ইসলামি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্য

রাষ্ট্রপ্রধান বা আমীরের পরিচয় দিতে পারবেন, কুরআন-হাদীসের আলোকে রাষ্ট্রপ্রধান বা আমীরের দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্ণনা করতে পারবেন, রাষ্ট্রপ্রধান বা আমীরের অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করতে পারবেন। রাষ্ট্রপ্রধান বা আমীরকে পদচ্যুত করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।


আমীর বা রাষ্ট্রপ্রধান

ইসলামি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন এবং ইসলামি আইন জারী ও কার্যকর করার জন্য একজন আমীর বা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হয়ে থাকেন। মুসলিম জনগণের মধ্য হতে আমীর বা রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। আমীর জনগণের পক্ষ হতে কেন্দ্রীয় ক্ষমতার পরিচালক হন। এতদ্ব্যতীত অন্য কোন বৈশিষ্ট্য বা শ্রেষ্ঠত্ব পাবার কোন অধিকারই তার নেই। সকল মানুষের মধ্যে কেবল তাকেই খলীফা বা আমীর নামে অভিহিত করা হয়। তবে এর অর্থ এই নয় যে, কেবল তিনিই খলীফা অন্য কেউ নয়। বরং তার অর্থ এই যে, রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনার উদ্দেশ্যে জনসাধারণ নিজ নিজ খিলাফত অধিকার তার নিকট আমানত রেখেছে মাত্র। কারণ, প্রত্যেকেই আল্লাহর খলীফা, ইসলামি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানকে খলীফাতুল মুসলিমীন' বলার এটাই তাৎপর্য। কারণ এটা ব্যতীত রাষ্ট্র গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনা একেবারেই সম্ভব নয়।


রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্য

রাষ্ট্রপ্রধান বা খিলাফতের মর্যাদায় যাকে অধিষ্ঠিত করা হবে তার কাজ সাধারণ শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান থেকে ভিন্নতর। এ মর্যাদা হচ্ছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শরীআত প্রদত্ত একটি মর্যাদা। শরীআত তার অসংখ্য নির্ধারিত উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য মর্যাদাটি প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই রাষ্ট্রপ্রধানের কর্তব্য হবে এ উদ্দেশ্য পূর্ণ করা। এ উদ্দেশ্যকে এক কথায় ব্যক্ত করতে গেলে বলা যায়, আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠা। আল-কুরআনের উদ্ধৃতি ও মহানবী (সা.) -এর বাণী থেকে একথাই সুস্পষ্ট হয়।


"তোমাদের মধ্যে থেকে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন। যেমন তিনি পূর্ববর্তীদের প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন এবং অবশ্যই তাদের জন্য তাঁর পছন্দনীয় দীন প্রতিষ্ঠা করবেন এবং ভয়-ভীতির পরিবর্তে তাদের অবশ্যই নিরাপত্তাদান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার কোন শরীক করবে না।" (সূরা আন-নূর। ৫৫)


এ আয়াত থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে, আল্লাহর খিলাফত বা ইসলামি রাষ্ট্রের মৌল উদ্দেশ্যই হচ্ছে দ্বীন ইসলামকে সুদৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করা, দ্বীনকে পূর্ণমাত্রায় বাস্তবায়ন করা, দ্বীনের মান-মর্যাদা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং সেখানকার জনগণের জীবনকে সকল প্রকারের ভয়-ভীতি ও বিপদ আশংকা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করে স্বাধীন নির্বিঘ্ন জীবন-যাপনের সুযোগ করে দেয়া। আর এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানই এসব কাজ করার জন্য দায়িত্বশীল।

মহানবী (স) বলেন:


"যদি এমন কোন ক্রীতদাসকে তোমাদের আমীর পদে অধিষ্ঠিত করা হয়, যার অংগ কেটে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে আল্লাহর আইন অনুযায়ী তোমাদের নেতৃত্ব দিচেছ এবং তোমাদের পরিচালনা করছে, তা হলে তার কথা শ্রবণ করো ও তাঁর আনুগত্য করো।" (মুসলিম, কিতাবুল ইমারত) 

মূলত খিলাফতের উদ্দেশ্যই হচ্ছে-

"খিলাফত হলো দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (স) -এর উত্তরাধিকারিত্ব।" (কিতাবুল মাওয়াকিফ) দ্বীন তথ্য আল্লাহ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার অর্থ হলো মুসলিম সমাজকে সামগ্রিক বিধান অনুযায়ী পরিচালিত করা।


ইসলামি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধিঃ খিলাফত বা ইসলামি রাষ্ট্র জনগণের বৈষয়িক জীবনকে সুষ্ঠুরূপে পরিচালনা এবং তাদের পরকালীন জীবনে মুক্তি ও সাফল্যের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব পালন করে। ইসলামি ফিকহবিদগণ খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধান ও মজলিসে শূরার সদস্যদের দায়িত্ব হিসেবে দুটো কথা উল্লেখ করেছেন। একটি হচ্ছে, দ্বীন ইসলামকে পূর্ণরূপে কার্যকর ও সুদৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করা। ইসলামের আইন বিধান যথাযথভাবে কার্যকর করা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ইসলামের রীতি-নীতি অনুযায়ী গোটা রাষ্ট্রকে পরিচালনা করা। এক কথায় বলা যায়, দ্বীন ইসলামকে বাস্তবায়ন করাই খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ কারণে ফিকহবিদগণ খিলাফত বা ইসলামি রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিয়েছেন এ ভাষায়-


"ইসলামি রাষ্ট্র বা খিলাফত হল, মহানবী (স) থেকে অনুমোদিত দ্বীন ও দুনিয়ার সামগ্রিক বিষয়ে নেতৃত্ব প্রদান।"

"দ্বীন কায়েম করা ও মুসলিম মিল্লাতের আদর্শ ও মান রক্ষা করার কাজে রাসূলের প্রতিনিধিত্ব করা। একারণেই তার অনুসরণ করা সমগ্র উম্মতের কর্তব্য।" (মাওয়াফিক-৩৩)


আল্লামা মাওয়ার্দী খিলাফতের সংজ্ঞায় বলেন:

"দ্বীনের হেফাজত, সংরক্ষণ ও দুনিয়ার সুষ্ঠু পরিচালনা নবুওয়াতের প্রতনিধিত্ব করার উদ্দেশ্যেই খিলাফত প্রতিষ্ঠিত।" (আল-আহকামু আস-সুলতানিয়্যাহ)


রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্য: রাষ্ট্র প্রধান বা খলীফার দায়িত্ব ও কর্তব্য যেমন বিরাট তেমনি মহান। প্রধান প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্যের একটি তালিকা নিম্নরূপ:


আল্লাহর সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ

রাষ্ট্রপ্রধানের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হল, আল্লাহর সার্বভৌমত্বের সংরক্ষণ করা। আল্লাহর খিলাফতের মৌল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, দ্বীন ইসলামকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করা, দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন করা, দ্বীনের মর্যাদা, ঐতিহ্য-আদর্শ এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। আর এ কাজের জন্য প্রধান দায়িত্বশীল হচ্ছেন খলীফা।


আল্লাহর আইন অনুযায়ী ফয়সালা করা

রাষ্ট্রপ্রধানের আর একটি কর্তব্য হচ্ছে বিবদমান পক্ষসমূহের উপর আল্লাহর আইন কার্যকর করা। ঝগড়া-বিবাদ ও যাবতীয় সমস্যার সমাধান ও ফয়সালায় ইসলামি আইন অনুসরণ করা।


শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপন ও সংরক্ষণ

ইসলামি রাষ্ট্রে বসবাসকারী নাগরিকদের জীবনকে সকল প্রকারের ভয়-ভীতি ও বিপদ-আশঙ্কা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করা। স্বাধীন নির্বিঘ্ন জীবন যাপনের নির্ভরযোগ্য সুযোগ দেওয়া খলীফার অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর কথায় শান্তি-শৃঙ্খলা (Law and order) স্থাপন ও সংরক্ষণ করা।


সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা

আল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত হারাম ও অবৈধ কাজ যাতে কেউ করতে না পারে, কোন নাগরিকই যেন স্বীয় ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। অন্য কথায় দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন, দুর্বলকে শক্তিশালী করা এবং সবলদের সংযত ও নিয়ন্ত্রণ করা, সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রপ্রধানের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য।


বহিরাক্রমণ প্রতিহত করা

বৈদেশিক ও বিজাতীয় আক্রমণ ও আগ্রাসন থেকে দেশকে, দেশের জনগণকে এবং তাদের জীবন-সম্পদ, মান-ইজ্জতকে রক্ষা করা এবং এজন্য প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন ও সামর্থ্য সংগ্রহ করা রাষ্ট্রপ্রধানের অন্যতম কর্তব্য।


রাষ্ট্রীয় আয়ের ব্যবস্থাঃ

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইসলামি শরীআত মোতাবিক রাষ্ট্রের কর, খাজনা ও অন্যান্য সরকারি পাওনা সঠিকরূপে নির্ধারণ করা ও তা আদায় করার ব্যবস্থা করাও রাষ্ট্রপ্রধানের অন্যতম দায়িত্ব।


বায়তুলমাল সংরক্ষণ

রাষ্ট্রের বায়তুলমাল সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রপ্রধানের আর একটি দায়িত্ব। বায়তুলমাল থেকে যাকে যা দেয়া হবে তার পরিমাণ নির্ধারণ এবং যথাযথভাবে তা দেয়ার ব্যবস্থা করা, অপচয় না করা ইত্যাদি খিলাফত প্রশাসনের অন্যতম দায়িত্ব।


নির্বাহী কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ

দায়িত্বশীল, নির্বাহী কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ, তাদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা, তাদের নিকট থেকে কাজ বুঝে নেয়া, তাদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা করা খলীফার দায়িত্ব ও কর্তব্য।


বিপথগামীদের সুপথে আনয়ন

পথভ্রষ্ট ও বিপথগামীদেরকে ইসলামের সুমহান পথে ফিরে আনার পদক্ষেপ গ্রহণও খলীফার দায়িত্ব। অর্থাৎ দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের পুরো দায়-দায়িত্বটাই খিলাফত ব্যবস্থার উপর ন্যস্ত।


সামগ্রিক দায়িত্ব

সকল জাতীয় ও সামষ্টিক ব্যাপারে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হওয়া, পরিস্থিতির অধ্যয়ন, পর্যবেক্ষণ ও তদনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ, যেন সার্বিকভাবে গোটা উম্মাহ রক্ষা পায় এবং মিল্লাত সংরক্ষিত থাকে।


ইসলামি রাষ্ট্রের সামগ্রিক সংরক্ষণ, নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রের কল্যাণ, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা, প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনা সর্বোপরি আল্লাহর বিধান জারি ও সংরক্ষণ করাই রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।


রাষ্ট্রপ্রধানের অধিকার

ইসলামি রাষ্ট্রের খীলফা বা রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্য যত ব্যাপক ও সর্বজনীন তাঁর অধিকার ও তত বিরাট। তাঁর অধিকার হলো এই যে, তাঁর নির্দেশ সবাইকে শুনতে হবে ও পালন করতে হবে। আল্লাহ বলেন-

"হে মুমিনগণ। তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাদের যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী।" (সূরা আন-নিসা ৫৯)


মহানবী (স) এ প্রসঙ্গে বলেন

"যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করে সে আল্লাহর আনুগত্য করে, যে আমাকে অমান্য করে সে আল্লাহকে অমান্য করে। আর যে নিজের আমীরের আনুগত্য করে, সে মূলত আমার আনুগত্য করে এবং যে আমীরের অবাধ্য সে বাস্তবে আমারই অবাধ্য।" (মুসলিমঃ ২য় খন্ড)


এ থেকে বুঝা যায় যে, ইসলামি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের আনুগত্য করা প্রতিটি নাগরিকের জন্য ফরয বা অপরিহার্য কর্তব্য।


ভালবাসাঃ

আমীর বা রাষ্ট্রপ্রধানকে ভালবাসাও রাষ্ট্রপ্রধানের একটি অধিকার। বাইরে যেমন তাঁর নির্দেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা হয়, তেমনি অন্তরেও তাঁর প্রতি ভালবাসা থাকতে হবে। মহানবী (স) বলেন-

"তারা তোমাদের ভালো খলীফা যাদেরকে তোমরা ভালবাসো, তোমাদেরকেও তারা ভালবাসে এবং যাদের জন্য তোমরা দুআ করো, তোমাদের জন্য তারা দুআ করে। অনুরূপভাবে তারাই তোমাদের মন্দ খলীফা যাদেরকে তোমরা ঘৃণা করো ও তারাও তোমাদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে এবং যাদের প্রতি তোমরা অভিশাপ দাও, তোমাদের প্রতিও তারা অভিশাপ প্রদান করে।" (মুসলিম: কিতাবুল ইমারত)


এ থেকে বুঝা যায় যে, রাষ্ট্রপ্রধানকে এমনই হতে হবে। মানুষ তাঁর জন্য সদিচ্ছা পোষণ করবে। অওর থেকে তাঁর মঙ্গল কামনা করবে। মানুষের দৃষ্টি থেকে তাঁর জন্য ভক্তি ভালোবাসা উপচে পড়বে। এ কারণেই ইসলামি রাষ্ট্রের আমীরের হাতে "বায়আত" আনুগত্যের শপথ কেবল একটি আনুষ্ঠানিক আনুগত্যের প্রকাশ বন্যা হয়নি বরং আন্তরিকতা ও ভালবাসারও শপথ।


দ্বীন ও আখিরাতের জন্য বায়আতঃ ইসলামি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের তৃতীয় অধিকার হলো এই যে, তাকে শুধু দুনিয়ার নয় বরং দ্বীনের জন্যও প্রয়োজন মনে করতে হবে এবং রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে এ ব্যাপারে বায়আত করতে হবে, তার পেছনে আসলে প্রেরণা হবে কেবল আখিরাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। মহানবী (স) বলেনঃ


"তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা কথা বলবেন না এক ব্যক্তি হলো যে, কেবল দুনিয়ার স্বার্থে খলীফার হাতে বায়আত করে।" (বুখারীঃ ২য় খন্ড, কিতাবুল আহকাম)


এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুসলমানদের খলীফার কাছে বায়আত ও আনুগত্য কেবল দুনিয়ার জন্যই নয়। বরং দ্বীন ও আখিরাতের জন্য হতে হবে।


রাষ্ট্রপ্রধানের পদচ্যুতি

ইসলামি রষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের আইনগত মর্যাদা হলো তিনি হচ্ছেন জাতির উকীল ও জাতির সামগ্রিক কার্যাবলী সম্পন্ন করার জন্য দায়িত্বশীল। কাজেই রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর দায়িত্ব বিরোধী কোন কাজ করলে বা অক্ষমতা অথবা উপেক্ষার দরুণ তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে তাঁকে পদচ্যুত করার অধিকার জাতির রয়েছে। যেহেতু জাতির জনগণই রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগ করে, কাজেই তাঁকে পদচ্যুত করার অধিকার জাতিরই থাকতে হবে। ইসলামি শরীআতে এ অধিকার স্বীকৃত। যে রাষ্ট্রপ্রধান আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে না এবং তার বিধান অনুসরণ করে না, তাঁর আনুগত্য করা কিছুতেই বৈধ হবে না। মহান আল্লাহ স্পষ্ট বলেছেন।


"তুমি ভার আনুগত্য করেনা-যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে।" (সূরা আল-কাহাফ। ২৮)


তিনি আরো বলেছেন:

"এবং সীমালংঘনকারীদের আদেশ মান্য করোনা, যারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, শান্তি স্থাপন করেনা।" (সূরা আশ-শুরা-১৫১-১৫২)


আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।

"আমি তোমার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি ক্রমে ক্রমে। সুতরাং ধৈর্যের সাথে তুমি তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের প্রতীক্ষা কর এবং তাদের মধ্যে যে পাপিষ্ট অথবা কাফির তার আনুগত্য করো না।" (সূরা দাহার-২৩-২৪)


ইসলামি রাজনীতিবিদ ও ফিকহবিদগণ শরীআতের বিভিন্ন দিক বিচার বিশ্লেষণ করে বলেন যে, যে রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে নিম্নলিখিত বিকৃতিগুলো পরিদৃষ্ট হবে তাকে পদচ্যুত করা মুসলিম উম্মাহর জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। সেগুলো হচ্ছেঃ


১. রাষ্ট্রপ্রধান যদি প্রজা সাধারণের অধিকার আদায় না করেন এবং তাদের উপর যুলুম-নির্যাতন চালান।


২. তিনি যদি জনগণকে আল্লাহর নাফরমানী করার নির্দেশ দেন।


৩. তিনি যদি অসৎ চরিত্রের অধিকারী হন, প্রকাশ্যে শরীআতের নির্দেশাবলীর বিরোধিতা করেন এবং অন্যায়


ও গর্হিত কার্যাবলী সম্পাদন করতে থাকেন।


৪. তিনি যদি দীন ইসলামের মৌলিক ভিত্তিসমূহে পরিবর্তন সাধন করেন এবং তাতে ইসলাম বিরোধী বিষয়াবলীর অনুপ্রবেশ ঘটান।


৫ ইসলাম থেকে তাঁর দূরত্ব যদি এমন পর্যায়ে যায় যে, তিনি রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্র ও আইনের পরিবর্তন সাধন


করেন এবং তাতে ইসলাম বিরোধী বিষয়াবলীর অনুপ্রবেশ ঘটান।


৬. তিনি যদি ইসলামের মৌলিক আকীদাসমূহ পরিহার করেন এবং কুফরী আকীদা গ্রহণ করেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url