় আসাবা,

৩. উত্তরাধিকারী অন্যের সঙ্গীরূপে আসাবা।

উত্তরাধিকারী স্বয়ং নিজেই আসাবা

ঐ সকল পুরুষকে "স্বয়ং নিজেই আসাবা" বলা হয় মৃত ব্যক্তির সঙ্গে যাদের সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে নানীর মধ্যস্থতা নেই। তারা চার শ্রেণীতে বিভক্ত-

১. মৃত ব্যক্তির অধঃস্তন বংশধর অর্থাৎ পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র ইত্যাদি যতই নিম্নে যাক না কেন।

২. মৃত ব্যক্তির উর্ধতন পুরুষ অর্থাৎ পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ এভাবে যতই উপরের দিকে যাক না কেন।

৩. মৃতের পিতার পুত্র অর্থাৎ মৃতের ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, এভাবে যত নিম্নে যাক না কেন। 

৪. মৃতের পিতামহের পুত্র অর্থাৎ মৃতের চাচা, চাচাত ভাই, এভাবে যত নিম্নে যাক না কেন।

এদের মধ্য হতে যদি একাধিক উত্তরাধিকারী একত্রিত হয়ে যায় যেমন মৃতের পিতা, পুত্র, ভাই, চাচা ইত্যাদি তাহলে যে ব্যক্তি মৃতের অধিক নিকটতম সেই উত্তরাধিকার হিসেবে অগ্রাধিকার পাবে। যথা-ছেলে ও নাতী যদি একত্রিত হয় তাহলে ছেলে অগ্রাধিকার পাবে। এককথায় নৈকট্যের দিক থেকে যে নিকটতম সেই অগ্রাধিকার পাবে, এ নীতির ভিত্তিতেই এ প্রকার আসাবার মধ্যে মৃতের সম্পদ বণ্টন করা হয়।

অন্যের মধ্যস্থতায় আসাবা

"অন্যের মধ্যস্থতায় আসাবা" সে সব মহিলা উত্তরাধিকারীগণকে বলা হয় যারা নিজেরা সরাসরি আসাবা হতে পারেনা। তবে সরাসরি আসাবাগণের মধ্যস্থায় আসাবায় রূপান্তরিত হয়। তারা চার জন মহিলা। যথা-

১. মৃতের কন্যা, মৃতের ছেলের সঙ্গে আসাবায় রূপান্তরিত হবে।

২. দুই কন্যার বর্তমানে পৌত্রিরা বঞ্চিত হয়ে যাবে, তবে পৌত্রিদের সঙ্গে যদি পৌত্র অথবা প্রপৌত্র থাকে তাহলে তাদের সুবাদে পৌত্রিরা আসাবায় রূপান্তরিত হবে।

৩. মৃতের সহোদর বোন, মৃতের সহোদর ভাই এর মধ্যস্থ্যতায় আসাবায় রূপান্তরিত হবে। 

৪. মৃতের বৈমাত্রেয় বোন, মৃতের বৈমাত্রেয় ভাই এর সুবাদে আসাবায় রূপান্তরিত হবে।

এদের মধ্যে মৃতের পরিত্যক্ত ও অবশিষ্ট সম্পদ একজন নারী একজন পুরুষের অর্ধেক পাবে, এ নীতির ভিত্তিতে বণ্টন করা হবে।

অন্যের সঙ্গীরূপে আসাবা

অন্যের সঙ্গীরূপে আসাবা সে সব মহিলা উত্তরাধিকারীগণকে বলা হয় যারা অন্য এমন মহিলার সঙ্গে আসাবারূপে গণ্য হয় যারা একাকী নিজেরা আসাবা হয় না। যেমন মৃতের কন্যার সঙ্গে মৃতের বোন আসাবা হিসেবে গণ্য হবে। 

আরো পড়ুন: বিবাহ ও এর প্রয়োজনীয়তা এবং  বিবাহ সম্পর্কে ইসলামের বিধান 

পুরুষদের নির্ধারিত অংশ

মৃতের পিতার বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে বলতে পারবেন।মৃতের দাদার বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে উল্লেখ করতে পারবেন। মৃতের দাদা কখন বঞ্চিত হবে তা উল্লেখ করতে পারবেন। মৃতের বৈপিত্রেয় ভাইয়ের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারবেন। মৃতের স্বামীর অংশসমূহ সম্পর্কে বলতে পারবেন।

পূর্বেই আলোচিত হয়েছে মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদের নির্ধারিত অংশপ্রাপ্ত পুরুষগণ হলেন চারজন-

১. মৃতের পিতা

২. মৃতের দাদা

৩. মৃতের বৈপিত্রেয় ভাই

৪. মৃতের স্বামী।

পিতার অংশের বর্ণনা

পিতার তিনটি অংশ রয়েছে-

১. মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদের ছয় ভাগের এক অংশ পাবে যদি মৃত ব্যক্তির ছেলে বা ছেলের ছেলে এভাবে যত নিচের হোক না কেন।

২. ছয় ভাগের এক অংশ এবং সবার অংশ প্রদানের পর যা থাকে তা পাবে অর্থাৎ ছয় ভাগের এক অংশৎঅবশিষ্টাংশ। যদি মৃত ব্যক্তির মেয়ে বা ছেলের মেয়ে থাকে।

৩. নির্দিষ্ট কোন অংশ পাবে না। শুধু অবশিষ্টাংশ পাবে, যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে।

দাদার অংশের বর্ণনা

পিতার ন্যায় দাদারও তিনটি অংশ রয়েছে-

১. পিতার অবর্তমানে দাদা জীবিত থাকলে তিনি ছয় ভাগের এক অংশ পাবেন যদি মৃতের ছেলে বা ছেলের ছেলে (নাতি) থাকে।

২. মৃতের পিতার অবর্তমানে দাদা জীবিত থাকলে তিনি মৃতের পরিত্যাক্ত সম্পদের ছয় ভাগের এক অংশ এবং সবাইকে তাদের অংশ দেয়ার পর অবশিষ্টাংশ (ছয় ভাগের এক অংশ অবশিষ্টাংশ) পাবেন, যদি মৃতের মেয়ে বা ছেলের মেয়ে (নাতীন) থাকে।

৩. দাদা শুধু অবশিষ্টাংশ পাবেন যদি মৃতের সন্তান না থাকে।

৪. মৃতের পিতা যেজীবিত থাকলে দাদা বঞ্চিত হবেন।

বৈপিত্রেয় ভাই-এর অংশ

১. মৃতের পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, পিতা এবং দাদা এদের মধ্য হতে যে কোন একজনের বর্তমানে বৈপিত্রেয় ভাই বঞ্চিত হবে।

২. মৃতের যদি একজন বৈপিত্রেয় ভাই থাকে তাহলে সে সম্পদের ছয় ভাগের এক অংশ পাবে।

৩. যদি দুই বা ততোধিক ভাই থাকে তাহলে তিন ভাগের এক অংশ পাবে। উল্লেখ্য যে, বৈপিত্রেয় ভাই ও বোনেরা অংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে। ভাই ও বোনদের মধ্যে কোন পার্থক্য করা যাবে না।

স্বামীর অংশ

স্বামীর জন্য নির্ধারিত দু'টি অংশ রয়েছে-

১. মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদের দুই ভাগের এক অংশ পাবে যদি মৃতের ছেলে মেয়ে না থাকে।

২. মৃতের সম্পদের চার ভাগের এক অংশ পাবে যদি মৃতের ছেলে মেয়ে থাকে।

আরো পড়ুন: ইসলামে পরিরবার পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

নারীদের নির্ধারিত অংশ

মৃত স্বামীর সম্পদে স্ত্রীর অংশ বলতে পারবেন। মৃত পিতার সম্পদে কন্যার। অংশ উল্লেখ করতে পারবেন।মৃত দাদার সম্পদে নাতনী দের অংশ বর্ণনা করতে পারবেন। মৃত ভাইয়ের সম্পদে সহোদর, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় বোনদের অংশ আলোচনা করতে পারবেন।মৃত ছেলের সম্পদে মায়ের অংশ উল্লেখ করতে পারবেন। মৃত নাতী-নাতীনের সম্পদে দাদী/নানীর অংশ বলতে পারবেন।

মৃতের পরিত্যাক্ত সম্পদের নির্ধারিত অংশপ্রাপ্ত নারীগণ হলেন ৮ জন। যথা-

১. মৃতের স্ত্রী

২. মৃতের কন্যা

৩. মৃতের ছেলের কন্যা/নাতীর কন্যা এভাবে যত নিচে থাকনা কেন।

৪. মৃতের সহোদর বোন

৫. মৃতের বৈমাত্রেয় বোন

৬. মৃতের বৈপিত্রেয় বোন

৭. মৃতের মাতা

৮ মৃতের দাদী

নিম্নে প্রত্যেকের অংশের বর্ণনা প্রদান করা হল।

স্ত্রীর অংশসমূহ

স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত দু'টি অংশ রয়েছে।

১. চার ভাগের এক অংশ পাবে (এক বা একাধিক স্ত্রী) যদি মৃতের ছেলে মেয়ে বা মৃতের ছেলের ছেলে মেয়ে (নাতী-নাতনী) না থাকে।

২. আট ভাগের এক অংশ পাবে যদি মৃত ব্যক্তির ছেলে মেয়ে বা ছেলের ছেলে মেয়ে (নাতী-নাতনী) থাকে।

এ ছাড়া স্ত্রী তার মৃত স্বামীর সম্পদ ছাড়াও কন্যা হিসেবে মৃত পিতার সম্পদে অধিকার রয়েছে। বোন হিসেবে মৃত ভাই এর সম্পদে তার অধিকার রয়েছে। মাতা হিসেবে মৃত ছেলের সম্পদে তার অধিকার রয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে সম্পদে নারীর অধিকার ইসলাম কোন ভাবেই সংকোচিত করেনি।

কন্যার অংশসমূহ

কন্যার জন্য তিনটি নির্ধারিত অংশ রয়েছে।

১. মৃতের সম্পদের দুই ভাগের এক অংশ পাবে, যদি কন্যা একজন থাকে।

২. তিন ভাগের এক অংশ পাবে যদি বন্য দুই বা ততোধিক থাকে।

৩. যদি মৃত ব্যক্তির ছেলে থাকে তাহলে কন্যা, ছেলের সঙ্গে আসাবা হবে। অন্যান্য অংশীদারকে দেয়ার পর অবশিষ্ট সম্পদ ছেলে ও কন্যার মধ্যে একজন ছেলে একজন মেয়ের দ্বিগুণ পাবে এ নীতির ভিত্তিতে বণ্টন করতে হবে।

পৌত্রী বা নাতনীদের অংশের বর্ণনা

পৌত্রী তথা পুত্রের কন্যাগণ মৃতের আপন কন্যাদের মতই। তাদের উত্তরাধিকার লাভের ক্ষেত্রে ছয়টি অবস্থা রয়েছে-

১. মৃতের কন্যা না থাকা অবস্থায় যদি মৃতের একজন পৌত্রী (পুত্রের কন্যা) থাকে তবে সে অর্ধেক (২ ভাগের ১ ভাগ) পাবে।

২. আর যদি দুই বা ততোধিক পৌত্রী থাকে তা হলে তিন ভাগের দুই ভাগ পাবে।

৩. মৃত ব্যক্তির এক কন্যা থাকা অবস্থায় দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে পৌত্রীগণ ৬ ভাগের ১ ভাগ পাবে। (কেননা কুরআন মাজীদে মেয়েদের সর্বোচ্চ অংশ ৩ ভাগের দুই অংশ বলে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, এক মেয়ে ২ ভাগের এক ভাগ পৌত্রীগণ ৬ ভাগের ১ ভাগ পাবে)। 

৪. মৃত ব্যক্তির দুই কন্যা জীবিত থাকলে পৌত্রীগণ ওয়ারিস হবে না।

৫. তবে হ্যাঁ, যদি মৃত ব্যক্তির দুই কন্যার সঙ্গে একই স্তরে কিংবা নিম্ন স্তরে একজন পৌত্র থাকে, তাহলে পৌত্রীরা আসাবা হয়ে যাবে। মৃত ব্যক্তির কন্যাদ্বয়ের অংশ দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি তাদের মধ্যে একজন পুরুষ, দু'জন মেয়ের সমান পাবে এই সূত্র মোতাবেক বণ্টন করা হবে।

৬. মৃত ব্যক্তির ছেলে জীবিত থাকলে পৌত্রীগণ বঞ্চিত হবে।

সহোদর বোনদের অংশের বর্ণনা

মৃতের সহোদর বোনদের পাঁচটি অবস্থা রয়েছেঃ

১. একজন সহোদর বোন হলে মৃতের সম্পদের দুই ভাগের এক ভাগ পাবে।

২. দুই বা ততোধিক সহোদর বোন থাকলে মৃতের সম্পদের তিন ভাগের দুই ভাগ পাবে।

৩. সহোদর বোনদের সমপর্যায়ে তাদের ভাই থাকলে মৃত ব্যক্তির সাথে তাদের সম্পর্ক সমান থাকায় ভাই দ্বারা তারা আসাবা হয়ে যাবে এবং "একজন পুরুষ দুইজন স্ত্রীলোকের সমান" এ সূত্রানুসারে তাদের মধ্যে সম্পদ বণ্টন করা হবে।

৪. (মৃত ব্যক্তির) কন্যাগণ বা পুত্রের কন্যাগণের সঙ্গে তারা (আসাবা হিসেবে) অবশিষ্টাংশ পাবে। কেননা,

মহানবী (স) ইরশাদ করেছেন- "ভগ্নীদেরকে কন্যাদের সঙ্গে আসাবা বানিয়ে দাও।" 

৫. সহোদর ভাই-বোন এবং বৈমাত্রেয় ভাইবোন মৃতের পুত্র, অথবা, পুত্রের পুত্র, অথবা মৃতের পিতার বর্তমানে বঞ্চিত হয়ে যাবে।

বৈমাত্রেয় বোনদের অংশের বর্ণনা

বৈমাত্রেয় বোনদের অবস্থা (উত্তরাধিকার লাভের ক্ষেত্রে) সহোদর বোনদের অনুরূপ। তাদের সাত অবস্থা-

১. একজন বোন থাকলে সে মৃতের রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধাংশ পাবে। সহোদর বোন থাকা অবস্থায় এটা প্রযোজ্য। 

২. দুই বা ততোধিক বোন থাকলে তারা দুই-তৃতীয়াংশ পাবে। তবে সহোদর বোন না থাকা অবস্থায় এটা প্রযোজ্য হবে।

৩. একজন সহোদর বোনের সাথে দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ণ করার জন্য বৈমাত্রেয় বোনেরা এক ষষ্ঠাংশ পাবে। অর্থাৎ সহোদর বোনদের দুই ভাগের এক অংশ এবং বৈমাত্রেয় বোনদের ছয় ভাগের এক অংশ মোট তিন ভাগের দুই অংশ। 

৪ দুইজন সহোদর বোনের বর্তমানে বৈমাত্রেয় বোন নির্ধারিত অংশ থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে।

৫ কিন্তু যদি বৈমাত্রেয় বোনদের সঙ্গে বৈমাত্রেয় ভাই থাকে, তা হলে ঐ ভাই তাদেরকে আসাবায় রূপান্তরিত করে দেবে। এর ফলে অবশিষ্ট সম্পদ তাদের মধ্যে একজন পুরুষ দুইজন মহিলার সমান এই সূত্র অনুসারে বণ্টিত হবে।

৬. মৃতের কন্যা বা তার পুত্রের কন্যাদের সাথে বৈমাত্রেয় ভগ্নীরা আসাবা হয়ে যাবে। যেমন- আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি (বোনদেরকে কন্যাদের সঙ্গে আসাবা বানিয়ে দিতে হবে।)

৭. সহোদর ভাই-বোন ও বৈমাত্রেয় ভাই-বোন মৃতের পুত্র, পুত্রের পুত্র থাকলে অথবা পিতা থাকলে সর্বসম্মতিক্রমে বঞ্চিত হয়ে যাবে। ইমাম আবু হানীফার মতে মৃতের পিতামহ থাকলেও তারা সকলেই বঞ্চিত হয়ে যাবে। আর সহোদর ভাই-এর উপস্থিতিতে বৈমাত্রেয় ভাই-বোন বঞ্চিত হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে একাধিক সহোদর বোনের দ্বারাও নির্ধারিত অংশ থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে যাবে, কিন্তু বৈমাত্রেয় ভাই থাকলে তার সঙ্গে আসাবায় রূপান্তরিত হবে।

বৈপিত্রেয় বোনের অংশ

১. মৃতের পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, পিতা এবং দাদা এদের মধ্য হতে যে কোন একজনের বর্তমানে বৈপিত্রেয় বোন বঞ্চিত হবে।

২. মৃতের যদি একজন বৈপিত্রেয় বোন থাকে তাহলে সে সম্পদের ৬ ভাগের ১ অংশ পাবে।

৩. যদি দুই বা ততোধিক বোন থাকে তাহলে ৩ ভাগের ১ এক অংশ পাবে উল্লেখ্য বৈপিত্রেয় ভাই বোনেরা অংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে। ভাই ও বোনদের মধ্যে কোন পার্থক্য করা যাবে না।।

মায়ের অংশের বর্ণনা

উত্তরাধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মায়ের তিনটি অংশ রয়েছে-

১. ছয় ভাগের এক অংশ পাবেন যদি মৃতের সন্তান বা মৃতের পুত্রের সন্তান যতই অধঃস্থন হোক না কেন অথবা দুই বা ততোধিক ভাই বা বোন যেই দিকেরই হোক না কেন (সহোদর হোক কিংবা বৈমাত্রেয় অথবা বৈপিত্রেয়) সর্বাবস্থায় মাতা ছয় ভাগের এক অংশ পাবে।

২. এ সবের কেউ না থাকলে সম্পূর্ণ সম্পত্তির তিন ভাগের এক অংশ পাবে।

৩. স্বামী এবং স্ত্রীর যে কোন একজনের অংশ দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবে। এই অংশটি দুইটি অবস্থায় প্রযোজ্য-

ক. যদি মৃতের স্বামী এবং মাতা-পিতা জীবিত থাকে।

খ. যদি মৃতের স্ত্রী ও মাতা-পিতা জীবিত থাকে। আর যদি পিতার স্থলে পিতামহ জীবিত থাকে, তা হলে মাতা সম্পূর্ণ সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পাবে।

দাদী বা নানীর অংশের বর্ণনা

দাদী বা নানী মৃতের রেখে যাওয়া সম্পদের ছয় ভাগের এক অংশ পাবে। সংখ্যার দিক দিয়ে একজন হোক কিংবা একাধিক। তবে শর্ত হল, সকলেই প্রকৃত ও সমপর্যায়ের হতে হবে। মাতার বর্তমানে সর্বপ্রকার দাদী বা নানী সবাই বাদ পড়বেন। আর পিতার বর্তমানে দাদীগণ বাদ পড়বেন। আর দাদার বর্তমানে দাদী (আপন পিতামহী) ব্যতিরেকে অন্যান্য দাদী বাদ পড়ে যাবেন। দাদী দাদার সঙ্গে ওয়ারিস হবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url