সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে ইসলামের শাস্তির বিধান

সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে ইসলামের শাস্তির বিধান সামাজিক অপরাধ দমনে ইসলামের শাস্তির বিধান বর্ণনা করতে পারবেন। অপরাধ দমনে ইসলামী বিধানের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করতে পারবেন। ইসলামী বিধানে শাস্তির শ্রেণী বিভাগ উল্লেখ করতে পারবেন। অপরাধ দমনে ইসলামী দন্ডবিধির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে পারবেন।


সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে ইসলামের শাস্তির বিধান

প্রতিটি মানুষ সমাজে শান্তিতে বসবাস করতে চায়। সমাজের কোন মানুষ যেন অপরাধ করে সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলা নষ্ট না করে এটাই সকলের কাম্য। তবুও সমাজের কিছু মানুষ অন্যের অধিকার খর্ব করে অপরাধ করে বসে। ফলে সামাজিক শান্তি বিঘ্নিত হয়। সমাজে যাতে অপরাধ সংঘটিত না হয় সে লক্ষ্যে ইসলাম সমাজকে কলুষমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে চায়। সমাজ তথা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল, যেসব পরিস্থিতিতে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তা থেকে সমাজকে মুক্ত রাখা। যেমন-সম্পদের ইনসাফপূর্ণ বণ্টন, যাতে অভাবের তাড়নায় কাউকে চুরি, ডাকাতি করতে না হয়। প্রতিটি নাগরিক যাতে নিজ পরিশ্রমলব্ধ আয়ের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হয় এবং প্রয়োজনীয় নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারে, সেরূপ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে নারী-পুরুষের অবাধ মিলন ও যৌন প্রবৃত্তি উদ্দীপক সংস্কৃতির প্রচার প্রসার রোধ করে ব্যভিচারের পথ রুদ্ধ করা প্রয়োজন। খুনখারাবি রোধে সামাজিক দ্বন্দ্ব কলহের অবসান ঘটাতে হবে। সমাজে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের ধারা জারি রাখতে হবে। পরনিন্দা, পরচর্চা বন্ধ করার লক্ষ্যে মানুষের নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন করতে হবে। অপরপক্ষে ইসলাম ব্যক্তির মন-মানসিকতায় আল্লাহর প্রগাঢ় বিশ্বাস ও পরকালের জবাবদিহিতার প্রত্যয় সৃষ্টি করে। তাকে এ কথা পরিষ্কারভাবে অনুধাবন করার সুযোগ দেয় যে, যত সংগোপনেই সে অপরাধ করুক না কেন আল্লাহ তা দেখেন। পরকালে আল্লাহর নিকট এ জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে এবং পরকালের শাস্তি ইহকালের শাস্তি অপেক্ষা অনেক কঠিন ও স্থায়ী। এই বোধ সৃষ্টি করার মাধ্যমেই কেবল অপরাধের মাত্রা ন্যূনতম পর্যায়ে কমিয়ে আনা সম্ভব। একাধারে সমাজ থেকে অপরাধ সংঘটনের সকল সম্ভাবনা দূরীভূত ও ব্যক্তি চরিত্রের উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমেই অপরাধ দমন করা যেতে পারে। এতসব ব্যবস্থা গ্রহণের পরও যদি কোন ব্যক্তি অপরাধ করে বসে, তবে ইসলাম তাকে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি দেয়ার পক্ষপাতী।

আরো পড়ুন: মানব সমাজের উৎপত্তি ও বিকাশ

অপরাধ দমনে ইসলামী বিধানের বৈশিষ্ট্য

অপরাধ দমনে ইসলামী বিধানের কতকগুলো অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন:

১. প্রতিরোধমূলক: ইসলাম অপরাধ সংঘটনের পথ খোলা রেখে মানুষকে অপরাধ করার সুযোগ দেয় না বরং অপরাধের কারণসমূহ যাতে সংঘটিত না হয়, তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

২. ইনসাফ ভিত্তিক: ইসলাম বিচারের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে। অপরাধী ও যে সমাজের বিরুদ্ধে সে অপরাধ করেছে, এ উভয়ের পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে। ইসলাম চোরের হাত কেটে দিতে বলে কিন্তু যেখানে সামান্যতম সন্দেহের অবকাশ থাকে যে, চোর ক্ষুধার তাড়নায় চুরি করেছিল, সেখানে কিছুতেই এ শাস্তি দেয়া হয় না। সামান্য জিনিস চুরির জন্য চোরের হাত কাটা হয় না। অবিবাহিত স্ত্রী-পুরুষের ব্যভিচারের ক্ষেত্রে শান্তির মাত্রা লাঘব করা হয়।

৩. আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান: ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, সাদা-কালো সকলের জন্য ইসলাম একই শাস্তির বিধান দেয়। দেশের কোন ব্যক্তিই আইনের উর্ধ্বে নয়।

৪. সংশোধনমূলক: আল্লাহর হক সম্পর্কিত অপরাধের জন্য ইসলাম অপরাধীকে তাওবা করার সুযোগ দেয়। খালিস নিয়াতে তাওবা করলে আল্লাহ্ তা'আলা তা ক্ষমা করে দেন। ফলে সে নিজে সংশোধিত হওয়ার সুযোগ পায়।

৫. কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি: ইসলাম অপরাধের ক্ষেত্র ভেদে বেত্রাঘাত, রজম ও শিরচ্ছেদের বিধান দেয়। এগুলো কঠোর ও কঠিন শাস্তি। কিন্তু এ শাস্তি জনসমক্ষে দিতে হবে, যেন সাধারণভাবে মানুষ শাস্তির কঠোরতা দেখে অপরাধ করা থেকে বিরত থাকে। সামাজিক শান্তি রক্ষার জন্যে এরূপ শাস্তির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

ইসলামী বিধানে শাস্তির শ্রেণীবিভাগ

ইসলামী শরী'আতে শাস্তি তিন প্রকার। যথা-

১. কাফফারা: যে শাস্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। কিন্তু কার্যকর করার দায়িত্ব অপরাধীর নিজের উপর ন্যস্ত করেছেন। যেমন, বিভিন্ন ধরনের কাফ্ফারা।

২. হদ্দ বা কিসাস: ঐ সমস্ত শাস্তি যা আল্লাহর কিতাব বা রাসূল (সা.) এর হাদীস দ্বারা নির্দিষ্ট এবং এগুলো কার্যকর করার দায়িত্ব সরকারের। এ ক্ষেত্রে বিচারক বা সরকারের নিজস্ব মতামতের কোন সুযোগ নেই। এ শাস্তি দু ধরনের, যথাঃ হদ্দ ও কিসাস (বিধিবদ্ধ শাস্তি)। এ অপরাধের একদিকে যেমন সৃষ্ট জীবের প্রতি অন্যায় করা হয়, অন্যদিকে তেমনি স্রষ্টার নাফরমানী ও করা হয়। ফলে অপরাধী আল্লাহ ও তাঁর বান্দা উভয়ের নিকট দোষী বলে বিবেচিত হয়। যে অপরাধে আল্লাহর হকের পরিমাণ প্রবল করা হয়েছে, তার শাস্তিকে 'হদ্দ' আর যে অপরাধে বান্দার হককে শরী'আতের বিচারে প্রবল ধরা হয়েছে, তার শাস্তিকে 'কিসাস' বলে। হদ্দ ও কিসাসের মধ্যে আরো একটি পার্থক্য এই যে, হদ্দকে আল্লাহর হক হিসেবে প্রয়োগ করা হয় বিধায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ক্ষমা করলেও হদ্দ অব্যবহার্য হবে না। যেমন, যার সম্পদ চুরি যায়, সে ক্ষমা করলেও চোরকে নির্ধারিত শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু 'কিসাস'-এর বিপরীত। কিসাসে বান্দার হক্ প্রবল হওয়ার কারণে হত্যা প্রমাণ হওয়ার পর হত্যাকারীর বিষয়টি নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীর ইখতিয়ারে ছেড়ে দেয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে বিচার বিভাগের মাধ্যমে কিসাস হিসাবে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে পারে কিংবা দিয়াত বা রক্তপণ গ্রহণ করতে পারে কিংবা ক্ষমা করে দিতে পারে।

৩. অনির্ধারিত শাস্তি: ইসলামী শারী'আত যেসব অপরাধের শাস্তির কোন পরিমাণ নির্ধারণ করেনি। বরং বিচারকের বিবেচনার উপর ছেড়ে দিয়েছে। এ ধরনের শাস্তিকে বলে তাযীর বা দন্ডবিধি। বিচারক স্থান, কাল ও পরিবেশ বিবেচনা করে অপরাধ দমনের জন্য যেমন ও যতটুকু শাস্তির প্রয়োজন মনে করেন, ততটুকুই দেবেন। এক্ষেত্রে সরকার নিজস্ব আইন প্রনয়ন করতে পারে এবং বিচারককে তা মেনে চলতে বাধ্য করতে পারে। অবস্থানুযায়ী তাযীরকে লঘু থেকে লঘুতর, কঠোর থেকে কঠোরতর এবং ক্ষমাও করা যায়। তাযীরের ক্ষেত্রে ন্যায়ের অনুকুলে সুপারিশ গ্রহণ করা যায়। কিন্তু হদ্দের বেলায় সুপারিশ করা এবং তা শোনা উভয়ই অবৈধ।

আরো পড়ুন:  স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ও কর্তব্য

হদ্দ যোগ্য শাস্তির বিধান

ইসলামী শরী'আতে হুদূদ বা শাস্তিযোগ্য বিধান পাঁচটি। যথা- চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার ও ব্যভিচারের অপবাদ। এ চারটি শাস্তি আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। পঞ্চমটি মদ্যপানের শাস্তি, এটি সাহাবায়ে কিরামের ইজমা তথা ঐকমত্য দ্বারা প্রমাণিত। হুদুদ বা শাস্তি কার্যকর করার ইখতিয়ার বিচার বিভাগের। এ শাস্তি থেকে কোন শাসক বা বিচারক কাউকে ক্ষমা করতে পারে না। খাঁটি তাওবা দ্বারা আখিরাতের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু দুনিয়ার শাস্তি হতে কাউকে রেহাই দেওয়া যাবে না। এর মধ্যে কেবল ডাকাতির শাস্তির বেলায় কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। ডাকাত গ্রেফতারের পূর্বে তাওবা করলে এবং তার আচার-আচরণের দ্বারা তাওবার বিষয়টি নিশ্চিত হলে সে হদ্দ বা নির্দিষ্ট শাস্তি থেকে রেহাই পাবে। কিন্তু গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার পর তাওবা করলে তা ধর্তব্য নয়। হুদুদের শাস্তি এবং তার প্রয়োগ প্রণালীও কঠোর। অপর পক্ষে, ন্যায় বিচারের খাতিরে অপরাধ প্রমাণের শর্তাবলীও অত্যন্ত কঠোর। নির্ধারিত শর্তাবলীর মধ্য থেকে কোন একটি শর্ত অনুপস্থিত থাকলে বা অপরাধ প্রমাণে সামান্যতম সন্দেহ পাওয়া গেলে হদ্দ প্রয়োগ করা যায় না। এ ব্যাপারে শরী'আতের স্বীকৃত নীতি হলো, হুদুদ সামান্যতম সন্দেহের কারণে অকেজো হয়ে পড়ে।

কোন কারণে হদ্দ প্রযোজ্য না হওয়ার ফলে অপরাধী বে-কসুর খালাস পেয়ে যাবে এবং সমাজে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাবে এরূপ মনে করার কোন কারণ নেই। এরূপ ক্ষেত্রে বিচারক অবস্থার প্রেক্ষিতে অপরাধীকে 'তাযীরের' শাস্তি দিতে পারেন। তাযীরের শান্তি সাধারণত দৈহিক ও আর্থিক হয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ব্যভিচার প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় চারজন সাক্ষীর স্থলে মাত্র তিনজন পাওয়া গেলে এ ক্ষেত্রে হদ্দ জারি করা যাবে না। কিন্তু বিচারক অবস্থানুযায়ী অপরাধীকে বেত্রাঘাতের শাস্তি দিতে পারেন কিংবা জরিমানা করতে পারেন। অপরাধের মাত্রানুযায়ী বিচারক এর মধ্যে যে কোন শাস্তি দিতে পারেন।

(ক) চুরি এবং

(খ) ডাকাতি-এ দু'টি অপরাধের শাস্তির কথা পূর্বে আলোচিত হয়েছে।

(সা) ব্যভিচার: ব্যভিচারকারী বা ব্যভিচারকারীণী বিবাহিত বা বিবাহিতা হলে রজম- পাথর নিক্ষেপ করে শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু এরা অবিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত করতে হবে।

(ঘ) ব্যভিচারের অপবাদ: ব্যভিচারের অপবাদের জন্য আশিটি বেত্রাঘাত করা হবে। তাই, চারজন সাক্ষী না পাওয়া গেলে কারো প্রতি অপবাদ দেওয়া অনুচিত।

(ঙ) মদ্যপানঃ কুরআন মাজীদে মদ্যপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাদীসে একে 'উম্মুল খাবায়িস' বা অপকর্মের মূল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মদ্যপানের শাস্তি আশিটি বেত্রাঘাত। এ শাস্তি প্রয়োগের জন্য দু'জন সাক্ষী বা নিজের স্বীকারোক্তি প্রয়োজন।

আরো পড়ুন: কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

হত্যার শাস্তি বা কিসাস

সজ্ঞানে অন্যায়ভাবে কেউ কাউকে হত্যা বা আঘাত করলে তার বদলে তাকে হত্যা বা আঘাত করার বিধানকে ইসলামী শরী'আতের পরিভাষায় 'কিসাস' বলে। কিসাসের শাব্দিক অর্থ হলো-সমপরিমাণ বা অনুরূপ। অর্থাৎ অন্যের প্রতি যতটুকু যুলুম করা হয়েছে, তার সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করা। আল-কুরআনে সূরা বাকারার ১৭৮ নম্বর আয়াতে কিসাসের বিধান বর্ণিত হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে বেআইনী হত্যার ক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির বদলে হত্যাকারীকে নিলিখিত শর্তসাপেক্ষে হত্যা করা হবে। তবে এ বিধান প্রয়োগ করার অধিকার বিচার বিভাগের, ব্যক্তির নয়। এ ব্যাপারে শর্ত হচেছ-

১. নিহত ব্যক্তির জীবন শরী'আত কর্তৃক রক্ষিত হওয়া অর্থাৎ হত্যাযোগ্য অপরাধী না হওয়া।

২. নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীর বংশধর না হওয়া।

৩.  হত্যাকান্ডের সময় অপরাধী প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।

অপরাধীর মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটলে কিসাস স্থগিত থাকবে। 'কিসাস' গ্রহণের পূর্বে হত্যাকারী মারা গেলে ইমাম আবু হানিফা (র.) এর মতে বদলা গ্রহণ করার দাবী রহিত হয়ে যাবে। 'কিসাস' গ্রহণ অভিভাবক বা উত্তরাধিকারীদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। সে ইচ্ছা করলে কিসাস গ্রহণ করবে বা রক্তপণ নিবে অথবা বিনা রক্তপণে ক্ষমা করে দেওয়ার ইখতিয়ার তার রয়েছে।

ইচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে হত্যাকারীকে সম্পূর্ণ মাফ করে দেওয়া হলে হত্যাকরীর উপর অন্য কিছু ওয়াজিব হবে না। যেমন- নিহত ব্যক্তির ওয়ারিস দুই পুত্র। তারা উভয়ে হত্যাকারীকে মাফ করে দিলে হত্যাকারী মুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু যদি একজন মাফ করে এবং অন্যজন মাফ না করে, তবে হত্যাকারী মৃত্যুদন্ড থেকে রেহাই পাবে বটে। কিন্তু তাকে অর্ধেক 'দিয়াত' (রক্তপণ) দিতে হবে। কিসাসের আংশিক দাবি মাফ হয়ে গেলে যেমন মৃত্যুদন্ড মওকুফ হয়ে দিয়াত ওয়াজিব হয়। তেমনি উভয় পক্ষ নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ প্রদানের শর্তে আপোস- নিষ্পত্তি করলে সে ক্ষেত্রেও 'কিসাস' মওকুফ হয়ে অর্থ প্রদান করা ওয়াজিব হবে।

শরী'আতের বিধানে হত্যার বদলায় যে দিয়াত বা অর্থদন্ড প্রদান করতে হয়, তার পরিমাণ হচ্ছে একশত উট বা এক হাজার দিনার বা দশ হাজার দিরহাম। দিয়াত হিসাবে প্রাপ্ত অর্থ 'মীরাস'-এর অংশ অনুপাতে ওয়ারিসদের মধ্যে বণ্টন হবে।

নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীগণ নিজেরা কিসাসের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। এ অধিকার আদায়ের জন্য আইন সন্মত কর্তৃপক্ষের সহায়তা গ্রহণ করতে হবে। কারণ কোন অবস্থায় কিসাস ওয়াজিব হয় বা কোন অবস্থায় হয় না তা নির্ধারণ করা কষ্টকর। তাছাড়া নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীগণ উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে বাড়াবাড়ি করে ফেলতে পারে। এ জন্য কিসাসের হক আদায় করতে আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে।

ইসলামী দন্ডবিধির যৌক্তিকতা

পাশ্চাত্যের কোন কোন লেখক মনে করেন, সামাজিক অপরাধ দমনের জন্য ইসলাম যেসব বিধান দিয়েছে তা অত্যন্ত কঠোর। আধুনিক সভ্য জগতে এ শাস্তি প্রয়োগ করা চলে না। তাদের প্রভাবে কিছু কিছু মুসলিম নামধারী আধুনিক পাশ্চাত্যাভিমুখী ব্যক্তিগণও এরূপ মনোভাব পোষণ করে এবং তারা ইসলামী বিধানের যৌক্তিকতা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে এ কথা বুঝতে কষ্ট হয় না যে, ইসলামী বিধান মোতাবেক সমাজ বিনির্মাণ করে নাগরিকদের নৈতিক মান উন্নত করতে পারলে শাস্তির বিধান ন্যূনতম ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার প্রয়োজন হবে না। সে ক্ষেত্রে কেবল তারাই এ শাস্তির যোগ্য হবে, যারা আল্লাহ ও পরকালের ভয়াবহ অবস্থা সম্পর্কে উদাসীন হয়ে সমাজে ফিতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে অপরাধ করে থাকে। অপরাধ করার মত কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ না থাকা সত্ত্বেও অপরাধ প্রবণতা যাদের মধ্যে শিকড় গেড়ে বসবে, তাদের মন মানসিকতার পরিবর্তনের জন্য ইসলাম এসব বিধান জারি করেছে। মনে রাখতে হবে ইসলামী সমাজ তথা সুষ্ঠু সমাজ গঠনের সঠিক বিধি-বিধানকে উপেক্ষা করে অপরাধ দমনের বিধানকে পৃথক করে দেখলে ইসলামের প্রতি সুবিচার করা হবে না। অপরাধ দমনে ইসলামের দণ্ডবিধি যে কোন বিচারে অত্যন্ত যৌক্তিক এবং অপরাধমুক্ত সুষ্ঠু সমাজ গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য। এটা সর্ববিচারে প্রমাণিত হয়েছে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url