মার্কিন সংবিধানের বিকাশ ও বৈশিষ্ট্য

মার্কিন সংবিধানের বিকাশ ও বৈশিষ্ট্য মার্কিন সংবিধান রচনার পটভূমি সম্পর্কে বলতে পারবেন সংবিধানের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ ব্যাখ্যাসহ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা  এবং সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি বিশ্লেষণ করতে পারবেন।

সংবিধান রচনার পটভূমি

সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক বিধি বিধানের সমষ্টি। মার্কিন সংবিধানও এর ব্যতিক্রম নয়। মহাদেশীয় কংগ্রেসের রাষ্ট্র সমবায়ের অনুচ্ছেদ থেকে মার্কিন সংবিধানের সূত্রপাত। রাষ্ট্র সমবায়ের যে অনুচ্ছেদগুলো প্রস্তুত করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সংবিধান বলে অনেকে অভিহিত করেছেন। উপনিবেশগুলোর ঐক্য রক্ষা এবং যুদ্ধ পরিচালনাই ছিল রাষ্ট্র সমবায় অনুসারে দ্বিতীয় মহাদেশীয় কংগ্রেসের অন্যতম উদ্দেশ্য। কলোনী যুগের গর্ভনরগণ পদতাগ করে মাতৃভূমি ব্রিটেনের সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় নেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপনিবেশগুলোতে প্রশাসনিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। যে যার প্রয়োজন মত সরকার পুনর্গঠনের জন্য মহাদেশীয় কংগ্রেস উপনিবেশগুলো নিজেদের উপনিবেশের পরিবর্তে রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করতে থাকে এবং নিজেদের শাসনতন্ত্র রচনায় ব্যপৃত হয়। "রোড আইল্যান্ড" এবং "কনেকটিকাট" নিজেদের রাজকীয় সনদের সামান্য শব্দগত পরিবর্তন করে। ঐ সনদকেই তারা শাসনতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। রাষ্ট্রগুলোর শাসনতন্ত্রের মধ্যে মৌলিক বিষয়ে সাদৃশ্য থাকলেও কিছু কিছু বিষয়ে বৈসাদৃশ্য দেখা দেয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতন্ত্র প্রণেতাগণ তৎকালীন অষ্টাদশ শতাব্দীর তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। তারা মনে করেন রাষ্ট্রতন্ত্রের প্রধান প্রধান ধারাগুলোকে সংবিধানভুক্ত করতে পারলে সংবিধানের উৎকৃষ্টতা বৃদ্ধি পাবে। ১৭৮১ সালে গৃহীত রাষ্ট্র সমব্যয়ের অনুচ্ছেদে ১৭৮৭ সালের মার্কিন সংবিধানের উৎসরূপে গৃহীত হয়। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্র-সমবায়ের কাঠামোতে দুর্বলতা ধীরে ধীরে প্রকট হতে থাকে। রাষ্ট্রগুলো নিজেদের সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের ব্যাপারে সক্ষম ছিল। সমবায়ী ১৩টি রাষ্ট্রের মধ্যে বিশেষত বানিজ্যিক স্বার্থের সংঘাত ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠে। এ প্রেক্ষিতে রাষ্ট্র সমবায়ের দুর্বলতা দূর করার জন্য সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়। একটি সম্মেলন আহ্বানের মাধ্যমে আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের যথার্থ প্রচেষ্টায় ১৭৮৭ সালে কংগ্রেসের নিকট আবেদন পেশ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭৮৯ সালে নতুন সংবিধান প্রণীত হয়।

আরো পড়ুন: প্রতিনিধি সভার গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী স্পীকার বা অধ্যক্ষের কার্যাবলী ব্যাখ্যা 

মার্কিন সংবিধানের উদ্ভব ও বিকাশ

জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়ায় একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সম্মেলনে আমেরিকার একটি যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ উদ্দ্যেশ্যে একটি সংবিধান প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মার্কিন সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে আর যাঁদের উদ্যোগ এবং ভূমিকা অপরিসীম তাঁরা হলেন জেমস ম্যাডিসন, আলেকজান্ডার হ্যামিলটন ও বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন প্রমূখ। এ ছাড়াও কিছু কিছু প্রতিনিধি সংবিধান প্রণয়নে বিশেষ নৈপূণ্য ও দক্ষতার পরিচয় দেন।

ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্র সমবায়ের অনুচ্ছেদ সংশোধন। প্রতিনিধিগণ নতুন সংবিধান রচনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। সম্মেলনের প্রতিনিধি আলেকজান্ডার হ্যামিলটন গণতন্ত্রের প্রতি ছিলেন উদাসীন। তিনি শুরু থেকেই সাংবিধানিক রাজশক্তির প্রতি গুরুত্ব দেন। তিনি সাংবিধানিক রাজশক্তির ন্যায় একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের উপর গুরুত্ব প্রদান করেন। তাঁর প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে ভার্জিনিয়ার প্রতিনিধি এডমন্ড রানডলফ ১৫টি প্রস্তাবের এক সংকলন সভায় উপস্থিত করেন। কিন্তু ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলো-এর বিরোধীতা করেন। নানা তর্ক বিতর্কের মধ্য দিয়ে বোঝাপাড়ার মনোভাব গড়ে উঠে। অনেকেই মনে করেছিলেন যে হয়তো ১৩টি রাষ্ট্রের মধ্যে অনেকেই সংবিধান অনুমোদন করবে না। আলোচনার পর স্থির হয় যে, ১৩টি রাষ্ট্র অনুমোদন করলেই সংবিধান কার্যকর বলে ধরে নেয়া হবে। ডেলওয়‍্যার, নিউ জার্সি, জর্জিয়া এবং কনেকটিকাট প্রমূখ রাষ্ট্র দ্রুত সংবিধান অনুমোদন করে। নর্থ ক্যারোলিনা এবং রোড আইল্যান্ড সম্মতি জ্ঞাপন করে। ১৭৮৯ সালের মার্চ মার্সের প্রথম বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ধার্য করা হয়। অবশেষে ১৭৮৭ সালের মার্কিন সংবিধান ১টি প্রস্তাবনা এবং ৭টি অনুচ্ছেদসহ গৃহীত ও অনুমোদিত হয়। এই হলো মার্কিন সংবিধানের বিকাশ ধারা।

মার্কিন সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য

প্রতিটি সংবিধানের কতিপয় বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। মার্কিন সংবিধানের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য। ঐ সকল বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই সংবিধানের সামগ্রিক পরিচয় নিহিত থাকে। মার্কিন সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোকে নিম্নে তুলে ধরা হল:

১ প্রস্তাবনা: প্রস্তাবনাকে মার্কিন সংবিধানের প্রথম বৈশিষ্ট্য বলা যায়। ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে রচিত ও গৃহীত মার্কিন সংবিধানে সর্বপ্রথম একটি প্রস্তাবনার কথা উল্লেখ করা হয়। এর পূর্বে সংবিধানে প্রস্তাবনা সংযোজনের কোন দৃষ্টান্ত নেই। স্বাধীনতা ঘোষণার মৌলিক বিধানগুলোও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণেতাগণ এ প্রস্তাবনাকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন।

২. লিখিত সংবিধান: মার্কিন সংবিধান লিখিত প্রকৃতির। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম লিখিত সংবিধান। এ সংবিধানের অধিকাংশ বিধি বিধান লিখিত। এ সংবিধান সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন। সংবিধানের ৬নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, This constitution and the laws of the United States shall be the supreme law of the land.

৩. জনগণের সার্বভৌমত্ব: জনগণের সার্বভৌমত্ব মার্কিন শাসনতন্ত্রের একটি বিশিষ্ট দিক। মার্কিন সংবিধানের শুরুতে বলা আছে-"We are the people of the United States" সংবিধানের প্রস্তাবনার ঐ ধরনের উল্লেখ গণসার্বভৌমত্যের নিদর্শন। এ প্রসঙ্গে টকভিল বলেন, "মূর্তি পূজারীর কাছে বিগ্রহের স্থান যে রকম, মার্কিন শাসন ব্যবস্থায় জনগণের স্থান ও তদ্রুপ"।

৪ সংক্ষিপ্ততা: সংক্ষিপ্ততা মার্কিন সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। মার্কিন সংবিধানে কেবলমাত্র শাসন ব্যবস্থার মৌল বিষয়গুলো উল্লেখ রয়েছে। এ সংবিধানে ব্যাপক কোন ব্যাখ্যা নেই। এর কারণ হল অঙ্গরাজ্যগুলোর স্ব-স্ব সংবিধান। সংবিধানটির প্রাথমিক মুদ্রিত আয়তন ১০-১২ পৃষ্ঠার বেশী ছিল না। সুতরাং এটি একটি সংক্ষিপ্ত সংবিধান।

৫ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা: মার্কিন সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যুক্ত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা মানে, সংবিধান অনুসারে কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যের মধ্য ক্ষমতার বণ্টন। মার্কিন সংবিধান ছিল পৃথিবীর সকল যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানের মধ্যমণি।

৬. সংবিধানের প্রধান্য: মার্কিন সংবিধানে সংবিধানের প্রাধান্যের কথা বলা আছে। সংবিধানের প্রধান্য বলতে আমরা বুঝি সংবিধান কর্তৃক গঠিত সকল সংস্থা ও কাঠামো সংবিধানের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়াকে। বস্তুতঃ সংবিধান হল দেশের মৌলিক ও সর্বোচ্চ আইন।

৭. পরিবর্তনীয় সংবিধান: এ সংবিধান লিখিত প্রকৃতির এবং দুষ্পরিবর্তনীয়। এ সংবিধান সহজে পরিবর্তনযোগ্য নয়। মার্কিন সংবিধান পরিবর্তনে বিশেষ জটিল ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে। এ কারণে মার্কিন সংবিধান দুস্পরিবর্তনীয় প্রকৃতির।

৮ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ: মার্কিন সংবিধানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এর জনতা সতীন এই বৈশিষ্ট্যকে কেউ কেউ মার্কিন সংবিধানের অন্যতম গুপ্ত বলে অভিহিত করেছেন। এ অনুসারে সরকারের ত্রিবিধ ক্ষমতা আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের উপর ন্যস্ত করা বিধান রাখা হয়েছে যে, সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না।

৯. নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য-নীতি: মার্কিন সংবিধানে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য- সীতির ব্যাবস্থা রয়েছে। এটি মার্কিন সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। সংবিধান প্রণেতাগণ স্বেচছাচারের আশংজ্ঞা দূর করার জন্য বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য নীতি সংযোজন করেন। এ নীতির মূল কথা এল-প্রত্যেক বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অপর দুই বিভাগ প্রাপ্ত।

১০. মৌলিক অধিকার : মার্কিন সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের বিধান রয়েছে। নাগরিকের মৌলিক অধিকার লিখিত ভাবে মার্কিন সংবিধানে সর্ব প্রথন উল্লেখ করা এ সংবিধানের প্রথম ১০টি অনুচ্ছেদের মাধ্যমে নাগরিক অধিকারগুলো সন্নিবেশিত হয়েছে।

১১. রাষ্ট্রপতি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বিদ্যমান। এ ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। রাষ্ট্রপতি আইনগত ও বাস্তব দিক থেকে সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান। রাষ্ট্রপতি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচনী কলেজের মাধ্যমে সংবিধানের ২নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি শাসন বিভাগের যাবতীয় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি কংগ্রেসের কাছে সরাসরি দায়িত্বশীল নন। মন্ত্রীগণ আইন সভার কাছে দায়ী থাকে এবং সরাসরি প্রেসিডেন্টের কাছে দায়ী থাকেন। তারা আইন সভার সদস্যও নন।

১২. বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা: বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা মার্কিন সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি সফলতার জন্য এ ব্যবস্থা অপরিহার্য। বিচার বিভাগীয়্যা পর্যালোচনা হল আদালতের আইন সভার কোন আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করার এখতিয়ার। এ প্রক্রিয়ায় আদালত সংবিধানের রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করে। নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির এটি একটি প্রকৃত উদাহরণ।

১৩. গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা: মার্কিন শাসন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক প্রকৃতির। এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। মার্কিন সংবিধানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের সহাবস্থানের বিধান রাখা হয়েছে। এ শাসনতন্ত্রে "গণ-উদ্যোগ ও "গণ ভোট" এর উল্লেখ রয়েছে। মার্কিন সংবিধানে এটিই হলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের পরিচয়।

১৪ দ্বৈত ব্যবস্থা: দ্বি-ব্যবস্থা মার্কিন সংবিধানের সর্বশেষ বৈশিষ্ট্য রূপে উল্লেখ করা যায়। মার্কিন সংবিধানে দ্বি-নাগরিকত্বের পাশাপাশি দ্বি-কক্ষ আইন সভা ও দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় নাগরিক একাধারে যুক্তরাষ্ট্র ও অংগ রাষ্ট্রের নাগরিক বলে বিবেচিত হয়।

আরো পড়ুন: ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য

মার্কিন সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি

সংশোধন পদ্ধতি অনুসারে মার্কিন সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় প্রকৃতির। একমাত্র কেন্দ্রীয় আইন সভা বা কংগ্রেস ও সরকারই এই সংবিধান সংশোধন করতে পারে না। এই সংবিধান সংশোধনে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার অপরিহার্য। দুটি পদ্ধতিতে মার্কিন সংবিধান সংশোধন করা যায়। যথাঃ-

  • প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের উপস্থিত সদস্যের দুই তৃতীয়াংশের সম্মতিক্রমে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব রাখা যায়। এ জন্য ফোরাম গঠন আবশ্যক। অন্যথায় এ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের কোন ভোটো প্রয়োগের ক্ষমতা নেই।
  • অংগরাজ্যের আইন সভার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করে জাতীয় সম্মেলন আহবান করতে পারেন। এরূপ পরিস্থিতিতে কংগ্রস সম্মেলনের আহবান করবে, তবে এ পদ্ধতির প্রয়োজন অনেকটা সীমিত।

মার্কিন সংবিধান সংশোধন পদ্ধতিকে নিম্নোক্ত ছকের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব।

১। সংশোধন পদ্ধতি

ক) প্রস্তাবনার পদ্ধতি

১. কংগ্রেসের উভয় কক্ষের উপস্থিত সদস্যের দুই তৃতীয়াংশের সমর্থনে প্রস্তাব পেশ।

অথবা

২. রাজ্যগুলোর আইনসভার দু'তৃতীয়াংশের অনুরোধক্রমে কংগ্রেস কর্তৃক আহুত সভা দ্বারা প্রস্তাব পেশ

খ) অনুমোদনপদ্ধতি

১. অঙ্গরাজ্যগুলোর আইনসভার তিন চর্তুথাংশ দ্বারা অনুমোদন।

অথবা

২. একই উদ্দেশ্য অঙ্গরাজ্যগুলোর আহূত সম্মেলনে তিন-চতুর্থাংশ দ্বারা অনুমোদন।

উপরে বর্ণিত ব্যাখ্যার আলোকে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, মার্কিন সংবিধান সংশোধনে প্রস্তাব উত্থাপন পদ্ধতি ও অনুমোদন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এ সংশোধন পদ্ধতি বিশেষ পদ্ধতি রূপে স্বীকৃত। এ কারণেই মার্কিন সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের পর্যায়ভুক্ত।

সারকথা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী রাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ ১৭৭৬ সালে ব্রিটেনের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭৭৬ সালের ৪ঠা জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই মার্কিনবাসী সংবিধান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। এ লক্ষ্যে তারা ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়ার একটি সম্মেলন আহ্বান করে। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় আধুনিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সংবিধান এর মৌলিক দিকগুলো হল, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, লিখিত প্রকৃতির সংবিধান, রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ, নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url