রাষ্ট্রপতির-নির্বাচন ব্যবস্থা, কার্যকাল ও বেতন এবং পদচ্যুতি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রার্থীর যোগ্যতা সম্পর্কে বলতে পারেন।

ভূমিকা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শাসন ব্যবস্থার মধ্যমনি। তিনিই শাসন ব্যবস্থার সর্বাপেক্ষা গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তি। একই সাথে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। প্রেসিডেন্টের নির্বাচন পদ্ধতি মূলত ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে গৃহীত হয়। ঐ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে দুই ধরনের প্রস্তাব উপস্থাপিত হয়েছিল। একদল সদস্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পক্ষপাতি ছিলেন। অপর একদল কংগ্রেস কর্তৃক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। প্রথম পদ্ধতিতে চতুর ব্যাক্তিদের নির্বাচিত হওয়ার আশংকা ছিল। এ পদ্ধতিতে যোগ্যতার মূল্যায়নের সম্ভাবনা কম ছিল। আবার দ্বিতীয় পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের হাতের পুতুলে পরিণত হবার আশংকা ছিল। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি ক্ষুন্ন হওয়ার আশংকা ছিল। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সদস্যদের মধ্যে প্রবল মতপার্থক্য দেখা দেয়। সার্বিক বিচারে একটি নির্বাচন সংস্থা দ্বারা বিশেষ পদ্ধতিতে পরোক্ষভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

রাষ্ট্রপতির যোগ্যতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর যোগ্যতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থীর যোগ্যতায় মার্কিন সংবিধানে কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ আছে:

প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বয়স হবে ন্যূনতম ৩৫ বছর। (২) তাঁকে জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক হতে হবে এবং (৩) তাঁকে অন্ততঃ ১৪ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্টে বসবাস করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী স্বাভাবিক নাগরিক ছাড়া অন্য কেউ রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হতে পারবেন না। কোন বিদেশী মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে তিনি প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হতে পারবেন না। এগুলো সংবিধান প্রদত্ত যোগ্যতা। কংগ্রেস এর বিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী কোন অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন না।

নির্বাচন সংস্থা
মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে একটি নির্বাচন সংস্থা রয়েছে। সংবিধান অনুসারে মার্কিন রাষ্ট্রপতি একটি নির্বাচন সংস্থার (Electoral College) দ্বারা নির্বাচিত হন। এই নির্বাচন সংস্থাটি গঠিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নাগরিকদ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সের নাগরিকগণ নির্বাচক সংস্থার প্রতিনিধি নির্বাচনে অংশ নেন। প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে কংগ্রেসে (প্রতিনিধি সভা ও সিনেট সভা) নির্বাচিত সমসংখ্যক সদস্য এই সংস্থায় নির্বাচিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পঞ্চাশটি অঙ্গরাজ্য আলাদা আলাদা গঠিত নির্বাচক সংস্থার যোগফল হল ৫৩৫। বর্তমানে এর সদস্য দাড়িয়েছে ৫৩৮-এ। রাজধানী ওয়াশিংটনে নির্বাচন সংস্থার সদস্য নির্বাচিত হন না। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন সংস্থার ২৭০ ভোট প্রার্থী ব্যক্তিই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য বা কেন্দীয় সরকারের কর্মচারী নির্বাচক সংস্থার সদস্য হতে পারেন না। নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবার নির্বাচক সংস্থার প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন সংবিধানের ২৩তম সংশোধনের পর এখন নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ স্ব-স্ব জেলায় উপস্থিত থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন। ভোট হয় গোপন ব্যালেটে। সভা কক্ষের সদস্যের সামনে ভোট গণনা করা হয়।

রাষ্ট্রপতির কার্যকাল ও পদচ্যুতি
মার্কিন রাষ্ট্রপতির কার্যকাল জানা আবশ্যক। মার্কিন রাষ্ট্রপতির কার্যকাল চার বছর। তার কার্যকাল কত বছর হবে এ নিয়ে ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অনেকে ৭ বছরের প্রস্তাব দেন। আবার কেউ কেউ মনে করেছিলেন ৭ বছর দীর্ঘসময়। এই দীর্ঘসময় প্রেসিডেন্ট তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন। তারা প্রেসিডেন্টের কার্যকাল ৪ বছর হওয়ার পক্ষে মত দেন। বিতর্কে শেষে ৪ বছর নির্ধারণ করা হয়। তবে পুনঃনির্বাচনের কোন বাঁধা তাঁরা উপলব্ধি করেন নি। প্রেসিডেন্ট যতবার খুশি নির্বাচিত হতে পারবেন। কিন্তু জর্জ ওয়াশিংটন তৃতীয় বার রাষ্ট্রপতি হতে অস্বীকার করেন। এরপর থেকে দুই বছরের বেশী রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্টিত না হওয়ার শাসনতান্ত্রিক রীতির সৃষ্টি হয়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সময় ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ১৯৪০ সালে তৃতীয়বার এবং ১৯৪৪ সালে চতুর্থবারের মত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। যাহোক সংবিধানের ২২তম সংশোধনে রাষ্ট্রপতি পুনঃনির্বাচন সম্পর্কিত সমস্যাটির সমাধান করা হয়।

রাষ্ট্রপতির কার্যকাল ৪ বছর শেষ হবার আগেই তাঁর মৃত্যু হলে বা পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হয়। আবার তিনি পদচ্যুত হতে পারেন। দেশদ্রোহিতা, উৎকোচ গ্রহণ কিংবা দুর্নীতি ইত্যাদি কারণে তাকে পদচ্যুত করা যায়। এ উদ্দেশ্যে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে অভিযোগ উত্থাপন করতে হয়। এরপর প্রতিনিধি সভায় বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি তার প্রতিবেদন প্রতিনিধি সভার কাছে পাঠায়। এই প্রতিবেদন সভায় বিচার বিবেচনার পর অধিকাংশ সদস্য ইমপিচমেন্ট সমর্থন করলে। এই ইমপিচমেন্ট পদক্ষেপ সিনেট সভায় পাঠাতে হয়। এ সভায় সুপ্রীম কোটের প্রধান বিচারপতি সিনেট সভায় সভাপতিত্ব করেন। অভিযুক্ত রাষ্ট্রপতি সিনেটে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পান। সিনেটের দুই তৃতীয়াংশের দ্বারা অভিযোগটি অনুমোদন হলে প্রেসিডেন্ট পদচ্যুত হন।

রাষ্ট্রপতির বেতন ভাতা
রাষ্ট্রপতির বেতন ও ভাতার ব্যাপারে সাংবিধানিক বিধান রয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতির বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আইনের দ্বারা নির্ধারিত। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বর্তমানে বছরে ১লক্ষ ডলার বেতন হিসেবে পান। অন্যান্য খরচ বাবদ আরও ৫০ হাজার ডলার পান। আগে এই ৫০ হাজার ডলার করমুক্ত ছিল। কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির অনুরোধক্রমে ১৯৫৩ সালে খরচের ক্ষেত্রে কর রদের ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এছাড়া ভ্রমণ, আপ্যায়ন ও সরকারী বাসভবন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বাজেটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। এ সম্পর্কে সংবিধানের ২ (৬) নং ধারায় বিধান রাখা হয়েছে। এ বিধান মতে প্রেসিডেন্টের কার্যকাল ও ভাতাদি হ্রাস করা যায় না।

সারকথা
মার্কিন রাষ্ট্রপতি হলেন শাসন ব্যবস্থার মধ্যমনি। তাঁকে কেন্দ্র করে আমেরিকার শাসন ব্যবস্থা আবর্তিত হয়। কিন্তু তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন না। ফিলাডেলফিয়া (Philadelphia) সম্মেলনে বিস্তারিত আলোচনার পর রাষ্ট্রপতিকে পরোক্ষভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নে'য়া হয়। তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নির্বাচক সংস্থার সদস্য দ্বারা নির্বাচিত হন। এ ব্যাপারে মার্কিন সংবিধানের ২ নং ধারায় বিধান রাখা হয়েছে। সংবিধান অনুসারে মার্কিন রাষ্ট্রপতি একটি নির্বাচক সংস্থার Electoral college দ্বারা নির্বাচিত হন। এটি গঠিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নাগরিকদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url