পুঁজিবাদ কি পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্য গুণাবলী দুর্বলতা ও প্রভাব

পুঁজিবাদ কি তা বলতে পারবেন। পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করতে পারবেন, পুঁজিবাদের গুণাবলী আলোচনা করতে পারবেন। পুঁজিবাদের দুর্বলতা ব্যাখ্যা করতে পারবে, বিশ্বে পুঁজিবাদের প্রভাব বর্ণনা করতে পারবেন।


পুঁজিবাদ কি?

পুঁজিবাদ প্রকৃতপক্ষে এক প্রকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা' সমাজতন্ত্রবাদ নামক মতবাদের বিপরীত। এ অর্থব্যবস্থার মূল কথা হল, ব্যক্তি তার উপার্জিত ধনসম্পদের একচেটিয়া মালিক। রাষ্ট্রিয় বিধি বিধানের মধ্যে থেকে সে অবাধে ধনসম্পদ উপার্জন করতে পারে এবং তার পছন্দমত ক্ষেত্রে ও পন্থায় তা ভোগ-ব্যবহার ও বিনিয়োগ করতে পারে। রাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বাধীনতা ততদূর পর্যন্ত নিশ্চিত করবে যতদূর পর্যন্ত ভোগ করলে অন্যের অধিকারের সীমায় অনুপ্রবেশ ঘটবে না।

পুঁজিবাদ শব্দটির সাথে স্বার্থপরতা, শোষণ, অসাম্য, সাম্রাজ্যবাদ এবং যুদ্ধ এর মিল দেখা যায়। এ মতবাদের ফলে সমাজে ধনবন্টনের ক্ষেত্রে একপ্রকার বৈষম্য বিরাজ করে, সর্বদাই সম্পদশালী তার পুঁজিকে সম্প্রসারিত করার জন্য শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষের আয় ও উপার্জন নান্য প্রক্রিয়ার কুক্ষিগত করে থাকে। পুঁজিবাদ এমন এক ব্যবস্থা যাতে উৎপাদন ও বন্টনের সকল উপাদান ব্যক্তি, গোষ্ঠী, কোম্পানী, সমবায় ইত্যাদির নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রাষ্ট্রশক্তিকে করায়ত্ত করে তারা এসব উপাদানের উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে এ সব উপাদান হতে অর্জিত সম্পদ নিজেদের কল্যাণে ব্যয় করতে উদ্যোগী হয়।

পুঁজিবাদ কোন স্বয়ংসম্পূর্ণ মতবাদ নয় বরং এটি হচ্ছে উদারতাবাদ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ, গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতার মতবাদের উপর গড়ে-ওঠা একপ্রকার আর্থ রাজনৈতিক ব্যবস্থা। এর মূলকথা হচ্ছে লাভের (Profit) পিছু ছোটা। 'পুঁজিবাদ হচ্ছে অবিরাম ও যুক্তিসঙ্গত পুঁজিবাদী উদ্যেগের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান লাভ অর্জনের প্রয়াস'। বলেছেন ম্যাক্স ওয়েবার নামক জার্মান সমাজতাত্ত্বিক। বিনিময়ের সুযোগ গ্রহণ করে, লাভ অর্জনের আকাঙ্খার উপর পুঁজিবাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

আরো পড়ুন: জাতি কি জাতীয়তার সংজ্ঞা ও উপাদান সমূহ 

পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্য

• স্বাধীন শ্রম: পুঁজিবাদ 'স্বাধীন শ্রম' নামক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদানের উপর নির্ভরশীল। এ মতবাদে শ্রম পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। ওয়েবার এর মতে, এই শ্রম হচ্ছে মানুষের স্বাধীনতার শর্ত। অর্থাৎ নিয়োগ ও মজুরীর অসংখ্য সম্ভাবনা হতে মানুষ তার পছন্দমত কাজ বেছে নিতে পারবে এবং সেই ক্ষেত্রে তার শ্রম বিক্রয় করবে ঘোষিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে। মানুষ তার শ্রম বিক্রির মজুরী হতে ক্রয় করবে তার আকাঙ্ক্ষিত বস্তু। এক্ষেত্রে তার পুঁজি হ'ল তার সময়, শক্তি, ক্ষমতা ও মনোযোগ।

• যুক্তিনির্ভরতা: ম্যাক্স ওয়েবারের মতে, যুক্তিনির্ভরতা পুঁজিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পুঁজিবাদ প্রধানত বাস্তব বুদ্ধিবৃত্তি দ্বারা পরিচালিত সমাজব্যবস্থা। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা উন্নততর সংগঠন, অধিকতর দক্ষ উৎপাদন ব্যবস্থা ও অধিকতর কাম্যতা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এ ব্যবস্থা উপায় ও লক্ষ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। উন্নতি সাধনের জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা এবং পরস্পর প্রতিযোগিতা এ ব্যবস্থার মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এ ব্যবস্থায় ব্যক্তি যেহেতু চিন্তা ও কর্মের দিক থেকে স্বাধীন, সেহেতু সে সর্বদাই অন্যের উপর অর্থনৈতিক প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট থাকে।

• লাভ - লোকসান কেন্দ্রিক: পুঁজিবাদে মূলত: ব্যক্তির লাভ-লোকসানই মুখ্য। জীবনধারণের জন্য ব্যক্তির মধ্যে যে কাম্যতা সৃষ্টি হয় তা' পূরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি লাভজনক উপাদানকে গ্রহণ ও অলাভজনক উপাদানকে বর্জন করার চেষ্টা করে থাকে। ম্যাক্স ওয়েবারের মতে, পুঁজিবাদ হচ্ছে লাভ ও লোকসানের নিরিখে মূল্যায়িত, পরিকল্পিত ও সুসংগঠিত অবিরাম উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা গ্রহণের ফল।

• পৃথকীকরণ: পুঁজিবাদে ব্যক্তিনিরপেক্ষতার চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়। এ ব্যবস্থা অনুযায়ী মানুষ জন্মগতভাবে কোন ভাগ্য নিয়ে আসে না। কোন অর্থনৈতিক চুক্তিও তার সারাজীবনের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। এ ব্যবস্থায় কোন দ্রব্যের বা সেবার ক্রেতা এর প্রস্তুতকারককে চেনে না। এ ব্যবস্থায় বাসস্থান হতে কর্মস্থান পৃথক।

• নগরকেন্দ্রিকতা: পুঁজিবাদ অত্যন্ত দ্রুত ও ব্যাপকভাবে নগর ও শহরে ছড়িয়ে পড়ে। নাগরিক জীবন ধারণ পদ্ধতি কৃষি ভিত্তিক গ্রামীণ সমাজকে ভেঙে দেয়। নগর জীবনে আইনের শাসন শক্তিশালী হয়, আদর্শ সামাজিক সংগঠন সৃষ্টি হয়। অন্য দিকে গ্রাম এলাকায় পুরানো ব্যবস্থাই অনেকটা টিকে থাকে। পুঁজিবাদ নাগরিক সংস্কৃতির ওপর নির্ভরশীল। পুঁজিবাদ নতুন নাগরিক সংস্কৃতিও সৃষ্টি করে।

• ব্যক্তি মালিকানা: পূর্বেই সংজ্ঞায় যেমন বলা হয়েছে, পুঁজিবাদ মানুষের জীবন যাপনের জন্য ব্যবহৃত বাড়ি, আসবাবপত্র, পশু, যানবাহন ইত্যাদির মতই উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদান যেমন: যন্ত্রপাতি, অস্ত্রশস্ত্র, জায়গাজমি, কাঁচামাল, কারখানা ইত্যাদির ওপর ব্যক্তিমালিকানা সুপ্রতিষ্ঠিত করে।

• উপার্জন অধিকারের স্বাধীনতা: পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মানুষ ব্যক্তিগতভাবে কিংবা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতে সংঘবদ্ধ হয়ে নিজেদের পুঁজি ও উপায় উপাদানকে কাজে লাগাবার পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে। এর দ্বারা অর্জিত লাভ-লোকসান তারা নিজেরাই ভোগ করে, খেসারতের ঝুঁকি নিজেরাই গ্রহণ করে, মুনাফার পাহাড়ের মালিকও হয় নিজেরাই। তারা ইচ্ছামত উৎপাদনের পরিমাণে হ্রাস বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। শ্রমিক বা কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বেতন ও অন্যান্য শর্ত নির্ধারণে তারা অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে।

আরো পড়ুন: সাম্যে কি সাম্যের প্রকারভেদ সাম্য ও স্বাধীনতা

পুঁজিবাদের গুণাবলী

• স্বাধীনতা: পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ব্যক্তির অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকে। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনের সীমারেখার মধ্যে থেকে ব্যক্তি তার পছন্দমত উপায়ে ধন উপার্জন ও জীবনযাপনের পথ বেছে নিতে পারে। অন্যের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ না ঘটান পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা না থাকায় ব্যক্তি তার সম্ভাবনাকে পরিপূর্ণভাবে বিকাশের সুযোগ পায় এবং তার মেধা, যোগ্যতা ও বুদ্ধিবৃত্তি দ্বারা নিজ উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নের পথ উন্মুক্ত করে।

• যুক্তিভিত্তিক দর্শণ: পুঁজিবাদ কোন আবেগসর্বস্ব দর্শন নয়। এর পেছনে যুক্তির অবস্থান বেশ মজবুত। মানুষ এই পৃথিবীতে তার অবস্থানকে নিশ্চিত করার জন্য সংগ্রাম করবে এটাই স্বাভাবিক। জীব জগতে মানুষ যেমন লক্ষ লক্ষ বছর ধরে তার অবস্থান সবার উর্ধ্বে সংগ্রামের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতে পেরেছে, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় জীবনেও সে তেমনি পারস্পরিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিকে থাকবে-এটাই যুক্তিযুক্ত। পুঁজিবাদ এ প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে।

• যোগ্যতার স্বীকৃতি: পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় রাষ্ট্র হচেছ ব্যক্তির উদ্দেশ্য সাধনের উপায়। সমাজতন্ত্রের মত নিজেই নিজের লক্ষ্য নয়। এখানে রাষ্ট্র ব্যক্তির বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও উপাদান সরবরাহ করবে, ব্যক্তি সেখান হতে নিজ প্রয়োজনমত রসদ সংগ্রহ করে নিজেকে বিকশিত করবে। পুঁজিবাদ এমন ধরনের সংগ্রামী মানুষকে স্বীকৃতি ও সম্মান দিয়ে থাকে।

আরো পড়ুন: আইনের সংজ্ঞা, উৎস, তাৎপর্য ও শ্রেণীবিভাগ

পুঁজিবাদের দুর্বলতা

• দুর্নীতি: পুঁজিবাদে সকল ব্যক্তি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ উপায়ে সফল হলেও প্রাচুর্যের ভারে দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়। আরো সম্পদ বৃদ্ধি ও ভোগের নেশা তাদের দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করে। এ ব্যবস্থায় নাগরিকগণ স্বাধীনতার নামে ভোগসর্বস্ব স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপন করতে চায়। ফলে তারা ভোগজনিত নানা রকম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে।

• বিজ্ঞাপন প্রচার: পুঁজিবাদ অবাধ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে। এতে প্রত্যেক উদ্যোক্তা ও সরবরাহকারী নিজ নিজ পণ্যের প্রতি ক্রেতা সাধারণের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য নানা প্রকার আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে। অনেক সময় এ বিজ্ঞাপন ক্রেতার খারাপ স্পৃহাকে জাগিয়ে দেয় এবং মানুষের মধ্যে ভোগের আতিশয্য বৃদ্ধি করে তার সংযমপূর্ণ নৈতিকতা বিনষ্ট করে। এ ব্যবস্থায় প্রয়োজনে মানুষকেও পণ্যের মত ব্যবহার করা হয় যা' মানুষের জন্য অবমাননাকর।

• সুবিধাবাদী শ্রেণীর উদ্ভব: এ ব্যবস্থায় রাজনীতিবিদগণ জনগণের সমর্থন লাভের আশায় তাদেরকে নানারকম প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। ক্ষমতা লাভের পর এসব চাহিদা পূরণের দিকে মনোযোগ দিতে হয় কল্যাণকর কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে। ফলে একটি কর্মবিমুখ সুবিধাবাদী শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। এ শ্রেণীকে তোষণ ও প্রতিপালন করতে গিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক সামর্থে ঘাটতি দেখা দেয়।

• শ্রেণী বৈষম্য: পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বিত্তবান শ্রেণী সম্পদের পাহাড় গড়ে ভোগবিলাসে মত্ত থাকে। তারা বিলাসিতার স্রোতে গা ভাসিয়ে সম্পদের অপচয় করে। কিন্তু পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠী অর্থের অভাবে জীবনের ন্যূনতম মৌলিক প্রয়োজনও পূরণ করতে পারেনা। মানুষে মানুষে শ্রেণীগত এ ভেদাভেদ পুঁজিবাদেরই সৃষ্টি। ক্রমাগত বেকারত্ব বৃদ্ধি-এর অন্য দিক।

• শোষণের হাতিয়ার: পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় রাষ্ট্র সমাজের বিত্তবান, পুঁজিপতি ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের স্বার্থে কাজ করে। আইন প্রণীত হয় তাদের স্বার্থ রক্ষার বিধান হিসেবে। রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা ও স্বাধীনতা - সার্বভৌমত্ব রক্ষার নামে প্রকৃত পক্ষে ধনিক শ্রেণীরই নিরাপত্তা বিধান করে। এ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়ায় এ শ্রেণীটি শোষণ বৃদ্ধিতে লিপ্ত থাকে।

সারকথা

পুঁজিবাদের গুণাবলী ও ত্রুটি উভয়ই আছে। অবাধ প্রতিযোগিতা ও নিয়ন্ত্রিণবিহীন স্বাধীনতা মানুষকে ভোগসর্বস্ব জীবে পরিণত করে। এমন সমাজে মানুষের মূল্য নির্ণয় করা হয় তার প্রাচুর্য, বিত্ত, সম্পদ কিংবা অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা ও মেধার বিনিময়ে। সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের যে জন্মগত অধিকার রয়েছে ভালভাবে বেঁচে থাকার ও উন্নত জীবন যাপনের সে কথার স্বীকৃতি এখানে নেই। পুঁজিবাদে শিল্পায়ন, নগরায়ন, বস্তুগত উন্নয়ন ইত্যাদির ফলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় অন্যদিকে সাধারণ শ্রেণীর ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি না পাওয়ায় ভোগ্যপণ্যের বাজার সংকুচিত হয়ে পড়ে। এসব পণ্যের বাজার সৃষ্টির জন্য ধনিক শ্রেণী অন্যদেশে সাম্রাজ্য বিস্তারে উদ্যোগী হয়। এতে জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ বাড়ে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url