আইনের সংজ্ঞা, উৎস, তাৎপর্য ও শ্রেণীবিভাগ
আইনের উদ্দেশ্য, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলতে পারবন, আইনের শ্রেণীবিভাগ করতে পারবেন, আইন ও নৈতিকতার পারস্পরিক সম্পর্ক ও পার্থক্য আলোচনা করতে পারবেন, আইন কেন মান্য করা হয়-তা বলতে পারবেন।
ভূমিকা
মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রবর্তিত এমন নিয়ম-কানুন ও বিধি-বিধানকেই সাধারণ অর্থে আইন বলে অভিহিত করা হয়। সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষ যে সব বিধি-বিধান মেনে চলে সেগুলোকে সামাজিক আইন বলা যায়। প্রাকৃতিক জগতের ঘটনাবলী যে আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে বলা চলে প্রাকৃতিক আইন। আবার সমাজবদ্ধ মানুষের আচার-আচরণের প্রকৃতি, ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র সবই আইনের নির্দেশ অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে। আইন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে সুপথে পরিচালিত করে।
আইনের সংজ্ঞা
আইনের এ সাধারণ অর্থ ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইনকে এক বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রত্যক্ষ করা হয়। কোন সংগঠিত সমাজে মানুষের আচার-আচরণ ও পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক সৃষ্ট ও স্বীকৃত বিধি-বিধানকেই আইন বলে অভিহিত করা হয়। একে রাষ্ট্রীয় আইনও বলা যেতে পারে। রাষ্ট্রীয় আইন ও অন্য কোন প্রকার আইনের মধ্যে পার্থক্য এখানেই যে, প্রথমোক্তটি মান্য করা না হলে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ বল প্রয়োগের মাধ্যমে তা মান্য করতে জনগণকে বাধ্য করতে পারে। আইন লঙ্ঘনকারীকে শাস্তি দিতে পারে। কিন্তু শেষোক্ত আইনের ক্ষেত্রে কোনরূপ বলপ্রয়োগ করা যায় না।
বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আইনকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এ সব সংজ্ঞা থেকে আইন সম্পর্কে যথাযথ ধারণা লাভ করা যায়। বিশ্লেষণপন্থী ইংরেজ আইনবিদ জন অস্টিন (John Austin) -এর মতে, "আইন হচ্ছে অধঃস্তন রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের প্রতি ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত আদেশ বিশেষ" (Law is the command of the political superior [Sovereign] to the political inferior") আরো সহজভাবে বলতে গেলে এর অর্থ দাঁড়ায় এরকম- 'আইন হচ্ছে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের আদেশ।' অস্টিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অধ্যাপক হল্যান্ড (Holland) বলেন, "কোন সার্বভৌম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বলবৎকৃত এবং মানুষের বাহ্যিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী সাধারণ বিধিই আইন" (A law is a general rule of external action enforced by the sovereign political authority)। অধ্যাপক সালমন্ড (Salmond) লিখেছেন, "ন্যায় সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রয়োগকৃত বিধি-বিধানই হলো আইন।"
অপরদিকে স্যার হেনরী মেইন (Sir Henry Maine) আইনের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। তিনি ইতিহাসপন্থী হিসেবে খ্যাত এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলেন, সকল প্রচলিত আইনকেই সার্বভৌম শক্তির আদেশ বলে অভিহিত করা যুক্তিযুক্ত নয়; কেননা, এমন অনেক আইন আছে যেগুলো সম্পূর্ণরূপে প্রথাগত এবং যে গুলো কখনো সার্বভৌম শক্তি কর্তৃক প্রণীত হয়নি। তাঁর মতে, জনগণের সম্মতি ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব উভয়ে মিলে আইনের সৃষ্টি করে। অবশ্য সমালোচকগণ বলেন, প্রথাগুলো আইনে পরিণত হওয়ার জন্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রয়োজন।
অধ্যাপক গেটেল (Gettell) আইনের সংজ্ঞা দিতে দিয়ে বলেছেন, "রাষ্ট্র যে সকল নিয়ম-কানুন সৃষ্টি করে, স্বীকার করে এবং বলবৎ করে সেগুলোই কেবল আইন বলে পরিগণিত হয়।" (Only those rules which the state creates and which it recognizes and enforces become laws.)
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন (Woodrow Wilson) আইনকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে: "আইন হলো মানুষের স্থায়ী আচার-ব্যবহার ও চিন্তার সে অংশ যা রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত বিধি-বিধানে পরিণত হয়েছে এবং যার পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সুস্পষ্ট সমর্থন" "Law is that portion of the established thought and habit which has
found a distinct and formal recognition in the shape of uniform rules backed by the authorily and power of the government.")
অধ্যাপক বার্কার (Barker) অবশ্য লিখেছেন, "আইনকে আদর্শ স্থানীয় হতে হলে তা কেবল রাষ্ট্রীয় সংগঠন কর্তৃক স্বীকৃত, ঘোষিত এবং প্রযোজ্য হলেই চলবে না; তাকে ন্যায়সঙ্গত এবং যুক্তিসঙ্গতও হতে হবে।” অর্থাৎ তাঁর মতে, আদর্শ আইন দু'টো উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়- একটি হলো বৈধতা এবং অপরটি হচ্ছে নৈতিক মূল্য। বৈধতা বলতে বোঝায়, আইনটি রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত ও ঘোষিত হয়েছে। আর নৈতিক মূল্য হচ্ছে আইনটি ন্যায়বোধের উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রকৃতপক্ষে আইনের নৈতিক মূল্য যা-ই হোক না কেন, রাষ্ট্র কর্তৃক যদি তা বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত বলে স্বীকৃত হয় তবেই তা সকলের পক্ষে বাধ্যতামূলক বলে পরিগণিত হবে।
উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলোর বিশ্লেষণ থেকে আইনের কতিপয় বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রতিভাত হয়ে উঠে। সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের সর্বক্ষেত্রেই আইন প্রযোজ্য। শুধু তাই নয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আইন সমভাবে প্রযোজ্য। আইন মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। আইনের অপর একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, এটি অনুমোদিত ও স্বীকৃত। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে আইন অর্থবহ হয়ে উঠে। এছাড়াও আইন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সমভাবে সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সর্বোপরি, আইন অবশ্য পালনীয়। সকল নাগরিককেই আইন মেনে চলতে হয়। আইনের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং ফলে সভ্য ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আইনের উৎস
রাষ্ট্র যদিও সকল আইনের উৎস তবুও রাষ্ট্র ছাড়া আইনের আরো অনেক উৎস রয়েছে। নিম্নে সেসব উৎস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
• প্রথা: আইনের সর্বপেক্ষা প্রাচীনতম উৎস হচ্ছে প্রথা। প্রাচীনকালে বিভিন্ন ধরনের প্রথার মাধ্যমেই দ্বন্দ্ব-বিরোধের মীমাংসা করা হত। আধুনিককালেও প্রচলিত প্রথাগুলো আইনের ভাঙা-গড়ার কাজে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়ে আইন জীবন্ত হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ডের শাসন ব্যবস্থায় প্রথাগত বিধান এক বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে। সেখানকার সাধারণ আইন (Common Law) মূলত প্রথা থেকে উৎসারিত।
• ধর্ম: প্রাচীন সমাজে ধর্ম ও আইন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তখন আইন ও ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে প্রভেদ করা ছিল দুরূহ। ধর্ম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আইনের বিবর্তন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করেছিল। অধিকাংশ সমাজেই ধর্ম আইনের ভিত্তি হিসেবে ক্রিয়াশীল ছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, সূচনাতে রোমান আইন কতকগুলো ধর্মীয় সূত্র ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আধুনিক হিন্দু এবং মুসলিম আইন ধর্ম নিসৃত।
• ন্যায়বোধ: ন্যায়বোধ বা ন্যায় বিচার আইনের অপর একটি বিশেষ উৎস। যখন বিচারকগণ প্রত্যক্ষ করেন যে, দেশে প্রচলিত আইনের আওতায় বিচার কার্য সম্পন্ন করা সম্ভবপর নয় তখন তাঁরা তাঁদের ন্যায়বোধ অনুসারে বিচার কার্য সম্পন্ন করে থাকেন। এভাবে নতুন আইনের সৃষ্টি হয়। স্যার হেনরী-মেইন (Sir Henry Maine) তাই লিখেছেন, "আইনকে সমাজের ন্যয়বোধের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত রাখতে হলে আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতিতে সর্বদা আইনের সংশোধনের ব্যবস্থা রাখা আবশ্যক; আর এটিই ন্যায়বোধ।" ন্যায়বোধের মাধ্যমে বিচারকগণ বিচার করে থাকেন বলে একে বলা হয় 'বিচারক প্রণীত আইন' (Judge-made law)।
• বিজ্ঞান সম্মত আলোচনা: প্রখ্যাত আইনজ্ঞদের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা এবং পর্যালোচনা থেকে আইন লাভ করা যায়। তাঁদের সংক্ষিপ্ত টীকা ও আলাপ-আলোচনা অনেক সময় আইনের প্রকৃত অর্থ প্রকাশ করে। বিশিষ্ট আইনবিদগণ প্রাচীন ও বর্তমান তথ্যাদির তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে আইনের ব্যাখ্যা ও প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরতে সচেষ্ট হন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ইংল্যান্ডের আইন ব্যবস্থায় ব্যাকস্টোন (Blackstone) কোক (Coke) প্রমুখ আইনজ্ঞদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আইন প্রবর্তনে এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে রয়েছে।
• বিচারের রায়: আদিকালে প্রথা ও ধর্মীয় নীতির সাহায্যে সব ধরনের বিরোধ ও দ্বন্দ্বের সমাধান করা হতো। কিন্তু সমাজ জীবনে জটিলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ আইনের আশ্রয় গ্রহণ করে। কিন্তু দেখা গেল আইনের মাধ্যমেও মানুষ তাদের সকল সমস্যার সমাধান খুঁজে পেল না। ফলে তারা বিচারকের মতামত ও রায়ের উপর নির্ভর করতে থাকে। ক্রমে বিচারকের রায় আইনে পরিণত হল।
• নির্বাহী ঘোষণা ও ডিক্রী: আধুনিক কালে শাসন ব্যবস্থার জটিলতার কারণে আইন সভা নিজের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের কিছু কিছু অংশ নির্বাহী বিভাগের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। ফলে নির্বাহী বিভাগকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার ঘোষণা দিতে হয় এবং ডিক্রী জারি করতে হয়। এভাবে জারিকৃত ঘোষণা ও ডিক্রী আইনের মর্যাদা লাভ করে। নির্বাহী ঘোষণা ও ডিক্রী সাধারণত ordinance হিসেবে ঘোষিত হয় এবং পরবর্তীতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আইনের রূপ লাভ করে।
• আইন সভা: আধুনিককালে আইন সভা আইন প্রণয়নের একটি প্রধান উৎস। অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জনমতকেই আইনের একমাত্র উৎস বলে বর্ণনা করেছেন। আর আইনসভার সদস্যরা সর্বদাই জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই আইন প্রণয়ন করেন। আইনসভাই প্রকৃতপক্ষে জনমত, প্রথা, ন্যায়-নীতি প্রভৃতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আইনের মর্যাদা দান করে। এমনকি আধুনিক কালের আইন সভা সংবিধান প্রণয়ন ও সংশোধনের দায়িত্ব পালন করে।
• সংবিধান: আইন সভা ছাড়াও আইনের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো সংবিধান। সংবিধানেই রাষ্ট্র পরিচালনার যাবতীয় নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান লিখিত আকারে বিদ্যমান থাকে। আর এই লিখিত সংবিধানই আইনের জন্মদাতা।
আইনের তাৎপর্য
আইন মানব জীবনকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। এ অর্থে আইন সমাজ তথা রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। আইনের অনুপস্থিতিতে সমাজ ও রাষ্ট্রদেহে অরাজকতার সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্র পরিচালিত হয় সরকার কর্তৃক আর সরকার আইনের সাহায্যে রাষ্ট্রের ইচ্ছাকে ব্যাখ্যা ও বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট হয়।
আইন সার্বভৌম ক্ষমতার হাতিয়ারস্বরূপ। প্রকৃতপক্ষে সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে যে কোন আলোচনা আইনের আলোচনা ব্যতীত পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। সার্বভৌমত্ব মূলত এক বিমূর্ত ধারণা এবং আইনের মাধ্যমে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত তা সত্যিকারভাবে অর্থবহ হয় না।
আরো পড়ুন: আদর্শ সমাজ গঠনে মসজিদের ভূমিকা
আইনের শ্রণীবিভাগ
দুটো প্রধান ভিত্তির উপর নির্ভর করে আইনের শ্রেণীবিভাগ করা হয়। প্রথমত: আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে এবং দ্বিতীয়ত: সমাজের কোন্ শ্রেণী বা ব্যক্তিবর্গের সাথে আইন সম্পর্কযুক্ত তার উপর ভিত্তি করে আইনের শ্রেণীবিভাগ করা হয়।
প্রথমোক্ত ভিত্তিতে আইনকে নিম্নোক্ত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়:
• সাধারণ আইন: সাধারণ আইন বলতে সে সব আইনকে বোঝায় যেগুলো সমাজের প্রচলিত প্রথা, রীতি-নীতি,আচার-আচরণ ও অভ্যাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। এসব প্রথা থেকে উদ্ভূত হওয়া সত্ত্বেও ক্ষেত্রবিশেষে সেগুলো আদালত কর্তৃকও প্রবর্তিত হয়ে থাকে। ব্রিটেনে সাধারণ আইন যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ।
• সংবিধি: সংবিধি হচ্ছে সে সব আইন যেগুলো আইন সভা কর্তৃক রচিত হয়ে থাকে। আধুনিক গণতান্ত্রিক যুগে প্রায় সব দেশেই নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে তথা জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে আইন সভায় আইন প্রণীত হয়।
• শাসন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ: শাসন বিভাগীয় নির্দেশসমূহও আইন হিসেবে মান্য করা হয়। এগুলোকে অর্ডিন্যান্স বলা হয়ে থাকে। রাষ্ট্রীয় আইনের কাঠামোতে থেকে শাসন কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের আদেশ জারি করার ক্ষমতা দেয়া হয়। সাধারণভাবে কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এসব আদেশ-নির্দেশ জারি করে থাকেন কোন জরুরি অবস্থার প্রেক্ষাপটে। এসব আদেশ-নির্দেশ চিরস্থায়ী কিছু নয়।
দ্বিতীয়োক্ত ভিত্তিতে আইনকে আবার বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন:
• বেসরকারী আইন: এ আইনের মাধ্যমে নাগরিকদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণীত হয়। রাষ্ট্র এ আইনের সৃষ্টি করে না; মানুষের আচরণবিধি এবং যুক্তিবোধ থেকে এর উৎপত্তি ঘটে। অধ্যাপক হল্যান্ড (Holland) এর মতে, "বেসরকারী আইনে উভয় পক্ষই বেসরকারী ব্যক্তিবর্গ এবং এ দু'পক্ষের মধ্যে রাষ্ট্র এক নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে।" "In private law, the parties concerned are private individuals above and between whom stands the state as an impartial arbiter."
• সরকারী আইন: এ আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারিত হয়। সরকারী আইনকে রাষ্ট্রীয় বা গণআইনও বলা যায়। রাষ্ট্রের সংগঠন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্য শাসন ক্ষমতা বণ্টন, কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক বা অঙ্গরাজ্য সরকারের সম্পর্ক রক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ এ আইনের পরিধির অন্তর্গত। অধ্যাপক হল্যান্ড (Holland) বলেন, "এ আইনের অধীনেও রাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় যদিও রাষ্ট্র এক্ষেত্রে নিজেই নিজের পক্ষ সমর্থন করে।"
• সাংবিধানিক আইন: সাংবিধানিক আইন বলতে এমন কতিপয় বিধি-বিধানকে নির্দেশ করে যেগুলোর মাধ্যমে সরকারের শাসন ক্ষমতা এবং শাসক ও শাসিতের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এ আইনের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ক্ষমতার পরিধি নির্ণীত হয়ে থাকে। অধ্যাপক ডাইসীর (Diccy) মতে, "সাংবিধানিক আইন সেসব নিয়ম-কানুনের সমষ্টি যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন বা ব্যবহারকে প্রভাবিত করে এবং যা আদালত কর্তৃক বলবৎ হয়।" প্রকৃতপক্ষে সাংবিধানিক আইনের মাধ্যমেই সরকারের গঠন ও কর্মকাণ্ড ব্যাখ্যা ও পরিচালিত হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন ও ক্ষমতা, সুপ্রীম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী, রাজ্য সরকার ও গভর্ণরদের নিয়োগ পদ্ধতি ইত্যাদি সাংবিধানিক আইনের বিষয়।
• প্রশাসনিক আইন: প্রশাসনিক আইন সরকারী কর্মকর্তাদের পদ এবং দায়-দায়িত্ব ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে। নাগরিকদের ক্ষেত্রে এ আইন প্রযোজ্য ও কার্যকরী নয়। প্রশাসনিক আইন প্রধাণত ইউরোপে বিশেষ করে ফ্রান্সে সর্বাধিক প্রচলিত। সে দেশে সাধারণ আইনছাড়াও অপর একটি বিশেষ প্রশাসনিক আদালতে (Administrative Tribunal) সরকারী কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত ও বিচার করা হয়।
• আন্তর্জাতিক আইন: বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণকারী আইনকে বলা হয় আন্তর্জাতিক আইন। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক আইন আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণকারী আইন। গ্রোসিয়াস (Grotius)- এর মতে, "আন্তর্জাতিক আইন সে সব প্রথা ও সন্ধির শর্তাবলী নির্দেশ করে যেগুলো বিভিন্ন রাষ্ট্রের পারস্পরিক ক্রিয়াকলাপে আইনগতভাবে কার্যকরী বলে বিবেচিত হয়।" লরেন্স (Lawrence) লিখেছেন, "সভ্য রাষ্ট্রগুলো পারস্পরিক আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী বিধি-বিধান হচ্ছে আন্তর্জাতিক আইন।" সকল আন্তর্জাতিক আইনই বিভিন্ন রাষ্ট্র কর্তৃক সর্বজনীনভাবে পালিত হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: স্থানীয় সরকার কি স্থানীয় সরকার ও তার ক্রমবিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত
আইন ও নৈতিকতা
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আর, এন গিলক্রাইস্ট (R. N. Gilchrist) লিখেছেন যে, "The state is founded on the minds of its citizens, who are moral agents... A bad people means a bad state and bad laws." অর্থাৎ রাষ্ট্র জনগণের মননের উপর ভিত্তিশীল এবং জনগণ নৈতিক এজেন্ট বৈ আর কিছুই নয়। একথা সর্বজনস্বীকৃত যে, আইন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত এবং নৈতিকতা নীতিশাস্ত্রের আলোচ্যসূচীর অন্তর্গত। এতদসত্ত্বেও এ দু'য়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও নীতিশাস্ত্রের মধ্যে যেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান তেমনি আইন ও নৈতিকতার মধ্যেও অনুরূপ সম্পর্ক পরীলক্ষিত হয়।
রাষ্ট্র মূলত এক নৈতিক প্রতিষ্ঠান। জনগণের কল্যাণ সাধন এবং বিশেষ করে নৈতিক কল্যাণ সাধন করাই রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য। রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড নৈতিকতার পরিপন্থী হওয়া উচিত নয়। প্রকৃতপক্ষে আইন ও নৈতিকতার উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন। উভয়েই সমাজকল্যাণ সাধন করতে ইচ্ছুক। আইনের উদ্দেশ্য আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সুনাগরিক তৈরী করে রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা করা। আর নৈতিকতার লক্ষ্যও সৎ ও ন্যায়বান নাগরিক গড়ে তোলে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নীতিবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সঠিক কল্যাণ সাধন করা। শুধু তাই নয় বিষয়বস্তুর দিক থেকেও আইন ও নৈতিকতার মধ্যে গভীর যোগসূত্র দেখা যায়। উভয়ের আলোচ্য বিষয় এক ও অভিন্ন মানুষ ও সমাজ। অর্থাৎ সমাজবদ্ধ মানুষ নিয়েই আইন ও নৈতিকতা আলোচনা করে। রাষ্ট্রীয় আইন নৈতিকতা ও নীতিবোধ থেকে অধিক পরিমাণে উৎসারিত হয়ে থাকে।
এতদসত্ত্বেও কালের আবর্তে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম ক্ষমতার উদ্ভব ও বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে আইন ও নৈতিকতার মধ্যে কতিপয় পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যেগুলো নিম্নোরূপ:
১। আইন কেবলমাত্র মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ ও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে। পক্ষান্তরে নৈতিকতা মানুষের বাহ্যিক এবং আত্মিক উভয় প্রকার আচরণ ও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে।
২। আইন রাষ্ট্রকর্তৃক প্রবর্তিত ও প্রয়োগ হয়ে থাকে। আইন ভঙ্গকারীকে শাস্তি ভোগ করতে হয়। কিন্তু নৈতিক বিধি- বিধানের পেছনে সামাজিক অনুমোদন থাকে বলে তা পালিত হয়।
৩। আইন রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত। আইন সুনির্দিষ্ট ও সুনিশ্চিত। কোন নির্দিষ্ট আইন অমান্যকারীকে নির্দিষ্ট আইনানুসারে দণ্ডিত করা হয়। পক্ষান্তরে, নৈতিক বিধি-বিধান রাষ্ট্র কর্তৃক সৃষ্ট নয়। আর এ কারণে এগুলো সুনির্দিষ্ট এবং সুনিশ্চিতও নয়। ব্যক্তিবিশেষের নৈতিকতা ভিন্ন রূপ হতে পারে। যেমন, ভিক্ষুককে ভিক্ষা প্রদান কোন ব্যক্তিবর্গের নিকট নৈতিক কাজ বলে পরিগণিত হতে পারে; আবার এটি অন্যদের নিকট রাষ্ট্রে ভিক্ষাবৃত্তি গর্হিত বলে গণ্য হতে পারে।
৪। রাষ্ট্রীয় আইন অনেক সময় নৈতিকতা বহির্ভূত হওয়া সত্ত্বেও তা পালিত ও কার্যকরী হয়। উদাহরণস্বরূপ, রাস্তার ডান পাশ দিয়ে গাড়ী চালানো নৈতিকতাবিরোধী কোন কাজ নয়; তবু তা আইনের চোখে ঠিক নয়; এটি বে-আইনী। পরিশেষে বলা আবশ্যক যে, উপরোক্ত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আইন ও নৈতিকতা সম্পূর্ণ বিচ্ছন্ন নয়। মানুষের বিবেক, বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা থেকেই আইনের জন্ম। নৈতিকতা বিবর্জিত কোন আইন বাস্তবে কার্যকর করা সহজ নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার (MacIver) অবশ্য বলেছেন যে, "সকল নৈতিক কাজকে আইনগত কাজে রূপান্তরিত করার অর্থ নৈতিকতাকে ধ্বংস করা। "To turn all moral obligations into legal obligations would be to destroy morality" এতদসত্ত্বেও একথা জোর দিয়ে বলা চলে যে, আইন যদি নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে তাহলে তা অনেকগুণে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হয়ে থাকে।
মানুষ আইন মান্য করে কেন
মানুষ কেন আইন মান্য করে এ নিয়ে মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ মনে করেন যে, রাষ্ট্রে অরাজকতার আশংকায় এবং শাস্তির ভয়ে মানুষ আইনকে মেনে চলে। এ ধারণায় যারা বিশ্বাস করেন তাদের মধ্যে হবস্, বেন্থাম ও অস্টিনের নাম সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, মানুষ আইনের উপযোগিতা উপলব্ধি করে বলে তা মান্য করে। ফরাসী দার্শনিক রুশো এবং কতিপয় আদর্শবাদী দার্শনিক এ ধারণায় আস্থা স্থাপন করেন। তবে এই দ্বিমুখী অভিমতের সমন্বয় সাধন করেছেন স্যার হেনরী মেইন এবং তাঁর অনুসারী ঐতিহাসিক আইনজ্ঞগণ। তাঁদের মতে, মানুষ শাস্তির ভয় এবং উপযোগিতার উপলব্ধি এ দু'কারণেই আইনকে মান্য করে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লর্ড ব্রাইস (Lord Bryce) জনগণের আইন মেনে চলার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে: নির্লিপ্ততা, দন্ডভয়, সহানুভূতি, উপযোগিতার উপলব্ধি এবং শ্রদ্ধাবোধ। নির্লিপ্ততার অর্থ হলো মানুষ রাজনৈতিক বিষয়াদির ব্যাপারে নির্লিপ্ত অর্থাৎ উদাসীন। তারা রাজনৈতিক ব্যাপারে কোনরূপ মাথা ঘামাতে চায় না। সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় আইনকেই তাঁরা কোনরূপ চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই মান্য করে চলে। অনেকে আবার দন্ড ভয়ের বশবর্তী হয়ে আইন মেনে চলে। সহানুভূতির অর্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষের আচরণের প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ হয়ে কোন কাজ করা। অধিকাংশ জনগণ যখন কোন বিশেষ আইনকে মান্য করে চলে তখন তাদের অনুবর্তী হয়ে অপরাপর জনগোষ্ঠীও তা মেনে চলে। শ্রদ্ধাভক্তিও আইন মেনে চলার পেছনে ক্রিয়াশীল হয়। অর্থাৎ কোন জননেতা বা রাষ্ট্রনায়কের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি প্রদর্শনপূর্বক মানুষ তাদের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে চলে। এছাড়াও আইন মান্য করার পেছনে রয়েছে আইনের উপযোগিতা। সভ্যতার অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে এই উপলব্ধি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। তাই দেখা যায় যে, যে দেশ বা জাতি যত উন্নত ও সভ্য সেদেশের জনগণ উপযোগিতার কারণেই আইনের প্রতি তত বেশি শ্রদ্ধা পোষণ করে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন জনগণের কর্তব্য বটে, কিন্তু তা নিরঙ্কুশ নয়। প্রকৃতপক্ষে আইন হচ্ছে কোন বৈধ কর্তৃপক্ষের আদেশ। জনগণ এমন আইন মেনে চলবে না যা তাদের ব্যক্তি সত্ত্বার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। টিএইচ গ্রীণ (T.H. Green) বলেছেন, 'রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষকে অমান্য করা যায় তখনই যখন তা জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে'। অধ্যাপক লাস্কী (Laski) বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে তোলেন যখন তিনি বলেন, "জনগণের সর্বশেষ আনুগত্য হলো আদর্শের উপর"। রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি আনুগত্য পোষণ না করা অন্যায়, তবে আপত্তিকর আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করলে তা হয় বিবেক ও সমাজের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।
এরিস্টটল নাগরিকদের প্রয়োজনীয় গুণাবলী এবং অপ্রয়োজনীয় গুণাবলীর মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। অপ্রয়োজনীয় গুণাবলীর মধ্যে আবাসগৃহ, গোত্র বা বংশ, আইনগত সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আর নাগরিক কর্তব্য, সম্পাদন এবং রাজনৈতিক কার্যাদি নাগরিকদের প্রয়োজনীয় গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত। এরিস্টটল তাই জোর দিয়ে বলেন, একজন নাগরিককে অবশ্যই নগর রাষ্ট্রের সক্রিয় সদস্য হতে হয়।
সারকথা
কোন সংগঠিত সমাজে মানুষের আচার-আচরণ ও পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক সৃষ্ট ও স্বীকৃত বিধি- বিধানকেই বলা হয় আইন। আইন অমান্য করলে রাষ্ট্র বল প্রয়োগের মাধ্যমে তা মান্য করতে জনগণকে বাধ্য করতে পারে। ইংরেজ আইন বিশারদ জন অস্টিন বলেছেন, সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের আদেশই আইন। অপরদিকে স্যার হেনরী মেইন আইনের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে বলেন, সকল প্রচলিত আইনকেই সার্বভৌম শক্তির আদেশ বলে গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা তার মতে, এমন অনেক আইন রয়েছে- যেগুলোর উদ্ভব হয়েছে প্রথাগতভাবে কোন সার্বভৌম শক্তি কর্তৃক নয়। প্রকৃতপক্ষে জনসম্মতি ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব এ দু'য়ে মিলে আইন সৃষ্টি করে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url