হযরত ইসহাক (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

আজ  এই আর্টিকেলটিতে হযরত ইসহাক (আ)  এর পরিচয় বিবাহ ও ইন্তেকালসহ  জীবনী সর্ম্পকে  আলোচনা করা হলো।

হযরত ইসহাক (আ) এর পরিচয়

হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর যখন বয়স ১০০ বৎসর, তাঁর স্ত্রী হযরত সারার বয়স ৯০ বৎসর, এমন সময়ে আল্লাহ্ পাক তাঁদেরকে সুসংবাদ শুনালেন সারার গর্ভে ১টি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, তার নাম হবে ইসহাক।

উচ্চারণ: ওয়া লাক্বাদ জাআত রুসুলুনা ইবরাহীমা বিলবুশরা ক্বাল্ সালামান, ক্বালা সালামুন ফামা লাবিছা ইন জাআ বিইজলিন হানীযিন। ফালাম্মা রাআআইদিইয়াহুম লা তুছিলু ইলাইহি নাকিরাহুম ওয়া আওজাসা মিনহুম খীফাতান ক্বাল্ লাতাখাফ ইন্না উরসিলনা ইলা ক্বাওমি লুত। ওয়ামরাআতুহু ক্বাইমাতুন ফাদাহিকাত ফাবাশ শারনাহা বিইসহাক্বা ওয়া মিও ওয়ারাই ইসহাক্বা ইয়াকূবা। ক্বালাত ইয়াওয়াইলাতা আলালিদু ওয়া আনা আজুযুও ওয়া হাযা বা'লী শাইখান ইন্না হাযা লাশাইউন আজীবুন। কালু আতা'জাবীনা মিন আমরিল্লাহি রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু আলাইকুম আহলাল বাইতি ইন্নাহু হাদীদুম মাজীদ।

অর্থঃ নিঃসন্দেহে আমার দূত (ফেরেস্তা) ইব্রাহীমের নিকট সুসংবাদ নিয়ে আগমন করল, তারা এসে ইব্রাহীমকে সালাম করল, ইব্রাহীমও সালামের জবাব বলল। কিছুক্ষন পরে ইব্রাহীম গো বৎসের ভূনা করা গোস্ত আগন্তুক মেহমানদের সামনে উপস্থিত করল। যখন সে দেখল যে, মেহমানদের হাত মাংসের দিকে অগ্রসর হচ্ছেনা, তখন তিনি তাদেরকে অপরিচিত বুঝতে পেরে একটু ভীত হলেন অগন্তুকগন বললেন, ভয় করবেন না আমরা ভূতের জাতিকে শাস্তি দিতে প্রেরিত হয়েছি। আর ইব্রাহীমের স্ত্রী (সারাহ) দাঁড়িয়ে হাসছিলেন। তখন আমি তাকে ইসহাকের এবং তার পরে (তার পুত্র) ইয়াকুবের সুসংবাদ দান করলাম। সারাহ বললেন, আমি একজন বৃদ্ধা, সন্তান প্রসব করব, যখন ইব্রাহীম আমার স্বামীও বৃদ্ধ? বাস্তবিকই এটা বড়ই বিস্ময়কর ব্যপার। ফেরেস্তা বললেন, তুমি কি আল্লাহর আদেশের উপর বিস্ময় প্রকাশ করছ? হে আহলে বাইত! তোমাদের প্রতি আল্লাহ্ পাকের রহমত ও বরকত হোক। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ পাক সর্বপ্রকারের প্রশংসনীয় এবং অসীম মর্যাদাশালী।

আরো পড়ুন: হযরত ইদরিস ( আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

হযরত ইসহাক (আ)-এর বিবাহ

হযরত ইসহাক (আ) কেনানবাসী জনৈক সুবিখ্যাত সরদারের কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন এবং তাঁর গর্ভেই হযরত ইসহাক (আ)-এর দু'জন পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হন। জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল আইস এবং কনিষ্ঠ পুত্রের নাম ইয়াকুব। ইয়াকুবকে আল্লাহ নবুয়ত প্রদান করেছিলেন। ইয়াকুবের অন্য একটি নাম ছিল ইসরাইল। এজন্য হযরত ইয়াকুবের বংশধরগণ দুনিয়ায় বনী ইসরাইল নামে পরিচিত।

হযরত ইসহাক (আ) তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র আইসকেই বেশী ভালবাসতেন, কিন্তু তাঁর স্ত্রী বেশী স্নেহ করতেন কনিষ্ঠপুত্র ইয়াকুবকে।

হযরত ইসহাক (আ)-এর এরূপ আশা ছিল যে, তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র আইসকে নবী মনোনীত করার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন; কিন্তু ঘটনাবশতঃ তিনি নিজের অজ্ঞাতসারে আইসের বদলে ইয়াকুবকে নবী বানানোর জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছিলেন। আর আল্লাহ তাঁর সে দোয়া কবুল করে ইয়াকুবকে নবুয়ত দান করেন।

হযরত ইসহাক (আ) তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র ইয়াকুবকে জনৈক কেনানবাসী সরদার কন্যাকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেছিলেন; কিন্তু তাঁর স্ত্রী পুত্রকে নিজের ভাইয়ের কন্যার সাথে বিবাহ দিতে চেয়েছিলেন। যার ফলে ইয়াকুবের বিবাহ আপাততঃ বন্ধ থাকে।

হযরত ইসহাক (আ) কোন কারণবশতঃ পূর্বেই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, তদুপরি অতিরিক্ত বার্ধক্যবশতঃ তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন। এমনি অবস্থায় একদিন তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র আইসকে বললেন যে, তুমি জঙ্গল হতে একটা হরিণ শিকার করে এনে তার মাংস ভুনা করে আমাকে ভক্ষণ করাও। এরপর তোমাকে নবী করে দেয়ার জন্য আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করব। আইস পিতার ইচ্ছা পূরণ করতে হরিণ শিকার করার জন্য জঙ্গলে চলে গেলেন।

এদিকে তাঁর স্ত্রী ছোট ছেলে ইয়াকুবকে বললেন, তুমি আইস ফিরে আসার আগেই একটি বকরী যবেহ করে তার মাংস ভুনা করে হরিণের গোশত বলে তোমার পিতাকে ভক্ষণ করাও। যাতে তিনি তোমাকেই নবী হওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করবেন।

মাতার উপদেশ মত ইয়াকুব একটি বকরী যবেহ করে তার মাংস ভুনা করে পিতাকে খাওয়ালেন। পিতা ইসহাক (আ) অন্ধ ছিলেন সুতরাং তিনি ইয়াকুবকেই আইস মনে করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, হে মাবুদ! যে আমাকে ভুনা মাংস খাওয়াল, তাকে তুমি নবুয়ত দান কর। আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করে ইয়াকুবকে নবুয়ত প্রদান করলেন।

এর পর আইস জঙ্গল হতে হরিণ শিকার করে নিয়ে এসে তার মাংস ভুনা করে যখন পিতার সামনে পেশ করলেন, তখন সমস্ত ঘটনা প্রকাশ হয়ে গেল। হযরত ইসহাক (আ) পুত্র আইসকে বললেন, আইস! তোমার প্রাপ্য দোয়া কৌশলে ইয়াকুব নিয়ে গেছে। এ শুনে আইস ক্রোধে অধীর হয়ে ইয়াকুবকে হত্যা করতে চাইল। হযরত ইসহাক (আ) তাকে বারণ করে বললেন, না, আইস, তাকে হত্যা করো না। আমি তোমার জন্যও দোয়া করব। তোমার বংশকে আল্লাহ অত্যধিক প্রসার করবেন। হযরত ইসহাক (আ)-এর দোয়াও আল্লাহর দরবারে কবুল হল।

এ দোয়ার বরকতে আইসের বংশ বহুগুণে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছিল। তাঁর বংশের লোকদের দ্বারা সারাদেশ পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। পশ্চিমাঞ্চলের দেশসমূহে বিশেষতঃ আলেকজান্দ্রিয়া ও সমুদ্রের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে তাঁর বংশধরগণ ছড়িয়ে পড়েছিল। আইসের এক পুত্রের নাম ছিল রোম। সে যেস্থানে গিয়ে বসবাস শুরু করেছিল, তার নামানুসারে সে জায়গাটির নামও হয়েছিল রোম। তার রাজধানী ছিল ইস্তাম্বুল। উক্ত রোমের বংশধরদের দ্বারাই সমগ্র রোমদেশ পরিপূর্ণ হয়েছিল।

হযরত ইসহাক (আ)-এর ইন্তেকাল

হযরত ইসহাক ১৬০ বছর বয়ঃক্রমকালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রী আশঙ্কা করলেন, এখন আইস হয়ত পূর্ব ক্রোধবশে ইয়াকুবকে মেরে ফেলবে। এ আশঙ্কায় তিনি কনিষ্ঠ পুত্র ইয়াকুবকে সিরিয়ায় তার মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। ইয়াকুব একদিন রাতের বেলায় গোপনে কেনান হতে রওনা হয়ে গেলেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url