হযরত ইলিয়াস (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
আজ
অধিকাংশ ঐতিহাসিকরা এ বিষয়ে একমত যে, হযরত ইলাইয়াস (আ) হযরত হারুন (আ)-এর বংশধর এবং তাঁর বংশ তালিকা এরূপ ইয়াস ইবনে ইয়াসীন, ইবনে ফাতহাছ, ইবনে ইয়া'য়ার ইবনে হারুন (আ) কিংবা ইলইয়াস ইবনে আযের, ইবনে ইয়াযাব, ইবনে হারুন (আ)
আরো পড়ুন:
হযরত ইলিয়াস (আ) এর নবুয়ত লাভ
হযরত ইলিয়াস (আ) নবুয়ত লাভ করেই মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধিতা শুরু করলেন এবং তার নিরর্থকতা ও নিষ্ফলতার কথা মূর্তিপূজক বাদশাহকে ভালভাবে উপলব্ধি করালেন। তখন বাদশাহ মূর্তিপূজা বাদ দিয়ে হযরত ইলিয়াস (আ)-এর নিকট খাঁটি দ্বীনের দীক্ষা গ্রহণ করলেন।
অর্থঃ- আর নিঃসন্দেহে: ইলইয়াস রাসূলদের মধ্যে গণ্য। আর সে সময়টুকু স্মরণযোগ্য: যখন তিনি তার জাতিকে বললেন, তোমরা কি আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর না? তোমরা বালকে ডাকছ অথবা সর্বোঞ্জম স্ত্রীকে ত্যাগ করছী। (সূরা ছাফকাত: ১২৩)
এরপর বাদশাহ হযরত ইলিয়াস (আ)-কেই নিজের প্রধানমন্ত্রী পদে বরণ করে তাঁকে উচ্চ সম্মানে ভূষিত করলেন। কিছুদিন খুবই ভালভাবে অতিবাহিত হল; কিন্তু শয়তান ইবলীসের এ সহ্য হল না। সে বাদশাহকে প্রতারিত করল। ফলে বাদশাহ আবার মূর্তিপূজা শুরু করল। যে সকল লোক বাদশাহর সাথে সাথে মূর্তিপূজা বাদ দিয়ে হযরত ইলিয়াস (আ)-এর ধর্ম গ্রহণ করেছিল, এরা আবার বাদশাহর দেখাদেখি মূর্তিপূজা আরম্ভ করল।
এতে হযরত ইলিয়াস (আ)-এর মনে অত্যন্ত আঘাত লাগল। তিনি সকলের প্রতি বিরক্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে বদদোয়া করলেন। ফলে সিরিয়ায় তিন বছর বৃষ্টিপাত হল না। যমিনের ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল। দেশের সঞ্চিত খাদ্য নিঃশেষ হয়ে গেল। দুর্ভিক্ষ দেখা দিল সারাদেশে ভীষণ আকারে। খাদ্যদ্রব্যের অভাবে দেশের মানুষ ও পশুর মৃত্যু শুরু হল। তখন দলে দলে প্রজাগণ বাদশাহর দরবারে অভিযোগ করল যে, ইলিয়াসের বদদোয়ায় দেশে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছে।
একথা শুনে বাদশাহ বলল, তোমরা ইলিয়াসকে যেখানে পাও, ধরে হত্যা করে ফেল। লোকজন বাদশাহর আদেশানুযায়ী তাঁকে হত্যা করতে প্রস্তুত হল। হযরত ইলিয়াস (আ) অবশ্য এ জানতে পেরেও বিচলিত হলেন না, তিনি তাঁর কর্তব্য সাধনে অটল থাকলেন।
এ সময় এক ধার্মিকা বৃদ্ধা হযরত ইলিয়াস (আ)-এর সাথে সাক্ষাত করে বললেন, হুযুর। আমার একটি পুত্র আছে, আল্লাহর রহমতে সে আপনার প্রচারিত ধর্ম মতের একান্ত অনুসারী। দেখা যাচ্ছে দেশে আপনার কোন সহায়তাকারী নেই, অথচ দেশের বাদশাহ হতে শুরু করে সকলেই আপনার প্রাণের শত্রু; অতএব আমি আমার সে পুত্রটিকে আপনার হাতে সোপর্দ করছি। ধর্মপ্রচার কার্যে আপনার বিপদে-আপদে সর্বসময়ে সে আপনার পাশে থাকবে, আপনি তাকে গ্রহণ করুন।
আরো পড়ুন:
হযরত ইলিয়াস (আ) এর ধর্ম প্রচার
বৃদ্ধার পুত্রটির নাম ছিল ইশা। হযরত ইলিয়াস (আ) অত্যন্ত খুশী মনে ইশাকে তাঁর সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করলেন। এরপর তাকে নিয়ে তিনি দেশের সর্বত্র গমন করে ধর্ম প্রচার শুরু করতে লাগলেন। একদিন তিনি বাদশাহর কাছে গিয়ে বললেন, 'ওহে বাদশাহ! দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে, খাদ্যাভাবে দেশের মানুষ, পশু সমানে মৃত্যুবরণ করছে, এমতাবস্থায়ও কি তুমি তোমার উপাস্য দেবতাদের কাছে দুর্ভিক্ষ দূর করার জন্য দোয়া করছ না? না করে থাকলে অবিলম্বে তাদের কাছে এ ব্যাপারে দোয়া কর। যদি তাদের ক্ষমতা থাকে, তবে তো নিশ্চয়ই দুর্ভিক্ষ ঘুচিয়ে দিবে। আর যদি তাদের দ্বারা একাজ সম্ভব না হয়, তা হলে তুমি আমার খোদার প্রতি ঈমান এনে দোয়া কর। দেখবে, তিনি দেশকে দুর্ভিক্ষের কবল হতে সম্পূর্ণ মুক্ত করে দিবেন।
বাদশাহ বলল, ইলিয়াস। তুমি তোমার খোদার নিকট দোয়া কর। তোমার দোয়া মঞ্জুর করে দেশের এ বিপদ দূর কর, তবে আমিও ঈমান আনব।
বাদশাহর উক্তি শুনে হযরত ইলিয়াস (আ) আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। দয়াময় আল্লাহ তায়ালা সাথে সাথে তাঁর প্রিয় নবীর দোয়া কবুল করলেন। সেদিন রাতেই দেশে মুষলধারায় বৃষ্টিপাত হল। যার ফলে দেশের ক্ষেতে প্রচুর ফসল এবং বাগানে যথেষ্ট ফল-ফুল উৎপন্ন হল। এভাবে অচিরেই দেশের অভাব দূর হয়ে গেল। মানুষ আবার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে পেল।
তখন হযরত ইলিয়াস (আ) বাদশাহর নিকট গিয়ে বললেন, আমার খোদা তো আমার দোয়া অনুসারে দেশের অভাব দূর করে দিয়েছেন। অতএব, এবার তুমি তাঁর উপর ঈমান এনে নিজের ওয়াদা পালন কর।
হযরত ইলিয়াস (আ)-এর কথার জবাবে পাপীষ্ঠ বলল, তোমার খোদার দ্বারা অভাব দূর হয়নি, বরং আমাদের উপাস্যগণই অভাব দূর করে দিয়েছেন; সুতরাং তোমার খোদার উপর ঈমান আনার কোন প্রশ্নই আসে না। দেশের জনসাধারণও তাদের বাদশাহর মত জবাব দিল। অর্থাৎ তারা অসৎ পথেই রইল।
এরূপ দুঃখজনক ঘটনায় হযরত ইলিয়াস (আ)-এর মন ভেঙ্গে গেল। তাঁর একমুহূর্তও ঐ দেশে থাকতে মন চাইল না, সুতরাং তিনি সহচর ইশাকে নিজের প্রতিনিধি নিযুক্ত করে ঐ দেশ হতে চলে গেলেন। এরপর বোরদ বহর নামক একটি স্থানে থাকার জায়গা নির্দিষ্ট করে তদবধি দুনিয়াময় ভ্রমণ করতে লাগলেন।
কথিত আছে যে, আল্লাহ তায়ালা হযরত খিজির (আ)-এর মত হযরত ইলিয়াস (আ)-কেও দীর্ঘায়ু দান করেছিলেন। এ দু'জন রোজ কিয়ামতে ইস্রাফীল ফেরেশতার শিঙ্গায় ফুৎকার দানের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত জীবিত থাকবেন। এদের মৃত্যু ঘটবে রোজ কিয়ামতে ইস্রাফীলের শিঙ্গার ফুৎকারে।
হযরত ইলিয়াস (আ)-এর এখনও জীবিত থাকা সত্ত্বেও যেহেতু তিনি বনে-জঙ্গলে ও লোক চক্ষুর অন্তরালে থাকেন, তাই লোকজন হযরত ইলিয়াস (আ)কে দেখতে পায় না।
হযরত খিজির (আ)-কে যেমন আল্লাহ জলভাগের আধিপত্য দিয়েছেন, তেমনি হযরত ইলিয়াস (আ)-কে স্থলভাগের আধিপত্য দিয়েছেন বলে বর্ণিত আছে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url