হযরত ইয়াকুব (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

আজ এই আটিকেলটিতে হযরত ইযাকুব (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী  হযরত ইযাকুব (আ) এর নবুূয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো্

হযরত ইয়াকুবের (আ)-এর পরিচয়:

হযরত ইয়াকুবের (আ) হযরত ইসহাক (আ) এর পুত্র ও হযরত ইব্রাহীম (আ) এর পৌত্র, আর হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর ভ্রাতা বতুঈলের দৌহিত্র। তাঁর মাতার নাম রাফক্বাহ্ অথচা রাক্বাহ্ ছিল। তিনি তাঁর মাতার অত্যধিক স্নেহের পাত্র ছিলেন। আর তাঁর সহোদর ভ্রাতা ঈ'স পিতা হযরত ইসহাক (আ) এর অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন। তাওরাতে তাঁদের উভয় ভ্রাতার পাম্পরিক মনোমালিন্যের ঘটনা বর্ণিত আছে। হযরত ইয়াকুব (আ) যখন তার মাতার ইঙ্গিতে 'ফাদ্দান আরাম' চলে গেলেন।

আরো পড়ুন: হযরত আইউব (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী 

হযরত ইয়াকুবের (আ) মামা সবকথা শুনে ভাগ্নে ইয়াকুবকে পরম স্নেহে আশ্রয়দান করলেন।

হযরত ইয়াকুবের মামার দুটি কন্যা ছিল। তাদের বড়টির নাম ছিল লিয়া এবং ছোটটির নাম ছিল রাহিলা। হযরত ইয়াকুব মামার ছোট কন্যাটিকে বিবাহ করতে চাইলেন, কিন্তু তাঁর মামা বললেন, তুমিতো তোমার পিতার বিষয়-সম্পত্তি সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে একেবারে রিক্ত হাতে চলে এসেছ। অতএব, তোমার নিকট আমার কন্যা দেয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। তবে একান্ত যদি বিবাহ করতে চাও, তা হলে একাধারে সাত বছর আমার বকরীর পাল চরাবে। তার পারিশ্রমিক তোমার নিজস্ব সম্পদ হবে এবং তারই বিনিময়ে আমার কন্যাকে তোমার নিকট বিবাহ দেয়া যেতে পারে।

হযরত ইয়াকুব মামার প্রস্তাবে রাজী হয়ে সাত বছর ধরে বকরীর পাল চরালেন। এরপর তার মামা তার কন্যাকে হযরত ইয়াকুবের নিকট বিবাহ দিয়ে নিজের ওয়াদা রক্ষা করলেন।

কিন্তু বিবাহের পর দেখা গেল যে, হযরত ইয়াকুবের মামা চালাকী করে ছোট কন্যার স্থলে তাঁর বড় কন্যা লিয়াকে তাঁর নিকট বিবাহ দিয়েছেন।

তখন হযরত ইয়াকুব অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁর মামাকে বললেন, আমি তো আপনার কনিষ্ঠা কন্যা রাহিলাকে বিবাহ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আপনি আমার সাথে লিয়াকে বিবাহ দিলেন কেন?

মামা বললেন, দেখ, আমি আমার বড় কন্যাকে অবিবাহিতা রেখে ছোট কন্যাকে কিভাবে বিবাহ দিতে পারি? তবে যদি তুমি রাহিলাকে বিবাহ করতে চাও তা হলে আরও সাত বছর আমার বকরী চরাতে হবে। দেখ তা পারবে কি না?

হযরত ইয়াকুব (আ) মামার এ প্রস্তাবেও রাজী হয়ে আরও সাত বছর বকরীর পাল চরালেন। এরপর মামা রাহিলাকেও তাঁর নিকট বিবাহ দিলেন। ঐ সময়ে একসঙ্গে দু'বোনকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ ছিল না।

হযরত ইয়াকুব (আ)-এর দু'স্ত্রীর গর্ভে মোট বারটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। তন্মধ্যে দশটি লিয়ার গর্ভে এবং বাকী দুটি রাহিলার গর্ভে জন্ম লাভ করেছিল।উভয়ের নাম ছিল যথাক্রমে ইউসুফ এবং বনি ইয়ামিন।

তখন তাঁর মাতুলালয়ে আগমনের পর ১০০ বছর গত হয়েছে। ইতোমধ্যে তাঁর দ্বাদশ সন্তানের মধ্যে একমাত্র বনি ইয়ামিন ছাড়া অন্য সবাই ভূমিষ্ঠ হয়েছে। এমন সময় হঠাৎ হযরত ইয়াকুব (আ)-এর মনে প্রবল আশা জাগল যে, তিনি কেনানে তাঁর মাতার সাথে সাক্ষাৎ করতে গমন করবেন। তিনি এ আশার কথা তাঁর মায়ের কাছেও বললেন। মাতুল খুশীর সাথে-ই এতে সম্মতি দান করলেন। অতএব অচিরেই হযরত ইয়াকুব (আ) তাঁর দু'স্ত্রী, একাদশ পুত্র, 'বহু দাস-দাসী এবং অজস্র ধন-সম্পদ এবং বিরাট পশুপাল সঙ্গে নিয়ে কেনান অভিমুখে রওয়ানা করলেন।

আরো পড়ুন: হযরত যাকারিয়া (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী 

ইতোমধ্যে জ্যেষ্ঠ ভাই আইস কাফেলার নিকটবর্তী হলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, এ কার কাফেলা?

লোকজন হযরত ইয়াকুব (আ)-এর শিখানো কথাই বললেন যে, কেনানবাসী আইস-এর ইয়াকুব নামক যে গোলামটি সিরিয়ায় গিয়েছিল তারই এ সমস্ত।

ইয়াকুব নামটি শুনে আইসের আর কিছু বুঝতে বাকী রইল না। তিনি বলে উঠলেন, ওহে কোথায় আইসের গোলাম? সে যে আমারই ভাই ইয়াকুব। এতক্ষণে আইসের দু'চোখ অশ্রুপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। দূর হতে হযরত ইয়াকুব তা দেখতে পেয়ে তাঁর হৃদয়ে ভাবান্তর সৃষ্টি হল। তিনি দৌড়ে এসে জ্যেষ্ঠ ভাই আইসকে জড়িয়ে ধরেন।

এরপর আইস তার কনিষ্ঠ ভাই ইয়াকুবকে তাঁর কাফেলাসহ কেনানে নিয়ে গেলেন। ইয়াকুব কেনান এসে তার মাতা ও ভাইর কাছেই বসবাস করতে লাগলেন। তিনি কেনান আগমন করার একবছর পর তাঁর ছোট স্ত্রী রাহিলার গর্ভে এক পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হল। এ সন্তানটির নাম রাখা হল বনি ইয়ামিন। ইনিই ছিলেন হযরত ইয়াকুবের দ্বাদশতম পুত্র সন্তান। এ সন্তানটি ভূমিষ্ঠ হবার কিছুদিন পর হযরত ইয়াকুবের মাতা পরলোক গমন করেন।

হযরত ইয়াকুব (আ)-এর বারটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করার পর আল্লাহ তাঁকে নবুয়ত দান করলেন। কেনানের বহু লোকই তাঁর উপর ঈমান আনল এবং তাঁর প্রচারিত ধর্ম গ্রহণ করল।

আইস যখন দেখলেন যে, তাঁর ভাই সত্যই আল্লাহর তরফ হতে নবুয়ত লাভ করেছেন, তখন তিনি তাঁকে বললেন যে, হে ভ্রাতঃ! তুমি এতদিন মাতুলালয়ে গরীব অবস্থায় কালাতিপাত করেছ, এখন তুমি পিতৃ-ভূমিতে থেকে নির্বিঘ্নে ধর্ম প্রচার কর। আমি অন্যত্র কোথাও গিয়ে অবস্থানকরি।

এতদিনে আইসের বহু আওলাদ ফরজন্দ জন্মলাভ করেছিল এবং তাদের সন্তান-সন্ততি হয়ে আইসের বংশ ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করেছিল। তারা দেশ-বিদেশে বের হয়ে পড়ল। আইসের এক পুত্রের নাম ছিল রুম। আইস নিজেও ঐ পুত্রকে নিয়ে এক দেশে চলে গেলেন। সে দেশটি আইসের ঐ পুত্রের নামানুসারে এখন রুম নামে পরিচিত।

ঐ জায়গায় গমন করার কিছুদিন পর আইস ঐ জায়গায়ই মৃত্যুবরণ করেন।

কথিত আছে যে, আইসের সন্তান রুম-এরও বহু সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহণ করে বংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এরূপ বর্ণিত আছে যে, আইসের এ বংশের মধ্যে শুধুমাত্র হযরত আইউব (আ) ব্যতীত অন্য কোন নবী জন্মগ্রহণ করেননি; কিন্তু হযরত ইয়াকুব (আ)-এর বংশ হতে বহু সংখ্যক নবীর আবির্ভাব ঘটেছিল।

হযরত ইয়াকুব (আ)-এর নবুয়ত লাভ

হযরত ইয়াকুব (আ) আল্লাহ পাকের মনোনীত নবী ছিলেন ও কেন্‌আনবাসীদের হেদায়েতের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি বহু বছর পর্যন্ত আল্লাহ্ পাকের এ খেদমতের কর্তব্য পালন করেছেন। কোরআন মাজীদে তাঁর আলোচনা বেশী ভাগ হযরত ইউসূফ (আ) এর সাথে করা হয়েছে।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url