হযরত যুল-কিফুল (আ) সংক্ষিপ্ত জীবনী
আজ এই আর্টিকেলটিতে হযরত যুল-কি (আ)-এর বংশ পরিচয় সাহাবায়ে কেরামের বাণী ও বর্ণনা সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো।
হযরত যুল-কি (আ)-এর বংশ পরিচয়
আল কুরাআনে হযরত যুল-কিফল (আ)-এর নাম ব্যতীত আর ও করেন। এরূপে নবী পাক (স) হতে ও তাঁর সম্পর্কে কিছু বর্ণনা করা হয় নি। অতএব, কুরআন ও হাদীসের আলোকে তাঁর সম্পর্কে এর চেয়ে আর অধিক কিছু বলার নেই যে, হযরত যুল-কিফ্ল (আ) আল্লাহ্ পাকের মনোনীত একজন নবী ছিলেন এবং কোন জাতির হেদায়েতের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। এর অধিক বিবরণ প্রদানে কুরআন ও হাদীস সম্পূর্ণ নীরব। এর দ্বিতীয় স্তর, জীবনী ও ইতিহাস গ্রন্থের। কিন্তু যথেষ্ট তালাশ ও অনুসন্ধানের পরেও এ সম্পর্কে এমন কিছু জানা যায়নি যা দ্বারা হযরত যুলকি (আ)-এর অবস্থা ও ঘটনাবলির আলোকপাত হতে পারে। তাওরাতে এসম্পর্কে নীরব ও ইসলামী ইতিহাস কুরআনে যুল কিফ্ল (আ) এর আলোচনা
কুরআনে হযরত যুল-কি (আ)-এর আলোচনা সূরা আম্বিয়া ও সূরা ছোয়াদ এ দুটি সূরায় করা হয়েছে। এ দুটি সূরায় শুধু তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মোটামুটি বা বিস্তারিত কোন আলোচনা করা হয় নি।
অর্থঃ আর স্বরণ করুন। ইসমাঈল, ইদ্রীস এবং যুল ফিকল কে। তারা সকলে নেক্কার লোকদের আন্তর্ভূক্ত ছিলেন। (সূরা ছোয়াদ-৪৮)
আল্লাহ পাক কুরআনে এরশাদ করেনঃ
উচ্চারণ: ওয়া ইসমাঈলা ওয়া ইদরীসা ওয়া যালকিফলি কুলুম মিনাস ছবিরিন ও য়াদখলিনাহুম ফিরাহমাতিনা ইন্নাহুম মিনা ছলিহিন।
অর্থঃ আর স্মরণ করুন, ইসমাঈল, আল-ইয়াসা' এবং যুল-কিফলকে। তারা এবং আমি তাদেরকে আসার যায়ার মাঝে প্রবেশকরিয়াছি নিশ্চয়ই, তারা সাজে। নেককার লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
(সূরা ছোয়াদ: ৪৮)
আরো পড়ুন: হযরত দাউদ (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
সাহাবায়ে কেরামের বাণী ও বর্ণনা
ইবনে জারীর বিখ্যাত তাবেঈ মুজাহিদ (র) হতে তাঁর সম্পর্কে একটি কাহিনী নকল করেছেন। এবং ইবনে আবি হাতেম প্রায় অনুরূপ আব্বাস ও আবু মূসা আশ'আরী (রা) হতে কিছু বাণী বর্ণনা করেছেন, যার সনদ বিচ্ছিন্ন। মুজাহিদের বর্ণনাটি হল, "ইসরাঈলী নবী হযরত আল-ইয়াসা' যখন অতি বৃদ্ধ হয়ে গেলেন।
তখন একদিন তিনি বললেন, কতই না ভাল হত যদি আমার জীবিত কালেই এমন কোন ব্যক্তিকে পাওয়া যেত, যিনি আমার স্থলাভিষিক হতে পারতেন এবং এ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারতাম যে, তিনি আমার সঠিক প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতাসম্পন্ন। অতঃপর তিনি বনী ইসরাঈলদেরকে একত্রিত করে বললেন, আমি তোমাদের মধ্য হতে এক ব্যক্তিকে আমার খলীফা নিযুক্ত করতে চাই। এ শর্তে যে, সে আমার এ তিনটি বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করবে: (১) সারা দিন রোযা রাখবে, (২) রাত্রে আল্লাহ্ পাকের ইবাদতে মশগুল থাকবে, (৩) কখনো ক্রোধান্বিত হবে না। এ কথা শুনে জনৈক ব্যক্তি দণ্ডায়মান হলেন, সর্বসাধারণের মধ্যে যার কোন মর্যাদা বা সম্মান ছিল না। তিনি বললেন, "এ খেদমতের জন্য আমি প্রস্তুত।" হযরত আল-ইয়াসা' (আ) তাঁর শর্ত তিনটির পুনরাবৃত্তি করলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, এ শর্তগুলো রীতিমত পালন করবে? সে ব্যক্তি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি শর্ত পালন করব। পরবর্তী দিবসে পুনরায় হযরত আল-ইয়াসা' (আ) বনী ইস্রাঈলদেরকে একত্রিত করে বিগত দিনের কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করলেন। সকলে নীরব রইল এবং সে ব্যক্তিই পুনরায় অগ্রসর হয়ে নিজেকে উক্তথেদমতের জন্য পেশ করল এবং শর্ত তিনটি পূর্ণ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করল। তখন হযরত আল-ইয়াসা (আ) তাঁর নিজের খলীফা নিযুক্ত করলেন। ইল্লীস এটা দেখে সহ্য করতে পারল না। সে তার সন্তানাদি ও চেলাচামুণ্ডাদেরকে একত্রিত করে বলল, এমন উপায়সমূহ অবলম্বন কর, যাতে এ ব্যক্তি বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং নিজের শর্তসমূহের উপর বহাল থাকতে না পারে। শয়তানেরা যথাসাধ্য চেষ্টা করল, কিন্তু সকলেই ব্যর্থকাম হল। তখন ইব্ল্লীস বলল, আমি নিজেই এ কাজ সম্পন্ন করতে পারব। তোমাদের দ্বারা সম্ভব হবে না।
হযরত যুল-কিফল (আ) এর এ রীতি ছিল যে, তিনি দিবা ও রাত্রির মধ্যে শুধু মাত্র দ্বিপ্রহরে কিছু সময় ঘুমিয়ে ক্লান্তি দূর করতেন। একদিন ইবলীস খুব চিন্তান্বিত অবস্থায় দুর্বল বৃদ্ধের আকৃতি ধারণপূর্বক সে সময়েই তাঁর দরজায় এসে করাঘাত করল। সে ব্যক্তি আরামের নিদ্রা ত্যাগ করে জিজ্ঞাসা করল, 'কে?' ইবলীস উত্তর করল, 'একজন উৎপীড়িত ও দুর্বল বৃদ্ধ।' তিনি দরজা খুলে দিলেন এবং অবস্থা জানতে চাইলেন। ইবলীস বলল, আমার ও আমার জাতির মধ্যে ঝগড়া বেঁধে গেছে। তারা আমার উপর যুলুম করছে এবং যুলুমের কাহিনী এত দীর্ঘ করল যে, দিবা-নিদ্রার সময়টুকু শেষ হয়ে গেল। বনী ইসরাঈলদের এ 'খলীফা' বললেন, তুমি এখন যাও সন্ধ্যাকালে যখন মজলিস বসবে, তখন তুমি এসো, তোমার বিচার করে দেব। ইবলীস চলে গেল, সন্ধ্যাকালে যখন মজলিস বসল, তখন খলীফা দেখলেন, বৃদ্ধ লোকটি হাযির হয়। নি এবং শেষ পর্যন্ত মজলিস ভেঙ্গে ও গেল; কিন্তু সে আসল না। প্রাতঃকালে যখন তিনি পুনরায় মজলিসে বসলেন, তখনো চারদিকে গভীরভাবে নিরীক্ষণ করে দেখলেন, হয়ত সে বৃদ্ধ এসে থাকবে, কিন্তু সে আসল না।
এ মজলিস ভঙ্গ হওয়ার পর যখন তিনি দিবানিদ্রার জন্য নির্জনতা অবলম্বন করলেন, তখন আবার কেউ এসে দ্বারে করাঘাত করল। তিনি দরজা খুলে দেখতে পেলেন, সেই বৃদ্ধ দণ্ডায়মান, সে আবার গত দিবসের ন্যায় কথাবার্তা বলতে লাগল। খলীফা বললেন, আমি তোমাকে বলেছিলাম সন্ধ্যাকালে মজলিসে এসো, কিন্তু তুমি আসলে না কেন?" ইবলীস বলল, আমার জাতির লোকগুলো খুব খারাপ। যখন আমাকে মজলিসে উপস্থিত দেখতে পায়, তখন চুপি চুপি আমাকে বলে, খলিফার সামনে অভিযোগ পেশ করো না আমরা তোমার প্রাপ্য হক আবশ্যই দিয়ে দিব। কিন্তু আপনি মজলিস ভেঙ্গে দেয়ার পর পুনরায় তারা অস্বীকার করে। খলিফা বললেন, আজ সন্ধ্যাকালে অবশ্যই এসো, আমি নিজের উপস্থিতিতে তোমার হক সম্পর্কে বিচার করব। এ কথাবার্তায় মশগুল থাকায় অদ্যাকার দিবানিদ্রার সময় টুকুও নষ্ট হয়ে গেল। অনিদ্রার কষ্ট খলিফাকে অত্যন্ত ক্লান্ত করে দিল। কিন্তু সন্ধ্যাকালীন মজলিসে যখন বিচারে বসলেন চারদিকে দৃষ্টি বুলিয়ে বৃদ্ধকে দেখতে পেলেন না। পরবর্তী প্রাত কালীন মজলিসে ও সে হাযির হল না। তৃতীয় দিবসে যখন নিদ্রার অক্রমন তাকে অপারগ করে দিচ্ছিল, তখন খলিফা ঘরের লোকদের বলে দিলেন যে, "আজ কোন ব্যক্তি এসে দরজায় যতই আঘাত করুক না কেন তোমরা আমার দিবানিদ্রার সময় কখনো দরজা খুলবে না।"এ বলে খলীফা কেবল মাত্র বিছানায় পিঠ লাগালেন সাথে সাথে বৃদ্ধ রুপে ইবলীস এসে দ্বারে করাঘাত করল। ঘরের ভেতর হতে জবাব আসল, আজ খলিফার আদেশ কারো জন্য দরজা খোলা হবে না। ইবলীস বলল, আমি দু'দিন যাবত নিজের একটি অতি প্রয়োজনীয় কাজে খলীফার দরবারে হাযির হচ্ছি, খলীফা আমাকে এ সময় আসতে বলে দিয়েছেন সুতারাং দরজা খোল কিন্তু দরজা খোলা হল না। গৃহ বাসীরা দেখল, বাহিরের দরজা বন্ধ থাকা সত্তেও সে ব্যক্তি ভিতরে এসে উপস্থিত হয়েছে এবং খলীফার কামরার দরজায় গিয়ে করাঘাত করছে। খলীফা দরজা খুলে ঘরের লোকদেরকে বললেন, আমি তোমাদের নিষেধ করেছিলাম না যে আজ দরজা খুলবেনা। তবে এ ব্যক্তি ঘরে ঢুকল কি করে। সঙ্গে সঙ্গে দরজোর প্রতি দৃষ্টিপাত করে দেখলেনযে দরজা বন্ধই আছে এবং বৃদ্ধকে নিজের সনুকিটে দেখতে পেলেন। তখন খলীফা প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পেরে ইবলীস কে বললেন "হে আল্লাহর শত্রু'তুই কি ইবলীস? সে বলল হ্যাঁ আমি ইবলীস। তুমি যখন আমাকে সর্বদিক দিয়ে অক্ষম করে দিয়েছ এবং আমার সন্তানাদি চেলাচামুন্ডারা যখন তোমার উপর কোন প্রকারেই ক্ষতি করতে পারলনা তখন সর্বশেষ উপায় এটা করলাম। যাতে তেমাকে ক্রোধান্বিত করে দিতে পারি এবং শর্ত পালনে তেমাকে বিফল মনোরথ করে দিতে পারি ।কিন্তু আপসোস আমি নিজেই ব্যর্থকাম হলাম। এ ঘটনার পর আল্লাহ পাক তাকে যুল-কিফল নামে ভূষিত করে দিলেন। কেননা, তিনি যে সমস্ত শর্ত পালনের দায়িত্ব হযরত 'আল ইয়াসা (আ) হতে গ্রহণ করেছিলেন তাপুর্ণ করে দেখেছেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url