পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা রচনা সমূহ

আজ এই আর্টিকেলটিতে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা রচনা বৈশাখী মেলা, আমাদের জাতীয় দিবস/ স্বাধীনতা দিবস, মোবাইল ফোন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শীতকাল সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

বৈশাখী মেলা

 ভূমিকা: মেলা বাংলাদেশের মানুষের জীবনের এক অফুরন্ত আনন্দসম্ভার। নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য বয়ে আনে বলেই মানুষের জীবনে মেলার স্মৃতি অত্যন্ত সুখকর।

বৈশাখী মেলা: প্রতিটি উৎসবই একটা না একটা উপলক্ষকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয়। নতুনের আগমনী বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে আগমন ঘটে বাংলা নববর্ষ। অতীতের দুঃখ-শোক ফেলে এগিয়ে চলার জন্য চাই কিছু আনন্দ, কিছু উৎসব। তাই বৈশাখী মেলার আয়োজন। এটা বাঙালির সাংস্কৃতিক লোক উৎসব। এটি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির সার্বজনীন উৎসব হিসেবে বিস্তৃতি লাভ করেছে। বৈশাখী মেলা বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই অনুষ্ঠিত হয়।

 স্থায়িত্বকাল: এই মেলার স্থায়িত্বকাল বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এক মাস কিংবা পনেরো দিন কিংবা সাত দিনও হতে পারে।

 আমোদ-প্রমোদ: মেলা মানেই স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ ও খুশির আমেজ। সত্যিকার অর্থে মেলার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে গ্রাম। কিন্তু শহরেও ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় নাগরদোলা, পুতুল নাচ, বানরের খেলা, সার্কাস, প্রদর্শনী, গাজির কিসসা, বিভিন্ন উপকরণের সমাবেশ ঘটে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এসব উপকরণের সাহায্যে আনন্দ উপভোগ করে।

 মেলা বসার স্থান: বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয় বড় বড় মাঠে বা স্কুল প্রাঙ্গণে কোনো প্রসিদ্ধ স্থানকে কেন্দ্র করে। পুরনো বটগাছ বা অন্যান্য প্রাঙ্গণে, নদীর ধারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেলার স্থান নির্ধারিত থাকে।

 মেলার দ্রব্যসামগ্রী: বৈশাখী মেলায় বিভিন্ন দ্রব্যের সমাবেশ ঘটে। এখানে খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে থাকে মুড়ি-মুড়কি, সন্দেশ, লাড্ডু, বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি, বাতাসা, টকদই ইত্যাদি। বৈশাখী মেলায় হস্তশিল্পজাত দ্রব্যাদির পাশাপাশি থাকে আধুনিক প্রযুক্তির জিনিসপত্র। যেমন শিশুদের খেলনা থেকে শুরু করে গৃহ সরঞ্জামাদি ও ঠুনকো বিলাসসামগ্রী। এছাড়াও থাকে বইয়ের দোকান এবং বিভিন্ন গানের ক্যাসেটের দোকান।

বৈশাখী মেলা উপলক্ষে অনুষ্ঠান: বৈশাখী মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নৌকা বাইচ, বিভিন্ন গোষ্ঠী পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি। প্রতি সন্ধ্যায়, মেলায় নানা রকম সংগীতের আসর বসে।

মেলার উপকারিতা: আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটি মেলা শুধু আনন্দই দান করে না, এর আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে। শিশুরা মেলায় উপস্থিত হয়ে অনেক নতুন নতুন জিনিসের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়, যা তাদের মনের মধ্যে অনেক জিজ্ঞাসার জন্ম দেয়। ফলে তারা পৃথিবীকে নতুনভাবে জানার সুযোগ পায়। তাছাড়া, মেলায় যেসব সামগ্রী বিক্রি হয়, তাতে স্থানীয়ভাবে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেক উপকার সাধিত হয়।

উপসংহার: প্রকৃতপক্ষে নববর্ষের সবটুকু আনন্দ জুড়ে থাকে বৈশাখী মেলা। বাংলাদেশের মানুষের মনের আনন্দ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশিত হয় এ মেলায়।

আরো পড়ুন:

আমাদের জাতীয় দিবস/স্বাধীনতা দিবস

ভূমিকা: প্রত্যেক জাতিরই এমন কতক গুলো গৌরবোজ্জ্বল জাতীয় দিবস থাকে, সেগুলোকে জাতি অত্যন্ত মর্যাদার সাথে পালন করে থাকে। বাঙালি জাতির সে রকম একটি গৌরবজ্জ্বল দিন" জাতীয় দিবস"। বিশ্বের ছোট বড় সকল স্বাধীন জাতিরই একটি জাতীয় দিবস আছে। তেমন বাংলাদেশেরও জাতীয় দিবস রয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় দিবসটি হলো ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ।

জাতীয় দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি: ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আমাদের বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ হিসেবে যুক্ত ছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠি পূর্ব বাংলার জনগণকে বিভিন্নভাবে শোষণ করতে থাকে। ১৯৫২ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তারা এদেশের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় মায়ের ভাষা। মূলত এ ভাষা আন্দোলনের প্রেরনাই বাঙালিকে প্ররোচিত করে স্বাধীনতা সংগ্রামে। ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এজন্য ২৬ শে মার্চ আমাদের জাতীয় দিবস।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা: ১০ই এপ্রিল ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে এবং কর্ণেল আতাউল গনি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। পুরো বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে শুরু হয় পূর্ণোদ্যমে প্রচণ্ড মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতার বিজয় অর্জিত হয়। তাই ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়।

জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা: যেহেতু ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুর ঘাট অস্থায়ী বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়, তাই সুদীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পর স্বাধীনতা অর্জিত হয়। তাই ২৬ মার্চকে 'জাতীয় দিবস' হিসেবে পালন করা হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তে, দুই লাখ মা-বোনের ওপর পাশবকি নির্যাতনের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার ঘোষণা প্ররোচিত হওয়ায় ২৬ শে মার্চকে আমরা জাতীয় দিবস হিসেবে চিহ্নিত করি।

জাতীয় বিদস উদযাপনের সূচনা: ১৯৭২ সালের ২৬ শে মার্চ তারিখে বাংলাদেশের প্রথম বার্ষিক স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। এরপর প্রতিবছরই এ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। এ দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়, শহিদদের স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়া স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে আরও অনেক অনুষ্ঠান পালন করা হয়।

স্বাধীনতা রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয়: আমাদের মনে রাখতে হবে যে, "স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন"। দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়ী ও দেশ প্রেমিক হতে হবে।

উপসংহার: স্বাধীনতা প্রতিটি জাতিরই ত্যাগের ফসল। প্রতিবছর এ দিবসটির আলোকে আমরা সমৃদ্ধ জাতি ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেব। তাই ২৬ মার্চ জাতীয় দিবস বাঙালি জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আরো পড়ুন:

মোবাইল ফোন

ভূমিকা: আধুনিক জীবনে বিজ্ঞানের অন্যতম প্রয়োজনীয় ও জনপ্রিয় একটি আবিষ্কার হলো মোবাইল ফোন। যোগাযোগের সহজ ও জনপ্রিয় মাধ্যম হলো মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা অতি সহজে ও দ্রুতভাবে সারা বিশ্বে যে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারি।

মোবাইল ফোনের আবিষ্কার: আমেরিকার বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রথম টেলিফোন আবিষ্কার করেন। তাঁর দুই সহকারী গবেষক রিচার্ড এইচ ফ্রাংকিয়েল এবং জোয়েল এস এ্যাঞ্জেল মোবাইল ফোনের কৌশল উদ্ভাবন করেন। প্রথম পর্যায়ে সীমিত আকারে মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু হয় সেন্ট লুইস শহরে ১৯৪৭ সালে। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে ফিনল্যান্ডে সকল মানুষের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে প্রথম হাতে ধরা ছোট মোবাইল সেট তৈরি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে। আর তা তৈরি করেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপার। তাঁকেই বলা হয় মোবাইল ফোনের জনক।

মোবাইল ফোন যেভাবে কাজ করে: যে এলাকা জুড়ে মোবাইল কাজ করবে তার সবটাকে কতকগুলো 'সেল' (ছোট্ট এলাকা বা কোষ) অংশে ভাগ হয়। প্রত্যেক সেলে শক্তিশালী বেতার টাওয়ার (মাতুল) বসে। প্রত্যেকটা অন্যটির সাথে এভাবে যোগাযোগের একটা অদৃশ্য জাল বা নেটওয়ার্ক তৈরি করে। মোবাইল সেটের মধ্যে থাকে 'অ্যানটেনা'। মোবাইলে হ্যালো বলার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল সেট থেকে বোতাম নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চলে যায় অন্য প্রান্তে এবং আবার গ্রাহকের ফোন সেট বেতার তরঙ্গকে কথায় বা আওয়াজে রূপান্তরিত করে।

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন: বাংলাদেশে মোবাইল ফোন প্রথম চালু হয় ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে। হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল) ঢাকা শহরে AMPS মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন সেবা শুরু করে।

মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও উপকারীতা: মোবাইল ফোনের জন্য আমরা সারা বিশ্বে যে কোনো সময় যে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারি অতি সহজে। বর্তমানে মোবাইল ফোন দৈনন্দিন কাজে সব সময় ব্যবহার করা হয়।

বর্তমানে অনেক মোবাইল ফোনই স্মার্ট ফোন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কথা বলার পাশাপাশি এ ধরনের ফোনগুলো অন্যান্য বিষয়েও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন: ই-মেইল, এসএমএস বা ক্ষুদেবার্তা প্রেরণ ও গ্রহণ, ক্যালকুলেটর, মুদ্রা, সঙ্কেত বিষয়ক কার্যাবলী; ইন্টারনেট। গেমস খেলা: ছবি ও ভিডিও তোলা; ঘড়ির সময় দেখা: কথা রেকর্ড করা। ট্রেনের টিকিট বুকিং করা; বিদ্যুৎ/গ্যাস বিল দেয়া ইত্যাদি। এছাড়াও বর্তমানে মোবাইলের মাধ্যমে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে সহজে টাকার আদানপ্রদান করা সম্ভব হয়েছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। এমনকি কম্পিউটারের নানা কাজও বর্তমানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়।

মোবাইল ফোনের অপকারীতা: মোবাইল ফোন দিয়ে যেমন অনেক ভালো কাজ হয়, তেমনি এর খারাপ দিকও রয়েছে। মোবাইলে বেশি কথা বলা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে গবেষকরা মনে করেন। মোবাইল ফোনে অত্যধিক আসক্তি মানসিক ব্যাঘাত ও পড়া-শোনার অনেক ক্ষতি করে।

উপসংহার: বিজ্ঞানের জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো মোবাইল ফোন। দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল আমাদের নিত্য সঙ্গী। আমরা মোবাইল ফোনের সুষ্ঠু ও সুষম ব্যবহারে সচেতন থাকব।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

ভূমিকা: সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা ছায়া সুনিবিড় আমাদের এই বাংলাদেশ। আর ছয়টি ঋতুর বিচিত্র বৈশিষ্ট্য এদেশকে করেছে আরও নয়নাভিরাম ও মনোমুগ্ধকর। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এদেশে যুগে যুগে এসেছেন বহু বিদেশী পর্যটক, কবিরা লিখেছেন কবিতা। কবির ভাষায় বলা যায়-

'এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না'কো তুমি

সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি"।

বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি: বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্যে ভূ-প্রকৃতি অন্যতম। আর তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ চট্টগ্রামের কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত এবং সমুন্নত পর্বতশীর্ষ। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের সবুজ পর্বত শ্রেণি। ঢাকা ও ময়মনসিংহ এলাকার মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়, সিলেটের টিলায় টিলায় চা গাছের সাজানো বাগান প্রভৃতি। এছাড়া অপূর্ব এক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হচ্ছে খুলনার সুন্দরবন। যার পশুপাখি ও গাছপালা প্রকৃতির এক অপূর্ব নিদর্শন।

জলবায়ু: বাংলাদেশের এই যে এত সৌন্দর্য এর পেছনে কাজ করছে অনুকূল জলবায়ু। কর্কটক্রান্তি রেখা তার উপর দিয়ে গেলেও সাগর কাছাকাছি থাকায় এবং মৌসুমি বায়ু তার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ অর্থাৎ না শীত না গরম।

বিভিন্ন ঋতুতে দৃশ্য: বাংলাদেশের প্রকৃতি বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রুপ ধারণ করে।

গ্রীষ্মকাল: গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে মাঠ ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যায়। নদ-নদীর স্রোত কমে যায়। মাঠ হয় শস্য শূন্য। মাঝে মাঝে কাল বৈশাখী ঝড় হয়।

বর্ষাকাল: বর্ষার আগমনে আকাশ যেন কালো মেঘে ছেয়ে যায়। বৃষ্টি ঝরতে থাকে অবিরাম ধারায়। মাঠ-ঘাট পানিতে ডুবে যায়। কৃষকেরা ভিজে মাঠে কাজ করে আর গান গায়। গাছে গাছে পাখি ও ফুলের সিন্ধ সুবাস বাতাসে ভেসে বেড়ায়।

শরৎকাল: শরৎকালে বর্ষার বৃষ্টি থেমে মাঠ ঘাট জেগে ওঠে। সুনীল আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। কাশবন ফুলে ফুলে সাদা। ধানক্ষেতের শ্যামল রূপ মন প্রাণকে জুড়িয়ে দেয়।

হেমন্তকাল: শরতের শেষে হেমন্ত আসে পাকা ধানের খবর নিয়ে। কৃষকেরা ধান কাটায় ব্যস্ত থাকে, আর ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন।

শীতকাল: শীতকালে ভোরে ঘাসের উপর শিশির পড়লে মুক্তার মত চিকচিক করে যা দেখে হৃদয় জুড়িয়ে যায়। এছাড়া বিভিন্ন পিঠা পায়েস খাওয়াতে মানুষ ব্যস্ত থাকে। শীতে খেজুরের রস পাড়ার দৃশ্য এবং পাতা ঝরার দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

বসন্তকাল: শীতের পর বসন্ত আসে প্রকৃতির ভরা যৌবন নিয়ে। গাছে গাছে পাতা, মাঠে সবুজ ঘাস, ফুলে ফুলে ভ্রমরের গুঞ্জন, কোকিলের গান, শিমুল পলাশ, কৃষ্ণচূড়া প্রভৃতি প্রকৃতিকে মনের মত করে সাজিয়ে দেয়।

পল্লী প্রকৃতির দৃশ্য: বাংলাদেশের অবারিত সবুজ মাঠ, ফুলে ফলে ভরা গাছ-পালা, শস্যখেত প্রভৃতি সকলের হৃদয়ে শিহরণ জাগায়। কোথাও বিশালদেহী বটবৃক্ষ, একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ, বিলে ঝিলে লাল সাদা শাপলা প্রভৃতি প্রকৃতির এক অনন্য অবদান। এছাড়া সুন্দরবন, কুয়াকাটা ও কক্সবাজারের নয়নাভিরাম দৃশ্য সকলকে পাগল করে দেয়। নদ-নদীর দৃশ্য: বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আর একটি দিক হল নদ-নদী। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষা, কর্ণফুলী প্রভৃতি নদ-নদী বাংলাদেশকে শস্য শ্যামল করে তাকে সোনার দেশের গৌরবে ভূষিত করেছে। নদীতে নৌকার বহর, মাছ ধরা নৌকার ভেসে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে বড়ই চমৎকার। শুধু তাই নয় নদীতীরে সূর্যাস্তের দৃশ্য ও প্রকৃতির সৌন্দর্যের এক অনুপম রূপ দেখে আমরা বিমোহিত হই।

পর্যটনে প্রাকৃতিক দৃশ্যের ভূমিকা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই বাংলাদেশ এক স্বপ্নের দেশ হিসেবে যুগ যুগ ধরেই বিদেশী পর্যটকদের কাছে চিহ্নিত হয়ে আছে। বাংলাদেশ ভ্রমণ করার পর এমন সুন্দর দেশ আর কোথাও দেখিনি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন বিশ্ব পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিওয়েন সাঙ। পর্যটকদের আকষর্ণের মধ্যে আছে নদ-নদী ও বনভূমি, বন ও বন্যপ্রাণী, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি।

উপসংহার: প্রত্যেক ঋতুতে এদেশ নতুন নতুন রূপ ধারণ করে। নতুন আনন্দ আর সৌন্দর্যে আমাদের মন ভরিয়ে দেয়। বাংলাদেশের মত মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। তাইতো কবির ভাষায় বলতে হয়-

কোন দেশেতে তরুলতা সকল দেশের চাইতে শ্যামল, কোন দেশেতে পেতে খেলে বলতে বছরে পূর্ব কোমায় কোথায় ফলে সোনার ফসল, সোনায় কমল ফোটেরে? যে আয়াসের বাংলাদেশ, আামানেরই বাংলারে।

আরো পড়ুন:

শীতের সকাল

সূচনা: বাংলাদেশের প্রতিটি ঋতু ভিন্ন ভিন্ন আমেজে, ঐশ্বর্ণ ও অনুভূতিতে গ্যাবন্ত। এমনই স্বত্তর ও আলাদা টেপর্বে বৈচিত্রময় একটি ঋতু শীতকাল। বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্রে শীতের সকাল বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যে দৃশ্যবান। ভাইদের কবির ভাষায় বলতে হয়।


"হিম হিম শীত শীত 

শীত বুড়ি এলো রে, 

কন কনে ঠান্ডায় 

দম বুঝি গেল রে।"

শীতের আগমন: হেমন্তের বিদায়ের পর শীতের সকাল নতুন এক আমেজ নিয়ে হাজির হয় গ্রাম বাংলায়। বৌৰ ছাল দুই মাস শীতকাল। গাছের পাতা ঝরে যাওয়া, হাড় কাঁপানো হাওয়া বুঝিয়ে নেয় শীতের উপস্থিতি।

শীতের সকালের ভাবরূপ: শীতের সকালে কুয়াশার আঙ্করণ কেন করে ওঠে সূর্ণ। আর পূর্বের খালো শিশির ভেজা ঘাসের উপর পড়লে মনে হয় যেন মুক্তা ঝলমল করছে। মানুষ চাদর মুড়ি দিয়ে ঘরে বসে থাকে। আর আন্তে আন্তে কর্মের মুখরতায় শীতের সকাল কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠে।

শীতের সকালের প্রকৃতি: শীতের সকাল আসে ধীর গতিতে। যেন তার কোন ব্যস্ততা নেই। এ সময় সসীনালা, মাঠঘাট, খালবিল সব শুকিয়ে যায়। তবে এ সময় প্রচুর শাক-সবজি জন্যে। এছাড়া গাঁলা, সূর্যমুখী, বেলী ইত্যাদি ফুল ফোটে।

শীতের সকালে কৃষাণ-কৃষাণি: শীতের সকালে কৃষক খেজুরের রস নামাতে যায়। এরপর ক্ষেতে যায় ফনলের তদারকি করতে। আর ফুধাবি বাড়িতে সবজি বাগান দেখাশোনা করে এবং খেজুরের রস নিয়ে তৈরি করে নানা রকম পিঠা পায়েল।

শীতে লোকের অবস্থা: শীতের কনকনে ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ নানা রকম শীত বস্ত্র ব্যবহার করে। তবে গরীব লোকেরা শীত বস্ত্র কিনতে পারে না বলে তাদের কষ্টের সীমা থাকে না। তালের জন্য শীত এক অভিশাপ।

গ্রামীণ শীতকাল: গ্রামে শীতের সকালে ছেলে বুড়ো সবাই চাদর মুড়ি দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে। আবার অনেকে আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে বসে শরীর গরম করে। দীরে ধীরে শীতের ভাব কমে আসলে যে যার কাজে যায়।

শহুরে শীতকাল: শহরে শীতের সকাল গ্রামের চেয়ে একটু আলাদা। কুয়াশার চাদর ফেলে কর্মজীবীদের ছুটতে হয় অফিসে। রিকশা চালক, বাস ড্রাইভার সকলেই শীতকে উপেক্ষা করে গাড়ি চালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শীতের সকালে গরম হয়ে ওঠে চায়ের দোকান গুলো। রাস্তায় রাস্তায় বসে পিঠা তৈরির দোকান।

শীতের সকালের উপকারিতা: শীতের সকালের চিড়ামুড়ি পিঠা খেতে দারুণ মজা। এছাড়া খেজুরের হস এবং তার দ্বারা তৈরি পিঠা খেয়ে মানুষ পরিতৃপ্তি লাভ করে। এ সময় কোনো খাবারই গরম কালের মত নষ্ট হয় না। টাটকা শাওসবজি ও বিভিন্ন রকম ফলমূল পাওয়া যায়।

শীতের ফলমূল: এই সময় বছরের সবচেয়ে বেশি ফলমূল ও শাক সবজি উৎপন্ন হয়। আপেল, কমলা, আঙ্গুর, বাঁধাকপি, ঢেড়স, পেঁপে, গাজর, শালগম বিভিন্ন রকম ফলমূল ও শাকসবজি পাওয়া যায়।

উপসংহার: শীতের মিষ্টি রোদ, যুক্তার মত চকচকে শিশির বিন্দু, পিঠা পায়েস, টাটকা শাক সবজি সবকিছু মিলিয়ে অনন্য একটি ঋতু শীতকাল। শীতকাল অনেকেরই পছন্দের ঋতু। তাই আমারও প্রিয় ঋতু শীতকাল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url